থ্রি ইন্ডিয়ান্স ইন এ রো

থ্রি ইন্ডিয়ান্স ইন এ রো একটি ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন যা টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস-এর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এটি বুলিশ রিভার্সাল প্যাটার্ন হিসেবে পরিচিত। এই প্যাটার্নটি সাধারণত ডাউনট্রেন্ড-এর শেষে দেখা যায় এবং এর মাধ্যমে বাজার আপট্রেন্ড-এর দিকে যেতে পারে এমন সংকেত পাওয়া যায়। এই প্যাটার্নটি তিনটি ধারাবাহিক ডজি ক্যান্ডেলস্টিক দ্বারা গঠিত, যেখানে প্রতিটি ক্যান্ডেলের শরীর আগের ক্যান্ডেলের চেয়ে ছোট হয় এবং তারা একই দিকে (সাধারণত ডাউনট্রেন্ডে নিচে) তৈরি হয়।

গঠন এবং বৈশিষ্ট্য

থ্রি ইন্ডিয়ান্স ইন এ রো প্যাটার্নটি নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি প্রদর্শন করে:

ডাউনট্রেন্ড: এই প্যাটার্নটি একটি সুস্পষ্ট ডাউনট্রেন্ডের পরে গঠিত হয়। এর আগে একটি উল্লেখযোগ্য বেয়ারিশ ট্রেন্ড বিদ্যমান থাকতে হবে।
তিনটি ডজি ক্যান্ডেল: পরপর তিনটি ডজি ক্যান্ডেল তৈরি হয়। ডজি ক্যান্ডেল হলো সেই ক্যান্ডেল যার ওপেনিং এবং ক্লোজিং প্রাইস প্রায় একই থাকে, ফলে ক্যান্ডেলের শরীর খুব ছোট হয়।
ছোট শরীর: প্রতিটি ডজি ক্যান্ডেলের শরীর আগের ক্যান্ডেলের তুলনায় ছোট হতে হবে। এটি দুর্বল সেলিং প্রেশার নির্দেশ করে।
একই দিকে গঠন: তিনটি ক্যান্ডেলই ডাউনট্রেন্ডের দিকে গঠিত হয়, অর্থাৎ তাদের উপরের ছায়া (আপার শ্যাডো) খুব ছোট বা অনুপস্থিত থাকে এবং নিচের ছায়া (লোয়ার শ্যাডো) তুলনামূলকভাবে বড় হয়।
অবস্থান: এই প্যাটার্নটি সাধারণত চার্টের নিচে, সাপোর্ট লেভেলের কাছাকাছি দেখা যায়।

থ্রি ইন্ডিয়ান্স ইন এ রো প্যাটার্নের গঠন
ক্যান্ডেল নম্বর	ওপেনিং প্রাইস	ক্লোজিং প্রাইস	বৈশিষ্ট্য
১	উচ্চ	প্রায় একই	প্রথম ডজি ক্যান্ডেল, ছোট শরীর
২	উচ্চ	আগের চেয়ে সামান্য নিচে	দ্বিতীয় ডজি ক্যান্ডেল, আরও ছোট শরীর
৩	উচ্চ	প্রায় একই	তৃতীয় ডজি ক্যান্ডেল, সবচেয়ে ছোট শরীর

কিভাবে কাজ করে

এই প্যাটার্নটি মূলত বাজারের সেন্টিমেন্ট পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। ডাউনট্রেন্ডের সময়, বিক্রেতারা ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং কেনার আগ্রহ বাড়তে থাকে। প্রথম ডজি ক্যান্ডেলটি অনিশ্চয়তা তৈরি করে, দ্বিতীয়টি সেই অনিশ্চয়তাকে আরও বাড়িয়ে তোলে এবং তৃতীয় ডজি ক্যান্ডেলটি নিশ্চিত করে যে বাইং প্রেশার বাড়ছে।

যখন বিনিয়োগকারীরা দেখেন যে বিক্রেতারা দাম কমাতে পারছেন না এবং প্রতিটি ক্যান্ডেলের শরীর ছোট হচ্ছে, তখন তারা পজিশন নিতে উৎসাহিত হন। এর ফলে মার্কেট রিভার্সাল হতে পারে।

ট্রেডিং কৌশল

থ্রি ইন্ডিয়ান্স ইন এ রো প্যাটার্ন ব্যবহার করে ট্রেড করার জন্য কিছু কৌশল নিচে উল্লেখ করা হলো:

এন্ট্রি পয়েন্ট: তৃতীয় ডজি ক্যান্ডেলের ক্লোজিং প্রাইসের উপরে একটি বাই অর্ডার স্থাপন করুন।
স্টপ লস: প্যাটার্নের নিচে, অর্থাৎ তৃতীয় ক্যান্ডেলের সর্বনিম্ন প্রাইসের নিচে স্টপ লস সেট করুন। এটি আপনার ঝুঁকি সীমিত করবে।
টার্গেট: সাধারণত, স্টপ লসের দূরত্বের প্রায় দ্বিগুণ দূরত্বে আপনার টার্গেট প্রাইস নির্ধারণ করুন।
ভলিউম নিশ্চিতকরণ: এই প্যাটার্নটিকে আরও নির্ভরযোগ্য করার জন্য, ভলিউম বৃদ্ধি পাওয়া আবশ্যক। ভলিউম বৃদ্ধি পাওয়া মানে হলো, এই রিভার্সালের সম্ভাবনা বেশি।
অন্যান্য সূচক: এই প্যাটার্নটিকে মুভিং এভারেজ, আরএসআই (Relative Strength Index), অথবা এমএসিডি (Moving Average Convergence Divergence) এর মতো অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর-এর সাথে মিলিয়ে ব্যবহার করুন।

উদাহরণ

ধরা যাক, একটি স্টকের দাম ক্রমাগত কমছে। চার্টে পরপর তিনটি ডজি ক্যান্ডেল তৈরি হলো, যাদের শরীর ক্রমশ ছোট হচ্ছে। প্রথম ক্যান্ডেলের শরীর ছিল ২০ টাকা, দ্বিতীয়টির ১৫ টাকা এবং তৃতীয়টির ১০ টাকা। তৃতীয় ক্যান্ডেলের ক্লোজিং প্রাইস ছিল ৫০ টাকা।

এই ক্ষেত্রে, আপনি তৃতীয় ক্যান্ডেলের ক্লোজিং প্রাইসের উপরে, অর্থাৎ ৫১ টাকার আশেপাশে একটি বাই অর্ডার স্থাপন করতে পারেন। স্টপ লস সেট করতে পারেন ৪৯ টাকার নিচে। যদি দাম বাড়তে থাকে, তবে আপনার টার্গেট হতে পারে ৫৩-৫৪ টাকা।

ঝুঁকি এবং সতর্কতা

থ্রি ইন্ডিয়ান্স ইন এ রো প্যাটার্ন একটি শক্তিশালী সংকেত হলেও, এর কিছু ঝুঁকি রয়েছে:

ফলস সিগন্যাল: মাঝে মাঝে এই প্যাটার্নটি ভুল সংকেত দিতে পারে। তাই, অন্যান্য সূচকগুলির সাথে মিলিয়ে নিশ্চিত হওয়া জরুরি।
মার্কেট ভোলাটিলিটি: বাজারের অস্থিরতা এই প্যাটার্নের কার্যকারিতা কমাতে পারে।
ভলিউমের অভাব: যদি প্যাটার্নটি কম ভলিউমের সাথে গঠিত হয়, তবে এটি দুর্বল হতে পারে।
ট্রেন্ডের প্রেক্ষাপট: সামগ্রিক মার্কেট ট্রেন্ড বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। শক্তিশালী ডাউনট্রেন্ডের মধ্যে এই প্যাটার্নটি খুব বেশি নির্ভরযোগ্য নাও হতে পারে।

অন্যান্য সম্পর্কিত প্যাটার্ন

morning star: এটি একটি বুলিশ রিভার্সাল প্যাটার্ন, যা থ্রি ইন্ডিয়ান্স ইন এ রো-এর অনুরূপ, তবে এতে একটি ভিন্ন কাঠামো দেখা যায়।
piercing line: এটিও একটি বুলিশ রিভার্সাল প্যাটার্ন, যা ডাউনট্রেন্ডের শেষে গঠিত হয়।
bullish engulfing: এই প্যাটার্নে, একটি বুলিশ ক্যান্ডেল পূর্বের বেয়ারিশ ক্যান্ডেলকে সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করে ফেলে।

উন্নত কৌশল

ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট: এই প্যাটার্নের সাথে ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেল ব্যবহার করে আরও সঠিক এন্ট্রি এবং এক্সিট পয়েন্ট খুঁজে বের করা যেতে পারে।
প্রাইস অ্যাকশন: প্রাইস অ্যাকশন ট্রেডিং কৌশল ব্যবহার করে এই প্যাটার্নের কার্যকারিতা আরও বাড়ানো যায়।
Elliott wave theory: এলিয়ট ওয়েভ থিওরি-র সাথে মিলিয়ে এই প্যাটার্ন ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি বোঝা যেতে পারে।

উপসংহার

থ্রি ইন্ডিয়ান্স ইন এ রো একটি মূল্যবান ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন যা বিনিয়োগকারীদের সম্ভাব্য বুলিশ রিভার্সাল সনাক্ত করতে সাহায্য করে। তবে, শুধুমাত্র এই প্যাটার্নের উপর নির্ভর না করে, অন্যান্য টেকনিক্যাল টুলস এবং ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস-এর সাথে মিলিয়ে ট্রেড করা উচিত। সঠিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং সতর্কতা অবলম্বন করে, এই প্যাটার্নটি আপনার ট্রেডিং কৌশলকে উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে।

ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস বুলিশ রিভার্সাল ডাউনট্রেন্ড আপট্রেন্ড ডজি ক্যান্ডেল সেলিং প্রেশার বাইং প্রেশার মার্কেট রিভার্সাল বাই অর্ডার স্টপ লস টার্গেট প্রাইস ভলিউম মুভিং এভারেজ আরএসআই এমএসিডি টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর মর্নিং স্টার পিয়ার্সিং লাইন বুলিশ এনগালফিং ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট প্রাইস অ্যাকশন এলিয়ট ওয়েভ থিওরি সাপোর্ট লেভেল রেজিস্টেন্স লেভেল ট্রেডিং কৌশল ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বাজারের বিশ্লেষণ ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট ফিনান্সিয়াল মার্কেট বিনিয়োগ শেয়ার বাজার স্টক ট্রেডিং ফরেক্স ট্রেডিং

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ