জাতিগত কেন্দ্রিকতা

জাতিগত কেন্দ্রিকতা (Ethnocentrism) একটি জটিল সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক ধারণা। মানুষের সংস্কৃতি এবং জাতিগোষ্ঠীর প্রতি পক্ষপাতিত্বের প্রবণতাকেই জাতিগত কেন্দ্রিকতা বলা হয়। এটি এমন একটি বিশ্বাস যেখানে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নিজেদের সংস্কৃতিকে অন্য সংস্কৃতি থেকে শ্রেষ্ঠ মনে করে এবং অন্য সংস্কৃতিকে বিচার করার ক্ষেত্রে নিজেদের সংস্কৃতিকেই মানদণ্ড হিসেবে ধরে নেয়। এই নিবন্ধে জাতিগত কেন্দ্রিকতার বিভিন্ন দিক, এর কারণ, প্রভাব এবং এটি মোকাবিলার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো।

জাতিগত কেন্দ্রিকতার সংজ্ঞা

জাতিগত কেন্দ্রিকতা হলো এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি যেখানে নিজের জাতি বা সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে অন্য সকল জাতি বা সংস্কৃতিকে মূল্যায়ন করা হয়। এর ফলে অন্য সংস্কৃতি সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি হতে পারে এবং ভিন্ন সংস্কৃতিগুলোর প্রতি বিরূপ মনোভাব জন্ম নিতে পারে। সমাজবিজ্ঞানী উইলিয়াম জি. সামনার ১৮৯০ সালে প্রথম জাতিগত কেন্দ্রিকতা শব্দটি ব্যবহার করেন। তাঁর মতে, জাতিগত কেন্দ্রিকতা হলো নিজের গোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে সবকিছু বিচার করার প্রবণতা।

জাতিগত কেন্দ্রিকতার কারণ

জাতিগত কেন্দ্রিকতার পেছনে বহুবিধ কারণ বিদ্যমান। এর মধ্যে কয়েকটি প্রধান কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:

সামাজিকীকরণ-এর প্রভাব: শৈশব থেকে আমরা যে সংস্কৃতিতে বড় হই, সেই সংস্কৃতির মূল্যবোধ, বিশ্বাস এবং রীতিনীতি আমাদের মধ্যে গভীরভাবে প্রোথিত হয়। এই কারণে আমরা নিজেদের সংস্কৃতিকে স্বাভাবিক এবং সঠিক বলে মনে করি।
অনিশ্চয়তা এবং ভয়: ভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং এর থেকে উদ্ভূত অনিশ্চয়তা ও ভয় জাতিগত কেন্দ্রিকতাকে উৎসাহিত করে। মানুষ সাধারণত যা জানে না, সে সম্পর্কে সন্দিহান থাকে।
গোষ্ঠীগত পরিচিতি: মানুষ স্বভাবতই নিজের গোষ্ঠী বা দলের প্রতি অনুগত থাকে। এই আনুগত্যের কারণে অন্য গোষ্ঠীর সংস্কৃতিকে inferior বা নিকৃষ্ট মনে হতে পারে।
ইতিহাস এবং ঐতিহ্য: কোনো জাতির ইতিহাস এবং ঐতিহ্য তার সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে। ঐতিহাসিক ঘটনা এবং ঐতিহ্যগত বিশ্বাস জাতিগত কেন্দ্রিকতাকে শক্তিশালী করতে পারে।
গণমাধ্যম-এর ভূমিকা: গণমাধ্যম প্রায়শই নিজেদের সংস্কৃতির ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরে এবং অন্য সংস্কৃতি সম্পর্কে ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করে, যা জাতিগত কেন্দ্রিকতাকে বাড়িয়ে তোলে।

জাতিগত কেন্দ্রিকতার প্রকারভেদ

জাতিগত কেন্দ্রিকতাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা যায়। এর মধ্যে কয়েকটি প্রধান প্রকারভেদ হলো:

সক্রিয় জাতিগত কেন্দ্রিকতা: যখন কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে অন্য সংস্কৃতিকে অবজ্ঞা করে বা তার প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে, তখন তাকে সক্রিয় জাতিগত কেন্দ্রিকতা বলা হয়।
নিষ্ক্রিয় জাতিগত কেন্দ্রিকতা: এটি তুলনামূলকভাবে কম তীব্র। এখানে ব্যক্তি অন্য সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন থাকে, কিন্তু সেগুলোকে নিজেদের সংস্কৃতির সমান মনে করে না।
ভাষাভিত্তিক জাতিগত কেন্দ্রিকতা: ভাষার ভিন্নতাকে কেন্দ্র করে অন্য সংস্কৃতিকে inferior মনে করা।
ধর্মীয় জাতিগত কেন্দ্রিকতা: নিজ ধর্মকে শ্রেষ্ঠ মনে করে অন্য ধর্মের প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণ করা।

জাতিগত কেন্দ্রিকতার প্রভাব

জাতিগত কেন্দ্রিকতার নেতিবাচক প্রভাব সুদূরপ্রসারী। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব আলোচনা করা হলো:

বৈষম্য ও অन्याয়: জাতিগত কেন্দ্রিকতার কারণে সমাজে বৈষম্য ও অন্যায় সৃষ্টি হয়। সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হতে পারে।
সংঘাত: বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও বিদ্বেষের কারণে সংঘাতের সৃষ্টি হতে পারে।
সাংস্কৃতিক বিনিময়-এ বাধা: জাতিগত কেন্দ্রিকতা বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে পারস্পরিক আদান-প্রদানকে ব্যাহত করে।
মানবাধিকার লঙ্ঘন: জাতিগত কেন্দ্রিকতার কারণে সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হতে পারে।
অর্থনৈতিক ক্ষতি: পর্যটন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে জাতিগত কেন্দ্রিকতা বাধা সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে।

জাতিগত কেন্দ্রিকতার প্রভাব
প্রভাব	বিবরণ	উদাহরণ
বৈষম্য ও অন্যায়	সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ	জাতিগত সংখ্যালঘুদের চাকরি ও শিক্ষায় সুযোগ কমিয়ে দেওয়া
সংঘাত	বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্বেষ ও সংঘাত	জাতিগত দাঙ্গা, যুদ্ধ
সাংস্কৃতিক বিনিময়-এ বাধা	সংস্কৃতির পারস্পরিক আদান-প্রদান ব্যাহত	অন্য দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করা
মানবাধিকার লঙ্ঘন	সংখ্যালঘুদের অধিকার খর্ব করা	সংখ্যালঘুদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা
অর্থনৈতিক ক্ষতি	বাণিজ্য ও পর্যটনে বাধা	আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ কমে যাওয়া

জাতিগত কেন্দ্রিকতা মোকাবিলা করার উপায়

জাতিগত কেন্দ্রিকতা একটি জটিল সমস্যা, তবে এটি মোকাবিলা করা সম্ভব। নিচে কিছু উপায় আলোচনা করা হলো:

শিক্ষা: শিক্ষা জাতির মধ্যে সহনশীলতা ও ভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধি করে। শিক্ষাব্যবস্থায় বিভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে অন্তর্ভুক্তিমূলক পাঠ্যক্রম থাকা উচিত।
যোগাযোগ: বিভিন্ন সংস্কৃতি থেকে আসা মানুষের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা উচিত। এটি ভুল ধারণা দূর করতে এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়াতে সহায়ক।
গণমাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকা: গণমাধ্যমকে বিভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ এবং ইতিবাচক সংবাদ প্রচার করতে হবে।
আন্তঃসাংস্কৃতিক সংলাপ: বিভিন্ন সংস্কৃতি ও জাতির মধ্যে সংলাপের আয়োজন করা উচিত।
আইন ও নীতি: বৈষম্যমূলক আচরণ রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন করা উচিত।
সচেতনতা বৃদ্ধি: জাতিগত কেন্দ্রিকতার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
পর্যটন: বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের মাধ্যমে মানুষ ভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে এবং তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে সম্পর্ক

বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি জটিল আর্থিক প্রক্রিয়া। এখানে জাতিগত কেন্দ্রিকতা বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলতে পারে। কোনো বিশেষ জাতি বা অঞ্চলের অর্থনীতি সম্পর্কে পক্ষপাতদুষ্ট ধারণা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করতে পারে।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ-এর গুরুত্ব: বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের ওপর নির্ভর করা উচিত, জাতিগত ধারণার ওপর নয়।
ভলিউম বিশ্লেষণ-এর ব্যবহার: ভলিউম বিশ্লেষণ বাজারের গতিবিধি বুঝতে সাহায্য করে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: বিনিয়োগের ঝুঁকি কমাতে ডাইভারসিফিকেশন এবং স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করা উচিত।
বাজার গবেষণা: কোনো নির্দিষ্ট জাতি বা অঞ্চলের অর্থনীতি সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে বাজার গবেষণা করা জরুরি।
আবেগ নিয়ন্ত্রণ: আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে যুক্তিপূর্ণভাবে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ জাতিগত কেন্দ্রিকতা এড়ানোর উপায়
কৌশল	বিবরণ
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ	চার্ট এবং ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি বিশ্লেষণ করা
ভলিউম বিশ্লেষণ	ট্রেডিং ভলিউম পর্যবেক্ষণ করে বাজারের চাহিদা ও সরবরাহ বোঝা
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা	স্টপ-লস অর্ডার এবং ডাইভারসিফিকেশন ব্যবহার করে ঝুঁকি কমানো
বাজার গবেষণা	বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা
আবেগ নিয়ন্ত্রণ	আবেগপ্রবণ হয়ে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত না নেওয়া
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ	অভিজ্ঞ ট্রেডার বা আর্থিক উপদেষ্টার পরামর্শ নেওয়া

উদাহরণ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানি-র জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা জাতিগত কেন্দ্রিকতার একটি ভয়াবহ উদাহরণ।
বর্ণবাদ একটি সুস্পষ্ট জাতিগত কেন্দ্রিকতার প্রকাশ, যেখানে একটি জাতি নিজেকে অন্য জাতি থেকে শ্রেষ্ঠ মনে করে।
বিভিন্ন দেশে অভিবাসীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ জাতিগত কেন্দ্রিকতার ফল।

উপসংহার

জাতিগত কেন্দ্রিকতা একটি গভীর এবং বহুমাত্রিক সমস্যা। এটি সমাজে বিভেদ ও সংঘাত সৃষ্টি করে এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘন ঘটায়। শিক্ষা, যোগাযোগ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কঠোর আইনের মাধ্যমে এই সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে, জাতিগত ধারণার পরিবর্তে তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ এবং যুক্তিপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। একটি সহনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে জাতিগত কেন্দ্রিকতা দূর করা অপরিহার্য।

সংস্কৃতি জাতি পক্ষপাতদুষ্টতা বৈশ্বিকীকরণ সহনশীলতা মানবাধিকার সামাজিক বিজ্ঞান মনোবিজ্ঞান যোগাযোগ গণমাধ্যম শিক্ষা রাজনীতি অর্থনীতি ইতিহাস ভূগোল সমাজ রাষ্ট্র আইন নীতি পর্যটন টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ভলিউম বিশ্লেষণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বাজার গবেষণা আবেগ নিয়ন্ত্রণ

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ