ডগলাস এঙ্গেলবার্ট

ডগলাস কার্ল এঙ্গেলবার্ট (৩০ জানুয়ারি ১৯২৫ – ২ জুলাই ২০০৩) ছিলেন একজন আমেরিকান উদ্ভাবক এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানী। তিনি মানব-কম্পিউটার মিথস্ক্রিয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তার সবচেয়ে বিখ্যাত উদ্ভাবনগুলির মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার মাউস, গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI), এবং নেটওয়ার্কিং। এঙ্গেলবার্টকে কম্পিউটার প্রযুক্তির ইতিহাসে একজন দূরদর্শী হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যিনি আধুনিক কম্পিউটিংয়ের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। তিনি বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের মতো আধুনিক প্রযুক্তিগুলোরও পথ খুলে দিয়েছেন, যেখানে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ডেটা ভিজুয়ালাইজেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা

ডগলাস এঙ্গেলবার্ট ১৯২৫ সালে পোর্টল্যান্ড, ওরেগনে জন্মগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি নৌবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে তড়িৎ প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে, বার্কলেতে পড়াশোনা চালিয়ে যান এবং ১৯৫২ সালে PhD ডিগ্রি লাভ করেন।

স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট (SRI)

বার্কলে থেকে ডিগ্রি অর্জনের পর এঙ্গেলবার্ট স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে (SRI) যোগদান করেন। সেখানে তিনি "অগমেন্টেশন রিসার্চ সেন্টার" (Augmentation Research Center - ARC) প্রতিষ্ঠা করেন। এই কেন্দ্রে তিনি এবং তার দল মানব বুদ্ধিমত্তা এবং কম্পিউটার প্রযুক্তির সমন্বয়ে নতুন নতুন ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেন। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল এমন একটি সিস্টেম তৈরি করা যা মানুষের জ্ঞানীয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে।

মাউস এবং গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI)

এঙ্গেলবার্টের দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবনগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল কম্পিউটার মাউস। ১৯৬৪ সালে তিনি প্রথম মাউসের প্রোটোটাইপ তৈরি করেন, যা একটি কাঠের বাক্স এবং দুটি চাকার সমন্বয়ে গঠিত ছিল। এই ডিভাইসটি ব্যবহার করে কম্পিউটার স্ক্রিনে কার্সর নিয়ন্ত্রণ করা যেত। একই সময়ে, তারা গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI) নিয়েও কাজ শুরু করেন, যেখানে আইকন এবং উইন্ডোর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা কম্পিউটারের সাথে সহজে যোগাযোগ করতে পারত। এই ধারণাগুলো পরবর্তীতে পার্সোনাল কম্পিউটার বিপ্লবের ভিত্তি স্থাপন করে।

অন্যান্য উদ্ভাবন

মাউস এবং GUI ছাড়াও, এঙ্গেলবার্ট আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন:

হাইপারটেক্সট: তিনি হাইপারটেক্সট ধারণাটি তৈরি করেন, যা ব্যবহারকারীদের একটি ডকুমেন্টের মধ্যে বিভিন্ন অংশের মধ্যে সহজে নেভিগেট করতে সাহায্য করে। হাইপারলিঙ্ক এর মাধ্যমে এটি সম্ভব হয়।
নেটওয়ার্কিং: এঙ্গেলবার্ট কম্পিউটার নেটওয়ার্কিংয়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন এবং ARPANET-এর বিকাশে অবদান রাখেন, যা পরবর্তীতে ইন্টারনেট-এর রূপ নেয়।
ভিডিও কনফারেন্সিং: তিনি ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম তৈরি করেন, যা দূরবর্তী স্থানে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে।
নোট-টেকিং এবং সহযোগিতা: এঙ্গেলবার্ট এমন একটি সিস্টেম তৈরি করেন যা ব্যবহারকারীদের একসাথে নোট নিতে এবং সহযোগিতা করতে সাহায্য করে।

"মাদার অফ অল ডেমোস"

১৯৬৮ সালের ৯ ডিসেম্বর এঙ্গেলবার্ট সান ফ্রান্সিসকোতে "ফল জয়েন্ট কম্পিউটার কনফারেন্স"-এ একটি ঐতিহাসিক উপস্থাপনা করেন, যা "মাদার অফ অল ডেমোস" নামে পরিচিত। এই উপস্থাপনায় তিনি তার দলের উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগুলি প্রদর্শন করেন, যার মধ্যে ছিল মাউস, GUI, হাইপারটেক্সট, ভিডিও কনফারেন্সিং এবং নেটওয়ার্কিং। এই ডেমোটি কম্পিউটার শিল্পের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল এবং ভবিষ্যতের কম্পিউটিংয়ের দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং এঙ্গেলবার্টের অবদান

যদিও ডগলাস এঙ্গেলবার্ট সরাসরি বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে জড়িত ছিলেন না, তবে তার উদ্ভাবনগুলো এই ধরনের ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য দ্রুত এবং নির্ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ অপরিহার্য। এঙ্গেলবার্টের তৈরি করা গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI) এবং মাউস ব্যবহারকারীদের চার্ট এবং ডেটা বিশ্লেষণ করতে, দ্রুত ট্রেড ওপেন এবং ক্লোজ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, আধুনিক ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে রিয়েল-টাইম ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশনের জন্য GUI অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস: বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। এঙ্গেলবার্টের উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগুলো টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর এবং চার্ট প্যাটার্নগুলো সহজে ভিজ্যুয়ালাইজ করতে সাহায্য করে।
ভলিউম অ্যানালাইসিস: ভলিউম অ্যানালাইসিস ট্রেডিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা মার্কেটের গতিবিধি বুঝতে সাহায্য করে। GUI-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্মগুলো ভলিউম ডেটা সহজে উপস্থাপন করে, যা ট্রেডারদের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক।
রিস্ক ম্যানেজমেন্ট: বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে রিস্ক ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত জরুরি। এঙ্গেলবার্টের তৈরি করা প্রযুক্তিগুলো ট্রেডারদের পোর্টফোলিও নিরীক্ষণ এবং ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন: আধুনিক ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে রিয়েল-টাইম ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশনের জন্য GUI ব্যবহার করা হয়। এটি ট্রেডারদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে এবং বাজারের সুযোগগুলো সনাক্ত করতে সাহায্য করে।
অ্যালগরিদমিক ট্রেডিং: অ্যালগরিদমিক ট্রেডিং বর্তমানে খুবই জনপ্রিয়, যেখানে কম্পিউটার প্রোগ্রাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেড করে। এই প্রোগ্রামগুলো GUI-এর মাধ্যমে ডেটা বিশ্লেষণ করে এবং ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নেয়।

এঙ্গেলবার্টের উদ্ভাবনগুলো বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের মতো আধুনিক আর্থিক বাজারের জন্য অত্যাবশ্যকীয়।

পুরস্কার ও স্বীকৃতি

ডগলাস এঙ্গেলবার্ট তার জীবনকালে অসংখ্য পুরস্কার ও স্বীকৃতি লাভ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

১৯৯৭ সালে টুরিং পুরস্কার (Turing Award): কম্পিউটার বিজ্ঞানের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার হিসেবে বিবেচিত টুরিং পুরস্কার তাকে প্রদান করা হয়।
ন্যাশনাল মেডেল অফ টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন (National Medal of Technology and Innovation): ২০০২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি তাকে এই পুরস্কারে ভূষিত করেন।
আইইইই জন ভিনসেন্ট অ্যাটানা অফ অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড (IEEE John Vincent Atanasoff Achievement Award): এই পুরস্কারটি তাকে কম্পিউটার প্রযুক্তিতে অবদানের জন্য দেওয়া হয়।

ব্যক্তিগত জীবন এবং উত্তরাধিকার

ডগলাস এঙ্গেলবার্ট দুটি বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রী বিলিয়ান গ্রীনলিং-এর সাথে তার দুই সন্তান ছিল। ২০০৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার এথেরিটন হাসপাতালে ৮৮ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

ডগলাস এঙ্গেলবার্ট কম্পিউটার প্রযুক্তির ইতিহাসে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তার উদ্ভাবনগুলো আধুনিক কম্পিউটিং এবং ইন্টারনেট বিপ্লবের ভিত্তি স্থাপন করেছে। তিনি শুধু একজন বিজ্ঞানী ছিলেন না, বরং একজন দূরদর্শী চিন্তাবিদ ছিলেন, যিনি ভবিষ্যতের প্রযুক্তি সম্পর্কে অনেক আগে থেকেই ধারণা দিতে পেরেছিলেন। তার কাজ আজও কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের অনুপ্রাণিত করে এবং নতুন নতুন উদ্ভাবনের পথ দেখায়। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের মতো ক্ষেত্রগুলোতে তার অবদান বিশেষভাবে লক্ষণীয়, যেখানে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বিশ্লেষণের সুযোগ তৈরি করেছে।

আরও দেখুন

ডগলাস এঙ্গেলবার্টের প্রধান উদ্ভাবন
উদ্ভাবন	বিবরণ	প্রভাব
কম্পিউটার মাউস	একটি হাতের ডিভাইস যা কার্সর নিয়ন্ত্রণ করে	কম্পিউটারের সাথে মিথস্ক্রিয়া সহজ করে
গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI)	আইকন এবং উইন্ডো ভিত্তিক ইন্টারফেস	কম্পিউটার ব্যবহারকারী বান্ধব করে
হাইপারটেক্সট	ডকুমেন্টের মধ্যে নেভিগেশন	তথ্য অ্যাক্সেস সহজ করে
নেটওয়ার্কিং	কম্পিউটার নেটওয়ার্কের ধারণা	ইন্টারনেটের ভিত্তি স্থাপন করে
ভিডিও কনফারেন্সিং	দূরবর্তী যোগাযোগ ব্যবস্থা	যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব আনে

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ