নোটস টু ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্টস

নোটস টু ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্টস

ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্ট বা আর্থিক বিবরণী একটি কোম্পানির আর্থিক স্বাস্থ্য এবং কর্মক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা দেয়। এই বিবরণীগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ‘নোটস টু ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্টস’ (Notes to Financial Statements)। এই নোটগুলো আর্থিক বিবরণীর বিভিন্ন লাইন আইটেম এবং পলিসি সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্য সরবরাহ করে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য বিবরণীগুলো সঠিকভাবে বুঝতে এবং বিশ্লেষণ করতে সহায়ক। এই নিবন্ধে, আমরা নোটস টু ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্টস এর গুরুত্ব, বিষয়বস্তু, এবং তৈরির নিয়মাবলী বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

নোটস টু ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্টস এর গুরুত্ব

নোটস টু ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্টস আর্থিক বিবরণীর অবিচ্ছেদ্য অংশ। এগুলো শুধুমাত্র অতিরিক্ত তথ্য সরবরাহ করে না, বরং আর্থিক বিবরণীর সামগ্রিক চিত্রকে সম্পূর্ণ করে তোলে। এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. স্বচ্ছতা বৃদ্ধি: নোটগুলো অ্যাকাউন্টিং পলিসি, পদ্ধতি এবং অনুমানের ব্যাখ্যা প্রদান করে, যা আর্থিক বিবরণীর স্বচ্ছতা বাড়ায়।

২. তুলনামূলক বিশ্লেষণ: বিভিন্ন কোম্পানির আর্থিক বিবরণী তুলনা করার ক্ষেত্রে নোটগুলো সহায়ক, কারণ তারা ব্যবহৃত অ্যাকাউন্টিং নীতি সম্পর্কে তথ্য দেয়।

৩. ঝুঁকি মূল্যায়ন: নোটগুলো কোম্পানির সামনে থাকা বিভিন্ন ঝুঁকি এবং অনিশ্চয়তা সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৪. বিস্তারিত তথ্য: ব্যালেন্স শীট, আয় বিবরণী এবং নগদ প্রবাহ বিবরণী-এর মতো প্রধান আর্থিক বিবরণীতে সংক্ষিপ্ত আকারে তথ্য উপস্থাপন করা হয়। নোটগুলো এই তথ্যগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়।

৫. আইনগত বাধ্যবাধকতা: বিভিন্ন দেশে, কোম্পানিগুলোকে তাদের আর্থিক বিবরণীর সাথে নোটস টু ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্টস যুক্ত করা আইনত বাধ্যতামূলক।

নোটস টু ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্টস-এর বিষয়বস্তু

নোটস টু ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্টস-এ সাধারণত নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে:

১. অ্যাকাউন্টিং পলিসি (Accounting Policies):

  - অ্যাকাউন্টিং নীতিমালার সারসংক্ষেপ: কোম্পানি কোন অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (যেমন GAAP, IFRS) অনুসরণ করছে, তা উল্লেখ করা হয়।
  - রাজস্ব স্বীকৃতি নীতি (Revenue Recognition Policy): কোম্পানি কীভাবে তার আয়কে স্বীকৃতি দেয়, তার বিস্তারিত বিবরণ।
  - অবচয় নীতি (Depreciation Policy): স্থায়ী সম্পদের উপর অবচয় কিভাবে হিসাব করা হয়, তার নিয়মাবলী।
  - মজুদ মূল্যায়ন পদ্ধতি (Inventory Valuation Method): মজুদ পণ্য কিভাবে মূল্যায়ন করা হয় (যেমন FIFO, LIFO, Weighted Average)।
  - বিনিয়োগের হিসাবকরণ (Investment Accounting): বিনিয়োগগুলো কিভাবে রেকর্ড করা হয়, তার পদ্ধতি।

২. ব্যালেন্স শীট সংক্রান্ত নোট (Balance Sheet Related Notes):

  - সম্পত্তি, উদ্ভিদ ও সরঞ্জাম (Property, Plant & Equipment): এইগুলোর ক্রয়মূল্য, অবচয়, এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য।
  - ঋণ এবং দায় (Debt and Liabilities): কোম্পানির ঋণ, বন্ড, এবং অন্যান্য আর্থিক দায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
  - শেয়ার মূলধন (Share Capital): ইস্যু করা শেয়ারের সংখ্যা, প্রতিটি শেয়ারের মূল্য, এবং শেয়ারহোল্ডারদের অধিকার সম্পর্কিত তথ্য।
  -deferred ট্যাক্স অ্যাসেট এবং লায়াবিলিটিস (Deferred Tax Assets and Liabilities): ভবিষ্যতে করের প্রভাব সম্পর্কিত তথ্য।

৩. আয় বিবরণী সংক্রান্ত নোট (Income Statement Related Notes):

  - রাজস্ব বিভাজন (Revenue Breakdown): বিভিন্ন উৎস থেকে আসা রাজস্বের পরিমাণ এবং প্রকৃতি।
  - বিক্রিত পণ্যের খরচ (Cost of Goods Sold): পণ্য বিক্রয়ের সাথে সম্পর্কিত খরচ।
  - পরিচালন ব্যয় (Operating Expenses): কোম্পানির পরিচালন কার্যক্রমের সাথে জড়িত খরচ।
  - কর (Taxes): আয়কর এবং অন্যান্য করের হার এবং পরিমাণ।

৪. নগদ প্রবাহ বিবরণী সংক্রান্ত নোট (Cash Flow Statement Related Notes):

  -অ-নগদ কার্যক্রম (Non-cash activities): বিনিয়োগ এবং অর্থায়ন কার্যক্রম থেকে উদ্ভূত অ-নগদ লেনদেন।
  -নগদ এবং নগদ সমতুল্য (Cash and Cash Equivalents): নগদ এবং সহজে নগদে রূপান্তরযোগ্য সম্পদের পরিমাণ।

৫. অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা (Other Significant Disclosures):

  - সংঘটিত ঘটনা (Contingencies): সম্ভাব্য ক্ষতি বা লাভের ঘটনা, যেমন মামলা-মোকদ্দমা বা ওয়ারেন্টি।
  - সম্পর্কিত পক্ষ লেনদেন (Related Party Transactions): কোম্পানির সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে লেনদেন।
  - ঝুঁকি এবং অনিশ্চয়তা (Risks and Uncertainties): কোম্পানির ব্যবসা এবং আর্থিক অবস্থার উপর প্রভাব ফেলতে পারে এমন ঝুঁকি।
  - ভবিষ্যৎ প্রতিশ্রুতি (Future Commitments): ভবিষ্যতের জন্য করা চুক্তি বা বাধ্যবাধকতা।

নোটস টু ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্টস তৈরির নিয়মাবলী

নোটস টু ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্টস তৈরির সময় কিছু নির্দিষ্ট নিয়মাবলী অনুসরণ করা উচিত:

১. প্রাসঙ্গিকতা (Relevance): নোটগুলোতে শুধুমাত্র প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় তথ্য পরিহার করা উচিত।

২. নির্ভরযোগ্যতা (Reliability): তথ্যের নির্ভুলতা এবং নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। তথ্যের উৎস যাচাই করা উচিত।

৩. সুস্পষ্টতা (Clarity): নোটগুলো সহজবোধ্য এবং সুস্পষ্ট ভাষায় লিখতে হবে, যাতে ব্যবহারকারীরা সহজেই বুঝতে পারে।

৪. ধারাবাহিকতা (Consistency): প্রতিটি আর্থিক বছরে একই ধরনের অ্যাকাউন্টিং পলিসি অনুসরণ করতে হবে, যাতে সময়ের সাথে সাথে আর্থিক বিবরণীর তুলনা করা যায়।

৫. সম্পূর্ণতা (Completeness): আর্থিক বিবরণীর সম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরার জন্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৬. সঠিক বিন্যাস (Proper Formatting): নোটগুলোকে একটি নির্দিষ্ট বিন্যাসে উপস্থাপন করতে হবে, যাতে তথ্য সহজে খুঁজে পাওয়া যায়।

নোটস টু ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্টস-এর উদাহরণ

ধরা যাক, একটি কোম্পানি তাদের আর্থিক বিবরণীতে নিম্নলিখিত নোটগুলো অন্তর্ভুক্ত করেছে:

নোট ১: অ্যাকাউন্টিং পলিসি কোম্পানিটি আন্তর্জাতিক আর্থিক রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (IFRS) অনুসরণ করে। রাজস্ব স্বীকৃতি নীতি হলো, পণ্য বা সেবা প্রদানের সাথে সাথে রাজস্ব স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

নোট ২: সম্পত্তি, উদ্ভিদ ও সরঞ্জাম স্থায়ী সম্পদের উপর সরলরৈখিক পদ্ধতিতে (Straight-line method) অবচয় হিসাব করা হয়।

নোট ৩: ঋণ এবং দায় কোম্পানির কাছে ৫% সুদের হারে ১০,০০,০০০ টাকার ঋণ রয়েছে, যা ২০২৫ সালে পরিশোধ করতে হবে।

নোট ৪: শেয়ার মূলধন কোম্পানির অনুমোদিত শেয়ার মূলধন ১,০০,০০,০০০ টাকা, যার মধ্যে ৮০,০০,০০০ টাকার শেয়ার ইস্যু করা হয়েছে।

নোট ৫: সংঘটিত ঘটনা কোম্পানির বিরুদ্ধে একটি মামলা চলছে, যার ফলাফল অনিশ্চিত।

নোটস টু ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্টস-এর ব্যবহারকারী

নোটস টু ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্টস-এর প্রধান ব্যবহারকারীগণ হলেন:

১. বিনিয়োগকারী (Investors): বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির আর্থিক স্বাস্থ্য এবং কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন করতে এই নোটগুলো ব্যবহার করেন।

২. ঋণদাতা (Creditors): ঋণদাতারা কোম্পানির ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা যাচাই করতে নোটগুলো দেখেন।

৩. বিশ্লেষক (Analysts): আর্থিক বিশ্লেষকরা কোম্পানির আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ কর্মক্ষমতা সম্পর্কে পূর্বাভাস দেন।

৪. নিয়ন্ত্রক সংস্থা (Regulatory Bodies): নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো কোম্পানিগুলোর আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নোটগুলো পর্যালোচনা করে।

৫. ব্যবস্থাপক (Management): কোম্পানির ব্যবস্থাপকরা অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য নোটগুলো ব্যবহার করেন।

ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্ট বিশ্লেষণে নোটস টু ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্টস-এর ব্যবহার

নোটস টু ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্টস আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো:

১. অনুপাত বিশ্লেষণ (Ratio Analysis): বিভিন্ন আর্থিক অনুপাত (যেমন লিকুইডিটি অনুপাত, সলভেন্সি অনুপাত, লা

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ