ফার্মিং এবং ট্যাক্সেশন

ফার্মিং এবং ট্যাক্সেশন

ভূমিকা

কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। দেশের বৃহৎ সংখ্যক মানুষ কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল এবং এটি গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট (জিডিপি)-এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। কৃষিকাজ শুধু খাদ্য সরবরাহ করে না, এটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত্তি হিসেবেও কাজ করে। তবে, কৃষিকাজের সাথে জড়িত ট্যাক্সেশন বা কর ব্যবস্থা অনেক কৃষকের কাছে জটিল এবং দুর্বোধ্য হতে পারে। এই নিবন্ধে, ফার্মিং এবং ট্যাক্সেশন সম্পর্কিত বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হলো, যা কৃষকদের তাদের কর বাধ্যবাধকতা বুঝতে এবং সঠিকভাবে পালন করতে সহায়ক হবে।

কৃষি খাতের ট্যাক্সেশনের গুরুত্ব

কৃষি অর্থনীতি-র প্রেক্ষাপটে ট্যাক্সেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, কৃষি উন্নয়ন এবং কৃষকদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ট্যাক্সেশন অপরিহার্য। সঠিকভাবে কর প্রদান করা কৃষকদের দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্বের অংশ।

কৃষি করের প্রকারভেদ

বাংলাদেশে কৃষি কাজের উপর বিভিন্ন ধরনের কর আরোপ করা হয়। এগুলোর মধ্যে কিছু সরাসরি কর, আবার কিছু পরোক্ষ কর। নিচে প্রধান কয়েকটি করের বিবরণ দেওয়া হলো:

১. আয়কর: আয়কর কৃষকদের আয়ের উপর ভিত্তি করে ধার্য করা হয়। তবে, কৃষি আয় সাধারণত আয়করমুক্ত থাকে, যদি তা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে হয়।

২. ভূমি কর: ভূমি কর হলো কৃষিজমি ব্যবহারের উপর ধার্য করা কর। এই কর জমির মালিকানা এবং জমির ধরনের উপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয়।

৩. সেচ কর: সেচ ব্যবস্থা ব্যবহার করে জমিতে ফসল ফলালে সেচ কর দিতে হয়। এই কর সাধারণত স্থানীয় সরকার দ্বারা নির্ধারিত হয়।

৪. কৃষি পণ্যের বাজারজাতকরণ কর: কৃষি পণ্য বাজারে বিক্রি করার সময় এই কর প্রযোজ্য হয়।

৫. ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর): ভ্যাট কিছু কৃষি পণ্যের উপর প্রযোজ্য হতে পারে, বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে।

আয়কর এবং কৃষি আয়

সাধারণত, কৃষি আয় আয়কর আইন থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত। তবে, কিছু ক্ষেত্রে কৃষি আয়কে মোট আয়ের সাথে যোগ করে কর হিসাব করা হতে পারে। সাধারণত, যদি কোনো ব্যক্তি কৃষি কাজের পাশাপাশি অন্য কোনো ব্যবসা বা পেশা থেকে আয় করেন, তবে তার মোট আয় হিসাব করার সময় কৃষি আয় যোগ করা হয়।

আয়করমুক্তির সীমা: প্রতি বছর সরকার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কৃষি আয়কে করমুক্ত ঘোষণা করে। এই সীমা অতিক্রম করলে কৃষকদের কর দিতে হয়।

ভূমি করের নিয়মাবলী

ভূমি কর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় সরকার-এর রাজস্ব উৎস। ভূমি করের হার এবং নিয়মাবলী বিভিন্ন জেলা এবং মৌজা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে।

জমির প্রকারভেদ: ভূমি কর সাধারণত জমির প্রকারভেদের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়, যেমন - বসতি জমি, কৃষি জমি, বনভূমি ইত্যাদি।

জমির মালিকানা: জমির মালিকের ধরনের উপরও ভূমি করের হার নির্ভর করে, যেমন - ব্যক্তিগত মালিকানা, সরকারি মালিকানা, যৌথ মালিকানা ইত্যাদি।

কর নির্ধারণ প্রক্রিয়া: স্থানীয় ভূমি অফিস ভূমি করের পরিমাণ নির্ধারণ করে এবং কৃষকদের মধ্যে নোটিশ পাঠায়।

সেচ করের বিস্তারিত

সেচ হলো কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায়। সেচ ব্যবহারের জন্য কৃষকদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিতে হয়।

সেচ করের হার: সেচ করের হার সাধারণত প্রতি বিঘা জমির উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। এই হার স্থানীয় সেচ সমবায় সমিতি বা স্থানীয় সরকার দ্বারা নির্ধারিত হতে পারে।

কর পরিশোধের পদ্ধতি: সেচ কর সাধারণত স্থানীয় সমবায় সমিতি বা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়।

কৃষি পণ্যের বাজারজাতকরণ কর

কৃষি পণ্য বাজারে বিক্রি করার সময় কৃষকদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বাজারজাতকরণ কর দিতে হয়। এই কর সাধারণত পণ্যের মূল্যের উপর ভিত্তি করে ধার্য করা হয়।

হার নির্ধারণ: বাজারজাতকরণ করের হার সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হয় এবং সময়ে সময়ে এটি পরিবর্তন করা হতে পারে।

সংগ্রহ ও বিতরণ: এই কর স্থানীয় বাজার কমিটি বা স্থানীয় সরকার কর্তৃক সংগ্রহ করা হয় এবং কৃষি উন্নয়নে ব্যয় করা হয়।

ভ্যাট এবং কৃষি পণ্য

কিছু কৃষি পণ্যের উপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রযোজ্য হতে পারে, বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে।

প্রযোজ্য পণ্য: প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, যেমন - প্যাকেটজাত খাবার, পানীয়, এবং অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত কৃষি পণ্যের উপর ভ্যাট প্রযোজ্য।

ভ্যাট হার: ভ্যাট-এর হার পণ্যের প্রকারভেদের উপর নির্ভর করে।

ভ্যাট পরিশোধের নিয়ম: ভ্যাট সাধারণত উৎপাদনকারী বা আমদানিকারক কর্তৃক পরিশোধ করা হয়।

কৃষকদের জন্য কর ছাড় এবং প্রণোদনা

সরকার কৃষকদের উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কর ছাড় এবং প্রণোদনা প্রদান করে।

সরাসরি নগদ সহায়তা: সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরাসরি নগদ সহায়তা প্রদান করে।

বীজ ও সার subsidy: কৃষকদের বীজ ও সার কেনার জন্য সরকার subsidy প্রদান করে।

ঋণ সহায়তা: কৃষি ঋণ কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার সুযোগ করে দেয়।

কর অবকাশ: কিছু ক্ষেত্রে, সরকার কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের জন্য কর অবকাশ প্রদান করে।

ট্যাক্সেশন এবং কৃষকের অধিকার

প্রত্যেক কৃষকের ট্যাক্সেশন সম্পর্কে জানার অধিকার রয়েছে।

তথ্য জানার অধিকার: কৃষকদের তাদের কর সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য জানার অধিকার আছে।

আপিল করার অধিকার: কোনো কৃষক যদি কর নির্ধারণের সাথে একমত না হন, তবে তিনি আপিল করার অধিকার রাখেন।

আইনি সহায়তা: প্রয়োজনে কৃষকরা আইনি সহায়তা নিতে পারেন।

কৃষকদের জন্য ট্যাক্স বিষয়ক পরামর্শ

১. সঠিক হিসাব রাখা: কৃষকদের তাদের আয় এবং ব্যয়ের সঠিক হিসাব রাখা উচিত।

২. সময়মতো কর পরিশোধ: সময়মতো কর পরিশোধ করলে জরিমানা এড়ানো যায়।

৩. বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: জটিল কর বিষয়ে অভিজ্ঞ ট্যাক্স পরামর্শক-এর পরামর্শ নেওয়া উচিত।

৪. সরকারি নিয়মাবলী অনুসরণ: সরকার কর্তৃক জারিকৃত ট্যাক্স সংক্র

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ