নন-ডিরেক্ট ডিলিং
নন-ডিরেক্ট ডিলিং : বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর একটি বিশেষ দিক
ভূমিকা
বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি জটিল বিষয়, যেখানে বিনিয়োগকারীরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো সম্পদের দাম বাড়বে নাকি কমবে সে বিষয়ে পূর্বাভাস দিয়ে থাকেন। এই ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে ডিরেক্ট ডিলিংয়ের পাশাপাশি নন-ডিরেক্ট ডিলিংও একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। নন-ডিরেক্ট ডিলিং কৌশলটি বিশেষভাবে অভিজ্ঞ ট্রেডারদের জন্য উপযোগী, যারা বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন এবং ঝুঁকি কমাতে চান। এই নিবন্ধে, নন-ডিরেক্ট ডিলিংয়ের মূল বিষয়গুলো, সুবিধা, অসুবিধা, কৌশল এবং ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
নন-ডিরেক্ট ডিলিং কী?
নন-ডিরেক্ট ডিলিং হলো বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে ট্রেডার সরাসরি কল (Call) বা পুট (Put) অপশন কেনেন না। এর পরিবর্তে, তারা এমন অপশন কেনেন যেগুলো অন্য অপশনের দামের উপর নির্ভরশীল। এই পদ্ধতিতে, ট্রেডাররা বাজারের ভবিষ্যৎ গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা না করেই লাভ করতে পারেন। এটি সাধারণত অভিজ্ঞ ট্রেডাররা ব্যবহার করেন, যারা অপশনের দামের পরিবর্তন এবং বাজারের জটিলতা বুঝতে পারেন।
ডিরেক্ট ডিলিং এবং নন-ডিরেক্ট ডিলিং-এর মধ্যে পার্থক্য
| বৈশিষ্ট্য | ডিরেক্ট ডিলিং | নন-ডিরেক্ট ডিলিং |
| মূল ধারণা | সরাসরি কল বা পুট অপশন কেনা | অন্য অপশনের উপর নির্ভরশীল অপশন কেনা |
| ঝুঁকির মাত্রা | তুলনামূলকভাবে বেশি | তুলনামূলকভাবে কম |
| জটিলতা | কম | বেশি |
| অভিজ্ঞতার প্রয়োজন | কম | বেশি |
| লাভের সম্ভাবনা | সীমিত | বেশি |
| বাজারের পূর্বাভাস | প্রয়োজন | প্রয়োজন নাও হতে পারে |
নন-ডিরেক্ট ডিলিংয়ের প্রকারভেদ
নন-ডিরেক্ট ডিলিং বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে, যার মধ্যে কয়েকটি প্রধান প্রকার নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. বাটারফ্লাই স্প্রেড (Butterfly Spread): এই কৌশলটিতে তিনটি ভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইসের অপশন ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারণত বাজারের স্থিতিশীলতা প্রত্যাশা করা হলে ব্যবহার করা হয়। অপশন ট্রেডিং কৌশল
২. কন্ডর স্প্রেড (Condor Spread): এটি বাটারফ্লাই স্প্রেডের মতোই, তবে এখানে চারটি ভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইসের অপশন ব্যবহার করা হয়। এটিও বাজারের স্থিতিশীলতা প্রত্যাশা করা হলে ব্যবহার করা হয়। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
৩. আয়রন কন্ডর (Iron Condor): এই কৌশলটিতে চারটি ভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইসের অপশন ব্যবহার করা হয়, যেখানে দুটি কল এবং দুটি পুট অপশন থাকে। এটি বাজারের কম অস্থিরতা (Low Volatility) প্রত্যাশা করা হলে ব্যবহার করা হয়। ভলাটিলিটি
৪. র্যাচিং (Ratching): এই পদ্ধতিতে, ট্রেডাররা ধীরে ধীরে তাদের অপশন পজিশন পরিবর্তন করে লাভ করার চেষ্টা করেন।
নন-ডিরেক্ট ডিলিংয়ের সুবিধা
- ঝুঁকি হ্রাস: নন-ডিরেক্ট ডিলিংয়ে ঝুঁকির মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম থাকে, কারণ ট্রেডাররা সরাসরি বাজারের দিকে মনোযোগ না দিয়ে অপশনের দামের পরিবর্তনের উপর নির্ভর করেন। ঝুঁকি মূল্যায়ন
- লাভের সম্ভাবনা বৃদ্ধি: এই পদ্ধতিতে লাভের সম্ভাবনা বেশি, বিশেষ করে যখন ট্রেডার বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখেন। লাভজনক ট্রেডিং
- কম চাপ: ডিরেক্ট ডিলিংয়ের চেয়ে নন-ডিরেক্ট ডিলিংয়ে মানসিক চাপ কম থাকে, কারণ এখানে বাজারের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার প্রয়োজন হয় না। মানসিক প্রস্তুতি
- বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ব্যবহারযোগ্য: নন-ডিরেক্ট ডিলিং কৌশলগুলো বিভিন্ন বাজার পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। বাজার বিশ্লেষণ
নন-ডিরেক্ট ডিলিংয়ের অসুবিধা
- জটিলতা: নন-ডিরেক্ট ডিলিংয়ের কৌশলগুলো বেশ জটিল এবং বুঝতে কঠিন হতে পারে। নতুন ট্রেডারদের জন্য এটি উপযুক্ত নয়। কৌশলগত ট্রেডিং
- উচ্চ দক্ষতা প্রয়োজন: এই পদ্ধতিতে সফল হতে হলে অপশন ট্রেডিং এবং বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। শিক্ষণীয় বিষয়
- কমিশন খরচ: একাধিক অপশন ব্যবহারের কারণে কমিশন খরচ বেশি হতে পারে। ট্রেডিং খরচ
- সময়সাপেক্ষ: নন-ডিরেক্ট ডিলিংয়ের জন্য যথেষ্ট সময় দিতে হয় এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হয়। সময় ব্যবস্থাপনা
নন-ডিরেক্ট ডিলিংয়ের কৌশল
১. বাটারফ্লাই স্প্রেড কৌশল
এই কৌশলটি ব্যবহার করে ট্রেডাররা বাজারের স্থিতিশীলতা থেকে লাভবান হতে পারেন। তিনটি ভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইসের অপশন ব্যবহার করা হয় - একটি অ্যাট-দ্য-মানি (At-The-Money) এবং দুটি আউট-অফ-দ্য-মানি (Out-Of-The-Money)।
উদাহরণ:
- একটি ১০৫ স্ট্রাইক প্রাইসের কল অপশন কিনুন।
- একটি ১০০ স্ট্রাইক প্রাইসের কল অপশন বিক্রি করুন।
- একটি ১১০ স্ট্রাইক প্রাইসের কল অপশন বিক্রি করুন।
২. কন্ডর স্প্রেড কৌশল
এই কৌশলটি বাটারফ্লাই স্প্রেডের মতোই, তবে এখানে চারটি ভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইসের অপশন ব্যবহার করা হয়। এটি বাজারের স্থিতিশীলতা থেকে লাভবান হওয়ার জন্য একটি নিরাপদ উপায়। কন্ডর স্প্রেড উদাহরণ
উদাহরণ:
- একটি ১০৫ স্ট্রাইক প্রাইসের কল অপশন কিনুন।
- একটি ১০০ স্ট্রাইক প্রাইসের কল অপশন বিক্রি করুন।
- একটি ১১৫ স্ট্রাইক প্রাইসের কল অপশন বিক্রি করুন।
- একটি ৯০ স্ট্রাইক প্রাইসের কল অপশন কিনুন।
৩. আয়রন কন্ডর কৌশল
এই কৌশলটি চারটি ভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইসের অপশন ব্যবহার করে তৈরি করা হয় - দুটি কল এবং দুটি পুট অপশন। এটি বাজারের কম অস্থিরতা থেকে লাভবান হওয়ার জন্য উপযুক্ত। আয়রন কন্ডর কৌশল
উদাহরণ:
- একটি ১০৫ স্ট্রাইক প্রাইসের কল অপশন বিক্রি করুন।
- একটি ১১০ স্ট্রাইক প্রাইসের কল অপশন বিক্রি করুন।
- একটি ১০০ স্ট্রাইক প্রাইসের পুট অপশন বিক্রি করুন।
- একটি ৯০ স্ট্রাইক প্রাইসের পুট অপশন বিক্রি করুন।
নন-ডিরেক্ট ডিলিংয়ের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়
- বাজারের বিশ্লেষণ: নন-ডিরেক্ট ডিলিং করার আগে বাজারের গতিবিধি এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভালোভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: আপনার ঝুঁকির ক্ষমতা অনুযায়ী ট্রেডিংয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। ঝুঁকি হ্রাস করার উপায়
- কমিশন এবং ফি: অপশন ট্রেডিংয়ের সাথে জড়িত কমিশন এবং ফি সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম
- সময়সীমা: অপশনের সময়সীমা (Expiry Date) সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। সময়সীমা ব্যবস্থাপনা
- মানসিক শৃঙ্খলা: ট্রেডিংয়ের সময় আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মানসিক কৌশল
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ
নন-ডিরেক্ট ডিলিংয়ের ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ (Technical Analysis) এবং ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি এবং সম্ভাব্য প্রবণতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ভলিউম বিশ্লেষণ বাজারের লেনদেনের পরিমাণ এবং চাপ সম্পর্কে তথ্য দেয়। এই দুটি বিশ্লেষণ কৌশল ব্যবহার করে ট্রেডাররা আরও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
- মুভিং এভারেজ (Moving Average): এটি একটি জনপ্রিয় টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর, যা বাজারের গড় মূল্য নির্ধারণ করে। মুভিং এভারেজ কৌশল
- আরএসআই (RSI - Relative Strength Index): এটি বাজারের অতিরিক্ত কেনা বা বিক্রির চাপ নির্দেশ করে। আরএসআই ব্যবহার
- এমএসিডি (MACD - Moving Average Convergence Divergence): এটি দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করে। এমএসিডি বিশ্লেষণ
- ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): এটি সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল চিহ্নিত করে। ফিবোনাচি কৌশল
- ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP): এটি একটি নির্দিষ্ট সময়কালের মধ্যে গড় মূল্য এবং ভলিউম বিবেচনা করে। ভলিউম বিশ্লেষণ
উপসংহার
নন-ডিরেক্ট ডিলিং বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের একটি উন্নত কৌশল, যা অভিজ্ঞ ট্রেডারদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। এই পদ্ধতিতে ঝুঁকি কমানো এবং লাভের সম্ভাবনা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। তবে, এটি জটিল এবং উচ্চ দক্ষতা demanding। বাজারের সঠিক বিশ্লেষণ, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং সঠিক কৌশল অবলম্বন করে নন-ডিরেক্ট ডিলিংয়ের মাধ্যমে সফল ট্রেডার হওয়া সম্ভব।
আরও জানতে:
- বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের মৌলিক ধারণা
- অপশন ট্রেডিংয়ের ঝুঁকি
- সফল ট্রেডিংয়ের জন্য টিপস
- বাইনারি অপশন ব্রোকার
- ট্রেডিং সাইকোলজি
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
