জিপিএস (GPS)

জিপিএস : গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম

ভূমিকা

গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) হলো একটি স্যাটেলাইট-ভিত্তিক নেভিগেশন সিস্টেম। এটি মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ কর্তৃক তৈরি করা হয়েছিল এবং বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হচ্ছে। জিপিএস ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোনো স্থানে নিজের অবস্থান নির্ণয় করা যায়। এই প্রযুক্তি ভূ-স্থানিক ডেটা (Geospatial data) এবং নেভিগেশন ব্যবস্থায় বিপ্লব এনেছে। এর ব্যবহার পরিবহন, সামরিক কার্যক্রম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং মানচিত্র তৈরি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তৃত।

জিপিএস এর ইতিহাস

জিপিএস এর যাত্রা শুরু হয় ঠান্ডা যুদ্ধ (Cold War) চলাকালীন সময়ে। ১৯৬০-এর দশকে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ একটি উন্নত নেভিগেশন সিস্টেম তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে, যা যেকোনো আবহাওয়ায় এবং যেকোনো স্থানে কাজ করতে সক্ষম হবে। এই ধারণা থেকেই জিপিএস এর প্রাথমিক পরিকল্পনা শুরু হয়।

• ১৯৭৮ সালে প্রথম জিপিএস স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়।
• ১৯৮০-এর দশকে এই সিস্টেমের উন্নয়ন চলতে থাকে এবং আরও স্যাটেলাইট যুক্ত করা হয়।
• ১৯৯০-এর দশকে জিপিএস সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয়, যদিও সামরিক ব্যবহারের জন্য এর নির্ভুলতা আরও উন্নত করা হয়েছিল।
• বর্তমানে, জিপিএস তৃতীয় প্রজন্ম (GPS III) ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আগের তুলনায় আরও উন্নত এবং নির্ভুল।

জিপিএস কিভাবে কাজ করে?

জিপিএস মূলত তিনটি প্রধান অংশের সমন্বয়ে গঠিত:

১. স্যাটেলাইটসমূহ: জিপিএস সিস্টেমে প্রায় ৩২টি স্যাটেলাইট রয়েছে, যেগুলো পৃথিবীর চারপাশে প্রায় ২০,২০০ কিলোমিটার উচ্চতায় প্রদক্ষিণ করছে। এই স্যাটেলাইটগুলো ক্রমাগত রেডিও সংকেত প্রেরণ করে।

২. গ্রাউন্ড স্টেশনসমূহ: পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা গ্রাউন্ড স্টেশনগুলো স্যাটেলাইটগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে এবং তাদের সঠিক পথে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাঠায়।

৩. জিপিএস রিসিভারসমূহ: জিপিএস রিসিভার হলো সেই ডিভাইস, যা স্যাটেলাইট থেকে আসা সংকেত গ্রহণ করে এবং ব্যবহারকারীর অবস্থান নির্ণয় করে। এই রিসিভারগুলো স্মার্টফোন, নেভিগেশন ডিভাইস, গাড়ি এবং অন্যান্য অনেক ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়।

জিপিএস রিসিভার অন্তত চারটি স্যাটেলাইট থেকে সংকেত গ্রহণ করে নিজের অবস্থান নির্ণয় করতে পারে। এই প্রক্রিয়াটিকে ট্রাইলাটারেশন (Trilateration) বলা হয়। ট্রাইলাটারেশন পদ্ধতিতে, রিসিভার প্রতিটি স্যাটেলাইট থেকে তার দূরত্বের হিসাব করে এবং তারপর সেই দূরত্বগুলো ব্যবহার করে পৃথিবীর উপর তার অবস্থান নির্ধারণ করে।

জিপিএস এর প্রকারভেদ

বিভিন্ন ধরনের জিপিএস সিস্টেম রয়েছে, যা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। এদের মধ্যে কয়েকটি প্রধান প্রকার নিচে উল্লেখ করা হলো:

• স্ট্যান্ডার্ড পজিশনিং সার্ভিস (SPS): এটি সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা জিপিএস পরিষেবা। এর নির্ভুলতা প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে।
• প্রেসিজ পজিশনিং সার্ভিস (PPS): এটি মূলত সামরিক ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত। এই পরিষেবাটি আরও নির্ভুল এবং এর নির্ভুলতা কয়েক সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
• ডাইফারেনশিয়াল জিপিএস (DGPS): এটি একটি উন্নত জিপিএস প্রযুক্তি, যা গ্রাউন্ড স্টেশনের মাধ্যমে সংকেত সংশোধন করে নির্ভুলতা বৃদ্ধি করে।
• অ্যাসিস্টেড জিপিএস (A-GPS): এটি মোবাইল ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়, যা সেলুলার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জিপিএস সংকেত দ্রুত পেতে সাহায্য করে।

জিপিএস এর ব্যবহার

জিপিএস প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ব্যবহার উল্লেখ করা হলো:

১. নেভিগেশন ও পরিবহন: জিপিএস গাড়ি, জাহাজ, বিমান এবং মোটরসাইকেল চালকদের জন্য নেভিগেশন সুবিধা প্রদান করে। এটি পথ খুঁজে বের করতে এবং গন্তব্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। গুগল ম্যাপস (Google Maps) এবং অ্যাপল ম্যাপস (Apple Maps) এর মতো জনপ্রিয় ম্যাপ অ্যাপ্লিকেশনগুলো জিপিএস ব্যবহার করে।

২. জরিপ ও মানচিত্র তৈরি: জিপিএস ভূমি জরিপ (Land Surveying) এবং মানচিত্র তৈরি (Cartography) কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি নির্ভুলভাবে ভূমি এবং অন্যান্য ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য পরিমাপ করতে সাহায্য করে।

৩. কৃষি: কৃষিকাজে জিপিএস ব্যবহার করে জমির উর্বরতা (Soil Fertility) এবং ফসল ব্যবস্থাপনা (Crop Management) উন্নত করা যায়। এটি ট্র্যাক্টর এবং অন্যান্য কৃষি যন্ত্রপাতিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে।

৪. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা: জিপিএস দুর্যোগ কবলিত (Disaster-stricken) এলাকায় উদ্ধারকর্মীদের সঠিক পথে পরিচালনা করতে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের খুঁজে বের করতে সহায়ক।

৫. সামরিক কার্যক্রম: সামরিক ক্ষেত্রে জিপিএস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সৈনিকদের (Soldiers) অবস্থান নির্ণয়, ক্ষেপণাস্ত্রের (Missiles) লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ এবং সামরিক সরঞ্জাম (Military equipment) ট্র্যাক করতে ব্যবহৃত হয়।

৬. বিজ্ঞান ও গবেষণা: জিপিএস ভূমিকম্প (Earthquake), আগ্নেয়গিরি (Volcano) এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা (Sea level) পরিবর্তনের মতো প্রাকৃতিক ঘটনা পর্যবেক্ষণ করতে ব্যবহৃত হয়।

জিপিএস এর সীমাবদ্ধতা

জিপিএস অত্যন্ত उपयोगी হওয়া সত্ত্বেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে:

• সিগন্যাল ব্লকিং: জিপিএস সংকেত বিল্ডিং, পাহাড়, ঘন জঙ্গল এবং ইনডোর (Indoor) পরিবেশে দুর্বল হতে পারে বা সম্পূর্ণরূপে ব্লক হয়ে যেতে পারে।
• বায়ুমণ্ডলীয় প্রভাব: আবহাওয়া (Weather) এবং আয়নোস্ফিয়ার (Ionosphere) এর কারণে জিপিএস সংকেতে ত্রুটি দেখা দিতে পারে।
• সামরিক হস্তক্ষেপ: সামরিক কারণে জিপিএস সংকেত জ্যাম (Jam) করা হতে পারে, যা নেভিগেশন ব্যবস্থাকে ব্যাহত করতে পারে।
• নির্ভরযোগ্যতা: জিপিএস সিস্টেম সম্পূর্ণরূপে স্যাটেলাইটের উপর নির্ভরশীল। স্যাটেলাইটগুলোতে কোনো সমস্যা হলে জিপিএস পরিষেবা ব্যাহত হতে পারে।

জিপিএস এর ভবিষ্যৎ

জিপিএস প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল। বর্তমানে, জিপিএস III স্যাটেলাইটগুলো আরও উন্নত সংকেত এবং নির্ভুলতা প্রদান করছে। এছাড়াও, জিপিএস এর সাথে অন্যান্য প্রযুক্তি যেমন ইনর্শিয়াল নেভিগেশন সিস্টেম (Inertial Navigation System) এবং ওয়াইফাই (Wi-Fi) একত্রিত করে আরও উন্নত নেভিগেশন ব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে।

ভবিষ্যতে, জিপিএস স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং (Autonomous driving), ড্রোন (Drone) এবং ইন্টারনেট অফ থিংস (Internet of Things) এর মতো প্রযুক্তিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।

জিপিএস এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের মধ্যে সম্পর্ক

সরাসরিভাবে জিপিএস এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। তবে, জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা ডেটা এবং তথ্য বাজার বিশ্লেষণ (Market Analysis) এবং ঝুঁকি মূল্যায়ন (Risk Assessment) এর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, জিপিএস ডেটা ব্যবহার করে পরিবহন (Transportation) এবং লজিস্টিকস (Logistics) শিল্পের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে, যা সরবরাহ শৃঙ্খল (Supply chain) এবং পণ্যের মূল্য (Product price) সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে। এই তথ্যগুলো বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হতে পারে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের সাথে সম্পর্কিত কিছু কৌশল:

১. ট্রেন্ড ট্রেডিং (Trend Trading): বাজারের প্রবণতা অনুসরণ করে ট্রেড করা। ২. রেঞ্জ ট্রেডিং (Range Trading): একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে বাজারের ওঠানামা থেকে লাভ করা। ৩. ব্রেকআউট ট্রেডিং (Breakout Trading): বাজারের গুরুত্বপূর্ণ স্তর ভেদ করে যাওয়ার সময় ট্রেড করা। ৪. পিনি বার কৌশল (Pin Bar Strategy): ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন ব্যবহার করে ট্রেড করা। ৫. মুভিং এভারেজ (Moving Average): নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গড় মূল্য ব্যবহার করে ট্রেড করা।

ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis) এবং টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ (Technical Analysis) বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

উপসংহার

জিপিএস একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, যা আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজ করে তুলেছে। এর বহুমুখী ব্যবহার এবং ক্রমাগত উন্নয়ন এটিকে ভবিষ্যতের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলছে। জিপিএস প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপকৃত হতে পারি এবং নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারি।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ