জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সম্মেলন

ভূমিকা

জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সম্মেলন (United Nations Climate Change Conference), যা সাধারণভাবে COP (Conference of the Parties) নামে পরিচিত, হল জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আলোচনা ও চুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফোরাম। ১৯৯২ সালে রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্মেলন (United Nations Conference on Environment and Development) -এর মাধ্যমে এই সম্মেলনের যাত্রা শুরু হয়। এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য হল গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো থেকে বিশ্বকে রক্ষা করার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। প্রতি বছর বিভিন্ন দেশে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলো তাদের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (Nationally Determined Contributions - NDC) এর অগ্রগতি পর্যালোচনা করে, নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

সম্মেলনের ইতিহাস

প্রথম COP সম্মেলন ১৯৯৫ সালে বার্লিনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর থেকে প্রতি বছর নিয়মিতভাবে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিটি সম্মেলনের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং ফলাফল রয়েছে। নিচে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সম্মেলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো:

উল্লেখযোগ্য COP সম্মেলনসমূহ
সম্মেলন	বছর	স্থান	মূল বিষয়	COP1	১৯৯৫	বার্লিন, জার্মানি	জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আলোচনার কাঠামো তৈরি।	COP3	১৯৯৭	কিয়োটো, জাপান	কিয়োটো প্রোটোকল গৃহীত হয়, যেখানে উন্নত দেশগুলো গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়।	COP7	২০০১	মারাক্কেশ, মরক্কো	কিয়োটো প্রোটোকলের বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা।	COP11	২০০৫	মন্ট্রিল, কানাডা	কিয়োটো প্রোটোকলের দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতি সময়কাল নিয়ে আলোচনা।	COP15	২০০৯	কোপেনহেগেন, ডেনমার্ক	কোপেনহেগেন চুক্তি গৃহীত হয়, যা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার তৈরি করে।	COP21	২০১৫	প্যারিস, ফ্রান্স	প্যারিস চুক্তি গৃহীত হয়, যা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত। এই চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।	COP26	২০২১	গ্লাসগো, স্কটল্যান্ড	প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য নতুন প্রতিশ্রুতি এবং জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা।	COP27	২০২২	শার্ম এল-শেখ, মিশর	ক্ষতিপূরণ তহবিল (Loss and Damage Fund) প্রতিষ্ঠা নিয়ে আলোচনা।

প্যারিস চুক্তি (Paris Agreement)

প্যারিস চুক্তি ২০১৫ সালের COP21 সম্মেলনে গৃহীত হয় এবং এটি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার একটি মাইলফলক। এই চুক্তির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা, এবং সম্ভব হলে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখার চেষ্টা করা।
প্রত্যেকটি দেশকে তাদের নিজস্ব জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (NDC) নির্ধারণ করা এবং তা নিয়মিতভাবে আপডেট করা।
উন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মূল্যায়ন এবং নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করার জন্য একটি কাঠামো তৈরি করা।

প্যারিস চুক্তি একটি আইনিভাবে বাধ্যতামূলক চুক্তি, তবে এর বাস্তবায়ন প্রতিটি দেশের নিজস্ব পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল।

COP26 এর ফলাফল

গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত COP26 সম্মেলনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

কোলা (Coal) ব্যবহারের পরিবর্তে পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানির দিকে মনোযোগ দেওয়া।
মিথেন নিঃসরণ কমানোর জন্য গ্লোবাল মিথেন প pledge (Global Methane Pledge)।
বন উজাড় রোধ এবং বনভূমি পুনরুদ্ধার করার জন্য নতুন চুক্তি।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি।

তবে, COP26 সম্মেলনে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন।

COP27 এর ফলাফল

মিশরের শার্ম এল-শেখে অনুষ্ঠিত COP27 সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ক্ষতির (Loss and Damage) জন্য একটি তহবিল গঠনের বিষয়ে একমত হওয়া যায়। এই তহবিল উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হওয়া ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। এছাড়াও, সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর বিষয়ে আলোচনা হয়, কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ ও প্রভাব

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ হলো জীবাশ্ম জ্বালানি (Fossil fuels) যেমন কয়লা, পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার। এই জ্বালানিগুলো পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা যায়, যেমন:

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি (Sea level rise)
খর drought (Drought)
বন্যা (Flood)
ঘূর্ণিঝড় (Cyclone)
দাবানল (Wildfire)

এই দুর্যোগগুলো মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং জলবায়ু পরিবর্তন

বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি আর্থিক বিনিয়োগ কৌশল যেখানে বিনিয়োগকারীরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো সম্পদের (যেমন: স্টক, কমোডিটি, বা কারেন্সি) দাম বাড়বে নাকি কমবে তা অনুমান করে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে, বাইনারি অপশন ট্রেডিং বিভিন্ন উপায়ে প্রাসঙ্গিক হতে পারে:

ওয়েদার ডেরিভেটিভস (Weather derivatives): আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের উপর ভিত্তি করে ওয়েদার ডেরিভেটিভস ট্রেড করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো অঞ্চলে খরার পূর্বাভাস থাকলে, সেই অঞ্চলের কৃষিপণ্যের দামের উপর ভিত্তি করে বাইনারি অপশন ট্রেড করা যেতে পারে।
শক্তি খাত (Energy sector): জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানির চাহিদা বৃদ্ধির কারণে শক্তি খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামের পরিবর্তনশীলতা বাষ্পতা (Volatility) বাড়তে পারে। এই সুযোগটি বাইনারি অপশন ট্রেডাররা কাজে লাগাতে পারে।
কার্বন ক্রেডিট (Carbon credit): কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য বিভিন্ন দেশ এবং কোম্পানি কার্বন ক্রেডিট ব্যবহার করে। এই কার্বন ক্রেডিটগুলোর দামের উপর ভিত্তি করেও বাইনারি অপশন ট্রেড করা যেতে পারে।

তবে, বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলি সঠিকভাবে অনুমান করা কঠিন হতে পারে। তাই, এই ধরনের ট্রেডিং করার আগে ভালোভাবে গবেষণা করা এবং ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ (Technical Analysis) এবং ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ (Technical Analysis): এই পদ্ধতিতে ঐতিহাসিক মূল্য এবং ভলিউম ডেটা ব্যবহার করে ভবিষ্যতের মূল্য নির্ধারণের চেষ্টা করা হয়। বিভিন্ন চার্ট প্যাটার্ন (Chart pattern), যেমন: হেড অ্যান্ড শোল্ডারস (Head and Shoulders), ডাবল টপ (Double Top), এবং মুভিং এভারেজ (Moving Average) ব্যবহার করে ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis): ভলিউম বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখা হয় যে কোনো নির্দিষ্ট দামে কতগুলো শেয়ার কেনা বা বেচা হয়েছে। উচ্চ ভলিউম সাধারণত একটি শক্তিশালী ট্রেন্ডের (Trend) ইঙ্গিত দেয়।
বলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands): এটি একটি জনপ্রিয় টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর (Technical Indicator), যা দামের পরিবর্তনশীলতা পরিমাপ করে।
আরএসআই (Relative Strength Index): এটি একটি মোমেন্টাম অসিলেটর (Momentum Oscillator), যা অতিরিক্ত কেনা বা অতিরিক্ত বিক্রির পরিস্থিতি নির্দেশ করে।
এমএসিডি (Moving Average Convergence Divergence): এটি দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক দেখায় এবং ট্রেডিংয়ের সংকেত প্রদান করে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে, এই কৌশলগুলো ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীরা বাজারের গতিবিধি বিশ্লেষণ করতে পারে এবং সঠিক ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা

জলবায়ু পরিবর্তন একটি জটিল এবং বহুমাত্রিক সমস্যা। এই সমস্যা মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং নীতিগত পরিবর্তন প্রয়োজন। ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলো হলো:

গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো (Reducing greenhouse gas emissions): প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে, বিশ্বকে দ্রুত গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে হবে।
জলবায়ু অর্থায়ন (Climate finance): উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা প্রদান করা।
প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন (Technological innovation): পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং তার ব্যবহার বৃদ্ধি করা।
নীতিগত পরিবর্তন (Policy changes): জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সহায়ক নীতি গ্রহণ করা এবং বাস্তবায়ন করা।

তবে, এই চ্যালেঞ্জগুলোর পাশাপাশি কিছু সম্ভাবনাও রয়েছে। পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, সবুজ অর্থনীতি (Green economy) তৈরি এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে।

উপসংহার

জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সম্মেলন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। প্যারিস চুক্তি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ, তবে এর বাস্তবায়ন এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এখনো অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং নীতিগত পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা একটি স্থিতিশীল এবং টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে পারি। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের মতো আর্থিক কৌশলগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের অর্থনৈতিক প্রভাবগুলো বুঝতে এবং সেগুলোর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করতে পারে, তবে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

জলবায়ু পরিবর্তন গ্রিনহাউস গ্যাস প্যারিস চুক্তি জাতিসংঘ জাতিসংঘ পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্মেলন কিয়োটো প্রোটোকল ওয়েদার ডেরিভেটিভস শক্তি খাত কার্বন ক্রেডিট টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ভলিউম বিশ্লেষণ বলিঙ্গার ব্যান্ড আরএসআই এমএসিডি গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো জলবায়ু অর্থায়ন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন নীতিগত পরিবর্তন সবুজ অর্থনীতি রিও ডি জেনিরো সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি খর drought বন্যা ঘূর্ণিঝড় দাবানল

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ