ফিল্টার
ফিল্টার
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ফিল্টার একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ট্রেডাররা তাদের ট্রেডিংয়ের জন্য সম্ভাব্য সংকেত বা সুযোগগুলো বাছাই করে, যাতে ভুল সংকেতগুলো এড়িয়ে যাওয়া যায় এবং লাভের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা যায়। একটি কার্যকর ফিল্টার সিস্টেম তৈরি করা সফল বাইনারি অপশন ট্রেডিং কৌশল তৈরির প্রথম ধাপ। এই নিবন্ধে, আমরা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ফিল্টার ব্যবহারের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করব।
ফিল্টার কী এবং কেন প্রয়োজন?
ফিল্টার হলো এমন কিছু শর্ত বা নিয়ম, যা একটি নির্দিষ্ট অ্যাসেটের (যেমন: মুদ্রা, স্টক, কমোডিটি) মুভমেন্টের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। এই নিয়মগুলি নির্ধারণ করে কখন একটি ট্রেড গ্রহণ করা হবে এবং কখন তা এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
- কারণ:*
১. ভুল সংকেত হ্রাস: টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং অন্যান্য সংকেত সবসময় সঠিক হয় না। ফিল্টার ব্যবহারের মাধ্যমে ভুল সংকেতগুলো চিহ্নিত করে ট্রেড থেকে নিজেকে বিরত রাখা যায়। ২. ঝুঁকি হ্রাস: শুধুমাত্র নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ হলেই ট্রেড গ্রহণ করার কারণে সামগ্রিক ঝুঁকি কমে যায়। ৩. সময় বাঁচানো: সব সংকেত বিশ্লেষণ করতে গেলে অনেক সময় নষ্ট হয়। ফিল্টার ব্যবহার করে দ্রুত ট্রেডিংয়ের সুযোগগুলো খুঁজে বের করা যায়। ৪. লাভের সম্ভাবনা বৃদ্ধি: সঠিক সংকেতগুলো বাছাই করে ট্রেড করার মাধ্যমে লাভের সম্ভাবনা বাড়ে।
ফিল্টারের প্রকারভেদ
ফিল্টার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যা ট্রেডারের কৌশল এবং পছন্দের উপর নির্ভর করে। নিচে কয়েকটি প্রধান ফিল্টার নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১. সময় ফিল্টার: এই ফিল্টারটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ট্রেড করার সুযোগ তৈরি করে। যেমন, শুধুমাত্র এশিয়ান সেশন-এ ট্রেড করা অথবা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আসা সংকেতগুলো গ্রহণ করা। ২. ভলিউম ফিল্টার: ভলিউম বিশ্লেষণ-এর উপর ভিত্তি করে এই ফিল্টার তৈরি করা হয়। যদি কোনো অ্যাসেটের ভলিউম একটি নির্দিষ্ট স্তরের উপরে যায়, তবেই ট্রেড গ্রহণ করা হবে। ৩. ট্রেন্ড ফিল্টার: ট্রেন্ড অনুসরণ করে ট্রেড করার জন্য এই ফিল্টার ব্যবহার করা হয়। আপট্রেন্ডে শুধুমাত্র কল অপশন এবং ডাউনট্রেন্ডে শুধুমাত্র পুট অপশন কেনা হয়। ৪. মোমেন্টাম ফিল্টার: অ্যাসেটের মোমেন্টামের উপর ভিত্তি করে এই ফিল্টার কাজ করে। আরএসআই (Relative Strength Index) বা এমএসিডি (Moving Average Convergence Divergence) এর মতো নির্দেশক ব্যবহার করে মোমেন্টাম পরিমাপ করা হয়। ৫. ভলাটিলিটি ফিল্টার: অ্যাসেটের ভলাটিলিটি (Volatility) পরিমাপ করে ট্রেড করার সুযোগ খুঁজে বের করা হয়। উচ্চ ভলাটিলিটি সম্পন্ন অ্যাসেটগুলোতে ট্রেড করার জন্য এই ফিল্টার উপযুক্ত। ৬. সংবাদ ফিল্টার: অর্থনৈতিক সংবাদ এবং ঘটনার উপর ভিত্তি করে এই ফিল্টার কাজ করে। গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ডেটা প্রকাশের আগে বা পরে ট্রেড করার সুযোগ তৈরি হয়। ৭. কাস্টম ফিল্টার: ট্রেডার তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা এবং কৌশল অনুযায়ী কাস্টম ফিল্টার তৈরি করতে পারে।
জনপ্রিয় ফিল্টার নির্দেশক
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ব্যবহৃত কিছু জনপ্রিয় ফিল্টার নির্দেশক নিচে উল্লেখ করা হলো:
| নির্দেশক | বিবরণ | ব্যবহার | ||||||||||||||||||
| মুভিং এভারেজ (Moving Average) | নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অ্যাসেটের গড় মূল্য দেখায়। | ট্রেন্ড নির্ধারণ এবং ফিল্টার করার জন্য ব্যবহৃত হয়। মুভিং এভারেজ | এক্সপোনেনশিয়াল মুভিং এভারেজ (EMA) | সাম্প্রতিক মূল্যগুলোর উপর বেশি গুরুত্ব দেয়। | দ্রুত পরিবর্তনশীল মার্কেটে ট্রেড করার জন্য উপযুক্ত। এক্সপোনেনশিয়াল মুভিং এভারেজ | আরএসআই (RSI) | অ্যাসেটের অতিরিক্ত ক্রয় বা অতিরিক্ত বিক্রয়ের অবস্থা নির্দেশ করে। | মোমেন্টাম ফিল্টার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আরএসআই | এমএসিডি (MACD) | দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক দেখায়। | ট্রেন্ডের দিক এবং শক্তি নির্ধারণ করে। এমএসিডি | বলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands) | অ্যাসেটের ভলাটিলিটি পরিমাপ করে। | ব্রেকআউট ট্রেডিংয়ের জন্য উপযুক্ত। বোলিঙ্গার ব্যান্ড | স্টোকাস্টিক অসিলেটর (Stochastic Oscillator) | অ্যাসেটের বর্তমান মূল্য তার সাম্প্রতিক মূল্যের পরিসরের সাথে তুলনা করে। | অতিরিক্ত ক্রয় বা বিক্রয়ের অবস্থা নির্ণয় করে। স্টোকাস্টিক অসিলেটর | ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement) | সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল চিহ্নিত করে। | পুলব্যাক ট্রেডিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট |
ফিল্টার তৈরির নিয়মাবলী
একটি কার্যকর ফিল্টার তৈরি করার জন্য কিছু নিয়ম অনুসরণ করা উচিত:
১. ব্যাকটেস্টিং: ফিল্টার তৈরি করার পরে ঐতিহাসিক ডেটার উপর ব্যাকটেস্টিং করে এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে হবে। ব্যাকটেস্টিং ২. ঝুঁকি-রিওয়ার্ড অনুপাত: ফিল্টারটি যেন ভালো ঝুঁকি-রিওয়ার্ড অনুপাত প্রদান করে, তা নিশ্চিত করতে হবে। ৩. মার্কেট পরিস্থিতি: বিভিন্ন মার্কেট পরিস্থিতিতে ফিল্টারের কার্যকারিতা ভিন্ন হতে পারে। তাই বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এর কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে হবে। ৪. সহজতা: ফিল্টারটি যেন সহজে বোঝা যায় এবং প্রয়োগ করা যায়। জটিল ফিল্টার ব্যবহার করা কঠিন হতে পারে। ৫. নিয়মিত পর্যবেক্ষণ: ফিল্টারের কার্যকারিতা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন করতে হবে।
বাস্তব উদাহরণ
একটি উদাহরণস্বরূপ, একজন ট্রেডার একটি কাস্টম ফিল্টার তৈরি করতে পারেন যা নিম্নলিখিত শর্তগুলি পূরণ করে:
- সময়: শুধুমাত্র লন্ডন সেশনে ট্রেড করা হবে।
- ভলিউম: অ্যাসেটের ভলিউম গত ২০ দিনের গড় ভলিউমের চেয়ে বেশি হতে হবে।
- ট্রেন্ড: ট্রেন্ড লাইন অনুযায়ী আপট্রেন্ড থাকতে হবে।
- আরএসআই: আরএসআই-এর মান ৫০-এর উপরে থাকতে হবে।
যদি এই সমস্ত শর্ত পূরণ হয়, তবেই ট্রেডার কল অপশন কিনবেন। অন্যথায়, তিনি ট্রেডটি এড়িয়ে যাবেন।
ফিল্টার ব্যবহারের সুবিধা এবং অসুবিধা
- সুবিধা:*
- উচ্চ নির্ভুলতা: সঠিক ফিল্টার ব্যবহার করে ভুল সংকেতগুলো হ্রাস করা যায়।
- ঝুঁকি হ্রাস: শুধুমাত্র নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ হলেই ট্রেড গ্রহণ করার কারণে ঝুঁকি কমে যায়।
- লাভের সম্ভাবনা বৃদ্ধি: সঠিক সংকেতগুলো বাছাই করে ট্রেড করার মাধ্যমে লাভের সম্ভাবনা বাড়ে।
- অসুবিধা:*
- সময়সাপেক্ষ: একটি কার্যকর ফিল্টার তৈরি করতে সময় এবং ধৈর্যের প্রয়োজন।
- সীমাবদ্ধতা: কোনো ফিল্টারই ১০০% নির্ভুল নয়।
- অতিরিক্ত ফিল্টারিং: অতিরিক্ত ফিল্টারিংয়ের কারণে অনেক সম্ভাব্য ট্রেডিং সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে।
উন্নত ফিল্টার কৌশল
১. একাধিক ফিল্টার ব্যবহার: একটিমাত্র ফিল্টারের উপর নির্ভর না করে একাধিক ফিল্টার ব্যবহার করলে নির্ভুলতা বাড়ে। ২. অটোমেটেড ফিল্টার: অটোমেটেড ট্রেডিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে ফিল্টার স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রয়োগ করা যায়। ৩. লার্নিং অ্যালগরিদম: মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ফিল্টারকে আরও বুদ্ধিমান করে তোলা যায়। এই অ্যালগরিদমগুলো ঐতিহাসিক ডেটা থেকে শিখতে পারে এবং সময়ের সাথে সাথে নিজেদেরকে উন্নত করতে পারে। ৪. কম্বিনেশন টেকনিক: বিভিন্ন টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের সমন্বয়ে ফিল্টার তৈরি করা যেতে পারে।
উপসংহার
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ফিল্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। সঠিক ফিল্টার ব্যবহার করে ট্রেডাররা তাদের ট্রেডিংয়ের কার্যকারিতা বাড়াতে পারে এবং ঝুঁকি কমাতে পারে। তবে, একটি কার্যকর ফিল্টার তৈরি করতে সময়, ধৈর্য এবং অধ্যবসায় প্রয়োজন। নিয়মিত মার্কেট বিশ্লেষণ এবং ব্যাকটেস্টিংয়ের মাধ্যমে ফিল্টারকে উন্নত করতে হবে। এছাড়াও, বিভিন্ন ধরনের ফিল্টার এবং নির্দেশক সম্পর্কে জ্ঞান রাখা প্রয়োজন, যাতে ট্রেডাররা তাদের নিজস্ব কৌশল অনুযায়ী ফিল্টার তৈরি করতে পারে।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং ট্রেডিং মনোবিজ্ঞান-এর মতো বিষয়গুলোও ফিল্টার ব্যবহারের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ।
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
