নৈতিক আপেক্ষিকতাবাদ
নৈতিক আপেক্ষিকতাবাদ
ভূমিকা
নৈতিক আপেক্ষিকতাবাদ হলো একটি দার্শনিক মতবাদ। এই মতবাদ অনুসারে, নৈতিকতা কোনো অধিষ্টান বা সার্বজনীন সত্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয় না। বরং এটি ব্যক্তি, সংস্কৃতি বা সমাজের সাপেক্ষে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। অর্থাৎ, যা একটি সংস্কৃতিতে নৈতিক বলে বিবেচিত হয়, তা অন্য সংস্কৃতিতে অনৈতিক হতে পারে। এই ধারণাটি নৈতিক বিচারের ক্ষেত্রে একটি জটিলতা তৈরি করে এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে নৈতিক ভিন্নতা আলোচনার জন্ম দেয়।
নৈতিক আপেক্ষিকতাবাদের প্রকারভেদ
নৈতিক আপেক্ষিকতাবাদ মূলত দুই প্রকার:
১. ব্যক্তিগত নৈতিক আপেক্ষিকতাবাদ (Subjective Ethical Relativism): এই মতবাদ অনুযায়ী, নৈতিকতা সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তির নিজস্ব বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজস্ব নৈতিক মানদণ্ড তৈরি করে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে। এক্ষেত্রে, অন্যের মতামত বা সামাজিক রীতিনীতি ব্যক্তির নৈতিক বিচারকে প্রভাবিত করতে পারে না।
২. সাংস্কৃতিক নৈতিক আপেক্ষিকতাবাদ (Cultural Ethical Relativism): এটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত একটি ধারণা। এই মতবাদ অনুসারে, নৈতিকতা কোনো নির্দিষ্ট সংস্কৃতি বা সমাজের রীতিনীতি, ঐতিহ্য এবং মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়। একটি সমাজের যা সঠিক বলে মনে করা হয়, সেটাই সেই সমাজের জন্য নৈতিক। অন্য সংস্কৃতিতে সেই একই কাজ ভুল বা অনৈতিক হতে পারে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
নৈতিক আপেক্ষিকতাবাদের ধারণাটি প্রাচীন গ্রিক Sophist-দের মধ্যে প্রথম দেখা যায়। Protagoras-এর বিখ্যাত উক্তি "মানুষই সকল বিষয়ের মানদণ্ড" (Man is the measure of all things) আপেক্ষিকতাবাদের একটি প্রাথমিক প্রকাশ। তবে আধুনিক যুগে এই মতবাদটি বিভিন্ন নৃতত্ত্ববিদ ও দার্শনিকের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে।
নৃতত্ত্বের প্রভাব
উনিশ শতকে নৃতত্ত্ববিদরা বিভিন্ন সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করার সময় দেখেন যে, বিভিন্ন সমাজে নৈতিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। রুথ বেনেডিক্ট তাঁর ‘Patterns of Culture’ (১৯৩৬) গ্রন্থে বিভিন্ন সংস্কৃতির নৈতিকতার ভিন্নতা তুলে ধরেন। তিনি দেখান যে, কোনো একটি নির্দিষ্ট সংস্কৃতির নৈতিক মানদণ্ডকে সার্বজনীন নৈতিকতা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া যায় না।
দার্শনিক বিতর্ক
নৈতিক আপেক্ষিকতাবাদ নিয়ে দার্শনিক মহলে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। এই মতবাদের কিছু শক্তিশালী সমর্থক এবং সমালোচক উভয়ই বিদ্যমান।
সমর্থকদের যুক্তি
- সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য: নৈতিক আপেক্ষিকতাবাদীরা মনে করেন, বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতিতে নৈতিকতার ভিন্নতা একটি বাস্তব ঘটনা। এই বৈচিত্র্যকে সম্মান করা উচিত এবং কোনো একটি সংস্কৃতিকে অন্যটির চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করা উচিত নয়।
- সহনশীলতা: এই মতবাদ অন্যের সংস্কৃতি ও বিশ্বাসকে সহনশীলতার সাথে দেখতে উৎসাহিত করে।
- নৈতিক সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা: এটি কোনো একটি নির্দিষ্ট নৈতিক কাঠামোকে অন্য সংস্কৃতির উপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতার বিরোধিতা করে।
সমালোচকদের যুক্তি
- নৈতিকProgress-এর অভাব: আপেক্ষিকতাবাদ অনুসারে, যদি নৈতিকতা শুধুমাত্র সংস্কৃতির উপর নির্ভরশীল হয়, তাহলে নৈতিক progress বা উন্নতির কোনো সুযোগ থাকে না। কারণ, কোনো সংস্কৃতি যদি একটি অনৈতিক প্রথা অনুসরণ করে, তবে আপেক্ষিকতাবাদ অনুযায়ী সেটি সেই সংস্কৃতির জন্য নৈতিকই হবে।
- বিচারের অভাব: যদি কোনো সার্বজনীন নৈতিক মানদণ্ড না থাকে, তাহলে কোনো কাজকে সম্পূর্ণরূপে ন্যায় বা অন্যায় বলা সম্ভব নয়।
- অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব: আপেক্ষিকতাবাদীরা প্রায়শই নিজেদের নৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দ্বন্দ্বে পতিত হন। যেমন, যদি তাঁরা বলেন যে "সবাই যা বিশ্বাস করে তাই সঠিক", তাহলে তাঁরা নিজেদের এই বিশ্বাসের যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন।
নৈতিক আপেক্ষিকতাবাদ এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর মধ্যে সম্পর্ক
যদিও আপাতদৃষ্টিতে নৈতিক আপেক্ষিকতাবাদ এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর মধ্যে কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই, তবে উভয় ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ঝুঁকির বিষয়টি জড়িত। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ, একজন ট্রেডারকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সম্পদের দাম বাড়বে নাকি কমবে, তা অনুমান করতে হয়। এই ক্ষেত্রে, ট্রেডারের ব্যক্তিগত বিশ্বাস, বাজারের বিশ্লেষণ এবং ঝুঁকির ধারণক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ঝুঁকির ধারণা ভিন্ন হতে পারে। কোনো সংস্কৃতিতে ঝুঁকি গ্রহণকে উৎসাহিত করা হয়, আবার কোনো সংস্কৃতিতে এটি নিরুৎসাহিত করা হয়। একজন ট্রেডার যে সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছেন, তার নৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ তার ট্রেডিং সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, কিছু সংস্কৃতিতে দ্রুত মুনাফা অর্জনের জন্য উচ্চ ঝুঁকি নেওয়াকে নৈতিকভাবে সমর্থন করা হতে পারে, যেখানে অন্য সংস্কৃতিতে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীল বিনিয়োগকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়সমূহ:
১. ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management): বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ঝুঁকির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২. টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ (Technical Analysis): বাজারের গতিবিধি এবং প্রবণতা বোঝার জন্য টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ব্যবহার করা হয়। ৩. ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ (Fundamental Analysis): অর্থনৈতিক সূচক এবং অন্যান্য মৌলিক বিষয়গুলি বিবেচনা করে ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নেওয়া। ৪. ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis): ট্রেডিং ভলিউম বিশ্লেষণ করে বাজারের চাহিদা এবং সরবরাহ সম্পর্কে ধারণা লাভ করা। ৫. মানি ম্যানেজমেন্ট (Money Management): পুঁজি ব্যবস্থাপনার সঠিক কৌশল অবলম্বন করা। ৬. চার্ট প্যাটার্ন (Chart Patterns): বিভিন্ন চার্ট প্যাটার্ন শনাক্ত করে ভবিষ্যৎ গতিবিধি অনুমান করা। ৭. ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন (Candlestick Patterns): ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করে বাজারের সংকেত বোঝা। ৮. মুভিং এভারেজ (Moving Average): মুভিং এভারেজ ব্যবহার করে বাজারের গড় গতিবিধি নির্ণয় করা। ৯. আরএসআই (RSI - Relative Strength Index): আরএসআই ব্যবহার করে বাজারের অতিরিক্ত ক্রয় বা বিক্রয় পরিস্থিতি বোঝা। ১০. MACD (Moving Average Convergence Divergence): MACD ব্যবহার করে বাজারের গতি এবং প্রবণতা বিশ্লেষণ করা। ১১. ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট ব্যবহার করে সম্ভাব্য সমর্থন এবং প্রতিরোধের স্তর চিহ্নিত করা। ১২. বোলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands): বলিঙ্গার ব্যান্ড ব্যবহার করে বাজারের অস্থিরতা পরিমাপ করা। ১৩. অপশন চেইন (Option Chain): অপশন চেইন বিশ্লেষণ করে বাজারের সম্ভাব্য মূল্য পরিসীমা নির্ধারণ করা। ১৪. ইম্প্লাইড ভলাটিলিটি (Implied Volatility): ইম্প্লাইড ভলাটিলিটি ব্যবহার করে অপশনের দামের পূর্বাভাস দেওয়া। ১৫. সংবাদ এবং ইভেন্ট (News and Events): অর্থনৈতিক সংবাদ এবং গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলির বাজারের উপর প্রভাব বিশ্লেষণ করা।
নৈতিক আপেক্ষিকতাবাদ এবং আইন
নৈতিক আপেক্ষিকতাবাদ প্রায়শই আইনের সাথে সম্পর্কিত বিতর্কে জড়িত হয়। কোনো কাজ যদি একটি সংস্কৃতিতে নৈতিক হয়, কিন্তু অন্য সংস্কৃতিতে অবৈধ হয়, তাহলে সেই ক্ষেত্রে আইন কীভাবে প্রয়োগ করা হবে? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন।
আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকারের ধারণা এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আন্তর্জাতিক আইন চেষ্টা করে সার্বজনীন নৈতিক মানদণ্ড প্রতিষ্ঠা করতে, যা সকল সংস্কৃতিকে সম্মান করে এবং মানবাধিকার রক্ষা করে।
উপসংহার
নৈতিক আপেক্ষিকতাবাদ একটি জটিল এবং বহুমাত্রিক ধারণা। এটি নৈতিক বিচারের ক্ষেত্রে সংস্কৃতির প্রভাব এবং ভিন্নতা তুলে ধরে। যদিও এই মতবাদ কিছু ক্ষেত্রে সহনশীলতা এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে উৎসাহিত করে, তবে এটি নৈতিক progress এবং সার্বজনীন ন্যায়বিচারের ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর মতো ক্ষেত্রগুলোতে, যেখানে ব্যক্তিগত বিশ্বাস এবং ঝুঁকির ধারণা গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে নৈতিক আপেক্ষিকতাবাদের প্রভাব বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বদা সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং নিজের ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা বিবেচনা করা উচিত।
আরও জানতে:
- নীতিদর্শন
- নৈতিকতা
- সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য
- মানব অধিকার
- আন্তর্জাতিক আইন
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
- ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ
- ভলিউম বিশ্লেষণ
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
