জিএনইউ জিPL

এখানে জিএনইউ জিPL (GNU General Public License) নিয়ে একটি বিস্তারিত নিবন্ধ দেওয়া হল:

জিএনইউ জিPL: একটি বিস্তারিত আলোচনা

জিএনইউ জেনারেল পাবলিক লাইসেন্স (GNU General Public License) হল বহুল ব্যবহৃত একটি ফ্রি সফটওয়্যার লাইসেন্স। এটি ফ্রি সফটওয়্যার ফাউন্ডেশন (FSF) দ্বারা প্রকাশিত। এই লাইসেন্স ব্যবহারকারীদের সফটওয়্যার ব্যবহার, পরিবর্তন এবং বিতরণের স্বাধীনতা দেয়। জিPL এর মূল উদ্দেশ্য হল সফটওয়্যারকে মুক্ত উৎস (Open Source) হিসেবে রাখা এবং এর উন্নতিতে উৎসাহিত করা।

জিPL এর ইতিহাস

রিচার্ড স্টলম্যান ১৯৮৩ সালে জিPL এর প্রথম সংস্করণ প্রকাশ করেন। এর পরবর্তী সংস্করণ, জিPLv2, ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত হয় এবং এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সংস্করণগুলির মধ্যে অন্যতম। সবশেষে, জিPLv3, ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয়, যেখানে নতুন কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে, যেমন পেটেন্ট এবং ডিজিটাল রাইটস ম্যানেজমেন্ট (DRM) সম্পর্কিত জটিলতাগুলো মোকাবিলা করার জন্য।

জিPL এর মূল বৈশিষ্ট্য

জিPL এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ:

• ব্যবহারের স্বাধীনতা: যে কেউ যেকোনো উদ্দেশ্যে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে পারবে।
• পরিবর্তনের স্বাধীনতা: ব্যবহারকারী সফটওয়্যারটি নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করতে পারবে।
• বিতরণের স্বাধীনতা: পরিবর্তিত বা অপরিবর্তিত সফটওয়্যার বিতরণের অধিকার ব্যবহারকারীর রয়েছে।
• সোর্স কোড সহজলভ্যতা: সফটওয়্যারটির সোর্স কোড অবশ্যই বিতরণের সাথে সরবরাহ করতে হবে।
• কপিলেফট: জিPL একটি কপিলেফট লাইসেন্স, যার মানে হল যে সফটওয়্যারটির উপর ভিত্তি করে নতুন কোনো কাজ তৈরি করা হলে, সেই কাজটিও জিPL এর অধীনে লাইসেন্স করা আবশ্যক। এর ফলে সফটওয়্যারটি সবসময় মুক্ত থাকে।

জিPL এর প্রকারভেদ

জিPL এর প্রধান তিনটি সংস্করণ রয়েছে:

• জিPLv1: এটি প্রথম সংস্করণ, যা ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত হয়।
• জিPLv2: এটি ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত হয় এবং বহুল ব্যবহৃত। এই সংস্করণে পূর্বের ভুলগুলো সংশোধন করা হয়েছে এবং কিছু নতুন ধারা যোগ করা হয়েছে।
• জিPLv3: এটি ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয়। পেটেন্ট এবং DRM সম্পর্কিত সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য এই সংস্করণটি তৈরি করা হয়েছে।

জিPL সংস্করণগুলোর তুলনা

সংস্করণ	প্রকাশের বছর	মূল বৈশিষ্ট্য
জিPLv1	১৯৮৩	প্রথম সংস্করণ, সীমিত সুযোগ
জিPLv2	১৯৮৯	বহুল ব্যবহৃত, পূর্বের ভুল সংশোধন
জিPLv3	২০০৭	পেটেন্ট ও DRM মোকাবিলা, উন্নত কপিলেফট

জিPL এর শর্তাবলী

জিPL এর অধীনে লাইসেন্সকৃত সফটওয়্যার ব্যবহার করার সময় কিছু শর্তাবলী মেনে চলতে হয়। এই শর্তাবলীগুলো নিশ্চিত করে যে সফটওয়্যারটি সবসময় মুক্ত থাকবে এবং ব্যবহারকারীরা তাদের অধিকার ভোগ করতে পারবে।

• লাইসেন্স এবং কপিরাইট নোটিশ: সফটওয়্যার বিতরণের সময় অবশ্যই লাইসেন্স এবং কপিরাইট নোটিশ যুক্ত করতে হবে।
• সোর্স কোড সরবরাহ: সফটওয়্যারটির সোর্স কোড বিতরণের সাথে সরবরাহ করতে হবে, যাতে ব্যবহারকারীরা এটি পরিবর্তন করতে পারে।
• কপিলেফট শর্ত: জিPL এর অধীনে লাইসেন্সকৃত সফটওয়্যার ব্যবহার করে নতুন কোনো কাজ তৈরি করা হলে, সেই কাজটিও জিPL এর অধীনে লাইসেন্স করতে হবে।
• ওয়ারেন্টি অস্বীকৃতি: জিPL সাধারণত কোনো ওয়ারেন্টি প্রদান করে না। সফটওয়্যারটি "যেমন আছে" (as is) ভিত্তিতে সরবরাহ করা হয়।

জিPL এবং অন্যান্য লাইসেন্স

বিভিন্ন ধরনের মুক্ত সফটওয়্যার লাইসেন্স রয়েছে, যেমন MIT লাইসেন্স, অ্যাপাচি লাইসেন্স, এবং BSD লাইসেন্স। জিPL এর সাথে এই লাইসেন্সগুলোর কিছু পার্থক্য রয়েছে।

• জিPL বনাম MIT লাইসেন্স: MIT লাইসেন্স জিPL এর চেয়ে অনেক বেশি অনুমতিমূলক। MIT লাইসেন্সে কপিলেফট শর্ত নেই, তাই ব্যবহারকারী সফটওয়্যারটি মালিকানাধীন (proprietary) সফটওয়্যারে ব্যবহার করতে পারে।
• জিPL বনাম অ্যাপাচি লাইসেন্স: অ্যাপাচি লাইসেন্সও জিPL এর চেয়ে বেশি অনুমতিমূলক। এটি পেটেন্ট অধিকার সম্পর্কিত কিছু সুরক্ষা প্রদান করে, যা জিPLv3 এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
• জিPL বনাম BSD লাইসেন্স: BSD লাইসেন্স MIT লাইসেন্সের মতোই অনুমতিমূলক। এটিও কপিলেফট শর্ত আরোপ করে না।

লাইসেন্সগুলোর তুলনা

লাইসেন্স	কপিলেফট	ব্যবহারের অনুমতি
জিPL	হ্যাঁ	সীমিত
MIT	না	অবাধ
অ্যাপাচি	না	অবাধ, পেটেন্ট সুরক্ষা সহ
BSD	না	অবাধ

জিPL এর ব্যবহার

জিPL বহুল ব্যবহৃত একটি লাইসেন্স এবং এটি অসংখ্য সফটওয়্যার প্রকল্পে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু প্রকল্প হলো:

• লিনাক্স কার্নেল: লিনাক্স কার্নেল জিPLv2 এর অধীনে লাইসেন্সকৃত।
• গনু কম্পাইলার কালেকশন (GCC): GCC জিPLv3 এর অধীনে লাইসেন্সকৃত।
• মাইএসকিউএল: মাইএসকিউএল জিPLv2 এর অধীনে লাইসেন্সকৃত।
• ওয়ার্ডপ্রেস: ওয়ার্ডপ্রেস জিPLv2 এর অধীনে লাইসেন্সকৃত।

জিPL এবং বাণিজ্যিক ব্যবহার

জিPL একটি মুক্ত সফটওয়্যার লাইসেন্স হওয়া সত্ত্বেও, এটি বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। জিPL এর অধীনে লাইসেন্সকৃত সফটওয়্যার বিক্রি করা যায়, তবে সোর্স কোড সরবরাহ করতে হবে এবং কপিলেফট শর্ত মেনে চলতে হবে। অনেক কোম্পানি জিPL লাইসেন্সকৃত সফটওয়্যার ব্যবহার করে তাদের বাণিজ্যিক পণ্য তৈরি করে এবং বিক্রি করে।

জিPLv3 এর নতুন বৈশিষ্ট্য

জিPLv3 তে কিছু নতুন বৈশিষ্ট্য যোগ করা হয়েছে, যা পূর্বের সংস্করণগুলোতে ছিল না। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

• পেটেন্ট সুরক্ষা: জিPLv3 ব্যবহারকারীদের পেটেন্ট সম্পর্কিত জটিলতা থেকে রক্ষা করে। যদি কোনো অবদানকারী (contributor) কোনো পেটেন্ট দাবি করে, তবে ব্যবহারকারীরা সেই পেটেন্ট ব্যবহারের অধিকার পাবে।
• ডিজিটাল রাইটস ম্যানেজমেন্ট (DRM) মোকাবিলা: জিPLv3 DRM প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফটওয়্যার ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করা থেকে ব্যবহারকারীদের রক্ষা করে।
• কপিলেফট শর্তের স্পষ্টতা: জিPLv3 কপিলেফট শর্তগুলোকে আরও স্পষ্ট করে, যাতে কোনো অস্পষ্টতা না থাকে।

জিPL এর সুবিধা

জিPL ব্যবহারের কিছু সুবিধা নিচে উল্লেখ করা হলো:

• সফটওয়্যারের স্বাধীনতা: জিPL ব্যবহারকারীদের সফটওয়্যার ব্যবহার, পরিবর্তন এবং বিতরণের স্বাধীনতা দেয়।
• উন্মুক্ত উন্নয়ন: জিPL উন্মুক্ত উন্নয়নে উৎসাহিত করে, যা সফটওয়্যারের গুণগত মান বাড়াতে সাহায্য করে।
• দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা: জিPL নিশ্চিত করে যে সফটওয়্যারটি সবসময় মুক্ত থাকবে এবং এর উন্নতি অব্যাহত থাকবে।
• বৃহৎ সম্প্রদায়: জিPL এর একটি বৃহৎ সম্প্রদায় রয়েছে, যারা সফটওয়্যারের উন্নয়নে অবদান রাখে এবং সহায়তা প্রদান করে।

জিPL এর অসুবিধা

কিছু ক্ষেত্রে জিPL ব্যবহারের কিছু অসুবিধা দেখা যেতে পারে:

• কপিলেফট শর্ত: জিPL এর কপিলেফট শর্ত কিছু ব্যবহারকারীর জন্য জটিল হতে পারে, বিশেষ করে যারা মালিকানাধীন সফটওয়্যার তৈরি করতে চান।
• লাইসেন্স জটিলতা: জিPL এর শর্তাবলী বোঝা এবং মেনে চলা কিছু ক্ষেত্রে কঠিন হতে পারে।

উপসংহার

জিএনইউ জিPL একটি শক্তিশালী এবং বহুল ব্যবহৃত ফ্রি সফটওয়্যার লাইসেন্স। এটি সফটওয়্যারকে মুক্ত রাখার এবং উন্মুক্ত উন্নয়নে উৎসাহিত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। জিPL এর শর্তাবলী মেনে চললে ব্যবহারকারীরা সফটওয়্যারের স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারবে এবং এর উন্নতিতে অবদান রাখতে পারবে।

আরও জানতে:

• ফ্রি সফটওয়্যার ফাউন্ডেশন ([1](https://www.fsf.org/))
• জিPLv3 ([2](https://www.gnu.org/licenses/gpl-3.0.html))
• মুক্ত উৎস সংজ্ঞা ([3](https://opensource.org/osd))
• কপিলেফট ([4](https://en.wikipedia.org/wiki/Copyleft))
• সফটওয়্যার লাইসেন্স ([5](https://en.wikipedia.org/wiki/Software_license))

বাইনারি অপশন ট্রেডিং সম্পর্কিত কিছু বিষয়:

• ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
• টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
• ভলিউম বিশ্লেষণ
• ট্রেডিং কৌশল
• অর্থ ব্যবস্থাপনা
• বাইনারি অপশন প্ল্যাটফর্ম
• অপশন চেইন
• কল অপশন
• পুট অপশন
• মানি ম্যানেজমেন্ট
• ট্রেডিং সাইকোলজি
• মার্কেট সেন্টিমেন্ট
• ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ
• চার্ট প্যাটার্ন
• ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ