ফ্রাঙ্কো

ফ্রাঙ্কো Francisco Franco Bahamonde স্পেনের একজন সামরিক ও রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। তিনি ১৯৩৬-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত স্পেন শাসন করেন। স্পেনের স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধে (১৯৩৬-১৯৩৯) জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্ব দেওয়ার পর তিনি স্পেনের কায়েদিস্তা (Caudillo) হিসেবে পরিচিত হন। ফ্রাঙ্কোর শাসনকালে স্পেন একটি স্বৈরাচারী রাষ্ট্র ছিল এবং তার নীতিগুলি ইউরোপের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল।

প্রাথমিক জীবন এবং সামরিক কর্মজীবন

ফ্রাঙ্কো ১৮৯২ সালের ৪ ডিসেম্বর স্পেনের গালিসিয়া অঞ্চলের এল ফেরোল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম নিকোলাস ফ্রাঙ্কো এবং মায়ের নাম মারিয়া দে লা পিiedad বাহামonde পোর্তো। ফ্রাঙ্কোর পরিবার ঐতিহ্যগতভাবে স্প্যানিশ নৌবাহিনীর সাথে যুক্ত ছিল। তিনি প্রথমে নৌবাহিনীতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ১৮৯৮ সালে কিউবাতে স্পেন-মার্কিন যুদ্ধে স্পেনের পরাজয়ের পর তার আগ্রহ পরিবর্তিত হয় এবং তিনি স্প্যানিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।

ফ্রাঙ্কো ১৯১০ সালে সামরিক একাডেমী থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং মরক্কোতে স্প্যানিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে রিফ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে তিনি দ্রুত পদোন্নতি লাভ করেন এবং লেজিয়নের নেতৃত্ব পান। এই সময়ে তিনি একজন দক্ষ এবং সাহসী অফিসার হিসেবে পরিচিত হন। ১৯২৩ সালে তিনি স্পেনের প্রথম সামরিক অভ্যুত্থানে অংশ নেন এবং মিগুয়েল প্রিমো দে রিভেরার স্বৈরাচারী সরকারকে সমর্থন করেন।

স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধ এবং ক্ষমতা গ্রহণ

১৯৩১ সালে দ্বিতীয় স্প্যানিশ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ফ্রাঙ্কো স্প্যানিশ সেনাবাহিনীতে তার অবস্থান ধরে রাখেন। তবে, তিনি প্রজাতন্ত্রের বামপন্থী নীতির বিরোধিতা করেন। ১৯৩৬ সালে স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধ শুরু হলে ফ্রাঙ্কো জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্ব দেন। এই দলে ফলাঙ্গিস্ট (Falangist), কার্লিস্ট এবং conservatives সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠী অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ফ্রাঙ্কো জার্মানি ও ইতালি থেকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা পান। জার্মান লুফটওয়াফে (Luftwaffe) এবং ইতালীয় ফ্যাসিবাদী সেনারা জাতীয়তাবাদীদের পক্ষে যুদ্ধ করে। অন্যদিকে, প্রজাতন্ত্রের পক্ষে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে কিছু সহায়তা আসে, তবে তা জাতীয়তাবাদীদের তুলনায় কম ছিল। দীর্ঘ এবং রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৩৯ সালে জাতীয়তাবাদীরা বিজয় লাভ করে এবং ফ্রাঙ্কো স্পেনের একনায়ক হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন।

ফ্রাঙ্কোর শাসনকাল (১৯৩৯-১৯৭৫)

ফ্রাঙ্কোর শাসনকাল প্রায় ৩৬ বছর ধরে চলেছিল। এই সময়কালে তিনি স্পেনকে একটি স্বৈরাচারী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচালনা করেন। তার শাসনের কিছু বৈশিষ্ট্য নিচে উল্লেখ করা হলো:

রাজনৈতিক দমন-পীড়ন: ফ্রাঙ্কো তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের কঠোরভাবে দমন করেন। বামপন্থী রাজনৈতিক দল এবং শ্রমিক সংগঠনগুলিকে নিষিদ্ধ করা হয়। বহু মানুষকে কারারুদ্ধ করা হয় এবং মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
সেন্সরশিপ: ফ্রাঙ্কোর সরকার গণমাধ্যম এবং সংস্কৃতির উপর কঠোর সেন্সরশিপ আরোপ করে। সমালোচনা বা বিরোধিতা প্রকাশ করা কঠিন ছিল।
অর্থনৈতিক নীতি: ফ্রাঙ্কোর প্রাথমিক অর্থনৈতিক নীতি ছিল স্বনির্ভরতার উপর জোর দেওয়া। তবে, ১৯৫০-এর দশকে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অর্থনৈতিক চুক্তি করেন এবং স্পেনের অর্থনীতিতে উন্নয়ন দেখা যায়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রাঙ্কো নিরপেক্ষ থাকেন, যদিও তিনি অক্ষশক্তির প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। যুদ্ধের পর স্পেন জাতিসংঘ থেকে দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্ন ছিল। ১৯৬০-এর দশকে স্পেনের অর্থনীতি পর্যটন শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে উপকৃত হয়।

ফ্রাঙ্কোর শাসনের প্রধান বৈশিষ্ট্য
বৈশিষ্ট্য
রাজনৈতিক দমন-পীড়ন
সেন্সরশিপ
অর্থনৈতিক নীতি
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক

ফ্রাঙ্কোর উত্তরাধিকার এবং মৃত্যু

১৯৭৫ সালের ২০ নভেম্বর ফ্রাঙ্কো মাদ্রিদে মারা যান। তার মৃত্যুর পর হুয়ান কার্লোস স্পেনের রাজা হন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ফ্রাঙ্কোর উত্তরাধিকার স্পেনে আজও বিতর্কিত। কেউ কেউ তাকে স্পেনের স্থিতিশীলতার রক্ষক হিসেবে দেখেন, আবার অনেকে তাকে স্বৈরাচারী ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী হিসেবে সমালোচনা করেন।

ফ্রাঙ্কোর শাসনকালে স্পেনের সমাজ ও রাজনীতিতে গভীর পরিবর্তন আসে। তার নীতিগুলি স্পেনের অর্থনীতি ও সংস্কৃতির উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলেছিল।

ফ্রাঙ্কোবাদ (Franquism)

ফ্রাঙ্কোবাদ হলো ফ্রাঙ্কোর রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং শাসনের সমষ্টি। এর প্রধান উপাদানগুলো হলো:

জাতীয়তাবাদ: স্পেনের ঐক্য ও সার্বভৌমত্বর উপর জোর দেওয়া।
কর্তৃত্ববাদ: ব্যক্তি স্বাধীনতার চেয়ে রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া।
ফ্যাসিবাদ: রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য এবং সাম্যবাদ ও গণতন্ত্রের বিরোধিতা।
ক্যাথলিক ধর্ম: ক্যাথলিক গির্জাকে রাষ্ট্রের সমর্থন দেওয়া এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর জোর দেওয়া।
সামরিকবাদ: সামরিক বাহিনীকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করা।

ফ্রাঙ্কোবাদ স্পেনের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এই মতাদর্শের প্রভাবে স্পেন দীর্ঘকাল ধরে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে দূরে ছিল।

ফ্রাঙ্কোর শাসনামলের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা

১৯৩৬-১৯৩৯: স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধ
১৯৩৯: ফ্রাঙ্কোর ক্ষমতা গ্রহণ
১৯৪২: স্পেনের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদান (অক্ষশক্তির পক্ষে)
১৯৫৩: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সামরিক চুক্তি
১৯৫৯: পর্যটন শিল্পের বিকাশ
১৯৬৯: হুয়ান কার্লোসকে ফ্রাঙ্কোর উত্তরসূরি হিসেবে ঘোষণা
১৯৭৫: ফ্রাঙ্কোর মৃত্যু এবং স্পেনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের শুরু

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

Payne, Stanley G. *The Franco Regime, 1936–1975*. University of Wisconsin Press, 1967.
Preston, Paul. *Franco: A Biography*. Basic Books, 1993.
Carr, Raymond. *Spain, 1808–1939*. Macmillan, 1966.

বাহ্যিক লিঙ্ক

এই নিবন্ধে বাইনারি অপশন ট্রেডিং সম্পর্কিত কোনো তথ্য নেই, কারণ প্রশ্নকর্তা শুধুমাত্র ফ্রাঙ্কো বিষয়ে একটি নিবন্ধ লিখতে বলেছেন। তবে, ফ্রাঙ্কোর অর্থনৈতিক নীতি এবং স্পেনের অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যা বিনিয়োগ এবং আর্থিক বাজারের সাথে সম্পর্কিত। এই বিষয়ে আরও জানতে, নিম্নলিখিত লিঙ্কগুলি সহায়ক হতে পারে:

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ