ফেরত

ফেরত বিনিয়োগ এবং অর্থনীতি

ফেরত (Return) একটি বিনিয়োগের উপর অর্জিত লাভ বা ক্ষতিকে বোঝায়, যা সাধারণত বিনিয়োগের প্রাথমিক মূল্যের শতাংশ হিসাবে প্রকাশ করা হয়। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মেট্রিক, যা বিনিয়োগের কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে এবং বিভিন্ন বিনিয়োগ বিকল্পের মধ্যে তুলনা করতে সহায়তা করে। এই নিবন্ধে, আমরা বিভিন্ন ধরনের ফেরত, রিটার্ন পরিমাপের পদ্ধতি, রিটার্নকে প্রভাবিত করার কারণ এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করব।

ফেরতের প্রকারভেদ

বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ থেকে বিভিন্ন প্রকার ফেরত আসতে পারে। এদের মধ্যে কয়েকটি প্রধান প্রকার নিচে উল্লেখ করা হলো:

মোট ফেরত (Total Return): এটি একটি বিনিয়োগের উপর সমস্ত প্রকার আয় এবং মূলধনের প্রশংসা বা অবমূল্যায়ন সহ মোট লাভ বা ক্ষতিকে বোঝায়। মোট ফেরত হিসাব করার সময় লভ্যাংশ (Dividend), সুদের আয় (Interest Income) এবং মূলধনের পরিবর্তন – সবকিছু অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

নামমাত্র ফেরত (Nominal Return): এই ফেরত মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব বিবেচনা করে না। অর্থাৎ, এটি বিনিয়োগ থেকে অর্জিত প্রকৃত আয়কে বোঝায়, যা মুদ্রাস্ফীতি adjusted নয়।

বাস্তব ফেরত (Real Return): বাস্তব ফেরত মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব বিবেচনা করে। এটি বিনিয়োগ থেকে অর্জিত আয়ের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি বা হ্রাসের চিত্র দেখায়। বাস্তব ফেরত হিসাব করার জন্য, প্রথমে নামমাত্র ফেরত থেকে মুদ্রাস্ফীতির হার বাদ দিতে হয়।

বার্ষিককৃত ফেরত (Annualized Return): যখন কোনো বিনিয়োগের সময়কাল এক বছরের বেশি হয়, তখন বার্ষিককৃত ফেরত ব্যবহার করা হয়। এটি বিনিয়োগের গড় বার্ষিক বৃদ্ধির হার নির্দেশ করে।

বিভিন্ন প্রকার ফেরতের উদাহরণ
ফেরতের প্রকার	উদাহরণ
মোট ফেরত	একটি শেয়ারের দাম ১০% বৃদ্ধি এবং ২% লভ্যাংশ প্রদান
নামমাত্র ফেরত	একটি বন্ড থেকে ৫% সুদের আয়
বাস্তব ফেরত	নামমাত্র ফেরত ৮% এবং মুদ্রাস্ফীতি ৩%
বার্ষিককৃত ফেরত	একটি বিনিয়োগ ৩ বছরে ৫০% বৃদ্ধি পেয়েছে

রিটার্ন পরিমাপের পদ্ধতি

বিভিন্ন উপায়ে বিনিয়োগের রিটার্ন পরিমাপ করা যায়। নিচে কয়েকটি সাধারণ পদ্ধতি আলোচনা করা হলো:

সরল ফেরত (Simple Return): এটি সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি, যা শুধুমাত্র বিনিয়োগের সময়ের শুরুতে এবং শেষের দিকের মূল্যের পার্থক্য বিবেচনা করে। সরল ফেরত নিম্নলিখিত সূত্র ব্যবহার করে গণনা করা হয়:

  সরল ফেরত = (শেষ মূল্য - প্রথম মূল্য) / প্রথম মূল্য

সময়-ভারিত ফেরত (Time-Weighted Return): এই পদ্ধতিটি বিনিয়োগের সময়কালে নগদ প্রবাহের প্রভাব দূর করে এবং বিনিয়োগ ব্যবস্থাপকের দক্ষতা মূল্যায়নে সহায়ক।

ডলার-ভারিত ফেরত (Dollar-Weighted Return): এই পদ্ধতিটি বিনিয়োগের সময়কালে নগদ প্রবাহের প্রভাব বিবেচনা করে এবং বিনিয়োগকারীর প্রকৃত অর্জিত রিটার্ন দেখায়।

শार्প রেশিও (Sharpe Ratio): এটি ঝুঁকি-সমন্বিত রিটার্ন পরিমাপ করার একটি পদ্ধতি। शार्প রেশিও বিনিয়োগের অতিরিক্ত রিটার্নকে তার ঝুঁকির সাথে তুলনা করে। ঝুঁকি (Risk) এবং পোর্টফোলিও (Portfolio) ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

রিটার্নকে প্রভাবিত করার কারণ

বিভিন্ন কারণ বিনিয়োগের রিটার্নকে প্রভাবিত করতে পারে। এদের মধ্যে কিছু প্রধান কারণ হলো:

বাজারের অবস্থা (Market Condition): সামগ্রিক বাজার (Market) পরিস্থিতি, যেমন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি (Inflation), এবং সুদের হার (Interest Rate), বিনিয়োগের রিটার্নকে প্রভাবিত করে।

কোম্পানির কর্মক্ষমতা (Company Performance): কোনো কোম্পানির আর্থিক অবস্থা, উন্নয়ন সম্ভাবনা (Growth Potential) এবং ব্যবস্থাপনার দক্ষতা তার শেয়ারের রিটার্নকে প্রভাবিত করে।

শিল্পের প্রবণতা (Industry Trend): নির্দিষ্ট শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এবং বাজারের চাহিদা সেই শিল্পের সাথে জড়িত বিনিয়োগের রিটার্নকে প্রভাবিত করে।

রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ঝুঁকি (Political and Economic Risk): রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার (Foreign Exchange Rate) এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কারণ বিনিয়োগের রিটার্নকে প্রভাবিত করতে পারে।

বিনিয়োগের সময়কাল (Investment Time Horizon): দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ সাধারণত স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগের চেয়ে বেশি রিটার্ন প্রদান করে, তবে এর সাথে ঝুঁকির পরিমাণও বেশি হতে পারে।

বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ফেরতের গুরুত্ব

বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ফেরতের গুরুত্ব অপরিহার্য। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আলোচনা করা হলো:

বিনিয়োগের মূল্যায়ন (Investment Evaluation): ফেরত বিনিয়োগের কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে। বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রত্যাশিত রিটার্নের সাথে প্রকৃত রিটার্ন তুলনা করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

পোর্টফোলিও তৈরি (Portfolio Construction): বিভিন্ন অ্যাসেট ক্লাসের প্রত্যাশিত রিটার্ন এবং ঝুঁকির উপর ভিত্তি করে একটি সুষম অ্যাসেট অ্যালোকেশন (Asset Allocation) তৈরি করতে ফেরত গুরুত্বপূর্ণ।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management): রিটার্ন এবং ঝুঁকির মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগকারীরা তাদের ঝুঁকি সহনশীলতা অনুযায়ী বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

আর্থিক পরিকল্পনা (Financial Planning): দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক লক্ষ্য, যেমন অবসর গ্রহণ (Retirement Planning) বা সন্তানের শিক্ষা, পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় রিটার্ন নির্ধারণ করতে ফেরত সহায়ক।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ফেরত

বাইনারি অপশন (Binary Option) ট্রেডিং-এ ফেরত হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট অ্যাসেটের দাম একটি নির্দিষ্ট স্তরের উপরে বা নিচে যাবে কিনা তার উপর ভিত্তি করে লাভ বা ক্ষতি। বাইনারি অপশনে, বিনিয়োগকারী দুটি বিকল্পের মধ্যে একটি বেছে নেয়: কল (Call) অথবা পুট (Put)। যদি বিনিয়োগকারীর ভবিষ্যদ্বাণী সঠিক হয়, তবে সে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ফেরত পায় (যেমন, ৭০-৮০%); অন্যথায়, সে তার বিনিয়োগের সম্পূর্ণ পরিমাণ হারায়।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ উচ্চ রিটার্নের সম্ভাবনা থাকলেও, এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস (Technical Analysis), ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস (Fundamental Analysis) এবং ভলিউম অ্যানালাইসিস (Volume Analysis) এর মতো বিষয়গুলো ভালোভাবে জানতে হয়।

কৌশল এবং টেকনিক

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ সফল হওয়ার জন্য কিছু কৌশল এবং টেকনিক অনুসরণ করা যেতে পারে:

ট্রেন্ড ট্রেডিং (Trend Trading): বাজারের প্রবণতা অনুসরণ করে ট্রেড করা।
রেঞ্জ ট্রেডিং (Range Trading): একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে দামের ওঠানামা থেকে লাভ করা।
ব্রেকআউট ট্রেডিং (Breakout Trading): যখন দাম একটি নির্দিষ্ট স্তর অতিক্রম করে, তখন ট্রেড করা।
পিনি বার কৌশল (Pin Bar Strategy): পিনি বার ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন ব্যবহার করে ট্রেড করা।
বোলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands): এই নির্দেশক ব্যবহার করে দামের অস্থিরতা পরিমাপ করা এবং ট্রেডিং সংকেত তৈরি করা।

উপসংহার

ফেরত বিনিয়োগের একটি মৌলিক ধারণা, যা বিনিয়োগকারীদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে এবং তাদের আর্থিক লক্ষ্য অর্জন করতে সহায়তা করে। বিভিন্ন প্রকার ফেরত, রিটার্ন পরিমাপের পদ্ধতি এবং রিটার্নকে প্রভাবিত করার কারণগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখা বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর মতো ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে, ভালোভাবে জেনে বুঝে এবং সঠিক কৌশল অবলম্বন করে ট্রেড করা উচিত।

বিনিয়োগ পরিকল্পনা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ফিনান্সিয়াল মার্কেট শেয়ার বাজার বন্ড মার্কেট মিউচুয়াল ফান্ড পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন মুভিং এভারেজ রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইনডেক্স ম্যাকডি ফাইবোন্যাকি রিট্রেসমেন্ট ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস অলিং মোমেন্টাম চার্ট প্যাটার্ন সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স ট্রেডিং সাইকোলজি অর্থনৈতিক সূচক মুদ্রানীতি

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ