ডাউ জোন্স ইন্ডস্ট্রিয়াল এভারেজ
ডাউ জোন্স ইন্ডস্ট্রিয়াল এভারেজ
ডাউ জোন্স ইন্ডস্ট্রিয়াল এভারেজ (Dow Jones Industrial Average বা DJIA) হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্টক_বাজার_সূচক। এটি ওয়াল স্ট্রিটের বুলিশ বা বিয়ারিশ প্রবণতা নির্দেশ করে। এই সূচকটি আমেরিকার অর্থনীতির স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা দেয় এবং বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হয়। নিচে এই সূচকটির ইতিহাস, গঠন, গণনা পদ্ধতি, তাৎপর্য এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে এর সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
সূচকের ইতিহাস ১৮৯৬ সালে চার্লস ডাউ এবং এডওয়ার্ড জোন্স এই সূচকটি তৈরি করেন। এটি মূলত নয়টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত ছিল। প্রথম দিকে এটি শুধুমাত্র শিল্প খাতের কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিত্ব করত, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এর অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোর পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে এটি ৩০টি বৃহৎ এবং প্রভাবশালী আমেরিকান কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত। সূচকটির প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল শিল্প খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের মূল্যের গড় গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা।
গঠন ডাউ জোন্স ইন্ডস্ট্রিয়াল এভারেজ ৩০টি পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত। এই কোম্পানিগুলো বিভিন্ন শিল্পখাত থেকে নির্বাচিত হয়, যেমন - প্রযুক্তি, আর্থিক পরিষেবা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং ভোগ্যপণ্য। এই সূচকে অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলো মার্কিন অর্থনীতির প্রতিনিধিত্ব করে এবং এদের কর্মক্ষমতা সামগ্রিক অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলে।
ডাউ জোন্সে অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
- অ্যাপল (Apple)
- মাইক্রোসফট (Microsoft)
- জনসন অ্যান্ড জনসন (Johnson & Johnson)
- গোল্ডম্যান Sachs (Goldman Sachs)
- ম্যাকডোনাল্ডস (McDonald's)
- ওয়াল্ট ডিজনি (Walt Disney)
গণনা পদ্ধতি ডাউ জোন্স ইন্ডস্ট্রিয়াল এভারেজ একটি মূল্য-ভারিত সূচক (Price-weighted index)। এর মানে হলো, সূচক গণনা করার সময় প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের মূল্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, শেয়ারের সংখ্যাকে নয়। গণনার পদ্ধতিটি হলো:
১. সূচকের ভিত্তি মান নির্ধারণ করা হয়। ২. প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের বর্তমান মূল্য যোগ করা হয়। ৩. এই যোগফলকে একটি নির্দিষ্ট divisor দিয়ে ভাগ করা হয়।
Divisor হলো একটি সংখ্যা যা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন করা হয় যাতে স্টক স্প্লিট (Stock Split) বা ডিভিডেন্ড (Dividend) সমন্বয় করা যায় এবং সূচকের মান ধারাবাহিক থাকে।
গুরুত্ব ডাউ জোন্স ইন্ডস্ট্রিয়াল এভারেজ বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। এটি বাজারের সামগ্রিক প্রবণতা নির্দেশ করে এবং বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। এই সূচকটি নিম্নলিখিত কারণে গুরুত্বপূর্ণ:
- অর্থনীতির ব্যারোমিটার: ডাউ জোন্স প্রায়শই অর্থনীতির অবস্থা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। সূচক বৃদ্ধি পেলে তা অর্থনৈতিক উন্নতির ইঙ্গিত দেয়, অন্যদিকে সূচক হ্রাস পেলে তা অর্থনৈতিক মন্দার পূর্বাভাস দিতে পারে।
- বিনিয়োগের নির্দেশক: বিনিয়োগকারীরা এই সূচকটিকে তাদের বিনিয়োগ কৌশল নির্ধারণের জন্য ব্যবহার করে।
- মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব: ডাউ জোন্সের মান বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা তৈরি করে বা কমিয়ে দিতে পারে।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ডাউ জোন্স ইন্ডস্ট্রিয়াল এভারেজ বাইনারি অপশন হলো একটি আর্থিক বিনিয়োগ যা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি সম্পদের মূল্য বৃদ্ধি পাবে নাকি হ্রাস পাবে তার উপর ভিত্তি করে করা হয়। ডাউ জোন্স ইন্ডস্ট্রিয়াল এভারেজ বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর জন্য একটি জনপ্রিয় সম্পদ।
কৌশল ডাউ জোন্সের উপর বাইনারি অপশন ট্রেড করার জন্য কিছু জনপ্রিয় কৌশল নিচে উল্লেখ করা হলো:
- ট্রেন্ড ট্রেডিং (Trend Trading): এই কৌশলটি বাজারের সামগ্রিক প্রবণতা অনুসরণ করে। যদি ডাউ জোন্স ঊর্ধ্বমুখী হয়, তাহলে কল অপশন (Call Option) কেনা হয়, এবং যদি নিম্নমুখী হয়, তাহলে পুট অপশন (Put Option) কেনা হয়।
- ব্রেকআউট ট্রেডিং (Breakout Trading): এই কৌশলটি বাজারের গুরুত্বপূর্ণ সাপোর্ট (Support) এবং রেজিস্ট্যান্স (Resistance) লেভেল ভেদ করার উপর ভিত্তি করে করা হয়। যখন সূচকটি রেজিস্ট্যান্স লেভেল অতিক্রম করে, তখন কল অপশন কেনা হয়, এবং যখন সাপোর্ট লেভেল ভেদ করে নিচে নামে, তখন পুট অপশন কেনা হয়।
- পিন বার রিভার্সাল (Pin Bar Reversal): পিন বার হলো একটি বিশেষ ধরনের ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন যা বাজারের সম্ভাব্য রিভার্সাল (Reversal) নির্দেশ করে।
- নিউজ ট্রেডিং (News Trading): গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সংবাদ এবং ঘটনার উপর ভিত্তি করে ট্রেড করা হয়। যেমন, যদি বেকারত্বের হার কমে যায়, তবে ডাউ জোন্স বাড়তে পারে, এবং কল অপশন কেনা যেতে পারে।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ডাউ জোন্স ইন্ডস্ট্রিয়াল এভারেজের টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ (Technical Analysis) করার জন্য বিভিন্ন ধরনের টুলস (Tools) এবং ইন্ডিকেটর (Indicator) ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টুলস হলো:
- মুভিং এভারেজ (Moving Average): এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সূচকের গড় মূল্য দেখায় এবং বাজারের প্রবণতা নির্ধারণে সাহায্য করে।
- রিলেটিভ স্ট্রেংথ ইন্ডেক্স (RSI): এই ইন্ডিকেটরটি সূচকের অতিরিক্ত ক্রয় (Overbought) বা অতিরিক্ত বিক্রয় (Oversold) অবস্থা নির্দেশ করে।
- ম্যাকডি (MACD): মুভিং এভারেজ কনভারজেন্স ডাইভারজেন্স (Moving Average Convergence Divergence) হলো একটি মোমেন্টাম ইন্ডিকেটর যা বাজারের প্রবণতা এবং গতিবিধি বিশ্লেষণ করে।
- বলিঙ্গার ব্যান্ডস (Bollinger Bands): এই ইন্ডিকেটরটি সূচকের অস্থিরতা (Volatility) পরিমাপ করে।
ভলিউম বিশ্লেষণ ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis) হলো বাজারের গতিবিধি বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ ভলিউম (High Volume) সাধারণত একটি শক্তিশালী প্রবণতা নির্দেশ করে, যেখানে কম ভলিউম দুর্বল প্রবণতা নির্দেশ করে।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ঝুঁকি (Risk) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত:
- স্টপ-লস (Stop-Loss): প্রতিটি ট্রেডে স্টপ-লস ব্যবহার করা উচিত যাতে সম্ভাব্য ক্ষতি সীমিত করা যায়।
- পজিশন সাইজিং (Position Sizing): আপনার অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্সের (Balance) উপর ভিত্তি করে পজিশনের আকার নির্ধারণ করা উচিত।
- ডাইভারসিফিকেশন (Diversification): আপনার বিনিয়োগকে বিভিন্ন সম্পদে ছড়িয়ে দিন যাতে ঝুঁকি কমানো যায়।
- সঠিক ব্রোকার নির্বাচন: একটি নির্ভরযোগ্য এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্রোকার (Broker) নির্বাচন করা উচিত।
ডাউ জোন্সের ভবিষ্যৎ ডাউ জোন্স ইন্ডস্ট্রিয়াল এভারেজের ভবিষ্যৎ গতিবিধি বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভরশীল, যেমন - অর্থনীতির অবস্থা, রাজনৈতিক ঘটনা, এবং বিশ্ব বাজারের পরিস্থিতি। বর্তমানে, প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতের কোম্পানিগুলো সূচকের উপর বেশি প্রভাব ফেলছে।
উপসংহার ডাউ জোন্স ইন্ডস্ট্রিয়াল এভারেজ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টক বাজার সূচক যা বিনিয়োগকারীদের জন্য মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে, এই সূচকটি বিভিন্ন কৌশল এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে ট্রেড করার সুযোগ प्रदान করে। তবে, ট্রেডিং করার আগে ঝুঁকিগুলো ভালোভাবে বুঝে নেওয়া এবং সঠিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল অবলম্বন করা জরুরি।
আরও জানতে:
- শেয়ার_বাজার
- বিনিয়োগ
- অর্থনীতি
- টেকনিক্যাল_বিশ্লেষণ
- ভলিউম_বিশ্লেষণ
- স্টক_স্প্লিট
- ডিভিডেন্ড
- সাপোর্ট_এবং_রেজিস্ট্যান্স
- ক্যান্ডেলস্টিক_প্যাটার্ন
- মুভিং_এভারেজ
- রিলেটিভ_স্ট্রেংথ_ইন্ডেক্স
- ম্যাকডি
- বলিঙ্গার_ব্যান্ডস
- ঝুঁকি_ব্যবস্থাপনা
- বাইনারি_অপশন_কৌশল
- ব্রোকার
- ওয়াল_স্ট্রিট
- বাজারের_প্রবণতা
- অর্থনৈতিক_সূচক
- বিনিয়োগের_ঝুঁকি
| বিষয় | |
| সূচকের ধরণ | |
| অন্তর্ভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা | |
| ভিত্তি মান | |
| গণনার পদ্ধতি | |
| ওয়েবসাইট |
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
