ফিল্টারযুক্ত চশমা

ফিল্টারযুক্ত চশমা: বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর একটি অত্যাধুনিক কৌশল

ভূমিকা

বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি জটিল এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল ক্ষেত্র। এখানে সফল হওয়ার জন্য, ট্রেডারদের বিভিন্ন ধরনের কৌশল এবং সরঞ্জাম সম্পর্কে জানতে হয়। ফিল্টারযুক্ত চশমা (Filtered Glasses) এমনই একটি অত্যাধুনিক কৌশল যা ট্রেডারদের ঝুঁকি কমাতে এবং লাভের সম্ভাবনা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এই নিবন্ধে, আমরা ফিল্টারযুক্ত চশমা কৌশলটি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

ফিল্টারযুক্ত চশমা কী?

ফিল্টারযুক্ত চশমা হলো একটি টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ কৌশল। এই কৌশলটি মূলত চার্ট প্যাটার্ন এবং ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে সম্ভাব্য ট্রেডগুলি চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। সাধারণ টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের সাথে এর মূল পার্থক্য হলো, ফিল্টারযুক্ত চশমা একাধিক ইন্ডিকেটর এবং ফিল্টার ব্যবহার করে ভুল সংকেতগুলি বাদ দেয়। এর ফলে ট্রেডাররা আরও নির্ভরযোগ্য ট্রেড করতে পারে।

এই কৌশলটির নামকরণ করা হয়েছে "ফিল্টারযুক্ত চশমা" কারণ এটি ট্রেডারদের বাজারের "নয়েজ" বা অপ্রয়োজনীয় তথ্য ফিল্টার করে শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ সংকেতগুলি দেখতে সাহায্য করে। অনেকটা যেন একটি বিশেষ চশমা পরে আপনি সবকিছু আরও স্পষ্ট করে দেখতে পাচ্ছেন।

ফিল্টারযুক্ত চশমার মূল উপাদান

ফিল্টারযুক্ত চশমা কৌশলটি নিম্নলিখিত উপাদানগুলির সমন্বয়ে গঠিত:

১. ট্রেন্ড নির্ধারণ:

প্রথম ধাপ হলো বাজারের সামগ্রিক ট্রেন্ড নির্ধারণ করা। এটি করার জন্য মুভিং এভারেজ (Moving Average), এমএসিডি (MACD) এবং আরএসআই (RSI) এর মতো ইন্ডিকেটর ব্যবহার করা যেতে পারে।

• মুভিং এভারেজ: এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেয়ারের গড় মূল্য দেখায় এবং ট্রেন্ডের দিক নির্ধারণে সাহায্য করে।
• এমএসিডি: মুভিং এভারেজ কনভারজেন্স ডাইভারজেন্স (Moving Average Convergence Divergence) দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে।
• আরএসআই: রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স (Relative Strength Index) শেয়ারের অতিরিক্ত কেনা বা বিক্রির চাপ পরিমাপ করে।

২. সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল:

সাপোর্ট লেভেল হলো সেই মূল্যস্তর যেখানে শেয়ারের দাম সাধারণত কমতে বাধা পায়, এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল হলো সেই মূল্যস্তর যেখানে দাম বাড়তে বাধা পায়। এই লেভেলগুলি চিহ্নিত করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলি সম্ভাব্য এন্ট্রি এবং এক্সিট পয়েন্ট হতে পারে।

৩. চার্ট প্যাটার্ন:

বিভিন্ন ধরনের চার্ট প্যাটার্ন যেমন হেড অ্যান্ড শোল্ডারস (Head and Shoulders), ডাবল টপ (Double Top), ডাবল বটম (Double Bottom) ইত্যাদি বাজারের ভবিষ্যৎ গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে।

৪. ভলিউম বিশ্লেষণ:

ভলিউম হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে কতগুলি শেয়ার কেনা বা বেচা হয়েছে তার পরিমাণ। ভলিউম বিশ্লেষণ করে ট্রেডাররা বাজারের গতিবিধি এবং প্রবণতা সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে পারে।

৫. ফিল্টার:

ফিল্টারগুলি হলো অতিরিক্ত শর্ত যা একটি ট্রেড সংকেতকে নিশ্চিত করে। এই ফিল্টারগুলির মধ্যে থাকতে পারে:

• ভোলাটিলিটি ফিল্টার: বাজারের ভোলাটিলিটি (Volatility) পরিমাপ করে এবং উচ্চ ভোলাটিলিটির সময় ট্রেড করা থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করে।
• নিউজ ফিল্টার: গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সংবাদ এবং ঘটনার উপর নজর রাখে যা বাজারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
• টাইম ফিল্টার: দিনের নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেড করা থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করে, যেমন মার্কেট খোলার বা বন্ধ হওয়ার সময়।

ফিল্টারযুক্ত চশমা কৌশল প্রয়োগের নিয়ম

ফিল্টারযুক্ত চশমা কৌশলটি প্রয়োগ করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে:

১. মার্কেট নির্বাচন:

প্রথমে, আপনাকে একটি মার্কেট নির্বাচন করতে হবে, যেমন ফরেক্স, কমোডিটি, বা স্টক।

২. টাইমফ্রেম নির্বাচন:

এরপর, একটি উপযুক্ত টাইমফ্রেম নির্বাচন করতে হবে। সাধারণত, স্বল্পমেয়াদী ট্রেডাররা ১৫ মিনিট বা ১ ঘণ্টার টাইমফ্রেম ব্যবহার করে, যেখানে দীর্ঘমেয়াদী ট্রেডাররা দৈনিক বা সাপ্তাহিক টাইমফ্রেম ব্যবহার করে।

৩. ইন্ডিকেটর সেটআপ:

আপনার নির্বাচিত টাইমফ্রেমে মুভিং এভারেজ, এমএসিডি, আরএসআই এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ইন্ডিকেটর সেটআপ করুন।

৪. সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল চিহ্নিত করুন:

চার্টে সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেলগুলি চিহ্নিত করুন।

৫. চার্ট প্যাটার্ন সনাক্ত করুন:

চার্টে কোনো চার্ট প্যাটার্ন তৈরি হয়েছে কিনা তা সনাক্ত করুন।

৬. ফিল্টার প্রয়োগ করুন:

আপনার নির্বাচিত ফিল্টারগুলি প্রয়োগ করুন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি ভোলাটিলিটি ফিল্টার ব্যবহার করেন, তবে শুধুমাত্র কম ভোলাটিলিটির সময় ট্রেড করুন।

৭. ট্রেড করুন:

যদি সমস্ত শর্ত পূরণ হয়, তবে একটি ট্রেড করুন।

উদাহরণস্বরূপ, ধরা যাক আপনি ইউএসডি/জেপিওয়াই (USD/JPY) কারেন্সি পেয়ার ট্রেড করছেন। আপনি ১৫ মিনিটের টাইমফ্রেম ব্যবহার করে মুভিং এভারেজ, এমএসিডি, আরএসআই এবং ভোলাটিলিটি ফিল্টার সেটআপ করেছেন। আপনি দেখলেন যে মুভিং এভারেজ আপট্রেন্ড দেখাচ্ছে, এমএসিডি বুলিশ ক্রসওভার দিয়েছে, আরএসআই ৭০-এর নিচে আছে এবং ভোলাটিলিটি কম। এই পরিস্থিতিতে, আপনি একটি কল অপশন (Call Option) কিনতে পারেন।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

ফিল্টারযুক্ত চশমা কৌশলটি ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করলেও, এটি সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকিহীন নয়। তাই, ট্রেড করার সময় নিম্নলিখিত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশলগুলি অনুসরণ করা উচিত:

১. স্টপ-লস অর্ডার:

স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করে আপনার ক্ষতি সীমিত করুন।

২. পজিশন সাইজিং:

আপনার অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্সের উপর ভিত্তি করে আপনার পজিশন সাইজ নির্ধারণ করুন।

৩. লিভারেজ:

লিভারেজ ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকুন, কারণ এটি আপনার লাভ এবং ক্ষতি উভয়ই বাড়িয়ে দিতে পারে।

৪. ডাইভারসিফিকেশন:

আপনার পোর্টফোলিওকে ডাইভারসিফাই করুন, অর্থাৎ বিভিন্ন মার্কেটে বিনিয়োগ করুন।

ফিল্টারযুক্ত চশমা কৌশলের সুবিধা এবং অসুবিধা

সুবিধা:

• উচ্চ নির্ভুলতা: একাধিক ফিল্টার ব্যবহার করার কারণে ভুল সংকেতগুলি বাদ দেওয়া যায়।
• ঝুঁকি হ্রাস: স্টপ-লস অর্ডার এবং অন্যান্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল ব্যবহার করে ক্ষতি সীমিত করা যায়।
• লাভের সম্ভাবনা বৃদ্ধি: নির্ভরযোগ্য ট্রেড করার মাধ্যমে লাভের সম্ভাবনা বাড়ে।

অসুবিধা:

• জটিলতা: এই কৌশলটি নতুন ট্রেডারদের জন্য জটিল হতে পারে।
• সময়সাপেক্ষ: চার্ট বিশ্লেষণ এবং ফিল্টার প্রয়োগ করতে সময় লাগতে পারে।
• বাজারের পরিবর্তন: বাজারের অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে কৌশলটি পরিবর্তন করতে হতে পারে।

উন্নত কৌশল এবং বিবেচনা

• একাধিক টাইমফ্রেম বিশ্লেষণ: বিভিন্ন টাইমফ্রেমে চার্ট বিশ্লেষণ করে আরও নিশ্চিত সংকেত পাওয়া যেতে পারে।
• নিউজ এবং ইভেন্ট ক্যালেন্ডার: গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সংবাদ এবং ঘটনার উপর নজর রাখা উচিত।
• ব্যাকটেস্টিং: ঐতিহাসিক ডেটা ব্যবহার করে কৌশলটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা উচিত।
• ডেমো অ্যাকাউন্ট: প্রথমে ডেমো অ্যাকাউন্টে অনুশীলন করা উচিত এবং তারপর আসল টাকা বিনিয়োগ করা উচিত।
• ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন (Candlestick Pattern) : ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্নগুলিও ট্রেডিং সংকেত দিতে পারে।
• ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement) : ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলি সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল হিসাবে কাজ করতে পারে।
• এলিয়ট ওয়েভ থিওরি (Elliott Wave Theory) : এলিয়ট ওয়েভ থিওরি বাজারের দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতা বুঝতে সাহায্য করতে পারে।
• গ্যাপ অ্যানালাইসিস (Gap Analysis) : গ্যাপ অ্যানালাইসিস ব্যবহার করে বাজারের অপ্রত্যাশিত মুভমেন্ট সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
• বুলিশ এবং বিয়ারিশ রিভার্সাল (Bullish and Bearish Reversal) : বুলিশ এবং বিয়ারিশ রিভার্সাল প্যাটার্নগুলি বাজারের দিক পরিবর্তনে সাহায্য করে।

উপসংহার

ফিল্টারযুক্ত চশমা একটি শক্তিশালী এবং কার্যকর বাইনারি অপশন ট্রেডিং কৌশল। তবে, এটি সফলভাবে প্রয়োগ করার জন্য ট্রেডারদের যথেষ্ট জ্ঞান, দক্ষতা এবং ধৈর্যের প্রয়োজন। সঠিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে, এই কৌশলটি ট্রেডারদের আর্থিক লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ