জন রলস

পরিচিতি

জন রলস ছিলেন বিংশ শতাব্দীর প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও নৈতিক দার্শনিকদের মধ্যে অন্যতম। ১৯২১ সালে আমেরিকার বাল্টিমোরে জন্মগ্রহন করেন এবং ২০০২ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা জীবনে সমাপ্তি টানেন। রলস তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘এ থিওরি অফ জাস্টিস’ (A Theory of Justice)-এর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এই গ্রন্থে তিনি ন্যায়বিচারের একটি নতুন তত্ত্ব উপস্থাপন করেন, যা রাজনৈতিক ও সামাজিক দর্শনের জগতে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। তাঁর কাজ নৈতিকতা, রাজনৈতিক দর্শন এবং আইন এর ক্ষেত্রগুলিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে।

জীবনের প্রথমার্ধ

জন রলসের শিক্ষাজীবন শুরু হয় বাল্টিমোরের স্কুলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধ অভিজ্ঞতার পর তিনি দর্শনশাস্ত্রে মনোনিবেশ করেন এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন। হার্ভার্ডে শিক্ষকতা শুরু করার আগে তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।

ন্যায়বিচারের তত্ত্ব

রলসের ন্যায়বিচারের তত্ত্বের মূল ভিত্তি হলো ‘অজ্ঞতার আবরণ’ (veil of ignorance)। এই ধারণার মূল কথা হলো, সমাজের মৌলিক কাঠামো নির্ধারণের সময় মানুষকে তাদের ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য, যেমন - সামাজিক অবস্থান, অর্থনৈতিক অবস্থা, জাতি, লিঙ্গ, এবং এমনকি তাদের নিজস্ব দক্ষতা ও দুর্বলতা সম্পর্কে অজ্ঞ থাকতে হবে। রলস মনে করতেন, এই অবস্থায় মানুষ এমন নীতি তৈরি করবে যা সকলের জন্য ন্যায্য হবে, কারণ কেউ也不知道 তাদের সমাজে কী অবস্থানে থাকবে।

রলস ন্যায়বিচারের দুটি মূল নীতি প্রস্তাব করেন:

প্রথম নীতি: প্রত্যেক ব্যক্তির সমান মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা থাকবে, যা অন্য সকলের স্বাধীনতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
দ্বিতীয় নীতি: সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য এমনভাবে হতে হবে যাতে তা সবচেয়ে disadvantaged সদস্যদের জন্য লাভজনক হয় এবং তাদের সুযোগের সমতা নিশ্চিত করে। এই নীতিটি ‘বৈষম্যের নীতি’ (difference principle) নামে পরিচিত।

রাজনৈতিক দর্শন

রলস শুধুমাত্র ন্যায়বিচারের একটি তত্ত্বই দেননি, তিনি গণতন্ত্র, নাগরিক স্বাধীনতা, এবং রাজনৈতিক বৈধতা নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি একটি ‘overlaps of consensus’ এর ধারণা প্রস্তাব করেন, যেখানে বিভিন্ন যুক্তিবাদী মতাদর্শের মানুষ একটি রাজনৈতিক কাঠামোর উপর सहमत হতে পারে, এমনকি তাদের মৌলিক দার্শনিক ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও।

জন রলসের কাজের প্রভাব

জন রলসের কাজের প্রভাব অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। তাঁর তত্ত্বগুলি অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আইন, এবং সমাজবিজ্ঞান সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রলসের ধারণাগুলি আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্র এবং মানবাধিকার আন্দোলনের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।

এ থিওরি অফ জাস্টিস

‘এ থিওরি অফ জাস্টিস’ (A Theory of Justice) জন রলসের সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত এই গ্রন্থটি বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক রচনাগুলির মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত হয়। এই গ্রন্থে রলস তাঁর ন্যায়বিচারের তত্ত্ব বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন এবং যুক্তি দিয়েছেন যে একটি ন্যায্য সমাজ গঠন করতে হলে সমাজের মৌলিক কাঠামোকে ন্যায়সঙ্গত হতে হবে।

জন রলসের প্রধান কাজ
বছর	কাজের নাম	বিষয়
১৯৭২	এ থিওরি অফ জাস্টিস	ন্যায়বিচার
১৯৭৫	পলিটিক্যাল লিবারেলিজম	রাজনৈতিক উদারতাবাদ
১৯৯৯	ল অব পিপলস	আন্তর্জাতিক সম্পর্ক

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ

‘এ থিওরি অফ জাস্টিস’ ছাড়াও রলস আরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

পলিটিক্যাল লিবারেলিজম (Political Liberalism): এই গ্রন্থে রলস একটি বহুত্ববাদী সমাজে ন্যায়বিচারের ধারণা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে বিভিন্ন ধর্মীয় ও দার্শনিক মতাদর্শের মানুষ একটি রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে সহাবস্থান করতে পারে।
ল অব পিপলস (The Law of Peoples): এই গ্রন্থে রলস আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচারের ধারণা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি একটি আন্তর্জাতিক আইন প্রস্তাব করেছেন যা বিভিন্ন জাতির মধ্যে সহযোগিতা ও শান্তি বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে।

রলসের চিন্তাধারার সমালোচনা

জন রলসের চিন্তাধারা বিভিন্ন মহলে সমালোচিত হয়েছে। সমালোচকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন:

রবার্ট নোজিক (Robert Nozick): নোজিক রলসের ন্যায়বিচারের তত্ত্বের বিরোধিতা করে ‘এ্যানার্কি, স্টেট, অ্যান্ড ইউটোপিয়া’ (Anarchy, State, and Utopia) গ্রন্থে নিজের অধিকার-ভিত্তিক তত্ত্ব উপস্থাপন করেন।
মাইকেল স্যান্ডেল (Michael Sandel): স্যান্ডেল রলসের ‘অজ্ঞতার আবরণ’ ধারণার সমালোচনা করে বলেন যে এটি বাস্তবসম্মত নয় এবং মানুষের প্রকৃত নৈতিক বিচারকে উপেক্ষা করে।
মার্গারেট থ্যাচার (Margaret Thatcher): থ্যাচার রলসের তত্ত্বকে সমাজের ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা হ্রাসের কারণ হিসেবে দেখেন।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে সম্পর্ক

যদিও জন রলসের দর্শন সরাসরি বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে সম্পর্কিত নয়, তবে তাঁর ন্যায়বিচারের ধারণা ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে নৈতিক বিবেচনা এবং ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে সাহায্য করতে পারে। রলসের ‘বৈষম্যের নীতি’ অনুযায়ী, ট্রেডিংয়ের সুযোগগুলি সকলের জন্য সমান হওয়া উচিত এবং দুর্বল বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এছাড়াও, ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা ন্যায়বিচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

এখানে কিছু বিষয় উল্লেখ করা হলো:

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: রলস-এর ন্যায়বিচারের ধারণা অনুযায়ী, ট্রেডিংয়ের ঝুঁকিগুলি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সমানভাবে বণ্টিত হওয়া উচিত।
স্বচ্ছতা: ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম এবং ব্রোকারদের উচিত ট্রেডিংয়ের শর্তাবলী এবং ঝুঁকি সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের বিস্তারিত তথ্য প্রদান করা।
নৈতিক ট্রেডিং: বিনিয়োগকারীদের উচিত নৈতিকভাবে ট্রেডিং করা এবং কোনো প্রকার প্রতারণামূলক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকা।
নিয়ন্ত্রণ: বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর উপর সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত, যাতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে।

কৌশলগত বিশ্লেষণ

রলসের দর্শন অনুযায়ী, বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী কৌশল এবং নৈতিক বিবেচনা গুরুত্বপূর্ণ। স্বল্পমেয়াদী লাভের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ট্রেড না করে, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা উচিত।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ: বাজারের গতিবিধি বোঝার জন্য টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের ব্যবহার করা যেতে পারে।
ভলিউম বিশ্লেষণ: ভলিউম বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাজারের চাহিদা এবং যোগান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ: অর্থনৈতিক সূচক এবং কোম্পানির আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
ঝুঁকি-রিটার্ন অনুপাত: প্রতিটি ট্রেডের ঝুঁকি এবং সম্ভাব্য রিটার্নের অনুপাত মূল্যায়ন করা উচিত।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ব্যবহৃত কিছু কৌশল
কৌশল	বিবরণ	ঝুঁকি
স্ট্র্যাডল	একই স্ট্রাইক প্রাইস এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখের কল এবং পুট অপশন কেনা	উচ্চ
স্ট্র্যাঙ্গল	বিভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইস এবং একই মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখের কল এবং পুট অপশন কেনা	মাঝারি
বাটারফ্লাই স্প্রেড	তিনটি স্ট্রাইক প্রাইসের অপশন ব্যবহার করে একটি নিরপেক্ষ অবস্থান তৈরি করা	নিম্ন
কন্ডর স্প্রেড	চারটি স্ট্রাইক প্রাইসের অপশন ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট পরিসরের মধ্যে লাভ করার চেষ্টা করা	নিম্ন

উপসংহার

জন রলস ছিলেন একজন প্রভাবশালী দার্শনিক, যিনি ন্যায়বিচারের উপর নতুন আলো ফেলেছেন। তাঁর তত্ত্বগুলি রাজনৈতিক ও সামাজিক দর্শনের জগতে গভীর প্রভাব ফেলেছে এবং আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যদিও তাঁর কাজ সরাসরি বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে সম্পর্কিত নয়, তবে তাঁর ন্যায়বিচারের ধারণা ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে নৈতিকতা এবং ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে সহায়ক হতে পারে। রলসের চিন্তাধারা আমাদের একটি ন্যায্য এবং সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য উৎসাহিত করে।

দর্শন ন্যায়বিচার রাজনৈতিক উদারতাবাদ নৈতিকতা গণতন্ত্র রাষ্ট্রবিজ্ঞান অর্থনীতি আইন সমাজবিজ্ঞান কল্যাণ রাষ্ট্র মানবাধিকার রবার্ট নোজিক মাইকেল স্যান্ডেল মার্গারেট থ্যাচার টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ভলিউম বিশ্লেষণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ ঝুঁকি-রিটার্ন অনুপাত বাইনারি অপশন ট্রেডিং

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ