পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার বিশ্লেষণ

From binaryoption
Jump to navigation Jump to search
Баннер1

পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার বিশ্লেষণ

পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার (Point and Figure) চার্ট একটি বিশেষ ধরনের টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ যা বাজারের গতিবিধি বোঝার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি অন্যান্য চার্টের মতো সময়ভিত্তিক নয়, বরং মূল্যের পরিবর্তনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। এই চার্টগুলি সাধারণত স্টক, ফিউচার, ফরেন এক্সচেঞ্জ এবং অন্যান্য আর্থিক উপকরণ ট্রেড করার জন্য ব্যবহৃত হয়। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রেও এই চার্ট ব্যবহার করে বাজারের সম্ভাব্য গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার চার্টের মূল ধারণা

পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার চার্ট তিনটি প্রধান উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত:

  • বক্স (Box): প্রতিটি বক্স একটি নির্দিষ্ট মূল্যের পরিবর্তন নির্দেশ করে। বক্সের আকার ট্রেডারের পছন্দ অনুযায়ী নির্ধারণ করা যেতে পারে, তবে সাধারণত ১x১ বক্স ব্যবহার করা হয়। এর মানে হলো, যদি কোনো শেয়ারের দাম ১ টাকা করে বাড়ে বা কমে, তবে একটি বক্স তৈরি হবে।
  • এক্স (X): এটি একটি কলামে পরপর ঊর্ধ্বমুখী মূল্যের পরিবর্তন নির্দেশ করে। যখন দাম পূর্বের বক্সের উপরে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, তখন একটি 'X' চিহ্নিত করা হয়।
  • ও (O): এটি একটি কলামে পরপর নিম্নমুখী মূল্যের পরিবর্তন নির্দেশ করে। যখন দাম পূর্বের বক্সের নিচে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ হ্রাস পায়, তখন একটি 'O' চিহ্নিত করা হয়।

এই চার্ট সময়ের পরিবর্তে মূল্যের পরিবর্তনের ওপর জোর দেয়। তাই, এটি বাজারের গুরুত্বপূর্ণ স্তর এবং সম্ভাব্য বিপরীতমুখী স্থানগুলি সনাক্ত করতে সহায়ক।

পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার চার্ট কিভাবে কাজ করে

পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার চার্ট তৈরি করার জন্য প্রথমে একটি নির্দিষ্ট ‘বক্স সাইজ’ নির্বাচন করতে হয়। এটি সাধারণত বাজারের অস্থিরতা এবং ট্রেডারের ঝুঁকির ওপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি স্টকের দাম প্রায় ৫ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে, তবে ১ টাকার বক্স সাইজ নির্বাচন করা যেতে পারে।

এরপর, যখন স্টকের দাম বৃদ্ধি পেতে শুরু করবে এবং পূর্বের বক্সের উপরে ১ টাকা অতিক্রম করবে, তখন একটি ‘X’ দিয়ে একটি নতুন বক্স তৈরি করা হবে। অন্যদিকে, দাম কমতে শুরু করলে এবং পূর্বের বক্সের নিচে ১ টাকা নেমে গেলে, একটি ‘O’ দিয়ে একটি নতুন বক্স তৈরি করা হবে।

যখন দাম একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ‘X’ বা ‘O’ তৈরি করে, তখন একটি নতুন কলাম শুরু হয়। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে যতক্ষণ না বাজারের গতিবিধি সম্পূর্ণভাবে বোঝা যায়।

পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার চার্ট উদাহরণ
চিহ্ন | মূল্যের পরিবর্তন |
X | দাম ১ টাকা বৃদ্ধি পেল |
X | দাম আরও ১ টাকা বৃদ্ধি পেল |
O | দাম ১ টাকা হ্রাস পেল |
O | দাম আরও ১ টাকা হ্রাস পেল |
X | দাম ১ টাকা বৃদ্ধি পেল |

পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার চার্টের প্যাটার্ন

পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার চার্টে বিভিন্ন ধরনের প্যাটার্ন দেখা যায়, যা বাজারের ভবিষ্যৎ গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্যাটার্ন আলোচনা করা হলো:

  • ডাবল টপ (Double Top): এই প্যাটার্নটি দুটি প্রায় সমান উচ্চতার ‘X’ দিয়ে গঠিত হয়, যা একটি বিপরীতমুখী প্রবণতা নির্দেশ করে।
  • ডাবল বটম (Double Bottom): এই প্যাটার্নটি দুটি প্রায় সমান গভীরতার ‘O’ দিয়ে গঠিত হয়, যা একটি ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা নির্দেশ করে।
  • ট্রিপল টপ (Triple Top): তিনটি প্রায় সমান উচ্চতার ‘X’ দিয়ে গঠিত।
  • ট্রিপল বটম (Triple Bottom): তিনটি প্রায় সমান গভীরতার ‘O’ দিয়ে গঠিত।
  • ব্রেকআউট (Breakout): যখন দাম একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধ স্তর অতিক্রম করে উপরে উঠে যায়, তখন এটিকে ব্রেকআউট বলা হয়। এই ক্ষেত্রে, ‘X’ এর একটি নতুন কলাম তৈরি হয়।
  • ব্রেকডাউন (Breakdown): যখন দাম একটি গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন স্তর অতিক্রম করে নিচে নেমে যায়, তখন এটিকে ব্রেকডাউন বলা হয়। এই ক্ষেত্রে, ‘O’ এর একটি নতুন কলাম তৈরি হয়।

এই প্যাটার্নগুলি ট্রেডারদের সম্ভাব্য ট্রেডিং সুযোগগুলি সনাক্ত করতে সাহায্য করে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার বিশ্লেষণের ব্যবহার

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার বিশ্লেষণ ব্যবহার করে বাজারের সম্ভাব্য দিকনির্দেশনা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এই চার্টগুলি স্বল্পমেয়াদী ট্রেডিংয়ের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।

  • ট্রেন্ড নির্ধারণ: পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার চার্ট ব্যবহার করে বাজারের সামগ্রিক প্রবণতা (আপট্রেন্ড, ডাউনট্রেন্ড, সাইডওয়েজ) নির্ধারণ করা যায়।
  • সমর্থন ও প্রতিরোধ স্তর চিহ্নিতকরণ: এই চার্টগুলি গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন এবং প্রতিরোধ স্তরগুলি সনাক্ত করতে সাহায্য করে, যা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • এন্ট্রি এবং এক্সিট পয়েন্ট নির্ধারণ: পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার প্যাটার্নগুলি ট্রেডারদের সঠিক সময়ে এন্ট্রি এবং এক্সিট পয়েন্ট নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
  • ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: এই চার্টগুলি স্টপ-লস এবং টেক-প্রফিট লেভেল নির্ধারণ করতে সহায়ক।

উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার চার্টে একটি বুলিশ ব্রেকআউট দেখা যায়, তবে একজন ট্রেডার একটি কল অপশন কিনতে পারে। অন্যদিকে, যদি একটি বিয়ারিশ ব্রেকডাউন দেখা যায়, তবে একজন ট্রেডার একটি পুট অপশন কিনতে পারে।

টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর-এর সাথে সমন্বয় করে এই চার্ট ব্যবহার করলে আরও ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।

পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার বিশ্লেষণের সুবিধা ও অসুবিধা

পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার বিশ্লেষণের কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে।

সুবিধা:

  • সহজতা: এই চার্ট তৈরি করা এবং বোঝা সহজ।
  • বস্তুনিষ্ঠতা: এটি ব্যক্তিগত ধারণার ওপর কম নির্ভরশীল।
  • বাজারের গুরুত্বপূর্ণ স্তর চিহ্নিতকরণ: এটি সমর্থন এবং প্রতিরোধ স্তরগুলি সনাক্ত করতে সহায়ক।
  • স্বল্পমেয়াদী ট্রেডিং-এর জন্য উপযোগী: এটি দ্রুত এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

অসুবিধা:

  • সময়ভিত্তিক তথ্য অনুপস্থিত: এই চার্টে সময়ের তথ্য থাকে না, যা কিছু ট্রেডারের জন্য অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।
  • ভুল সংকেত: মাঝে মাঝে ভুল সংকেত দিতে পারে, বিশেষ করে অস্থির বাজারে।
  • বক্স সাইজ নির্বাচন: সঠিক বক্স সাইজ নির্বাচন করা কঠিন হতে পারে।

অন্যান্য টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের সাথে সমন্বয়

পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার বিশ্লেষণকে আরও কার্যকর করার জন্য অন্যান্য টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ যেমন মুভিং এভারেজ (Moving Average), আরএসআই (RSI), এমএসিডি (MACD) এবং ভলিউম বিশ্লেষণ-এর সাথে সমন্বয় করা যেতে পারে।

  • মুভিং এভারেজ: মুভিং এভারেজ ব্যবহার করে বাজারের প্রবণতা নিশ্চিত করা যায়।
  • আরএসআই: আরএসআই ব্যবহার করে ওভারবট (Overbought) এবং ওভারসোল্ড (Oversold) পরিস্থিতি সনাক্ত করা যায়।
  • এমএসিডি: এমএসিডি ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি এবং সম্ভাব্য পরিবর্তনগুলি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
  • ভলিউম বিশ্লেষণ: ভলিউম বিশ্লেষণ ব্যবহার করে বাজারের শক্তি এবং দুর্বলতা পরিমাপ করা যায়।

এইসব ইন্ডিকেটরগুলির সাথে পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার বিশ্লেষণ ব্যবহার করে ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলে সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়ে।

পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার বিশ্লেষণের উন্নত কৌশল

  • মাল্টিপল টাইম ফ্রেম বিশ্লেষণ: বিভিন্ন টাইম ফ্রেমে পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার চার্ট বিশ্লেষণ করে বাজারের একটি সামগ্রিক চিত্র পাওয়া যায়।
  • ফিল্টার ব্যবহার: ভুল সংকেতগুলি এড়ানোর জন্য অতিরিক্ত ফিল্টার ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন ভলিউম বা অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর।
  • আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI): বর্তমানে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার চার্ট বিশ্লেষণের স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি তৈরি করা হয়েছে।

উপসংহার

পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার বিশ্লেষণ একটি শক্তিশালী ট্রেডিং টুল যা বাজারের গতিবিধি বুঝতে এবং সম্ভাব্য ট্রেডিং সুযোগগুলি সনাক্ত করতে সহায়ক। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে, এই চার্টগুলি স্বল্পমেয়াদী ট্রেডিংয়ের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। তবে, শুধুমাত্র এই বিশ্লেষণের ওপর নির্ভর না করে অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কৌশলগুলি ব্যবহার করা উচিত।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা | টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ | ফরেন এক্সচেঞ্জ | মুভিং এভারেজ | আরএসআই | এমএসিডি | ভলিউম বিশ্লেষণ | বাইনারি অপশন | ট্রেডিং কৌশল | বাজার বিশ্লেষণ | ফিনান্সিয়াল মার্কেট | শেয়ার বাজার | স্টক ট্রেডিং | ইনভেস্টমেন্ট | পোর্টফোলিও | অর্থনীতি | ফিনান্স | ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম | ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট | ডাবল টপ | ডাবল বটম | ব্রেকআউট | ব্রেকডাউন

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ

Баннер