টেকনিক্যাল ট্রেনিং

টেকনিক্যাল ট্রেনিং বা কারিগরি প্রশিক্ষণ হল এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা যা শিক্ষার্থীদের কোনো নির্দিষ্ট কাজ বা পেশার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবহারিক দক্ষতা এবং জ্ঞান অর্জন করতে সহায়তা করে। এই প্রশিক্ষণ সাধারণত হাতে-কলমে কাজের মাধ্যমে দেওয়া হয় এবং এর উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রস্তুত করা। বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং কারিগরি শিক্ষা এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো টেকনিক্যাল ট্রেনিং।

টেকনিক্যাল ট্রেনিং এর প্রকারভেদ

টেকনিক্যাল ট্রেনিং বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যা নিচে উল্লেখ করা হলো:

স্বল্পমেয়াদী কোর্স: এই কোর্সগুলি সাধারণত কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং নির্দিষ্ট একটি দক্ষতা অর্জনের ওপর জোর দেওয়া হয়। যেমন - কম্পিউটার হার্ডওয়্যার মেরামত, ওয়েল্ডিং, বা plumbing।
দীর্ঘমেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্স: এই কোর্সগুলি সাধারণত এক থেকে তিন বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে আরও বিস্তারিত জ্ঞান এবং দক্ষতা প্রদান করে। ডিপ্লোমা প্রকৌশল এই ধরনের কোর্সের একটি উদাহরণ।
সার্টিফিকেশন কোর্স: এই কোর্সগুলি শিল্প-নির্দিষ্ট দক্ষতা যাচাই করে এবং সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সফটওয়্যার বা প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। যেমন - সিসকো সার্টিফাইড নেটওয়ার্ক অ্যাসোসিয়েট (CCNA)।
অ্যাপ্রেন্টিসশিপ প্রোগ্রাম: এই প্রোগ্রামে, শিক্ষার্থীরা কোনো অভিজ্ঞ পেশাদারের অধীনে কাজ করে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এটি একটি সংমিশ্রণ শিক্ষা যেখানে তাত্ত্বিক জ্ঞানের সাথে ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা যুক্ত হয়। শিক্ষানবিশ প্রোগ্রাম এর একটি ভালো উদাহরণ।
অনলাইন ট্রেনিং: বর্তমানে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন টেকনিক্যাল ট্রেনিং কোর্স उपलब्ध। এই কোর্সগুলি সময় এবং স্থান-নিরপেক্ষ হওয়ায় খুব জনপ্রিয়। ই-লার্নিং বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

টেকনিক্যাল ট্রেনিং এর গুরুত্ব

বর্তমান বিশ্বে টেকনিক্যাল ট্রেনিং এর গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। এর কিছু কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:

কর্মসংস্থান বৃদ্ধি: টেকনিক্যাল ট্রেনিং প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা দ্রুত কর্মসংস্থান খুঁজে পায়, কারণ তাদের বিশেষায়িত দক্ষতা থাকে।
উচ্চ বেতন: কারিগরি দক্ষতা সম্পন্ন পেশাজীবীরা সাধারণত ভালো বেতন পান।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন: দক্ষ জনশক্তি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
নতুন প্রযুক্তির সাথে খাপ খাওয়ানো: টেকনিক্যাল ট্রেনিং মানুষকে নতুন প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হতে এবং সেগুলো ব্যবহার করতে সক্ষম করে।
আত্ম-কর্মসংস্থান: এই প্রশিক্ষণ মানুষকে নিজের ব্যবসা শুরু করতে উৎসাহিত করে। উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য এটি একটি ভালো ভিত্তি।

টেকনিক্যাল ট্রেনিং এর ক্ষেত্রসমূহ

টেকনিক্যাল ট্রেনিং বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেওয়া হয়। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হলো:

তথ্য প্রযুক্তি (Information Technology): এই ক্ষেত্রে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, নেটওয়ার্কিং, ডেটাবেস ম্যানেজমেন্ট, সাইবার নিরাপত্তা ইত্যাদি শেখানো হয়।
ইলেকট্রনিক্স: এই ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক্স মেরামত, সার্কিট ডিজাইন, এবং ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জাম তৈরি করা শেখানো হয়।
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং: এই ক্ষেত্রে মেশিন মেরামত, ডিজাইন, এবং উৎপাদন প্রক্রিয়া শেখানো হয়। যন্ত্র প্রকৌশল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
অটোমোটিভ ইঞ্জিনিয়ারিং: এই ক্ষেত্রে গাড়ি এবং অন্যান্য যানবাহন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ শেখানো হয়।
নির্মাণ শিল্প: এই ক্ষেত্রে রাজমিস্ত্রি, ওয়েল্ডিং, প্লাম্বিং, এবং ইলেকট্রিক্যাল কাজ শেখানো হয়। স্থাপত্য প্রকৌশল এই শিল্পের সাথে জড়িত।
স্বাস্থ্যসেবা: এই ক্ষেত্রে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট, নার্সিং, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত কাজ শেখানো হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞান এর একটি অংশ।
পোশাক শিল্প: এই ক্ষেত্রে পোশাক তৈরি, ডিজাইন, এবং গুণমান নিয়ন্ত্রণ শেখানো হয়। ফ্যাশন ডিজাইন এই ক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত।
কৃষি প্রযুক্তি: এই ক্ষেত্রে আধুনিক কৃষি পদ্ধতি, শস্য উৎপাদন, এবং পশু পালন শেখানো হয়। কৃষি বিজ্ঞান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

টেকনিক্যাল ট্রেনিং প্রতিষ্ঠান

বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান টেকনিক্যাল ট্রেনিং প্রদান করে। এদের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হলো:

পল্লি উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (RDRS): এটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান যা বিভিন্ন ধরনের টেকনিক্যাল ট্রেনিং প্রদান করে।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর: এই অধিদপ্তর যুবকদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করে। যুব উন্নয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি উদ্যোগ।
কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (TTC): সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা এই কেন্দ্রগুলো বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করে।
বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠান: অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের টেকনিক্যাল ট্রেনিং দিয়ে থাকে।

টেকনিক্যাল ট্রেনিং এর কিছু জনপ্রিয় কোর্স
কোর্সের নাম	সময়কাল	যোগ্যতা	কাজের সুযোগ
কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন	৩ মাস	মাধ্যমিক	অফিস সহকারী, ডেটা এন্ট্রি অপারেটর
ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট	৬ মাস	উচ্চ মাধ্যমিক	ওয়েব ডেভেলপার, ফ্রিল্যান্সার
অটোমোবাইল টেকনোলজি	১ বছর	মাধ্যমিক	অটোমোবাইল মেকানিক, সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার
ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজি	১ বছর	মাধ্যমিক	ইলেকট্রিশিয়ান, টেকনিক্যাল সুপারভাইজার
গার্মেন্টস টেকনোলজি	৬ মাস	অষ্টম শ্রেণী	গার্মেন্টস অপারেটর, সুপারভাইজার
মোবাইল ফোন সার্ভিসিং	৩ মাস	মাধ্যমিক	মোবাইল ফোন টেকনিশিয়ান

টেকনিক্যাল ট্রেনিং গ্রহণের পূর্বে বিবেচ্য বিষয়সমূহ

টেকনিক্যাল ট্রেনিং শুরু করার আগে কিছু বিষয় বিবেচনা করা উচিত:

নিজের আগ্রহ: যে বিষয়ে আপনার আগ্রহ আছে, সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা উচিত।
চাকরির সুযোগ: যে ট্রেডের চাহিদা আছে, সেই ট্রেডে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা ভালো। চাকরির বাজার সম্পর্কে ধারণা রাখা প্রয়োজন।
প্রতিষ্ঠানের মান: প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের মান এবং প্রশিক্ষকদের যোগ্যতা যাচাই করা উচিত।
খরচ: কোর্সের খরচ এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ সম্পর্কে জেনে নেওয়া ভালো।
সময়: কোর্সের সময়কাল এবং আপনার সময়সূচী বিবেচনা করা উচিত।

দক্ষতা উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

টেকনিক্যাল ট্রেনিং শুধুমাত্র একটি শুরু। এই প্রশিক্ষণকে কাজে লাগিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করা জরুরি। কিছু টিপস নিচে দেওয়া হলো:

নিয়মিত অনুশীলন: শেখা বিষয়গুলো নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে।
নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান রাখা: সময়ের সাথে সাথে নতুন প্রযুক্তি আসে, তাই সেগুলোর সম্পর্কে জানতে হবে। প্রযুক্তিগত পরিবর্তন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা দরকার।
নেটওয়ার্কিং: একই পেশার মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে।
উচ্চতর শিক্ষা: সুযোগ থাকলে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।
ফ্রিল্যান্সিং: ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে নিজের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আয় করা যেতে পারে। ফ্রিল্যান্সিং অর্থনীতি বর্তমানে খুব জনপ্রিয়।
নিজস্ব ব্যবসা: অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জনের পর নিজস্ব ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের গুরুত্ব (বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে)

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল ট্রেনিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কিছু বিষয় আলোচনা করা হলো:

চার্ট প্যাটার্ন: বিভিন্ন চার্ট প্যাটার্ন (যেমন - হেড অ্যান্ড শোল্ডারস, ডাবল টপ, ডাবল বটম) শিখে সেগুলোর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ মূল্যmovement অনুমান করা যায়। চার্ট বিশ্লেষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক।
ইন্ডিকেটর: মুভিং এভারেজ, RSI, MACD এর মতো বিভিন্ন টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
ট্রেন্ড লাইন: ট্রেন্ড লাইন ব্যবহার করে মার্কেট ট্রেন্ড (uptrend, downtrend, sideways) নির্ধারণ করা যায়। ট্রেন্ড বিশ্লেষণ বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল: সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেলগুলো চিহ্নিত করে সম্ভাব্য এন্ট্রি এবং এক্সিট পয়েন্ট নির্ধারণ করা যায়। সাপোর্ট ও রেজিস্ট্যান্স সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে।
ভলিউম বিশ্লেষণ: ভলিউম ডেটা ব্যবহার করে মার্কেটের গতিবিধি বোঝা যায় এবং ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। ভলিউম ট্রেডিং একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল।

ভলিউম বিশ্লেষণের কৌশল

ভলিউম বিশ্লেষণ বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ একটি শক্তিশালী হাতিয়ার।

ভলিউম স্পাইক: যখন ভলিউম হঠাৎ করে বেড়ে যায়, তখন এটি একটি শক্তিশালী মুভমেন্টের ইঙ্গিত দেয়।
ভলিউম কনফার্মেশন: যদি ভলিউম মূল্যবৃদ্ধির সাথে বৃদ্ধি পায়, তবে এটি আপট্রেন্ডের নিশ্চিতকরণ।
ডাইভারজেন্স: ভলিউম এবং মূল্যের মধ্যে ডাইভারজেন্স একটি সম্ভাব্য ট্রেন্ড পরিবর্তনের সংকেত দিতে পারে।

টেকনিক্যাল ট্রেনিং এবং এই কৌশলগুলো ব্যবহার করে, একজন ট্রেডার বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ সফল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং ট্রেডিং সাইকোলজি সম্পর্কে জ্ঞান রাখাটাও খুব জরুরি।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ