টমাস আলভা এডিসন

পরিচিতি

টমাস আলভা এডিসন ছিলেন একজন আমেরিকান উদ্ভাবক ও ব্যবসায়ী। তিনি ১১ ফেব্রুয়ারি ১৮৪৭ সালে ওহাইওর মিলান শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮ অক্টোবর ১৯৩১ সালে নিউ জার্সির ওয়েস্ট অরেঞ্জে মারা যান। এডিসন তার জীবনে ১,০৯৩টি পেটেন্ট অর্জন করেন, যা তাকে ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী উদ্ভাবক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি শুধু একজন উদ্ভাবক ছিলেন না, বরং একজন সফল উদ্যোক্তাও ছিলেন, যিনি বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষাগার এবং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে নতুন নতুন প্রযুক্তিকে বাস্তবে রূপদান করেন।

প্রারম্ভিক জীবন এবং শিক্ষা

এডিসনের ছেলেবেলা থেকেই অনুসন্ধিৎসু মন ছিল। বিদ্যালয়ে তিনি খুব বেশি দিন পড়াশোনা করেননি, কারণ তার মা তাকে বাড়িতেই পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। অল্প বয়সেই তিনি বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন এবং স্থানীয় ছেলেদের কাছে রসায়ন বিক্রি করে কিছু অর্থ উপার্জনও করেন। ১২ বছর বয়সে, তিনি একটি স্থানীয় সংবাদপত্রে কাজ করা শুরু করেন এবং একই সাথে টেলিগ্রাফিও শিখতে থাকেন। এই অভিজ্ঞতা তার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি স্থাপন করে।

কর্মজীবন

টেলিগ্রাফ অপারেটর: এডিসন ১৬ বছর বয়সে টেলিগ্রাফ অপারেটর হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি খুব দ্রুত টেলিগ্রাফি শিখতে এবং এতে দক্ষ হয়ে ওঠেন।
উদ্ভাবকের যাত্রা শুরু: টেলিগ্রাফ অপারেটর হিসেবে কাজ করার সময়ই তিনি বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ত্রুটি নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করেন এবং সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করেন। ১৮৬৯ সালে তিনি প্রথম পেটেন্ট লাভ করেন, যা ছিল একটি বৈদ্যুতিক ভোট গণনাকারী যন্ত্র।
মেনলো পার্কের পরীক্ষাগার: ১৮৭৬ সালে এডিসন নিউ জার্সির মেনলো পার্কে বিশ্বের প্রথম শিল্প গবেষণা পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা করেন। এই পরীক্ষাগারে তিনি এবং তার সহযোগীরা বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবনের কাজ করেন। এখানে ফোনোগ্রাফ, বৈদ্যুতিক বাতি, এবং মোশন পিকচার ক্যামেরা সহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করা হয়।
জেনারেল ইলেকট্রিক প্রতিষ্ঠা: ১৮৭৮ সালে এডিসন ইলেকট্রিক লাইট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীতে জেনারেল ইলেকট্রিক (GE) নামে পরিচিত হয়। এই কোম্পানি বৈদ্যুতিক বাতি এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরি ও বিতরণের কাজ শুরু করে।

গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন

এডিসনের অসংখ্য উদ্ভাবনের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হলো:

বৈদ্যুতিক বাতির উদ্ভাবন

এডিসনের সবচেয়ে বিখ্যাত আবিষ্কার হলো বৈদ্যুতিক বাতি। এর আগে অনেক বিজ্ঞানী বৈদ্যুতিক বাতি তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তাদের বাতিগুলো বেশি সময় ধরে জ্বলতো না। এডিসন বিভিন্ন ধরনের ফিলামেন্ট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন এবং অবশেষে কার্বন ফিলামেন্ট ব্যবহার করে একটি বাতি তৈরি করতে সক্ষম হন যা প্রায় ৪০ ঘণ্টা ধরে জ্বলতে পারত। ১৮৭৯ সালে তিনি জনসাধারণের জন্য প্রথম বৈদ্যুতিক বাতি প্রদর্শন করেন এবং এটি আলো জ্বালানোর পদ্ধতিতে বিপ্লব ঘটায়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের অবকাঠামো এবং বিতরণ ব্যবস্থা তৈরি করার ক্ষেত্রেও এডিসনের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল।

ফোনোগ্রাফ

ফোনোগ্রাফ এডিসনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। তিনি শব্দ ধারণ ও পুনরুৎপাদনের জন্য একটি যন্ত্র তৈরি করেন, যা ফোনোগ্রাফ নামে পরিচিত। এই যন্ত্রটি একটি সিলিন্ডারের উপর শব্দ তরঙ্গ খোদাই করে এবং পরে সেটিকে আবার বাজিয়ে শোনা যায়। ফোনোগ্রাফ ছিল যোগাযোগ এবং বিনোদন জগতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচনকারী আবিষ্কার।

মোশন পিকচার ক্যামেরা

এডিসন মোশন পিকচার ক্যামেরার প্রাথমিক রূপ তৈরি করেন। তিনি দ্রুত পরপর স্থির চিত্র ধারণ করে সেগুলোকে একটি ফিল্মে যুক্ত করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এই আবিষ্কার চলচ্চিত্র শিল্পের জন্ম দেয় এবং পরবর্তীতে এটি বিনোদনের একটি প্রধান মাধ্যম হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

ব্যবসায়িক উদ্যোগ

এডিসন শুধু একজন উদ্ভাবক ছিলেন না, তিনি একজন সফল ব্যবসায়ীও ছিলেন। তিনি বিভিন্ন কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার উদ্ভাবনগুলোকে বাণিজ্যিকভাবে সফল করে তোলেন।

এডিসন ইলেকট্রিক লাইট কোম্পানি:* এই কোম্পানি বৈদ্যুতিক বাতি তৈরি এবং বিতরণের কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে এটি জেনারেল ইলেকট্রিক (GE) নামে পরিচিত হয়।
পিৎসবার্গ রেডিয়েশন কর্পোরেশন:* এই কোম্পানি এক্স-রে প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করত।
কিনোটোগ্রাফ:* চলচ্চিত্র তৈরির জন্য এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

ব্যক্তিগত জীবন

টমাস আলভা এডিসন ১৮৭১ সালে মেরি স্টিলওয়েলকে বিয়ে করেন। তাদের তিন সন্তান ছিল: মারিওন এডিসন, টমাস এডিসন জুনিয়র, এবং উইলিয়াম লেসলি এডিসন। ১৮৮৪ সালে মেরি স্টিলওয়েলের মৃত্যুর পর, ১৮৮৬ সালে এডিসন মিনা মিলারকে বিয়ে করেন। তাদের সন্তান ছিল: মেডলাইন এডিসন, চার্লস এডিসন এবং থিওডোর মিলার এডিসন।

উত্তরাধিকার ও প্রভাব

টমাস আলভা এডিসন আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশে বিশাল অবদান রেখেছেন। তার উদ্ভাবনগুলো আমাদের জীবনযাত্রাকে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করে দিয়েছে। তিনি শুধু একজন বিজ্ঞানী বা উদ্ভাবক ছিলেন না, বরং একজন দূরদর্শী ছিলেন, যিনি ভবিষ্যতের প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা দিতে পারতেন। এডিসনের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন গবেষণা এবং উন্নয়নের পথ প্রশস্ত হয়েছে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে প্রাসঙ্গিকতা

যদিও টমাস আলভা এডিসন সরাসরি বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে জড়িত ছিলেন না, তবে তার উদ্ভাবনী চিন্তা এবং ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা আধুনিক ট্রেডিংয়ের সাথে প্রাসঙ্গিক। সফল বাইনারি অপশন ট্রেডারদেরও নতুন কৌশল তৈরি করতে হয়, বাজারের বিশ্লেষণ করতে হয় এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এডিসনের মতো, একজন সফল ট্রেডারকেও ক্রমাগত শিখতে এবং নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হয়।

টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস:* এডিসনের পরীক্ষামূলক পদ্ধতি বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিসের সাথে তুলনীয়, যেখানে চার্ট এবং ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে ভবিষ্যতের মূল্য নির্ধারণের চেষ্টা করা হয়। চার্ট প্যাটার্ন এবং ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে ট্রেডাররা বাজারের গতিবিধি বোঝার চেষ্টা করে।
ভলিউম বিশ্লেষণ:* এডিসনের উৎপাদন এবং বিতরণের ধারণা বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ভলিউম বিশ্লেষণের সাথে সম্পর্কিত। ভলিউম বাজারের চাহিদা এবং যোগানের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা:* এডিসন তার উদ্ভাবনের সময় অনেক ঝুঁকি নিয়েছেন, তেমনি বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়েও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ট্রেডারদের তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করতে হয়।
বৈচিত্র্যকরণ:* এডিসন বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবনের সাথে জড়িত ছিলেন, যা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যকরণের মতো। বাইনারি অপশন ট্রেডারদের বিভিন্ন অ্যাসেটে বিনিয়োগ করে ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করা উচিত।
দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি:* এডিসন স্বল্পমেয়াদী লাভের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের দিকে বেশি মনোযোগ দিতেন। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়েও দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ।

সম্মাননা ও স্বীকৃতি

এডিসন তার জীবদ্দশায় অসংখ্য সম্মাননা ও স্বীকৃতি লাভ করেন। তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রি লাভ করেন এবং অনেক দেশে তার নামে পুরস্কার ও বৃত্তি চালু করা হয়েছে।

মৃত্যু

টমাস আলভা এডিসন ১৯৩১ সালের ১৮ অক্টোবর নিউ জার্সির ওয়েস্ট অরেঞ্জে মারা যান। তার মৃত্যুর পর, তার উদ্ভাবনগুলো বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনে।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

"Thomas Edison." *Britannica*, www.britannica.com/biography/Thomas-Edison. Accessed 15 July 2024.
"Thomas Edison - Biography, Inventions, & Facts." *History*, www.history.com/topics/inventions/thomas-edison. Accessed 15 July 2024.

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ

এডিসনের উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবন
উদ্ভাবন	আবিষ্কারের সাল	বিবরণ	বৈদ্যুতিক বাতি	১৮৭৯	এডিসনের সবচেয়ে বিখ্যাত আবিষ্কারগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। তিনি কার্বন ফিলামেন্ট ব্যবহার করে দীর্ঘস্থায়ী বাতি তৈরি করেন।	ফোনোগ্রাফ	১৮৭৭	শব্দ ধারণ ও পুনরুৎপাদনের জন্য একটি যুগান্তকারী যন্ত্র।	মোশন পিকচার ক্যামেরা	১৮৯১	চলচ্চিত্রের প্রাথমিক রূপ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।	কার্বন মাইক্রোফোন	১৮৭৭	টেলিফোনের জন্য উন্নত মাইক্রোফোন তৈরি করেন।	বৈদ্যুতিক পাওয়ার জেনারেটর	১৮৮২	বিদ্যুতের উৎপাদন এবং বিতরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।	ফ্লোরোস্কোপ	১৮৯৬	এক্স-রে প্রযুক্তির প্রাথমিক রূপ।