ডিপ্রিসিয়েশন

ডিপ্রিসিয়েশন: একটি বিস্তারিত আলোচনা

ভূমিকা

ডিপ্রিসিয়েশন বা অবচয় হলো সময়ের সাথে সাথে কোনো স্থায়ী সম্পদের (Fixed Asset) মূল্য হ্রাস পাওয়া। এই হ্রাস বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন - ব্যবহার, প্রযুক্তিগত obsolescence বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। হিসাববিজ্ঞানে, ডিপ্রিসিয়েশন একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণী-তে সম্পদের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণে সহায়ক। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের মতো আর্থিক বাজারে বিনিয়োগের পূর্বে ঝুঁকি মূল্যায়ন করার মতো, ডিপ্রিসিয়েশন একটি সম্পদের মূল্য হ্রাসের পূর্বাভাস দেয় এবং সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

ডিপ্রিসিয়েশনের কারণসমূহ

ডিপ্রিসিয়েশন ঘটার পেছনে বেশ কিছু কারণ বিদ্যমান। এদের মধ্যে প্রধান কয়েকটি হলো:

শারীরিক ব্যবহার: সময়ের সাথে সাথে সম্পদের স্বাভাবিক ব্যবহার এটিকে দুর্বল করে তোলে, যা এর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি পরিবহনযান ব্যবহারের ফলে এর ইঞ্জিন এবং অন্যান্য অংশে wear and tear দেখা যায়।
প্রযুক্তিগত obsolescence: দ্রুত প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের কারণে অনেক সম্পদ দ্রুত পুরনো হয়ে যায়। নতুন এবং উন্নত প্রযুক্তির আবির্ভাবের ফলে পুরাতন সম্পদগুলি অকার্যকর বা কম কার্যকর হয়ে পড়ে। যেমন - পুরোনো মডেলের কম্পিউটার নতুন মডেলের তুলনায় দ্রুত ডিপ্রিসিয়েটেড হয়।
আর্থিক কারণ: সময়ের সাথে সাথে অর্থের মূল্য হ্রাস পায়। এর ফলে সম্পদের ক্রয়মূল্য কমে যায়।
আইনগত কারণ: কোনো সম্পদের ব্যবহারের সময়সীমা আইন দ্বারা নির্ধারিত থাকলে, সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার সাথে সাথে এর মূল্য হ্রাস পায়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ: বন্যা, খরা, ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সম্পদের ক্ষতি হতে পারে, যা ডিপ্রিসিয়েশনের কারণ হতে পারে।

ডিপ্রিসিয়েশন হিসাব করার পদ্ধতিসমূহ

বিভিন্ন পদ্ধতিতে ডিপ্রিসিয়েশন হিসাব করা হয়। নিচে বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি পদ্ধতি আলোচনা করা হলো:

১. সরলরৈখিক পদ্ধতি (Straight-Line Method): এটি সবচেয়ে সহজ এবং বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে, সম্পদের মূল্যের একটি নির্দিষ্ট অংশ প্রতি বছর ডিপ্রিসিয়েশন হিসেবে গণ্য করা হয়।

ডিপ্রিসিয়েশন = (সম্পদের মূল মূল্য - স্ক্র্যাপ মূল্য) / সম্পদের আনুমানিক জীবনকাল

২. ক্রমহ্রাসমান জের পদ্ধতি (Declining Balance Method): এই পদ্ধতিতে, সম্পদের উপর ডিপ্রিসিয়েশনের হার স্থির থাকে, কিন্তু প্রতি বছর তা মূল্যের উপর প্রয়োগ করা হয়। ফলে, প্রথম বছরগুলোতে ডিপ্রিসিয়েশনের পরিমাণ বেশি হয় এবং পরবর্তী বছরগুলোতে কমতে থাকে।

ডিপ্রিসিয়েশন = বই মূল্য × ডিপ্রিসিয়েশন হার (বই মূল্য = সম্পদের মূল মূল্য - Accumulated Depreciation)

৩. উৎপাদন একক পদ্ধতি (Units of Production Method): এই পদ্ধতিতে, সম্পদের ব্যবহার বা উৎপাদনের উপর ভিত্তি করে ডিপ্রিসিয়েশন হিসাব করা হয়।

ডিপ্রিসিয়েশন = (সম্পদের মূল মূল্য - স্ক্র্যাপ মূল্য) × (মোট উৎপাদন একক) / (মোট আনুমানিক উৎপাদন একক)

৪. সাম্ষিক যোগফল পদ্ধতি (Sum-of-the-Years' Digits Method): এটি একটি দ্রুত ডিপ্রিসিয়েশন পদ্ধতি, যেখানে সম্পদের জীবনকালের একটি যোগফল ব্যবহার করে ডিপ্রিসিয়েশন হার নির্ধারণ করা হয়।

ডিপ্রিসিয়েশন = (সম্পদের মূল মূল্য - স্ক্র্যাপ মূল্য) × (অবশিষ্ট জীবনকাল / জীবনকালের যোগফল)

ডিপ্রিসিয়েশনের গুরুত্ব

ডিপ্রিসিয়েশন হিসাব করার গুরুত্ব অনেক। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:

আর্থিক বিবরণীর সঠিকতা: ডিপ্রিসিয়েশন হিসাব করার মাধ্যমে আয় বিবরণী এবং উদ্বৃত্ত পত্র-এ সম্পদের প্রকৃত মূল্য দেখানো যায়।
কর পরিকল্পনা: ডিপ্রিসিয়েশন একটি কর-যোগ্য খরচ, যা প্রতিষ্ঠানের কর সাশ্রয় করতে সাহায্য করে।
বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত: ডিপ্রিসিয়েশন তথ্যের মাধ্যমে ভবিষ্যতে নতুন সম্পদ কেনার পরিকল্পনা করা যায়।
সম্পদের প্রতিস্থাপন: ডিপ্রিসিয়েশন হার বিশ্লেষণ করে কখন একটি সম্পদ প্রতিস্থাপন করা উচিত, তা নির্ধারণ করা যায়।
লাভজনকতা মূল্যায়ন: ডিপ্রিসিয়েশন হিসাব করে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত লাভজনকতা মূল্যায়ন করা যায়।

ডিপ্রিসিয়েশন এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর মধ্যে সম্পর্ক

যদিও ডিপ্রিসিয়েশন একটি হিসাববিজ্ঞান ধারণা এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি আর্থিক বিনিয়োগ, তবুও উভয়ের মধ্যে কিছু সম্পর্ক বিদ্যমান। ডিপ্রিসিয়েশন একটি সম্পদের মূল্য হ্রাসের পূর্বাভাস দেয়, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে, বিনিয়োগকারীরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো সম্পদের মূল্য বাড়বে বা কমবে কিনা, তা নিয়ে বাজি ধরে। ডিপ্রিসিয়েশন তথ্য ব্যবহার করে, বিনিয়োগকারীরা কোনো সম্পদের ভবিষ্যৎ মূল্য সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে এবং সেই অনুযায়ী বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, একটি কোম্পানির ডিপ্রিসিয়েশন খরচ বাড়লে, কোম্পানির লাভজনকতা কমতে পারে। এর ফলে কোম্পানির শেয়ারের মূল্য কমতে পারে। বাইনারি অপশন ট্রেডাররা এই তথ্য ব্যবহার করে শেয়ারের দাম কমবে কিনা, তা নিয়ে ট্রেড করতে পারে।

ডিপ্রিসিয়েশনের উদাহরণ

একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। ধরুন, একটি কোম্পানি ১,০০,০০০ টাকায় একটি মেশিন কিনলো। মেশিনটির আনুমানিক জীবনকাল ৫ বছর এবং স্ক্র্যাপ মূল্য ১০,০০০ টাকা। সরলরৈখিক পদ্ধতিতে ডিপ্রিসিয়েশন হিসাব করলে:

ডিপ্রিসিয়েশন = (১,০০,০০০ - ১০,০০০) / ৫ = ১৮,০০০ টাকা প্রতি বছর।

এর মানে হলো, প্রতি বছর মেশিনটির মূল্য ১৮,০০০ টাকা করে কমবে এবং ৫ বছর পর এর মূল্য ১০,০০০ টাকায় নেমে আসবে।

বিভিন্ন প্রকার সম্পদ এবং তাদের ডিপ্রিসিয়েশন হার

বিভিন্ন ধরনের সম্পদের ডিপ্রিসিয়েশন হার বিভিন্ন হয়। সাধারণত, যে সম্পদগুলো দ্রুত পুরনো হয়ে যায় বা ব্যবহারের ফলে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়, সেগুলোর ডিপ্রিসিয়েশন হার বেশি হয়। নিচে কয়েকটি সাধারণ সম্পদের ডিপ্রিসিয়েশন হার উল্লেখ করা হলো:

সম্পদের প্রকার
কম্পিউটার	৩-৫ বছর	২০%-৩৩%	পরিবহনযান	৫-১০ বছর	১০%-২০%	যন্ত্রপাতি	১০-২০ বছর	৫%-১০%	দালানকোঠা	২০-৫০ বছর	২%-৫%

এই হারগুলো শুধুমাত্র উদাহরণস্বরূপ। প্রকৃত ডিপ্রিসিয়েশন হার সম্পদের ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণ এবং অন্যান্য কারণের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।

ডিপ্রিসিয়েশন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ

স্ক্র্যাপ মূল্য (Salvage Value): এটি হলো একটি সম্পদের জীবনকালের শেষে অবশিষ্ট মূল্য। ডিপ্রিসিয়েশন হিসাব করার সময় স্ক্র্যাপ মূল্য বিবেচনা করা হয়।
অবচয়যোগ্য ভিত্তি (Depreciable Base): এটি হলো সম্পদের মূল মূল্য থেকে স্ক্র্যাপ মূল্য বাদ দিলে যা থাকে।
Accumulated Depreciation: এটি হলো একটি সম্পদের উপর মোট ডিপ্রিসিয়েশন।
ডিপ্রিসিয়েশন রিজার্ভ (Depreciation Reserve): এটি হলো ব্যালেন্স শীটে দেখানো ডিপ্রিসিয়েশনের পরিমাণ।

ডিপ্রিসিয়েশন এবং ট্যাক্স

ডিপ্রিসিয়েশন একটি কর-যোগ্য খরচ। এর মানে হলো, কোম্পানি তাদের আয় থেকে ডিপ্রিসিয়েশন খরচ বাদ দিয়ে কর গণনা করতে পারে। এটি কোম্পানির করের বোঝা কমায়। বিভিন্ন দেশে ডিপ্রিসিয়েশন হিসাব করার জন্য বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে।

ডিপ্রিসিয়েশন সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক

কৌশল, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ

উপসংহার

ডিপ্রিসিয়েশন একটি জটিল বিষয়, তবে এটি হিসাববিজ্ঞান এবং বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক ডিপ্রিসিয়েশন পদ্ধতি ব্যবহার করে, একটি প্রতিষ্ঠান তার আর্থিক অবস্থা সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারে এবং ভবিষ্যতের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে, ডিপ্রিসিয়েশন তথ্য বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি কমাতে এবং লাভজনক ট্রেড করতে সাহায্য করতে পারে।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ