জোসেফ গ্র্যানভিল

জোসেফ গ্র্যানভিল

জোসেফ গ্র্যানভিল একজন স্বনামধন্য বিনিয়োগকারী, স্টক ট্রেডার এবং চার্টিস্ট। তিনি টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের জগতে এক অগ্রণী ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। গ্র্যানভিল তার উদ্ভাবনী কৌশল এবং বাজারের গভীর অন্তর্দৃষ্টির জন্য বিশেষভাবে সম্মানিত। এই নিবন্ধে, তার জীবন, কর্ম এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে তার অবদানের উপর আলোকপাত করা হবে।

জীবন ও কর্মজীবন

জোসেফ গ্র্যানভিল ১৯২৫ সালে নিউ ইয়র্ক সিটিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অল্প বয়স থেকেই স্টক মার্কেটের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন এবং ১৯৪০-এর দশকে একজন ব্রোকারেজ ফার্মে কাজ শুরু করেন। গ্র্যানভিল দ্রুত বুঝতে পেরেছিলেন যে বাজারের গতিবিধি সম্পূর্ণরূপে মৌলিক বিশ্লেষণের উপর নির্ভরশীল নয়, বরং বিনিয়োগকারীদের মানসিকতা এবং বাজারের প্রবণতাগুলিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১৯৬০-এর দশকে, গ্র্যানভিল টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং চার্টিং-এর উপর মনোযোগ দেন। তিনি বাজারের ডেটা বিশ্লেষণ করার জন্য নতুন নতুন পদ্ধতি তৈরি করেন এবং ভলিউম বিশ্লেষণকে টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। গ্র্যানভিল বিশ্বাস করতেন যে ভলিউম বাজারের মূল চালিকাশক্তি এবং এটি ছাড়া কোনো টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের সম্পূর্ণতা নেই।

গ্র্যানভিল বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্রোকারেজ ফার্মের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ দিয়ে সফল ট্রেডিং কৌশল তৈরি করতে সহায়তা করেছেন। তিনি অসংখ্য সেমিনার এবং কর্মশালার মাধ্যমে তার জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন।

গ্র্যানভিলের অবদান

জোসেফ গ্র্যানভিল টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের জগতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো:

১. ভলিউম প্রাইস ট্রেন্ড (Volume Price Trend - VPT): গ্র্যানভিলের তৈরি করা এই সূচকটি ভলিউম এবং মূল্যের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে বাজারের প্রবণতা নির্ণয় করতে সাহায্য করে। ভলিউম বিশ্লেষণ এর ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।

২. অন ব্যালেন্স ভলিউম (On Balance Volume - OBV): যদিও OBV গ্র্যানভিলের আবিষ্কার নয়, তবে তিনি এটিকে জনপ্রিয় করেন এবং এর ব্যবহারিক প্রয়োগ সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন। এটি টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর হিসেবে বহুল ব্যবহৃত।

৩. পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার চার্টিং (Point and Figure Charting): গ্র্যানভিল পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার চার্টিং-এর একজন শক্তিশালী প্রবক্তা ছিলেন। এই চার্ট বাজারের গুরুত্বপূর্ণ স্তর এবং ব্রেকআউট পয়েন্টগুলি চিহ্নিত করতে সহায়ক। চার্টিং কৌশল এর এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

৪. বাজারের প্রবণতা বিশ্লেষণ: গ্র্যানভিল বাজারের প্রবণতা (Market Trend) বিশ্লেষণের উপর জোর দিতেন এবং বিনিয়োগকারীদের বাজারের গতিবিধি বুঝে ট্রেড করার পরামর্শ দিতেন। ট্রেন্ড ফলোয়িং কৌশল তার দ্বারা প্রভাবিত।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ গ্র্যানভিলের কৌশল

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে জোসেফ গ্র্যানভিলের কৌশলগুলি অত্যন্ত উপযোগী হতে পারে। নিচে কয়েকটি কৌশল আলোচনা করা হলো:

১. ভলিউম এবং মূল্যের সমন্বয়: গ্র্যানভিল বিশ্বাস করতেন যে ভলিউম এবং মূল্যের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে বাজারের গতিবিধি বোঝা যায়। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ, এই কৌশল ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট অ্যাসেটের (Asset) দাম বাড়বে নাকি কমবে, তা অনুমান করা যেতে পারে। যদি দেখা যায় যে ভলিউম বাড়ছে এবং দামও বাড়ছে, তাহলে এটি একটি বুলিশ (Bullish) সংকেত। অন্যদিকে, ভলিউম বাড়লেও দাম কমলে, সেটি বিয়ারিশ (Bearish) সংকেত হিসেবে গণ্য করা হয়। বাইনারি অপশন বেসিক সম্পর্কে জানতে এই ধারণাটি সহায়ক।

২. অন ব্যালেন্স ভলিউম (OBV) ব্যবহার: OBV সূচকটি ব্যবহার করে বাজারের মোমেন্টাম (Momentum) বোঝা যায়। যদি OBV বাড়তে থাকে, তাহলে এটি ইঙ্গিত দেয় যে কেনা চাপ (Buying Pressure) বাড়ছে, যা দাম বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি করে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ, এই সংকেত ব্যবহার করে কল অপশন (Call Option) কেনা যেতে পারে। vice versa। মোমেন্টাম ট্রেডিং এর জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।

৩. পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার চার্ট ব্যবহার: পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার চার্ট ব্যবহার করে সাপোর্ট (Support) এবং রেজিস্ট্যান্স (Resistance) লেভেলগুলি চিহ্নিত করা যায়। এই লেভেলগুলি বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখন দাম একটি রেজিস্ট্যান্স লেভেল অতিক্রম করে, তখন এটি একটি কেনার সংকেত দেয়, এবং যখন এটি একটি সাপোর্ট লেভেল ভেঙে নিচে নামে, তখন এটি বিক্রির সংকেত দেয়। সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এটি সহায়ক।

৪. ব্রেকআউট ট্রেডিং (Breakout Trading): গ্র্যানভিল ব্রেকআউট ট্রেডিং-এর উপর জোর দিতেন। যখন কোনো অ্যাসেটের দাম একটি নির্দিষ্ট পরিসীমা থেকে বেরিয়ে আসে, তখন তাকে ব্রেকআউট বলা হয়। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ, ব্রেকআউট ট্রেডিং কৌশল ব্যবহার করে খুব অল্প সময়ে ভালো লাভ করা সম্ভব। ব্রেকআউট কৌশল সম্পর্কে আরও জানতে, এই লিঙ্কটি দেখুন।

৫. ট্রেন্ড অনুসরণ করা: গ্র্যানভিল সবসময় বাজারের ট্রেন্ড অনুসরণ করার কথা বলতেন। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ, ট্রেন্ড অনুসরণ করে ট্রেড করলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। আপট্রেন্ডে (Uptrend) কল অপশন এবং ডাউনট্রেন্ডে (Downtrend) পুট অপশন (Put Option) কেনা উচিত। ট্রেন্ড বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে সঠিক দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়।

৬. রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (Risk Management): গ্র্যানভিল রিস্ক ম্যানেজমেন্টের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখানে লাভের সম্ভাবনা যেমন বেশি, তেমনি ক্ষতির ঝুঁকিও রয়েছে। তাই, ট্রেড করার আগে স্টপ লস (Stop Loss) এবং টেক প্রফিট (Take Profit) সেট করা উচিত। রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কৌশল সম্পর্কে জানতে এই লিঙ্কটি দেখুন।

৭. ভলিউম স্প্রেড অ্যানালাইসিস (Volume Spread Analysis): এই পদ্ধতিতে ভলিউম এবং প্রাইস স্প্রেডের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হয়। গ্র্যানভিল এই পদ্ধতির প্রবক্তা ছিলেন। ভলিউম স্প্রেড সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিঙ্কে যান।

৮. গ্যাপ অ্যানালাইসিস (Gap Analysis): গ্র্যানভিল গ্যাপ অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে বাজারের দুর্বলতা এবং সুযোগগুলো খুঁজে বের করার কথা বলতেন। গ্যাপ ট্রেডিং কৌশল ব্যবহার করে বাইনারি অপশনে ট্রেড করা যেতে পারে।

৯. মুভিং এভারেজ (Moving Average): গ্র্যানভিল মুভিং এভারেজ ব্যবহার করে বাজারের ট্রেন্ড চিহ্নিত করার কথা বলতেন। মুভিং এভারেজ কৌশল বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য উপযোগী।

১০. আরএসআই (Relative Strength Index): গ্র্যানভিল আরএসআই ব্যবহার করে ওভারবট (Overbought) এবং ওভারসোল্ড (Oversold) অবস্থা চিহ্নিত করার কথা বলতেন। আরএসআই ব্যবহার করে বাইনারি অপশনে ট্রেড করা যেতে পারে।

১১. এমএসিডি (Moving Average Convergence Divergence): গ্র্যানভিল এমএসিডি ব্যবহার করে বাজারের মোমেন্টাম এবং ট্রেন্ডের দিক পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা পেতে বলতেন। এমএসিডি কৌশল বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

১২. বলিঙ্গার ব্যান্ডস (Bollinger Bands): গ্র্যানভিল বলিঙ্গার ব্যান্ডস ব্যবহার করে বাজারের ভোলাটিলিটি (Volatility) পরিমাপ করার কথা বলতেন। বোলিঙ্গার ব্যান্ড কৌশল ব্যবহার করে বাইনারি অপশনে ট্রেড করা যেতে পারে।

১৩. ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): গ্র্যানভিল ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট ব্যবহার করে সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেলগুলো চিহ্নিত করার কথা বলতেন। ফিবোনাচ্চি কৌশল বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ টুল।

১৪. ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন (Candlestick Pattern): গ্র্যানভিল ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্নগুলো বিশ্লেষণ করে বাজারের সম্ভাব্য গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা পেতে বলতেন। ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য খুবই উপযোগী।

১৫. ডাবল টপ ও ডাবল বটম (Double Top & Double Bottom): গ্র্যানভিল ডাবল টপ ও ডাবল বটম প্যাটার্নগুলো চিহ্নিত করে রিভার্সাল ট্রেড করার কথা বলতেন। ডাবল টপ ও ডাবল বটম কৌশল ব্যবহার করে বাইনারি অপশনে ট্রেড করা যেতে পারে।

উপসংহার

জোসেফ গ্র্যানভিল টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের জগতে এক কিংবদন্তি। তার উদ্ভাবনী কৌশল এবং বাজারের গভীর অন্তর্দৃষ্টি তাকে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলেছে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ তার কৌশলগুলি ব্যবহার করে যে কেউ সফল ট্রেডার হতে পারে। তবে, মনে রাখতে হবে যে ট্রেডিং-এ ঝুঁকি রয়েছে এবং সাফল্যের জন্য সঠিক জ্ঞান, দক্ষতা এবং রিস্ক ম্যানেজমেন্ট অপরিহার্য।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ, ভলিউম ট্রেডিং, চার্ট প্যাটার্ন, বাইনারি অপশন, ফিনান্সিয়াল মার্কেট

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ