প্রশাসনিক খরচ
প্রশাসনিক খরচ: একটি বিস্তারিত আলোচনা
ভূমিকা
যেকোনো ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রশাসনিক খরচ একটি অপরিহার্য বিষয়। এই খরচগুলো সরাসরি পণ্য উৎপাদন বা পরিষেবা প্রদানের সাথে জড়িত না হলেও, প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক কার্যক্রমকে সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রশাসনিক খরচ বলতে মূলত সেইসব খরচকে বোঝায় যা একটি প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক বিভাগ পরিচালনা করতে প্রয়োজন হয়। এই বিভাগে সাধারণত মানব সম্পদ, হিসাব বিভাগ, আইনি পরিষেবা, অফিস ব্যবস্থাপনা এবং অন্যান্য সহায়ক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই নিবন্ধে, প্রশাসনিক খরচ কী, এর প্রকারভেদ, হিসাব করার পদ্ধতি, এবং কিভাবে এই খরচ নিয়ন্ত্রণ করা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
প্রশাসনিক খরচ কী?
প্রশাসনিক খরচ হলো সেই ব্যয় যা কোনো প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত। এটি প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা পরিষেবা তৈরি করার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়, বরং ব্যবসা পরিচালনা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমকে সমর্থন করে। এই খরচগুলির মধ্যে রয়েছে অফিসের ভাড়া, কর্মীদের বেতন, প্রশাসনিক সরঞ্জাম, আইনি এবং পেশাদার ফি, বীমা এবং অন্যান্য সাধারণ প্রশাসনিক ব্যয়। প্রশাসনিক খরচ ব্যবসার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য নিশ্চিত করতে সহায়ক।
প্রশাসনিক খরচের প্রকারভেদ
প্রশাসনিক খরচকে সাধারণত দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়:
১. প্রত্যক্ষ প্রশাসনিক খরচ: এই ধরনের খরচগুলো সরাসরি প্রশাসনিক কাজের সাথে জড়িত এবং সহজেই চিহ্নিত করা যায়। উদাহরণস্বরূপ:
- অফিস কর্মীদের বেতন ও মজুরি: প্রশাসনিক বিভাগে কর্মরত সকল কর্মীর বেতন, যেমন - হিসাবরক্ষক, ব্যবস্থাপক, প্রশাসনিক সহকারী ইত্যাদি।
- অফিসের ভাড়া ও ইউটিলিটি বিল: অফিসের স্থান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, পানি বিল, গ্যাস বিল, এবং ইন্টারনেট বিল।
- অফিস সরঞ্জাম ও সরবরাহ: কম্পিউটার, প্রিন্টার, স্টেশনারি, এবং অন্যান্য অফিস সরঞ্জাম কেনার খরচ।
- যোগাযোগ খরচ: টেলিফোন বিল, ফ্যাক্স বিল, এবং ডাক খরচ।
- আইনি ও পেশাদার ফি: আইনজীবী, হিসাব নিরীক্ষক, এবং পরামর্শকদের ফি।
- বীমা খরচ: প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি এবং কর্মীদের জন্য বীমা প্রিমিয়াম।
২. পরোক্ষ প্রশাসনিক খরচ: এই খরচগুলো সরাসরি প্রশাসনিক কাজের সাথে জড়িত নয়, তবে প্রশাসনিক কার্যক্রমকে সমর্থন করে। এগুলো বণ্টন করা কঠিন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ:
- অবচয়: অফিস সরঞ্জাম এবং আসবাবপত্রের অবচয়।
- মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ: অফিস এবং সরঞ্জামের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ।
- প্রশিক্ষণ খরচ: প্রশাসনিক কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং উন্নয়ন খরচ।
- ভ্রমণ খরচ: প্রশাসনিক কাজের জন্য কর্মীদের ভ্রমণ খরচ।
- সাধারণ প্রশাসনিক খরচ: বিভিন্ন ধরনের প্রশাসনিক খরচ যা নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায় না।
প্রশাসনিক খরচ হিসাব করার পদ্ধতি
প্রশাসনিক খরচ সঠিকভাবে হিসাব করা একটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে:
১. খরচ চিহ্নিতকরণ: প্রথমে, সমস্ত প্রশাসনিক খরচ চিহ্নিত করতে হবে। এর জন্য প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিভাগকে বিস্তারিত তালিকা তৈরি করতে হবে।
২. খরচ শ্রেণীবিভাগ: চিহ্নিত খরচগুলোকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ খরচে ভাগ করতে হবে।
৩. প্রত্যক্ষ খরচ যোগফল: প্রত্যক্ষ খরচগুলোর মোট পরিমাণ হিসাব করতে হবে।
৪. পরোক্ষ খরচ বণ্টন: পরোক্ষ খরচগুলোকে উপযুক্ত ভিত্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে বণ্টন করতে হবে। যেমন, অফিসের ভাড়া ক্ষেত্রফলের ভিত্তিতে বণ্টন করা যেতে পারে।
৫. মোট প্রশাসনিক খরচ: প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ খরচ যোগ করে মোট প্রশাসনিক খরচ নির্ণয় করতে হবে।
| খরচের ধরণ | পরিমাণ (টাকা) | |||||||||||||||||||
| অফিস কর্মীদের বেতন | ১,৫০,০০০ | অফিসের ভাড়া | ৩০,০০০ | বিদ্যুৎ বিল | ১০,০০০ | স্টেশনারি খরচ | ৫,০০০ | আইনি ফি | ২০,০০০ | অবচয় | ৮,০০০ | মোট প্রশাসনিক খরচ | ২,২৩,০০০ |
প্রশাসনিক খরচ নিয়ন্ত্রণের উপায়
প্রশাসনিক খরচ নিয়ন্ত্রণ করা একটি প্রতিষ্ঠানের লাভজনকতা বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। নিম্নলিখিত কিছু উপায় অবলম্বন করে এই খরচ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে:
১. বাজেট প্রণয়ন: একটি বাস্তবসম্মত বাজেট তৈরি করতে হবে এবং নিয়মিতভাবে প্রকৃত খরচের সাথে তুলনা করতে হবে।
২. খরচ পর্যালোচনা: নিয়মিতভাবে প্রশাসনিক খরচ পর্যালোচনা করতে হবে এবং অতিরিক্ত খরচ চিহ্নিত করতে হবে।
৩. প্রযুক্তি ব্যবহার: প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রশাসনিক কার্যক্রমকে স্বয়ংক্রিয় করা যেতে পারে, যা সময় এবং খরচ উভয়ই সাশ্রয় করবে। উদাহরণস্বরূপ, ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করে ডেটা সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার খরচ কমানো যায়।
৪. কর্মী ব্যবস্থাপনা: কর্মীদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে প্রশিক্ষণ প্রদান করা উচিত।
৫. সরবরাহকারীদের সাথে দর কষাকষি: অফিস সরঞ্জাম এবং অন্যান্য সরবরাহের জন্য সরবরাহকারীদের সাথে দর কষাকষি করে খরচ কমানো যায়।
৬. অপচয় হ্রাস: অফিসের বিদ্যুৎ, পানি এবং অন্যান্য সম্পদের অপচয় রোধ করতে হবে।
৭. আউটসোর্সিং: কিছু প্রশাসনিক কাজ, যেমন - হিসাবরক্ষণ এবং আইনি পরিষেবা, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে করানো যেতে পারে, যা খরচ কমাতে সহায়ক হতে পারে।
৮. পেপারলেস অফিস: কাগজ ব্যবহার কমিয়ে ডিজিটাল ডকুমেন্টেশন চালু করলে স্টেশনারি খরচ কমানো যায় এবং পরিবেশের সুরক্ষাও নিশ্চিত করা যায়।
৯. ভ্রমণ নীতি: কর্মীদের ভ্রমণ খরচ নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি সুস্পষ্ট ভ্রমণ নীতি তৈরি করতে হবে।
১০. নিয়মিত নিরীক্ষণ: প্রশাসনিক খরচ নিরীক্ষণের জন্য একটি অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগ তৈরি করতে হবে।
প্রশাসনিক খরচের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়
- খরচ-আয় বিশ্লেষণ: প্রশাসনিক খরচ এবং প্রতিষ্ঠানের আয় এর মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
- বাজেট পরিকল্পনা: কার্যকর বাজেট তৈরি এবং তার সঠিক ব্যবহার প্রশাসনিক খরচ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
- আর্থিক প্রতিবেদন: নিয়মিত আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করে প্রশাসনিক খরচের সঠিক চিত্র পাওয়া যায়।
- কস্ট অ্যাকাউন্টিং: প্রশাসনিক খরচের সঠিক হিসাব রাখার জন্য কস্ট অ্যাকাউন্টিং পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে।
- যোগান শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা: প্রশাসনিক কাজের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের যোগান শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে খরচ কমানো যায়।
- মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা: দক্ষ মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো যায়, যা প্রশাসনিক খরচ কমাতে সহায়ক।
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: প্রশাসনিক খরচ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে এমন ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে সম্পর্ক
যদিও প্রশাসনিক খরচ সরাসরি বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে সম্পর্কিত নয়, তবে একটি ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানের সফল পরিচালনার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। একটি বাইনারি অপশন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম বা ব্রোকারেজ ফার্মের প্রশাসনিক খরচ নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর সাথে জড়িত:
- প্ল্যাটফর্মের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ
- কর্মীদের বেতন (যেমন, গ্রাহক পরিষেবা, প্রযুক্তিগত সহায়তা)
- মার্কেটিং এবং বিজ্ঞাপন খরচ
- আইনি এবং সম্মতি খরচ
- অফিসের ভাড়া এবং ইউটিলিটি বিল
এই খরচগুলো সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে, ব্রোকারেজের লাভজনকতা কমে যেতে পারে।
কৌশলগত বিবেচনা
- ভ্যালু চেইন বিশ্লেষণ: প্রতিষ্ঠানের ভ্যালু চেইনে প্রশাসনিক কার্যক্রমের মূল্যায়ন করে খরচ কমানোর সুযোগ খুঁজে বের করা।
- বেনচমার্কিং: অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক খরচের সাথে তুলনা করে নিজের প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং উন্নতির পদক্ষেপ নেওয়া।
- কার্যকরী স্কোরকার্ড: প্রশাসনিক কার্যক্রমের কর্মক্ষমতা পরিমাপের জন্য একটি কার্যকরী স্কোরকার্ড তৈরি করা এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা।
- লিন ম্যানুফ্যাকচারিং: লিন ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ধারণা ব্যবহার করে প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় অপচয় কমানো এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
- সিক্স সিগমা: এই পদ্ধতির মাধ্যমে প্রশাসনিক কাজের গুণগত মান উন্নত করা এবং ত্রুটি হ্রাস করা।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ
যদিও প্রশাসনিক খরচ একটি মৌলিক আর্থিক বিষয়, তবুও টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণের ধারণাগুলো এখানে প্রাসঙ্গিক হতে পারে। যেমন:
- খরচ প্রবণতা বিশ্লেষণ: সময়ের সাথে সাথে প্রশাসনিক খরচের পরিবর্তন বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ প্রবণতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা।
- খরচ এবং আয়ের সম্পর্ক বিশ্লেষণ: প্রশাসনিক খরচ এবং প্রতিষ্ঠানের আয়ের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে লাভজনকতা মূল্যায়ন করা।
- ভলিউম বিশ্লেষণ: প্রশাসনিক কাজের ভলিউম (যেমন, প্রক্রিয়াকৃত লেনদেনের সংখ্যা) এবং খরচের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা।
উপসংহার
প্রশাসনিক খরচ একটি প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পরিকল্পনা, হিসাব এবং নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই খরচ কমিয়ে প্রতিষ্ঠানের লাভজনকতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, প্রযুক্তি ব্যবহার, এবং কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে প্রশাসনিক খরচ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই নিবন্ধে প্রশাসনিক খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে, যা ব্যবসা এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি মূল্যবান নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করবে।
আরও জানতে:
- হিসাববিজ্ঞান
- অর্থায়ন
- ব্যবস্থাপনা
- খরচ নিয়ন্ত্রণ
- বাজেট বিশ্লেষণ
- আর্থিক পরিকল্পনা
- বিনিয়োগ
- ঝুঁকি মূল্যায়ন
- কর পরিকল্পনা
- আইন ও বিধিবিধান
- যোগাযোগ দক্ষতা
- সমস্যা সমাধান
- সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া
- সময় ব্যবস্থাপনা
- নেতৃত্ব
- দলবদ্ধভাবে কাজ করা
- গুণমান নিয়ন্ত্রণ
- যোগান শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা
- প্রযুক্তিগত দক্ষতা
- ডেটা বিশ্লেষণ
- ক্লাউড কম্পিউটিং
- সাইবার নিরাপত্তা
- মার্কেটিং কৌশল
- গ্রাহক সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা
এই নিবন্ধটি প্রশাসনিক খরচ সম্পর্কে একটি সম্পূর্ণ ধারণা প্রদান করে এবং আশা করা যায় যে এটি পাঠক এবং পেশাদারদের জন্য সহায়ক হবে।
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
