পারমিশন
পারমিশন
ভূমিকা
পারমিশন বা অনুমতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে জটিল কম্পিউটার সিস্টেম পর্যন্ত সর্বত্র প্রযোজ্য। সাধারণভাবে, পারমিশন মানে হল কোনো ব্যক্তি বা সত্তার কোনো নির্দিষ্ট কাজ করার অধিকার বা অনুমতি থাকা। এই অধিকার অন্য কোনো ব্যক্তি বা সত্তা দ্বারা প্রদান করা হয়। এই নিবন্ধে, আমরা পারমিশনের বিভিন্ন দিক, প্রকারভেদ, প্রয়োগক্ষেত্র এবং এর সাথে জড়িত নিরাপত্তা বিষয়ক বিষয়গুলি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
পারমিশনের সংজ্ঞা ও ধারণা
পারমিশন হলো কোনো কাজ করার জন্য বৈধ অনুমোদন। এটি একটি অধিকার যা কোনো সত্তাকে কোনো নির্দিষ্ট রিসোর্স ব্যবহার করতে, কোনো ডেটা অ্যাক্সেস করতে বা কোনো নির্দিষ্ট অপারেশন সম্পাদন করতে দেয়। এই সত্তা একজন ব্যবহারকারী, একটি প্রোগ্রাম, অথবা অন্য কোনো সিস্টেম হতে পারে। পারমিশন সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেওয়া হয় এবং এটি প্রত্যাহার করাও সম্ভব।
পারমিশনের প্রকারভেদ
পারমিশন বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যা প্রয়োগক্ষেত্র এবং প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভর করে। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো:
- সুস্পষ্ট অনুমতি (Explicit Permission): যখন কোনো সত্তাকে স্পষ্টভাবে কোনো কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়, তখন তাকে সুস্পষ্ট অনুমতি বলা হয়। যেমন, কোনো ব্যবহারকারীকে একটি ফাইলে পড়ার এবং লেখার অনুমতি দেওয়া হলো।
- অন্তর্নিহিত অনুমতি (Implicit Permission): কিছু ক্ষেত্রে, কোনো সত্তার কাছে অন্তর্নিহিতভাবে কিছু অনুমতি থাকে। যেমন, একটি সিস্টেমের অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের সমস্ত ফাইল এবং রিসোর্সে অ্যাক্সেসের অনুমতি থাকে।
- ঋণাত্মক অনুমতি (Negative Permission): এই ক্ষেত্রে, কোনো সত্তাকে কোনো কাজ করতে স্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়। যেমন, কোনো ব্যবহারকারীকে কোনো নির্দিষ্ট ফোল্ডারে ফাইল তৈরি করতে নিষেধ করা হলো।
- রোল-ভিত্তিক অনুমতি (Role-based Permission): এই পদ্ধতিতে, ব্যবহারকারীদের তাদের কাজের ভূমিকা অনুযায়ী বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করা হয় এবং প্রতিটি গ্রুপের জন্য আলাদা আলাদা পারমিশন সেট করা হয়। নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা-র ক্ষেত্রে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
- অ্যাক্সেস কন্ট্রোল লিস্ট (Access Control List - ACL): এটি একটি তালিকা, যেখানে নির্দিষ্ট রিসোর্সের উপর ব্যবহারকারীদের অধিকার উল্লেখ করা থাকে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারমিশনের প্রয়োগ
পারমিশনের ধারণা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র আলোচনা করা হলো:
- কম্পিউটার নিরাপত্তা (Computer Security): কম্পিউটার নিরাপত্তাতে পারমিশন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখানে, ফাইল, ফোল্ডার, প্রোগ্রাম এবং অন্যান্য সিস্টেম রিসোর্সের অ্যাক্সেস নিয়ন্ত্রণ করতে পারমিশন ব্যবহার করা হয়। এটি ডেটা সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
- অপারেটিং সিস্টেম (Operating System): প্রতিটি অপারেটিং সিস্টেম তার ব্যবহারকারীদের এবং প্রোগ্রামগুলির জন্য পারমিশন পরিচালনা করে। যেমন, উইন্ডোজ, ম্যাকওএস এবং লিনাক্স-এ ফাইল এবং ডিরেক্টরির জন্য বিভিন্ন ধরনের পারমিশন সেট করা যায়।
- ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (Database Management System - DBMS): ডাটাবেসে ডেটা অ্যাক্সেস এবং পরিবর্তনের জন্য পারমিশন ব্যবহার করা হয়। ডাটাবেস অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ব্যবহারকারীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের পারমিশন তৈরি করতে পারেন, যেমন - SELECT, INSERT, UPDATE, DELETE ইত্যাদি।
- নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা (Network Security): নেটওয়ার্কে বিভিন্ন ডিভাইসের মধ্যে ডেটা আদান-প্রদানের জন্য পারমিশন প্রয়োজন হয়। ফায়ারওয়াল এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সরঞ্জামগুলি নেটওয়ার্ক পারমিশনগুলি নিয়ন্ত্রণ করে।
- ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন (Web Application): ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনগুলিতে ব্যবহারকারীদের অ্যাক্সেস নিয়ন্ত্রণ করতে পারমিশন ব্যবহার করা হয়। যেমন, একজন অ্যাডমিন ব্যবহারকারী সমস্ত কনটেন্ট পরিবর্তন করতে পারে, যেখানে একজন সাধারণ ব্যবহারকারী শুধুমাত্র কনটেন্ট দেখতে পারে।
- ক্লাউড কম্পিউটিং (Cloud Computing): ক্লাউড কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্মে রিসোর্স অ্যাক্সেস এবং ব্যবহারের জন্য পারমিশন একটি অপরিহার্য অংশ। এটি ডেটা নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা নিশ্চিত করে।
পারমিশন এবং নিরাপত্তা
পারমিশন এবং নিরাপত্তা একে অপরের সাথে গভীরভাবে জড়িত। সঠিক পারমিশন কনফিগারেশন একটি সিস্টেমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে, যেখানে ভুল পারমিশন কনফিগারেশনের কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
- সর্বনিম্ন সুযোগের নীতি (Principle of Least Privilege): এই নীতি অনুযায়ী, ব্যবহারকারীদের শুধুমাত্র সেই কাজগুলি করার জন্য পারমিশন দেওয়া উচিত, যা তাদের কাজের জন্য অপরিহার্য। এর ফলে, কোনো ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলে ক্ষতির পরিমাণ সীমিত থাকে।
- ডিফল্ট ডিনায়াল (Default Deny): এই নীতি অনুযায়ী, কোনো সত্তাকে কোনো কাজ করার অনুমতি দেওয়া হবে না, যতক্ষণ না তাকে স্পষ্টভাবে সেই কাজের জন্য পারমিশন দেওয়া হয়।
- নিয়মিত নিরীক্ষণ (Regular Auditing): পারমিশন সেটিংস নিয়মিত নিরীক্ষণ করা উচিত, যাতে কোনো ভুল বা দুর্বলতা ধরা পড়লে তা সংশোধন করা যায়।
- শক্তিশালী প্রমাণীকরণ (Strong Authentication): ব্যবহারকারীদের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য শক্তিশালী প্রমাণীকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত, যেমন - মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন। ক্রিপ্টোগ্রাফি এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পারমিশন ব্যবস্থাপনার সরঞ্জাম
বিভিন্ন ধরনের পারমিশন ব্যবস্থাপনার সরঞ্জাম (Permission Management Tools) উপলব্ধ রয়েছে, যা পারমিশন কনফিগারেশন এবং ব্যবস্থাপনাকে সহজ করে। নিচে কয়েকটি জনপ্রিয় সরঞ্জাম উল্লেখ করা হলো:
- অ্যাক্সেস কন্ট্রোল লিস্ট (ACL) এডিটর
- রোল-ভিত্তিক অ্যাক্সেস কন্ট্রোল (RBAC) সিস্টেম
- আইডেন্টিটি অ্যান্ড অ্যাক্সেস ম্যানেজমেন্ট (IAM) প্ল্যাটফর্ম
- সেন্ট্রালাইজড পারমিশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ পারমিশন
বাইনারি অপশন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে, পারমিশন বিভিন্ন স্তরে কাজ করে। এখানে, ব্রোকার এবং ট্রেডার উভয়েরই কিছু নির্দিষ্ট অধিকার এবং সীমাবদ্ধতা থাকে।
- ব্রোকারের পারমিশন: ব্রোকারের ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা, নতুন ট্রেডিং অপশন যুক্ত করা, এবং ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট ব্যবস্থাপনার অনুমতি থাকে। তারা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং নিয়ন্ত্রণ এর ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- ট্রেডারের পারমিশন: ট্রেডারদের ট্রেড করার, তাদের অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স দেখার, এবং তাদের ট্রেডিং ইতিহাস জানার অনুমতি থাকে। তবে, কিছু ব্রোকার ট্রেডারদের জন্য নির্দিষ্ট ট্রেডিং কৌশল বা সম্পদের উপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করতে পারে।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। এই কৌশলগুলো ব্যবহার করে ট্রেডাররা বাজারের গতিবিধি এবং সম্ভাব্য ট্রেডিং সুযোগগুলি সনাক্ত করতে পারে।
- টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর (Technical Indicators): মুভিং এভারেজ, আরএসআই, এমএসিডি ইত্যাদি টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে বাজারের প্রবণতা বোঝা যায়।
- ভলিউম চার্ট (Volume Chart): ভলিউম চার্ট ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি এবং শক্তিশালী প্রবণতা সনাক্ত করা যায়।
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন (Candlestick Pattern): ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্নগুলো বাজারের সম্ভাব্য পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা দেয়।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ট্রেডারদের তাদের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকতে এবং তা কমানোর জন্য উপযুক্ত কৌশল অবলম্বন করতে হয়।
- স্টপ-লস অর্ডার (Stop-Loss Order): স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করে ট্রেডাররা তাদের সম্ভাব্য ক্ষতি সীমিত করতে পারে।
- পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন (Portfolio Diversification): বিভিন্ন ধরনের সম্পদে বিনিয়োগ করে ট্রেডাররা তাদের ঝুঁকি কমাতে পারে।
- লিভারেজ (Leverage): লিভারেজ ব্যবহার করে ট্রেডাররা তাদের লাভের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে, তবে এটি ঝুঁকির পরিমাণও বৃদ্ধি করে।
উপসংহার
পারমিশন একটি বহুমুখী ধারণা, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কম্পিউটার নিরাপত্তা, অপারেটিং সিস্টেম, ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট, নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন এবং ক্লাউড কম্পিউটিং-এর মতো ক্ষেত্রগুলিতে পারমিশনের সঠিক ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রেও, ব্রোকার এবং ট্রেডার উভয়ের জন্য পারমিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যথাযথ পারমিশন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় এবং সিস্টেমের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা যায়।
আরও জানতে:
- সাইবার নিরাপত্তা
- ডেটা এনক্রিপশন
- ফায়ারওয়াল
- অ্যাডমিনিস্ট্রেটর
- ব্যবহারকারী অ্যাকাউন্ট
- অ্যাক্সেস কন্ট্রোল
- ঝুঁকি মূল্যায়ন
- কমপ্লায়েন্স
- গোপনীয়তা নীতি
- নিয়মকানুন
- সিস্টেম অডিট
- সুরক্ষা প্রোটোকল
- মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন
- ডিজিটাল স্বাক্ষর
- ইনফরমেশন সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
