পুরানো প্রযুক্তি
পুরানো প্রযুক্তি
ভূমিকা
পুরানো প্রযুক্তি বলতে সেইসব প্রযুক্তিকে বোঝায় যা বর্তমানে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয় না, অথবা সময়ের সাথে সাথে উন্নত প্রযুক্তির দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। এই প্রযুক্তিগুলো একসময় মানুষের জীবনযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, কিন্তু বর্তমানে এদের ব্যবহার সীমিত অথবা জাদুঘরেই দেখতে পাওয়া যায়। এই নিবন্ধে, আমরা বিভিন্ন ধরনের পুরানো প্রযুক্তি, তাদের ইতিহাস, ব্যবহার এবং বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা করব। প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে কিভাবে পরিবর্তন করেছে এবং সময়ের সাথে সাথে কিভাবে পুরনো প্রযুক্তি নতুন প্রযুক্তির পথ তৈরি করেছে, সেটিও আমরা দেখব।
পুরানো প্রযুক্তির প্রকারভেদ
পুরানো প্রযুক্তিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন - যোগাযোগ প্রযুক্তি, গণনাকারী যন্ত্র, পরিবহন প্রযুক্তি, চিকিৎসা প্রযুক্তি, এবং শিল্প প্রযুক্তি। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পুরনো প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হলো:
- যোগাযোগ প্রযুক্তি:
* টেলেগ্রাফ: একসময় দ্রুত যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল টেলেগ্রাফ। এটি তারের মাধ্যমে সংকেত প্রেরণ করে বার্তা আদান প্রদানে সাহায্য করত। স্যামুয়েল মরস এর উদ্ভাবন যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব আনে। * টেলিফোন: টেলিফোন টেলেগ্রাফের পরবর্তী ধাপ। আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল ১৮৭৬ সালে প্রথম টেলিফোন আবিষ্কার করেন। এটি মানুষের মধ্যে সরাসরি কথা বলার সুযোগ তৈরি করে। * ফ্যাক্সিমাইল: ফ্যাক্সিমাইল বা ফ্যাক্স মেশিন কাগজের মাধ্যমে তথ্য প্রেরণের জন্য ব্যবহৃত হত। বর্তমানে ইমেইল এবং অন্যান্য ডিজিটাল পদ্ধতির কারণে এর ব্যবহার কমে গেছে। * পোস্টাল সার্ভিস: আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার আগে চিঠিপত্র আদান প্রদানের প্রধান মাধ্যম ছিল পোস্টাল সার্ভিস।
- গণনাকারী যন্ত্র:
* অ্যাবাকাস: এটি প্রাচীনতম গণনাকারী যন্ত্রগুলির মধ্যে অন্যতম। ব্যাবিলনীয় এবং মিশরীয় সভ্যতায় এর ব্যবহার দেখা যায়। * পাস্কলিন: ব্লেইজ পাস্কল ১৬৪২ সালে এই যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন। এটি যোগ এবং বিয়োগ করার জন্য ব্যবহৃত হত। * অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন: চার্লস ব্যাবেজ ১৯ শতকে এই যন্ত্রের ধারণা দেন, যা আধুনিক কম্পিউটারের ভিত্তি স্থাপন করে। * पंच कार्ड: পঞ্চ কার্ড ব্যবহার করে ডেটা সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণ করা হত। এটি মূলত কম্পিউটার এবং ট্যাবুলেটিং মেশিনে ব্যবহৃত হত।
- পরিবহন প্রযুক্তি:
* স্টিম ইঞ্জিন: জেমস ওয়াট ১৭৬৯ সালে স্টিম ইঞ্জিন উন্নত করেন, যা শিল্প বিপ্লবের সূচনা করে। এটি কলকারখানা, রেলপথ এবং নৌপরিবহনে ব্যবহৃত হত। * ঘোড়ার গাড়ি: একসময় ব্যক্তিগত এবং বাণিজ্যিক পরিবহনের প্রধান মাধ্যম ছিল ঘোড়ার গাড়ি। * বিপ্লবী জাহাজ: পালতোলা জাহাজ থেকে উন্নত প্রযুক্তির বিপ্লবী জাহাজ তৈরি হয়, যা সমুদ্রপথে বাণিজ্য এবং যোগাযোগকে সহজ করে। * ট্রাম: শহরগুলিতে গণপরিবহনের জন্য ট্রাম একটি জনপ্রিয় মাধ্যম ছিল।
- চিকিৎসা প্রযুক্তি:
* রক্তমোক্ষণ: প্রাচীনকালে রোগ নিরাময়ের জন্য রক্তমোক্ষণের চল ছিল, যা বর্তমানে একটি ভুল চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত। * ট্রেপ্যানেশন: মাথার খুলিতে ছিদ্র করার এই প্রাচীন পদ্ধতিটি মানসিক রোগ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হত। * আর্লি স্টethoscope: রেনে লায়েনেক ১৮১৬ সালে প্রথম স্টethoscope আবিষ্কার করেন। * আয়রন ফুসফুস: পোলিও রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হত, যা শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সাহায্য করত।
- শিল্প প্রযুক্তি:
* হাতের চরকা: কাপড় তৈরির প্রাচীনতম যন্ত্রগুলির মধ্যে এটি অন্যতম। * বিদ্যুৎচালিত তাঁত: এটি বস্ত্রশিল্পে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। * লেইথ: পাথর কাটার জন্য ব্যবহৃত হত। * কম্প্রেসড এয়ার ইঞ্জিন: শিল্প কারখানায় বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হত।
পুরানো প্রযুক্তির ইতিহাস
পুরানো প্রযুক্তির ইতিহাস মানব সভ্যতার বিকাশের সাথে জড়িত। கற்கুচি থেকে শুরু করে আধুনিক কম্পিউটার পর্যন্ত, প্রতিটি প্রযুক্তি তার সময়ের প্রয়োজন মেটাতে উদ্ভাবিত হয়েছে। প্রাচীনকালে, মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে সহজ করার জন্য পাথর, কাঠ এবং হাড়ের সরঞ্জাম তৈরি করত। এরপর ব্রোঞ্জ এবং লোহার আবিষ্কার প্রযুক্তির অগ্রগতিতে নতুন মাত্রা যোগ করে।
শিল্প বিপ্লব ছিল প্রযুক্তির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। জেমস ওয়াট-এর স্টিম ইঞ্জিন আবিষ্কারের ফলে কলকারখানা এবং পরিবহণ ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। উনিশ শতকে টেলিগ্রাফ, টেলিফোন এবং ফটোগ্রাফির মতো প্রযুক্তির উদ্ভাবন যোগাযোগ এবং তথ্য আদান প্রদানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
বিংশ শতাব্দীতে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট-এর আবির্ভাব প্রযুক্তির জগতে বিপ্লব আনে। এই প্রযুক্তিগুলো মানুষের জীবনযাত্রাকে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করে দিয়েছে।
পুরানো প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বর্তমান অবস্থা
পূর্বে বহুল ব্যবহৃত হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে অনেক পুরনো প্রযুক্তির ব্যবহার প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিছু প্রযুক্তি জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে, যা আমাদের অতীত সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে। আবার কিছু প্রযুক্তি আধুনিক প্রযুক্তির সাথে মিশে নতুন রূপ নিয়েছে।
- টেলেগ্রাফ এবং ফ্যাক্সিমাইল: বর্তমানে এগুলোর ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে। ইমেইল, সোশ্যাল মিডিয়া, এবং মেসেজিং অ্যাপ-এর কারণে এই প্রযুক্তিগুলো অপ্রচলিত হয়ে গেছে।
- পঞ্চ কার্ড: কম্পিউটার ডেটা প্রক্রিয়াকরণের জন্য পঞ্চ কার্ডের ব্যবহার এখন জাদুঘরেই সীমাবদ্ধ।
- ঘোড়ার গাড়ি: বর্তমানে এটি শুধুমাত্র পর্যটন এবং বিনোদনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- স্টিম ইঞ্জিন: আধুনিক পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং কিছু শিল্প কারখানায় স্টিম ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়, তবে এর ব্যবহার আগের তুলনায় অনেক কম।
কিছু পুরনো প্রযুক্তি তাদের মৌলিক ধারণা এবং নকশার জন্য আজও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন আধুনিক কম্পিউটারের ভিত্তি স্থাপন করেছে।
পুরানো প্রযুক্তি সংরক্ষণের গুরুত্ব
পুরানো প্রযুক্তি সংরক্ষণ করা আমাদের ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রযুক্তিগুলো আমাদের পূর্বপুরুষদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং জীবনযাত্রার প্রতিফলন ঘটায়।
- ঐতিহাসিক শিক্ষা: পুরনো প্রযুক্তি আমাদের অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে এবং ভবিষ্যতের জন্য নতুন ধারণা তৈরি করতে সাহায্য করে।
- সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য: এই প্রযুক্তিগুলো আমাদের সংস্কৃতির অংশ এবং এগুলোকে সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব।
- গবেষণা এবং উন্নয়ন: পুরনো প্রযুক্তির গবেষণা থেকে নতুন উদ্ভাবনের ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
সংরক্ষণাগার, জাদুঘর এবং ব্যক্তিগত সংগ্রহে পুরনো প্রযুক্তি সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এছাড়া, এই প্রযুক্তিগুলো সম্পর্কে ডকুমেন্টেশন এবং ডিজিটাল সংরক্ষণ করাও জরুরি।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং পুরানো প্রযুক্তির সম্পর্ক
বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি আধুনিক আর্থিক প্রযুক্তি হলেও, এর সাফল্যের পেছনে পুরনো কিছু ধারণার প্রভাব রয়েছে। টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ-এর মূল ধারণাগুলো পুরনো চার্ট এবং গ্রাফ থেকে এসেছে, যা পূর্বে স্টক এবং কমোডিটি ট্রেডিং-এর জন্য ব্যবহৃত হত।
- চার্ট প্যাটার্ন: ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট এবং অন্যান্য চার্ট প্যাটার্নগুলো পুরনো দিনের ট্রেডারদের দ্বারা উদ্ভাবিত হয়েছিল, যা আজও বাইনারি অপশনে ব্যবহৃত হয়।
- সমর্থন এবং প্রতিরোধের স্তর: এই ধারণাগুলো পুরনো ট্রেডিং কৌশল থেকে এসেছে এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- ভলিউম বিশ্লেষণ: ভলিউম বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাজারের গতিবিধি বোঝা যায়, যা পুরনো দিনের ট্রেডাররাও ব্যবহার করত।
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: পুরনো দিনের ট্রেডাররা তাদের মূলধন রক্ষার জন্য বিভিন্ন ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কৌশল ব্যবহার করত, যা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এও প্রযোজ্য।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে সম্পর্কিত কিছু কৌশল:
- ট্রেন্ড অনুসরণ করা: বাজারের গতিবিধি দেখে ট্রেড করা।
- ব্রেকআউট ট্রেডিং: নির্দিষ্ট স্তরের উপরে বা নিচে দাম গেলে ট্রেড করা।
- রিভার্সাল ট্রেডিং: দামের বিপরীত দিকে গেলে ট্রেড করা।
- পিনি বার কৌশল: ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন ব্যবহার করে ট্রেড করা।
- বোলিঙ্গার ব্যান্ড: এই নির্দেশক ব্যবহার করে বাজারের অস্থিরতা পরিমাপ করা এবং ট্রেড করা।
উপসংহার
পুরানো প্রযুক্তি আমাদের অতীতের সাক্ষ্য বহন করে। সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তির পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী, তবে পুরনো প্রযুক্তিকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়। এগুলো আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং উদ্ভাবনী চিন্তার উৎস। পুরনো প্রযুক্তি সংরক্ষণের মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি মূল্যবান সম্পদ তৈরি করতে পারি। একই সাথে, বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের মতো আধুনিক প্রযুক্তি পুরনো দিনের জ্ঞান এবং কৌশল ব্যবহার করে আরও উন্নত হচ্ছে।
বিনিয়োগ অথবা
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
