পরিচয় সংকট

পরিচিতি

পরিচয় সংকট একটি জটিল মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা। যেখানে একজন ব্যক্তি তার নিজের পরিচিতি, মূল্যবোধ এবং জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে দ্বিধায় ভোগে। এটি একটি স্বাভাবিক উন্নয়নমূলক পর্যায় হতে পারে, বিশেষ করে কৈশোর এবং তরুণ বয়সে। তবে, এটি জীবনের যেকোনো পর্যায়ে ঘটতে পারে, বিশেষ করে বড় ধরনের জীবন পরিবর্তন বা মানসিক আঘাতের সম্মুখীন হলে। এই সংকট ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

পরিচয় সংকট কী?

পরিচয় সংকট হলো নিজের সম্পর্কে একটি অস্পষ্টতা বা অনিশ্চয়তা। এর ফলে ব্যক্তি বুঝতে পারে না সে আসলে কী, তার জীবনের লক্ষ্য কী, এবং সমাজে তার ভূমিকা কী। এর কয়েকটি মূল বৈশিষ্ট্য হলো:

নিজের সম্পর্কে সংশয়: ব্যক্তি তার নিজস্ব গুণাবলী, দুর্বলতা, বিশ্বাস এবং মূল্যবোধ নিয়ে দ্বিধায় থাকে।
জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে বিভ্রান্তি: জীবনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে অনিশ্চয়তা দেখা যায়।
ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ: ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা এবং অনিশ্চয়তা অনুভব করা।
সামাজিক ভূমিকা নিয়ে দ্বিধা: সমাজে নিজের ভূমিকা এবং অন্যদের সাথে সম্পর্ক নিয়ে বিভ্রান্তি।
নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে হওয়া: অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা এবং বিচ্ছিন্ন মনে হতে পারে।
মানসিক অস্থিরতা: মানসিক চাপ, উদ্বেগ, এবং বিষণ্নতার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

পরিচয় সংকট কেন হয়?

পরিচয় সংকট বিভিন্ন কারণে হতে পারে। নিচে কয়েকটি প্রধান কারণ আলোচনা করা হলো:

জীবন পরিবর্তন: বড় ধরনের জীবন পরিবর্তন, যেমন - চাকরি হারানো, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া, স্থানান্তর, বা প্রিয়জনের মৃত্যু পরিচয় সংকট তৈরি করতে পারে।
সাংস্কৃতিক চাপ: বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং সমাজের প্রত্যাশা ব্যক্তির নিজস্ব পরিচয়কে প্রভাবিত করতে পারে।
পারিবারিক চাপ: পরিবারের প্রত্যাশা এবং চাপ ব্যক্তির নিজস্ব আগ্রহ এবং মূল্যবোধের সাথে সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে।
মানসিক আঘাত: traumatische ervaringen ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস এবং নিজের সম্পর্কে ধারণা নষ্ট করে দিতে পারে।
সামাজিক চাপ: সামাজিক মাধ্যম এবং সমাজের চাপ ব্যক্তির নিজস্ব পরিচয় তৈরি করতে বাধা দিতে পারে।
কৈশোরকাল: কৈশোরে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের কারণে পরিচয় সংকট দেখা দিতে পারে। এই সময়কালে, কিশোর-কিশোরীরা নিজেদের স্বতন্ত্রতা এবং পরিচয় খুঁজে বের করার চেষ্টা করে।
মধ্যবয়স: মধ্যবয়সে এসে অনেকে তাদের জীবনের অর্জন এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, যা পরিচয় সংকটের কারণ হতে পারে।

পরিচয় সংকটের পর্যায়

সাধারণত, পরিচয় সংকট কয়েকটি ধাপে অগ্রসর হয়। এই ধাপগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:

পরিচয় সংকটের পর্যায়
পর্যায়	বিবরণ
অনুসন্ধান	ব্যক্তি তার নিজের সম্পর্কে এবং জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে শুরু করে।
দ্বিধা	বিভিন্ন বিকল্প এবং পছন্দের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা	ব্যক্তি বিভিন্ন ভূমিকা এবং পরিচয় চেষ্টা করে দেখে।
প্রতিশ্রুতি	অবশেষে, ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট পরিচয় এবং জীবনের পথে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়।

পরিচয় সংকট মোকাবিলা করার উপায়

পরিচয় সংকট মোকাবিলা করার জন্য কিছু কার্যকর উপায় নিচে দেওয়া হলো:

আত্ম-অনুসন্ধান: নিজের অনুভূতি, চিন্তা, এবং মূল্যবোধ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। জার্নালিং এবং ধ্যানের মাধ্যমে আত্ম-অনুসন্ধান করা যেতে পারে।
থেরাপি: একজন মনোবিজ্ঞানী বা কাউন্সেলরের সাহায্য নিয়ে নিজের সমস্যাগুলো আলোচনা করুন। জ্ঞানীয় আচরণ থেরাপি (Cognitive Behavioral Therapy) এবং সাইকোডাইনামিক থেরাপি (Psychodynamic Therapy) এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উপযোগী হতে পারে।
নতুন অভিজ্ঞতা: নতুন শখ এবং কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করুন। নতুন অভিজ্ঞতা আপনাকে নিজের সম্পর্কে নতুন ধারণা দিতে পারে।
লক্ষ্য নির্ধারণ: ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং সেগুলো অর্জনের চেষ্টা করুন। এটি আপনাকে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে।
সামাজিক সমর্থন: বন্ধু, পরিবার এবং সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। তাদের সমর্থন এবং সহযোগিতা আপনাকে মানসিক শক্তি জোগাবে।
নিজের প্রতি সদয় হন: নিজের ভুলগুলো ক্ষমা করুন এবং নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হন। মনে রাখবেন, পরিচয় সংকট একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
বর্তমানের উপর মনোযোগ: ভবিষ্যৎ নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা না করে বর্তমানে মনোযোগ দিন। মাইন্ডফুলনেস (Mindfulness) অনুশীলন আপনাকে বর্তমান মুহূর্তে বাঁচতে সাহায্য করতে পারে।
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি: জীবনের ইতিবাচক দিকগুলো দেখার চেষ্টা করুন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং ইতিবাচক চিন্তা করা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং পরিচয় সংকট

বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি উচ্চ ঝুঁকি সম্পন্ন আর্থিক বিনিয়োগ। এই ট্রেডিংয়ের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা প্রায়শই মানসিক চাপ এবং উদ্বেগে ভোগেন। ট্রেডিংয়ে ক্রমাগত ব্যর্থতা বা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হলে, তাদের মধ্যে পরিচয় সংকট দেখা দিতে পারে।

আর্থিক অনিশ্চয়তা: ট্রেডিংয়ে ক্ষতির কারণে আর্থিক অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে, যা ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়।
চাপ এবং উদ্বেগ: ট্রেডিংয়ের সময়সীমা এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার চাপ ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ব্যর্থতার অনুভূতি: ট্রেডিংয়ে বারবার ব্যর্থ হলে ব্যক্তির মধ্যে হতাশা এবং ব্যর্থতার অনুভূতি সৃষ্টি হতে পারে।
নিজেকে মূল্যহীন মনে হওয়া: আর্থিক ক্ষতির কারণে ব্যক্তি নিজেকে মূল্যহীন এবং অযোগ্য মনে করতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে, ট্রেডারদের উচিত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগ দেওয়া। ট্রেডিংয়ের পাশাপাশি অন্যান্য আগ্রহ এবং কার্যকলাপে জড়িত হওয়া মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক হতে পারে।

অভ্যন্তরীণ লিঙ্ক

কৌশল, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণের লিঙ্ক

উপসংহার

পরিচয় সংকট একটি জটিল এবং কষ্টকর অভিজ্ঞতা হতে পারে। তবে, সঠিক পদক্ষেপ এবং সহায়তার মাধ্যমে এটি মোকাবিলা করা সম্ভব। নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, আত্ম-অনুসন্ধান করা, এবং প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য নেওয়া পরিচয় সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে সহায়ক হতে পারে। মনে রাখবেন, নিজের পরিচয় খুঁজে বের করা একটি চলমান প্রক্রিয়া, এবং এই যাত্রায় ধৈর্য এবং সাহস প্রয়োজন।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ