ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট কৌশল
ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট কৌশল
ভূমিকা {{{toc}}} ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট কৌশল বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর জগতে বহুল ব্যবহৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ পদ্ধতি। এই কৌশলটি মূলত লিওনার্দো ফিওনাচ্চি নামক একজন ইতালীয় গণিতবিদের আবিষ্কৃত সংখ্যাsequence-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি। ট্রেডাররা এই কৌশল ব্যবহার করে সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেলগুলো চিহ্নিত করতে পারেন, যা তাদের ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হয়। এই নিবন্ধে, ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট কৌশলটির মূল ধারণা, ব্যবহার এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ এর প্রয়োগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
ফিওনাচ্চি সংখ্যা এবং অনুপাত ফিওনাচ্চি সংখ্যাsequence শুরু হয় ০ এবং ১ দিয়ে, এবং পরবর্তী সংখ্যাটি আগের দুটি সংখ্যার যোগফল। এই ধারাটি হলো: ০, ১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১, ৩৪, ৫৫, ৮৯, ১৪৪, ২৩৩, ৩৭৭, ৬১০, ৯৮৭…। এই সংখ্যাsequence থেকে প্রাপ্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ অনুপাত হলো:
- ৬১.৮% (গোল্ডেন রেশিও)
- ৩৮.২%
- ৫০%
- ২৩.৬%
- ৭৬.৪%
এই অনুপাতগুলি ফিনান্সিয়াল মার্কেটে প্রায়শই দেখা যায় এবং ট্রেডাররা এগুলোকে সাপোর্ট ও রেজিস্ট্যান্স লেভেল হিসেবে ব্যবহার করেন।
ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলো কিভাবে কাজ করে? ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলো একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি শেয়ারের মূল্যের মুভমেন্টের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। যখন একটি শেয়ারের দাম একটি উল্লেখযোগ্য মুভমেন্ট করে, তখন এই লেভেলগুলো সম্ভাব্য পুলব্যাক বা রিট্রেসমেন্ট এরিয়া হিসেবে কাজ করে।
একটি বুলিশ ট্রেন্ডে, দাম প্রথমে বাড়তে থাকে এবং তারপর একটি নির্দিষ্ট লেভেল থেকে পিছু হটে। এই পিছু হটার সময়, ট্রেডাররা ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলো ব্যবহার করে দেখেন দাম কোন লেভেলে সাপোর্ট পেতে পারে। সাধারণত, ৩৮.২%, ৫০%, এবং ৬১.৮% লেভেলগুলোতে সাপোর্ট পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
অন্যদিকে, একটি বিয়ারিশ ট্রেন্ডে, দাম প্রথমে কমতে থাকে এবং তারপর একটি নির্দিষ্ট লেভেল থেকে বাউন্স ব্যাক করে। এই বাউন্স ব্যাকের সময়, ট্রেডাররা ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলো ব্যবহার করে দেখেন দাম কোন লেভেলে রেজিস্ট্যান্স পেতে পারে। এখানেও, ৩৮.২%, ৫০%, এবং ৬১.৮% লেভেলগুলোতে রেজিস্ট্যান্স পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট অঙ্কন করার নিয়ম ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলো অঙ্কন করার জন্য, প্রথমে একটি উল্লেখযোগ্য সুইং হাই (Swing High) এবং সুইং লো (Swing Low) চিহ্নিত করতে হবে।
- বুলিশ ট্রেন্ডের জন্য: সুইং লো থেকে সুইং হাই পর্যন্ত লাইন টানা হয়।
- বিয়ারিশ ট্রেন্ডের জন্য: সুইং হাই থেকে সুইং লো পর্যন্ত লাইন টানা হয়।
লাইন টানার পরে, ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট টুল ব্যবহার করে নির্দিষ্ট অনুপাতগুলোতে (যেমন: ২৩.৬%, ৩৮.২%, ৫০%, ৬১.৮%, ৭৬.৪%) হরাইজন্টাল লাইন তৈরি করা হয়। এই লাইনগুলোই হলো ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেল।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট এর ব্যবহার বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট কৌশলটি বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে:
১. কল অপশন ট্রেড (Call Option Trade): যখন দাম একটি আপট্রেন্ডে থাকে এবং ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলে পুলব্যাক করে, তখন ট্রেডাররা কল অপশন কিনতে পারেন। এক্ষেত্রে, ৩৮.২% বা ৬১.৮% লেভেলগুলোতে বাউন্স ব্যাক করার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
২. পুট অপশন ট্রেড (Put Option Trade): যখন দাম একটি ডাউনট্রেন্ডে থাকে এবং ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলে বাউন্স ব্যাক করে, তখন ট্রেডাররা পুট অপশন কিনতে পারেন। এক্ষেত্রে, ৩৮.২% বা ৬১.৮% লেভেলগুলোতে রিজেক্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৩. রেঞ্জ ট্রেডিং (Range Trading): যদি দাম একটি নির্দিষ্ট রেঞ্জের মধ্যে ঘোরাফেরা করে, তবে ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলো সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স এরিয়া হিসেবে কাজ করতে পারে। ট্রেডাররা এই লেভেলগুলোতে বাউন্স ব্যাক করে ট্রেড করতে পারেন।
৪. ব্রেকআউট ট্রেডিং (Breakout Trading): যখন দাম ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলো ভেঙে উপরে বা নিচে যায়, তখন এটি একটি ব্রেকআউট নির্দেশ করে। ব্রেকআউটের দিকে ট্রেড করা লাভজনক হতে পারে।
ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট এর সাথে অন্যান্য সূচক এর সমন্বয় ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট কৌশলটিকে আরও শক্তিশালী করার জন্য, অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর-এর সাথে সমন্বয় করা যেতে পারে। নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো:
- মুভিং এভারেজ (Moving Average): মুভিং এভারেজ সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স হিসেবে কাজ করে, যা ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলোর সাথে মিলিত হয়ে ট্রেডিংয়ের সুযোগ তৈরি করে। মুভিং এভারেজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন।
- আরএসআই (RSI): রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স (RSI) ব্যবহার করে ওভারবট (Overbought) এবং ওভারসোল্ড (Oversold) পরিস্থিতি চিহ্নিত করা যায়, যা ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলোর সাথে মিলিয়ে ট্রেড করতে সাহায্য করে।
- এমএসিডি (MACD): মুভিং এভারেজ কনভারজেন্স ডাইভারজেন্স (MACD) ট্রেন্ডের দিক এবং শক্তি নির্দেশ করে, যা ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট ট্রেডের নিশ্চিততা বাড়ায়।
- ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis): ভলিউম বিশ্লেষণের মাধ্যমে মার্কেটের গতিবিধি বোঝা যায়। ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলোতে ভলিউম বৃদ্ধি পেলে, সেটি একটি শক্তিশালী সংকেত দেয়।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট কৌশল ব্যবহার করার সময়, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু সাধারণ টিপস নিচে দেওয়া হলো:
- স্টপ-লস অর্ডার (Stop-Loss Order) ব্যবহার করুন: অপ্রত্যাশিত মার্কেট মুভমেন্ট থেকে বাঁচতে স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করা উচিত।
- পজিশন সাইজিং (Position Sizing): প্রতিটি ট্রেডের জন্য আপনার অ্যাকাউন্টের একটি ছোট অংশ ব্যবহার করুন।
- লিভারেজ (Leverage) নিয়ন্ত্রণ করুন: অতিরিক্ত লিভারেজ ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
- মার্কেট নিউজ (Market News) অনুসরণ করুন: গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সংবাদ এবং ঘটনার দিকে নজর রাখুন, যা মার্কেটের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট কৌশল ব্যবহারের সুবিধা এবং অসুবিধা সুবিধা:
- সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেলগুলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।
- ট্রেডিংয়ের সুযোগগুলো খুঁজে বের করা সহজ করে।
- অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর-এর সাথে সমন্বয় করে আরও নির্ভুল ট্রেড করা যায়।
অসুবিধা:
- এটি একটি নিখুঁত কৌশল নয় এবং সবসময় সঠিক সংকেত দেয় না।
- ভুলভাবে লেভেলগুলো অঙ্কন করলে ভুল সংকেত পেতে পারেন।
- মার্কেটের ভোলাটিলিটির (Volatility) কারণে অনেক সময় লেভেলগুলো ভেঙে যেতে পারে।
উদাহরণ ধরা যাক, একটি শেয়ারের দাম ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকায় উঠেছে। এখন, যদি দাম পুলব্যাক করে, তবে ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলো নিম্নরূপ হবে:
- ২৩.৬% - ১১৭.৬৪ টাকা
- ৩৮.২% - ১১৬.১৬ টাকা
- ৫০% - ১১৫ টাকা
- ৬১.৮% - ১১৩.৮২ টাকা
- ৭৬.৪% - ১১২.২৪ টাকা
যদি দাম ১১৫ টাকা (৫০% লেভেল) থেকে বাউন্স ব্যাক করে, তবে এটি একটি কল অপশন ট্রেডের জন্য ভালো সুযোগ হতে পারে।
উপসংহার ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট কৌশল একটি শক্তিশালী ট্রেডিং টুল যা বাইনারি অপশন ট্রেডারদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হতে পারে। তবে, এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে এই কৌশলটি সম্পূর্ণরূপে নির্ভুল নয়। সফল ট্রেডিংয়ের জন্য, অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কৌশলগুলোর সাথে এটি ব্যবহার করা উচিত। নিয়মিত অনুশীলন এবং মার্কেট সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখলে, ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট কৌশল ব্যবহার করে লাভজনক ট্রেড করা সম্ভব।
আরও জানতে:
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
- চার্ট প্যাটার্ন
- ট্রেডিং সাইকোলজি
- মানি ম্যানেজমেন্ট
- বাইনারি অপশন বেইসিক
- টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস টুলস
- মার্কেট সেন্টিমেন্ট
- ভলিউম স্প্রেড অ্যানালাইসিস
- ওয়েভ থিওরি
- ডাউ থিওরি
- এলিয়ট ওয়েভ থিওরি
- গ্যাপ অ্যানালাইসিস
- ফর্মেশন ট্রেডিং
- ডে ট্রেডিং
- সুইং ট্রেডিং অথবা
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
