পোস্টমডার্নিজম
পোস্টমডার্নিজম: একটি বিস্তারিত আলোচনা
পোস্টমডার্নিজম বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে প্রভাবশালী একটি বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলন। এটি আধুনিকতাবাদের (Modernism) প্রতিক্রিয়া হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং দর্শন, শিল্পকলা, সাহিত্য, স্থাপত্য, এবং ক্রিটিক্যাল থিওরির উপর গভীর প্রভাব ফেলে। পোস্টমডার্নিজম কোনো একক মতবাদ নয়, বরং বিভিন্ন চিন্তাধারা ও পদ্ধতির সমষ্টি। এই নিবন্ধে পোস্টমডার্নিজমের মূল ধারণা, বৈশিষ্ট্য, এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর প্রভাব আলোচনা করা হলো।
সূচনা
পোস্টমডার্নিজম শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন স্প্যানিশ দার্শনিক হুয়ান মার্টিনেজ আলারিকন। পরবর্তীতে ফরাসি দার্শনিক জ্যাঁ-ফ্রঁসোয়া লিয়োতার্দ তাঁর ‘The Postmodern Condition’ (১৯৭৯) গ্রন্থে এই ধারণাকে জনপ্রিয় করেন। লিয়োতার্দ পোস্টমডার্নিজমকে মেটা- narrative বা বৃহৎ আখ্যানের প্রতি অবিশ্বাসের যুগ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
পোস্টমডার্নিজমের মূল ধারণা
- মেটা- narrative-এর প্রত্যাখ্যান: পোস্টমডার্নিজম মনে করে যে ইতিহাস, বিজ্ঞান, বা যুক্তির মাধ্যমে কোনো সর্বজনীন সত্য বা চূড়ান্ত ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়। সত্য আপেক্ষিক এবং সংস্কৃতি ও প্রেক্ষাপটের উপর নির্ভরশীল।
- আপেক্ষিকতাবাদ (Relativism): পোস্টমডার্নিজম অনুসারে, জ্ঞান, নৈতিকতা, এবং মূল্যবোধ কোনো নিরপেক্ষ ভিত্তি থেকে আসে না, বরং এগুলো সামাজিক নির্মাণ।
- গঠনবাদ (Constructionism): এই ধারণা অনুযায়ী, বাস্তবতা কোনো পূর্বনির্ধারিত সত্তা নয়, বরং ভাষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়। ভাষা এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- ডিসেন্টারিং (Decentering): পোস্টমডার্নিজম কোনো নির্দিষ্ট কেন্দ্র বা ক্ষমতার উৎসকে স্বীকৃতি দেয় না। এটি ক্ষমতা কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করে এবং প্রান্তিক voices বা কণ্ঠস্বরকে তুলে ধরে।
- ডি construction (Deconstruction): ফরাসি দার্শনিক জ্যাক দেরিদা এই পদ্ধতির প্রবক্তা। ডি construction হলো কোনো টেক্সট বা ধারণার অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্ব এবং অস্থিতিশীলতা উন্মোচন করা।
- আন্তঃপাঠ্যতা (Intertextuality): যেকোনো টেক্সট অন্যান্য টেক্সটের সাথে সম্পর্কিত। কোনো টেক্সটের অর্থ সম্পূর্ণরূপে বোঝার জন্য অন্যান্য টেক্সটের संदर्भ বিবেচনা করা প্রয়োজন।
পোস্টমডার্নিজমের বৈশিষ্ট্য
- বিখণ্ডতা (Fragmentation): পোস্টমডার্ন শিল্পকলা এবং সাহিত্য প্রায়শই খণ্ডিত এবং অসংলগ্ন হয়ে থাকে।
- অনিশ্চয়তা (Uncertainty): পোস্টমডার্নিজম চূড়ান্ত সত্য বা জ্ঞানের নিশ্চয়তা দেয় না।
- বহুত্ববাদ (Pluralism): বিভিন্ন সংস্কৃতি, দৃষ্টিভঙ্গি এবং শৈলীর সহাবস্থানকে উৎসাহিত করা হয়।
- বিদ্রূপ (Irony) ও প্যারোডি (Parody): পোস্টমডার্ন শিল্পকলায় প্রায়শই বিদ্রূপ এবং প্যারোডি ব্যবহার করা হয়।
- সীমারেখা বিলোপ (Blurring of boundaries): উচ্চ সংস্কৃতি ও জনপ্রিয় সংস্কৃতির মধ্যে পার্থক্য হ্রাস করা হয়।
- নিজ-সচেতনতা (Self-awareness): পোস্টমডার্ন শিল্পকলা প্রায়শই নিজের নির্মাণ সম্পর্কে সচেতন থাকে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে পোস্টমডার্নিজমের প্রভাব
- দর্শন: পোস্টমডার্ন দর্শন মাইকেল ফুকো, দেরিদা, এবং লিয়োতার্দের কাজের মাধ্যমে প্রভাবিত। ফুকো ক্ষমতা এবং জ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছেন, অন্যদিকে দেরিদা ডি construction পদ্ধতির মাধ্যমে ভাষার সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছেন।
- সাহিত্য: পোস্টমডার্ন সাহিত্য উত্তরাধুনিক সাহিত্য নামেও পরিচিত। এই ধারার লেখকরা ঐতিহ্যবাহী narrative কাঠামো ভেঙে নতুন শৈলী তৈরি করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, থমাস পিঞ্চন, ডন দেলিলো, এবং ইতালীয় লেখক উমবের্তো ইকো-র কাজ উল্লেখযোগ্য।
- শিল্পকলা: পোস্টমডার্ন শিল্পকলা বিভিন্ন মাধ্যম এবং শৈলীকে একত্রিত করে। এন্ডি ওয়ারহল-এর পপ আর্ট এবং জেফ কুনস-এর কাজ পোস্টমডার্ন শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।
- স্থাপত্য: পোস্টমডার্ন স্থাপত্য ঐতিহ্যবাহী নকশার নিয়ম ভেঙে নতুনত্ব নিয়ে আসে। রবার্ট ভেন্টুরি এবং ডেনিস স্কট ব্রাউন এই ধারার প্রধান স্থপতি।
- চলচ্চিত্র: পোস্টমডার্ন চলচ্চিত্র প্রায়শই মেটা-কমেন্টারি (meta-commentary), ইন্টারটেক্সচুয়ালিটি এবং নন-লিনিয়ার স্টোরিটেলিং ব্যবহার করে। কোয়েন্টিন টারান্টিনো এবং ডেভিড লিঞ্চ-এর চলচ্চিত্র এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য।
- সমাজবিজ্ঞান: পোস্টমডার্ন সমাজবিজ্ঞান আধুনিক সমাজের কাঠামো এবং ক্ষমতার সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
পোস্টমডার্নিজমের সমালোচনা
পোস্টমডার্নিজম বিভিন্ন দিক থেকে সমালোচিত হয়েছে:
- আপেক্ষিকতাবাদের বিপদ: সমালোচকরা মনে করেন যে চরম আপেক্ষিকতাবাদ নৈতিক এবং রাজনৈতিক ভিত্তিহীনতা তৈরি করতে পারে।
- অস্পষ্টতা এবং দুর্বোধ্যতা: পোস্টমডার্ন তত্ত্ব প্রায়শই জটিল এবং দুর্বোধ্য ভাষায় লেখা হয়, যা সাধারণ মানুষের জন্য বোঝা কঠিন।
- রাজনৈতিক নিষ্ক্রিয়তা: কেউ কেউ মনে করেন যে পোস্টমডার্নিজম রাজনৈতিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা হ্রাস করে।
- নৈরাশ্যবাদ: পোস্টমডার্নিজম প্রায়শই একটি নৈরাশ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে, যা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাহীন করে তোলে।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে পোস্টমডার্নিজমের সম্পর্ক (রূপক অর্থে)
যদিও সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই, তবে পোস্টমডার্নিজমের কিছু ধারণা বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের প্রেক্ষাপটে রূপকভাবে আলোচনা করা যেতে পারে।
- অনিশ্চয়তা এবং ঝুঁকি: বাইনারি অপশন ট্রেডিং সম্পূর্ণরূপে অনিশ্চয়তার উপর নির্ভরশীল। কোনো বিনিয়োগকারীই নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না যে একটি অপশন "ইন দ্য মানি" (in the money) হবে কিনা। এই অনিশ্চয়তা পোস্টমডার্নিজমের ধারণার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
- আপেক্ষিক মূল্যায়ন: বাইনারি অপশনের মূল্য সম্পূর্ণরূপে বাজারের পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন ট্রেডার বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে অপশনের মূল্যায়ন করতে পারে। এখানে কোনো পরম মান নেই।
- ডিসেন্টারিং: ঐতিহ্যবাহী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সম্পদ বা কোম্পানির উপর মনোযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে মনোযোগ বিভিন্ন অ্যাসেটের উপর স্থানান্তরিত হতে পারে, যা ক্ষমতার কাঠামোকে পরিবর্তন করে।
- ভলিউম বিশ্লেষণ: ভলিউম একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক, যা বাজারের গতিবিধি বুঝতে সাহায্য করে।
- টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস: টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস ব্যবহার করে বাজারের সম্ভাব্য গতিবিধি নির্ণয় করা হয়।
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
- মানি ম্যানেজমেন্ট: মানি ম্যানেজমেন্ট কৌশলগুলি ট্রেডারদের মূলধন রক্ষা করতে সাহায্য করে।
- চার্ট প্যাটার্ন: চার্ট প্যাটার্নগুলি বাজারের ভবিষ্যৎ প্রবণতা সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে।
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন: ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্নগুলি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দামের গতিবিধি বিশ্লেষণ করতে ব্যবহৃত হয়।
- মুভিং এভারেজ: মুভিং এভারেজ একটি জনপ্রিয় টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর, যা দামের গড় প্রবণতা নির্দেশ করে।
- আরএসআই (RSI): RSI বা রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইনডেক্স একটি মোমেন্টাম অসসিলেটর, যা অতিরিক্ত কেনা বা বিক্রির পরিস্থিতি সনাক্ত করতে সাহায্য করে।
- MACD: MACD বা মুভিং এভারেজ কনভারজেন্স ডাইভারজেন্স একটি ট্রেন্ড-ফলোয়িং মোমেন্টাম ইন্ডিকেটর।
- ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট: ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়।
- বোলিঙ্গার ব্যান্ড: বোলিঙ্গার ব্যান্ড বাজারের অস্থিরতা পরিমাপ করতে সাহায্য করে।
- অপশন চেইন: অপশন চেইন একটি নির্দিষ্ট স্টক বা অ্যাসেটের জন্য উপলব্ধ অপশনগুলির তালিকা।
- ইম্প্লাইড ভলাটিলিটি: ইম্প্লাইড ভলাটিলিটি অপশনের দামের উপর বাজারের প্রত্যাশা প্রতিফলিত করে।
- ডেল্টা: ডেল্টা অপশনের দামের পরিবর্তন এবং অন্তর্নিহিত অ্যাসেটের দামের পরিবর্তনের মধ্যে সম্পর্ক নির্দেশ করে।
- গামা: গামা ডেল্টার পরিবর্তনের হার পরিমাপ করে।
- থিটা: থিটা সময়ের সাথে সাথে অপশনের মূল্যের হ্রাস নির্দেশ করে।
- ভেগা: ভেগা অন্তর্নিহিত অ্যাসেটের অস্থিরতার পরিবর্তনের সাথে অপশনের মূল্যের পরিবর্তন পরিমাপ করে।
উপসংহার
পোস্টমডার্নিজম একটি জটিল এবং বহুমাত্রিক ধারণা। এটি আধুনিকতাবাদের সীমাবদ্ধতাগুলো তুলে ধরে এবং জ্ঞান, ক্ষমতা, এবং সত্যের প্রকৃতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করে। যদিও এর কিছু সমালোচনা রয়েছে, তবুও পোস্টমডার্নিজম আধুনিক চিন্তাধারার উপর একটি গভীর প্রভাব ফেলেছে। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে, পোস্টমডার্নিজমের ধারণাগুলো রূপকভাবে বাজারের অনিশ্চয়তা এবং আপেক্ষিকতাকে বুঝতে সাহায্য করতে পারে।
সংস্কৃতি দর্শন সমাজ রাজনীতি ভাষা বিজ্ঞান আধুনিকতাবাদ উত্তর-কাঠামোবাদ মাইকেল ফুকো জ্যাক দেরিদা জ্যাঁ-ফ্রঁসোয়া লিয়োতার্দ ক্ষমতা জ্ঞান সত্য ভাষা শিল্পকলা সাহিত্য স্থাপত্য চলচ্চিত্র ঝুঁকি বাজার বিশ্লেষণ
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
