নন্দন Nilekani
নন্দন Nilekani
নন্দন Nilekani ভারতের একজন প্রভাবশালী উদ্যোক্তা, সমাজসেবক এবং লেখক। তিনি ইনফোসিস নামক ভারতের অন্যতম বৃহত্তম তথ্য প্রযুক্তি (Information Technology) কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ভারতের প্রযুক্তি শিল্পে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য এবং তিনি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এই নিবন্ধে, নন্দন Nilekani-র জীবন, কর্মজীবন, অবদান এবং চিন্তাভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
প্রারম্ভিক জীবন এবং শিক্ষা
নন্দন Nilekani ১৯৫৫ সালের ২ জুন মMysore, কর্ণাটক-এ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হরেকৃষ্ণ Nilekani এবং মায়ের নাম ললিতা Nilekani। তিনি Bishop Cotton Boys' School, Bangalore এবং Indian Institute of Technology Kanpur থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক সম্পন্ন করেন।
কর্মজীবন
১৯৮১ সালে নন্দন Nilekani এবং তাঁর ছয় বন্ধু মিলে ইনফোসিস প্রতিষ্ঠা করেন। এই কোম্পানিটি ভারতের তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের একটি অগ্রণী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ইনফোসিসের যাত্রা শুরু হয়েছিল একটি ছোট অফিসের মাধ্যমে, কিন্তু Nilekani-র দূরদর্শিতা এবং কঠোর পরিশ্রমে এটি একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়। তিনি ইনফোসিসের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (CEO) হিসেবে ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
ইনফোসিস থেকে অবসর নেওয়ার পর, নন্দন Nilekani নতুন উদ্যোগে মনোযোগ দেন। তিনি Unique Identification Authority of India (UIDAI)-এর চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন এবং Aadhaar প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই প্রকল্পটি ভারতের ১২০ কোটির বেশি নাগরিককে একটি ১২-সংখ্যার পরিচয়পত্র প্রদান করে, যা দেশের সুশাসন এবং অর্থনীতিতে সহায়ক হয়েছে।
ইনফোসিসে অবদান
নন্দন Nilekani ইনফোসিসকে একটি বিশ্বমানের কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তাঁর নেতৃত্বে ইনফোসিস গুণমান, উদ্ভাবন এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি-র ক্ষেত্রে নতুন মান তৈরি করে। তিনি কোম্পানির সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং নৈতিক মানদণ্ড প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ইনফোসিসের কর্মপরিবেশকে তিনি এমনভাবে তৈরি করেন, যেখানে কর্মীদের সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনাকে উৎসাহিত করা হয়। তাঁর অনুপ্রেরণায় ইনফোসিসের কর্মীরা নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে আগ্রহী হন, যা কোম্পানিকে বিশ্ব বাজারে টিকে থাকতে সাহায্য করে।
আধার প্রকল্প এবং সামাজিক প্রভাব
নন্দন Nilekani-র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আধার প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি ভারতের প্রতিটি নাগরিককে একটি ডিজিটাল পরিচয় প্রদান করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। আধার কার্ড নাগরিকদের জন্য বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা পেতে এবং আর্থিক লেনদেন করতে সহায়ক হয়েছে।
আধার প্রকল্পের বাস্তবায়নকালে তিনি অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর দৃঢ় সংকল্প এবং নেতৃত্বের মাধ্যমে তিনি সফলভাবে এই প্রকল্প সম্পন্ন করেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি দেশের দারিদ্র্য বিমোচন, দুর্নীতি হ্রাস এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করেন।
লেখালেখি এবং চিন্তাভাবনা
নন্দন Nilekani একজন স্বনামধন্য লেখক এবং তিনি বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর চিন্তাভাবনা প্রকাশ করেছেন। তাঁর লেখা বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো "Imagining India: Ideas for a Vibrant Democracy"। এই বইটিতে তিনি ভারতের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন এবং গণতন্ত্রের বিষয়ে তাঁর ধারণা তুলে ধরেছেন।
তিনি বিশ্বাস করেন যে প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন ভারতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সুযোগ তৈরি করার ওপর জোর দিয়েছেন।
পুরস্কার এবং স্বীকৃতি
নন্দন Nilekani তাঁর কাজের জন্য অসংখ্য পুরস্কার এবং স্বীকৃতি লাভ করেছেন। তিনি Padma Bhushan (২০১২) এবং Padma Vibhushan (২০১৬) এর মতো ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এছাড়াও, তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে সম্মানিত হয়েছেন।
| বছর | পুরস্কার | প্রদানকারী সংস্থা | |||||||||||||
| ২০১২ | পদ্মভূষণ | ভারত সরকার | ২০১৬ | পদ্মবিভূষণ | ভারত সরকার | ২০০৬ | Ernst & Young Entrepreneur of the Year Award | Ernst & Young | ২০০৫ | Asian Business Leader Award | CNBC |
ব্যক্তিগত জীবন
নন্দন Nilekani রোहिणी Nilekani-কে বিয়ে করেন। তাঁদের দুই সন্তান রয়েছে। তিনি একজন বিনয়ী এবং সাধারণ জীবনযাপন করেন। তিনি বিভিন্ন চ্যারিটি এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত।
নন্দন Nilekani-র দর্শন
নন্দন Nilekani মনে করেন, প্রযুক্তিকে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করা উচিত। তিনি ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্ন দেখেন, যেখানে প্রতিটি নাগরিক প্রযুক্তির সুবিধা ভোগ করতে পারবে। তিনি বিশ্বাস করেন যে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং আর্থিক পরিষেবাগুলোতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো গেলে দেশের উন্নয়ন দ্রুত হবে।
তিনি প্রায়শই বলেন যে, "উদ্ভাবনই ভবিষ্যতের চাবিকাঠি"। তিনি তরুণ প্রজন্মকে নতুন নতুন উদ্ভাবনে উৎসাহিত করেন এবং স্টার্টআপ (Startup) সংস্কৃতিকে সমর্থন করেন।
প্রযুক্তি এবং অর্থনীতিতে প্রভাব
নন্দন Nilekani-র অবদান ভারতের প্রযুক্তি শিল্প এবং অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে। ইনফোসিসের মাধ্যমে তিনি লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন এবং ভারতের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছেন।
আধার প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ-কে ত্বরান্বিত করেছেন এবং দরিদ্র মানুষের কাছে সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দিতে সহায়তা করেছেন। তাঁর চিন্তাভাবনা এবং কর্মপন্থা তরুণ প্রজন্মকে উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করছে।
বিনিয়োগ এবং নতুন উদ্যোগ
নন্দন Nilekani বিভিন্ন স্টার্টআপে বিনিয়োগ করেছেন এবং নতুন উদ্যোগ শুরু করতে সহায়তা করেছেন। তিনি EkStep Foundation-এর প্রতিষ্ঠাতা, যা শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করে। এছাড়াও, তিনি The Nilekani Philanthropies-এর মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে সহায়তা করেন।
তিনি বিশ্বাস করেন যে, নতুন উদ্যোক্তারা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই তিনি স্টার্টআপগুলোকে সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছেন এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে তাদের উৎসাহিত করছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
নন্দন Nilekani বর্তমানে সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে কাজ করছেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নতুন নতুন সমাধান खोजने চেষ্টা করছেন।
তিনি একটি উন্নত এবং সমৃদ্ধ ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখেন, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের জীবন সহজ ও সুন্দর হবে। তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলো দেশের উন্নয়নে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।
উপসংহার
নন্দন Nilekani ভারতের একজন প্রকৃত visionaries এবং Nation builders। তিনি তাঁর কর্ম এবং চিন্তাভাবনার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি, প্রযুক্তি এবং সমাজে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তাঁর জীবন এবং কর্ম তরুণ প্রজন্মের জন্য এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
- Nilekani.in/(https://nandan Nilekani.in/)
- [1](https://www.infosys.com/)
- [2](https://uidai.gov.in/)
আরও জানতে:
- ভারতীয় অর্থনীতি
- তথ্য প্রযুক্তি শিল্প
- ডিজিটাল ইন্ডিয়া
- উদ্যোক্তা উন্নয়ন
- সামাজিক উদ্ভাবন
- Aadhaar card
- Unique Identification Authority of India
- ইনফোসিস ফাউন্ডেশন
- রোहिणी Nilekani
- Bishop Cotton Boys' School
- Indian Institute of Technology Kanpur
- কর্ণাটক
- Bangalore
- Mysore
- Padma Vibhushan
- Padma Bhushan
- ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
- সুশাসন
- দারিদ্র্য বিমোচন
- দুর্নীতি হ্রাস
- আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ
- জলবায়ু পরিবর্তন
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
