নগদ সমতুল্য

From binaryoption
Jump to navigation Jump to search
Баннер1

নগদ সমতুল্য

নগদ সমতুল্য হলো সেইসব বিনিয়োগ যা সহজেই নগদে রূপান্তরিত করা যায় এবং যেগুলোর মূল্য পরিবর্তনের ঝুঁকি খুবই কম। হিসাববিজ্ঞান এবং অর্থনীতিতে এর গুরুত্ব অনেক। কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণী-তে এর সঠিক চিত্র তুলে ধরা প্রয়োজন।

সংজ্ঞা

নগদ সমতুল্য বলতে সাধারণত স্বল্পমেয়াদী, অত্যন্ত তরল বিনিয়োগকে বোঝায় যা খুব অল্প সময়ের মধ্যে এবং সামান্য ক্ষতির সাথে নগদে রূপান্তরিত হতে পারে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো নগদ অর্থের তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটানো।

নগদ সমতুল্যের বৈশিষ্ট্য

  • সহজেই নগদে রূপান্তরযোগ্য: বিনিয়োগটি দ্রুত নগদে পরিবর্তন করা যেতে সক্ষম হতে হবে। সাধারণত, তিন মাসের মধ্যে নগদে রূপান্তরযোগ্য বিনিয়োগকে নগদ সমতুল্য হিসেবে গণ্য করা হয়।
  • মূল্যের স্থিতিশীলতা: বিনিয়োগের মূল্য সামান্য পরিবর্তনশীল হতে হবে। অর্থাৎ, মূল্যহ্রাসের ঝুঁকি কম থাকতে হবে।
  • স্বল্প মেয়াদী: বিনিয়োগের মেয়াদ সাধারণত তিন মাস বা তার কম হতে হয়।

নগদ সমতুল্যের উদাহরণ

বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ নগদ সমতুল্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো:

  • ট্রেজারি বিল: সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত স্বল্পমেয়াদী ঋণপত্র। এগুলোর ঝুঁকি খুবই কম।
  • কমার্শিয়াল পেপার: কর্পোরেট সংস্থাগুলো কর্তৃক ইস্যুকৃত স্বল্পমেয়াদী ঋণপত্র।
  • মানি মার্কেট ফান্ড: এই ফান্ডগুলো স্বল্পমেয়াদী ঋণপত্রে বিনিয়োগ করে।
  • মেয়াদী আমানত: স্বল্পমেয়াদী fixed deposit বা মেয়াদী আমানত, যা সহজেই ভাঙানো যায়।
  • কলমানি ঋণ: স্বল্প সময়ের জন্য ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ।
  • রিভার্স রেপো: রিভার্স রেপো হলো একটি চুক্তি, যেখানে একটি পক্ষ অন্য পক্ষের কাছে সিকিউরিটি বিক্রি করে এবং ভবিষ্যতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে তা পুনরায় কেনার প্রতিশ্রুতি দেয়।

নগদ সমতুল্য এবং নগদ অর্থের মধ্যে পার্থক্য

নগদ অর্থ হলো হাতে থাকা টাকা বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা থাকা টাকা, যা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত। অন্যদিকে, নগদ সমতুল্য হলো এমন বিনিয়োগ যা খুব অল্প সময়ের মধ্যে নগদে রূপান্তরিত করা যায়। নগদ অর্থ সরাসরি ব্যবহার করা যায়, তবে নগদ সমতুল্য প্রথমে নগদে পরিবর্তন করতে হয়।

হিসাববিজ্ঞানে নগদ সমতুল্যের গুরুত্ব

হিসাববিজ্ঞানে নগদ সমতুল্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এর কারণগুলো হলো:

  • আর্থিক বিবরণীর স্বচ্ছতা: নগদ সমতুল্য আর্থিক বিবরণীতে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা বুঝতে সাহায্য করে।
  • নগদ প্রবাহের পূর্বাভাস: নগদ সমতুল্য বিনিয়োগ থেকে নগদ প্রবাহের পূর্বাভাস দিতে সহায়ক।
  • কার্যকরী সম্পদ ব্যবস্থাপনা: নগদ সমতুল্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান তার স্বল্পমেয়াদী দায়গুলো পরিশোধ করতে পারে।
  • লভ্যাংশ প্রদান: নগদ সমতুল্য ব্যবহার করে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রদান করা যায়।

নগদ সমতুল্য ব্যবস্থাপনার কৌশল

কার্যকরী নগদ সমতুল্য ব্যবস্থাপনার জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে:

  • নগদ প্রবাহের পূর্বাভাস: ভবিষ্যতের নগদ প্রবাহের পূর্বাভাস তৈরি করে সেই অনুযায়ী বিনিয়োগের পরিকল্পনা করতে হবে।
  • ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: বিনিয়োগের ঝুঁকি কম রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের নগদ সমতুল্যে বিনিয়োগ করা উচিত।
  • তারল্য বজায় রাখা: পর্যাপ্ত পরিমাণ নগদ সমতুল্য বজায় রাখতে হবে, যাতে জরুরি প্রয়োজন মেটানো যায়।
  • বিনিয়োগের বৈচিত্র্য: বিভিন্ন মেয়াদী এবং বিভিন্ন ধরনের নগদ সমতুল্যে বিনিয়োগ করা উচিত।
  • সুদের হার নিরীক্ষণ: সুদের হারের পরিবর্তনগুলি পর্যবেক্ষণ করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং নগদ সমতুল্য

বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি বিনিয়োগ পদ্ধতি যেখানে বিনিয়োগকারীরা কোনো সম্পদের দাম বাড়বে নাকি কমবে সে বিষয়ে অনুমান করে। এই ট্রেডিংয়ের জন্য নগদ সমতুল্য ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, বাইনারি অপশন ট্রেডিং ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায়, এখানে নগদ সমতুল্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। অতিরিক্ত ঝুঁকি এড়াতে অভিজ্ঞ ট্রেডারদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

নগদ সমতুল্যের প্রকারভেদ

নগদ সমতুল্য বিভিন্ন প্রকার হতে পারে, যা বিনিয়োগের উদ্দেশ্য এবং ঝুঁকির মাত্রার উপর নির্ভর করে। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো:

১. সরকারি সিকিউরিটিজ:

  *   ট্রেজারি বিল: স্বল্পমেয়াদী সরকারি ঋণপত্র, যা সাধারণত এক বছর বা তার কম মেয়াদে ইস্যু করা হয়। এগুলি কম ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ হিসেবে পরিচিত।
  *   ট্রেজারি নোট: এগুলি সাধারণত দুই থেকে দশ বছরের মধ্যে মেয়াদী হয় এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর সুদ প্রদান করে।

২. কর্পোরেট সিকিউরিটিজ:

  *   কমার্শিয়াল পেপার: কর্পোরেট সংস্থাগুলি স্বল্পমেয়াদী তহবিলের জন্য যে ঋণপত্র ইস্যু করে, তাকে কমার্শিয়াল পেপার বলা হয়।
  *   সার্টিফিকেট অফ ডিপোজিট (সিডি): ব্যাংকগুলি কর্তৃক ইস্যুকৃত স্বল্পমেয়াদী আমানতপত্র।

৩. মানি মার্কেট অ্যাকাউন্ট:

  *   মানি মার্কেট মিউচুয়াল ফান্ড: এই ফান্ডগুলি স্বল্পমেয়াদী ঋণপত্রে বিনিয়োগ করে এবং সাধারণত স্থিতিশীল রিটার্ন প্রদান করে।
  *   মানি মার্কেট ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট: এগুলি ব্যাংক এবং ক্রেডিট ইউনিয়নগুলিতে উপলব্ধ, যা নিয়মিত সঞ্চয়ী হিসাবের চেয়ে বেশি সুদ প্রদান করে।

৪. অন্যান্য স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ:

  *   রিপো (Repurchase Agreement): একটি চুক্তি, যেখানে একটি পক্ষ অন্য পক্ষের কাছে সিকিউরিটি বিক্রি করে এবং ভবিষ্যতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে তা পুনরায় কেনার প্রতিশ্রুতি দেয়।
  *   ফেডারেল ফান্ড: ব্যাংকগুলি একে অপরের কাছ থেকে overnight ঋণের জন্য যে সুদের হার নেয়, তাকে ফেডারেল ফান্ড বলা হয়।

নগদ সমতুল্য নির্বাচনে বিবেচ্য বিষয়

নগদ সমতুল্য বিনিয়োগ করার সময় কিছু বিষয় বিবেচনা করা উচিত:

  • ঝুঁকি: বিনিয়োগের ঝুঁকি মূল্যায়ন করা জরুরি। কম ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ সাধারণত কম রিটার্ন প্রদান করে।
  • তারল্য: বিনিয়োগটি কত সহজে নগদে রূপান্তর করা যায়, তা বিবেচনা করতে হবে।
  • রিটার্ন: বিনিয়োগ থেকে প্রত্যাশিত রিটার্ন মূল্যায়ন করতে হবে।
  • মেয়াদ: বিনিয়োগের মেয়াদ আপনার নগদ চাহিদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে।
  • কর: বিনিয়োগের উপর প্রযোজ্য করের হার বিবেচনা করতে হবে।

ভলিউম বিশ্লেষণ এবং নগদ সমতুল্য

ভলিউম বিশ্লেষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল যা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক। ভলিউম বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাজারে কোনো সম্পদের চাহিদা এবং যোগান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। নগদ সমতুল্যের ক্ষেত্রে, ভলিউম বিশ্লেষণ ব্যবহার করে বাজারের তারল্য এবং স্থিতিশীলতা সম্পর্কে জানা যায়।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং নগদ সমতুল্য

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ হলো অতীতের মূল্য এবং ভলিউমের ডেটা ব্যবহার করে ভবিষ্যতের মূল্য পরিবর্তনের পূর্বাভাস করার একটি পদ্ধতি। নগদ সমতুল্যের ক্ষেত্রে, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ব্যবহার করে বাজারের প্রবণতা এবং সম্ভাব্য বিনিয়োগের সুযোগ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

কৌশলগত সম্পদ বরাদ্দ এবং নগদ সমতুল্য

কৌশলগত সম্পদ বরাদ্দ হলো বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকির প্রোফাইল এবং বিনিয়োগের লক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন সম্পদে বিনিয়োগের একটি পরিকল্পনা। নগদ সমতুল্য কৌশলগত সম্পদ বরাদ্দের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

আর্থিক মডেলিং এবং নগদ সমতুল্য

আর্থিক মডেলিং হলো কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা এবং ভবিষ্যতের কর্মক্ষমতা সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি। নগদ সমতুল্য আর্থিক মডেলিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

নিয়ন্ত্রক কাঠামো এবং নগদ সমতুল্য

নগদ সমতুল্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক কাঠামো রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। এই কাঠামো বিনিয়োগের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে সহায়ক।

উপসংহার

নগদ সমতুল্য বিনিয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক কৌশল, যা ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান উভয়কেই তাদের স্বল্পমেয়াদী আর্থিক লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে। সঠিক পরিকল্পনা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বাজারের পরিস্থিতি বিবেচনা করে নগদ সমতুল্যে বিনিয়োগ করা উচিত।

আরও জানতে:

নগদ সমতুল্যের উদাহরণ
বিনিয়োগের প্রকার মেয়াদ ঝুঁকি তারল্য প্রত্যাশিত রিটার্ন
ট্রেজারি বিল ৩ মাস থেকে ১ বছর খুব কম খুব বেশি কম
কমার্শিয়াল পেপার ১ দিন থেকে ২৭০ দিন কম বেশি মাঝারি
মানি মার্কেট ফান্ড নমনীয় কম বেশি মাঝারি
মেয়াদী আমানত ৭ দিন থেকে ১ বছর কম মাঝারি মাঝারি

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ

Баннер