চুলের রাসায়নিক treatment
চুলের রাসায়নিক চিকিৎসা
ভূমিকা
চুলের রাসায়নিক চিকিৎসা বর্তমান যুগে সৌন্দর্য চর্চার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিভিন্ন প্রকার চুল এবং চুলের সমস্যার সমাধানে এই চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই নিবন্ধে, চুলের বিভিন্ন রাসায়নিক চিকিৎসা, তাদের প্রক্রিয়া, সুবিধা, অসুবিধা, এবং সতর্কতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
চুলের রাসায়নিক চিকিৎসার প্রকারভেদ
চুলের রাসায়নিক চিকিৎসা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, যেমন -
- রিবন্ডিং (Rebonding): রিবন্ডিং হলো চুলের গঠন পরিবর্তন করার একটি প্রক্রিয়া। এটি মূলত কোঁকড়া বা ঢেউ খেলানো চুলকে সোজা করে।
- স্মুথনিং (Smoothing): স্মুথনিং রিবন্ডিং-এর চেয়ে হালকা প্রক্রিয়া। এটি চুলকে কিছুটা সোজা করে এবং মসৃণতা আনে।
- কেরাটিন ট্রিটমেন্ট (Keratin Treatment): এই চিকিৎসায় চুলে কেরাটিন প্রোটিন সরবরাহ করা হয়, যা চুলকে মজবুত ও মসৃণ করে।
- হেয়ার কালারিং (Hair Coloring): চুলে বিভিন্ন রং করা বর্তমানে খুবই জনপ্রিয়। এটি চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
- পারমিং (Perming): পারমিং-এর মাধ্যমে সোজা চুলকে কোঁকড়া করা যায়।
- রিল্যাক্সিং (Relaxing): এটি মূলত আফ্রিকান টেক্সচারের চুলের জন্য ব্যবহৃত হয়, যা চুলকে সোজা করে।
- ব্লিচিং (Bleaching): ব্লিচিং চুলের রং হালকা করার জন্য করা হয়।
রিবন্ডিং (Rebonding)
রিবন্ডিং একটি জনপ্রিয় রাসায়নিক প্রক্রিয়া, যা কোঁকড়া চুলকে স্থায়ীভাবে সোজা করে। এই প্রক্রিয়ায়, চুলে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড বা গুয়ানিডিন হাইড্রোক্সাইড ব্যবহার করা হয়, যা চুলের ডিসালফাইড বন্ধন ভেঙে দেয় এবং চুলকে সোজা করে।
প্রক্রিয়া: ১. প্রথমে চুলকে ভালোভাবে শ্যাম্পু করে পরিষ্কার করা হয়। ২. এরপর চুলে রিবন্ডিং লোশন লাগানো হয়। ৩. কিছুক্ষণ পর চুল সোজা করার জন্য স্ট্রেইটনার ব্যবহার করা হয়। ৪. সবশেষে, নিউট্রালাইজার ব্যবহার করে চুলের pH মাত্রা স্বাভাবিক করা হয়।
সুবিধা:
- চুল স্থায়ীভাবে সোজা হয়।
- চুলের স্টাইল করা সহজ হয়।
অসুবিধা:
- চুলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে অ্যালার্জি হতে পারে।
- নিয়মিত যত্ন প্রয়োজন।
স্মুথনিং (Smoothing)
স্মুথনিং রিবন্ডিং-এর মতো স্থায়ী নয়, তবে এটি চুলকে মসৃণ ও সোজা করতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়ায়, চুলে কেরাটিন এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান ব্যবহার করা হয়।
প্রক্রিয়া: ১. চুলকে শ্যাম্পু করে পরিষ্কার করা হয়। ২. চুলে স্মুথনিং ক্রিম লাগানো হয়। ৩. এরপর স্ট্রেইটনার দিয়ে চুলকে মসৃণ করা হয়।
সুবিধা:
- চুলের ক্ষতি কম হয়।
- চুলকে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে।
অসুবিধা:
- প্রভাব স্বল্পস্থায়ী হয়।
- রিবন্ডিং-এর মতো চুল পুরোপুরি সোজা হয় না।
কেরাটিন ট্রিটমেন্ট (Keratin Treatment)
কেরাটিন ট্রিটমেন্ট চুলের জন্য একটি জনপ্রিয় চিকিৎসা, যা চুলকে মজবুত ও মসৃণ করে। এই প্রক্রিয়ায়, চুলে কেরাটিন প্রোটিন সরবরাহ করা হয়, যা চুলের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করে।
প্রক্রিয়া: ১. চুলকে শ্যাম্পু করে পরিষ্কার করা হয়। ২. চুলে কেরাটিন মিশ্রণ লাগানো হয়। ৩. এরপর স্ট্রেইটনার দিয়ে চুলকে সেট করা হয়।
সুবিধা:
- চুলকে মজবুত করে।
- চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
- চুলের ফ্রিজিনেস কমায়।
অসুবিধা:
- অতিরিক্ত কেরাটিন চুলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- কিছু ক্ষেত্রে অ্যালার্জি হতে পারে।
হেয়ার কালারিং (Hair Coloring)
চুলে রং করা একটি সাধারণ প্রক্রিয়া, যা চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। বিভিন্ন ধরনের রং এবং টেকনিক ব্যবহার করে চুলে নতুন লুক দেওয়া যায়।
প্রকারভেদ:
- অ্যামোনিয়া-ভিত্তিক রং: এই রংগুলো স্থায়ী হয় এবং চুলের গভীরে প্রবেশ করে।
- অ্যামোনিয়া-বিহীন রং: এই রংগুলো চুলের জন্য কম ক্ষতিকর।
- সেমি-পার্মানেন্ট রং: এই রংগুলো চুলের উপরিভাগে লেগে থাকে এবং কয়েকবার শ্যাম্পু করার পর উঠে যায়।
- টেম্পোরারি রং: এই রংগুলো শুধুমাত্র এক দিনের জন্য থাকে।
সতর্কতা:
- রং করার আগে অ্যালার্জি পরীক্ষা করা উচিত।
- ভালো মানের রং ব্যবহার করা উচিত।
- চুলে রং করার পর বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত।
পারমিং (Perming)
পারমিং একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে সোজা চুলকে কোঁকড়া করা যায়। এই প্রক্রিয়ায়, চুলে সাইডিয়াম থিওগ্লাইকোলেট ব্যবহার করা হয়, যা চুলের ডিসালফাইড বন্ধন পরিবর্তন করে।
প্রক্রিয়া: ১. চুলকে প্রথমে ছোট ছোট অংশে ভাগ করা হয়। ২. এরপর পারমিং লোশন লাগানো হয়। ৩. চুলের আকার অনুযায়ী রড ব্যবহার করা হয়। ৪. সবশেষে, নিউট্রালাইজার ব্যবহার করে চুলের pH মাত্রা স্বাভাবিক করা হয়।
সুবিধা:
- সোজা চুলকে কোঁকড়া করা যায়।
- চুলের স্টাইল পরিবর্তন করা যায়।
অসুবিধা:
- চুলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে অ্যালার্জি হতে পারে।
রিল্যাক্সিং (Relaxing)
রিল্যাক্সিং মূলত আফ্রিকান টেক্সচারের চুলের জন্য ব্যবহৃত হয়, যা চুলকে সোজা করে। এই প্রক্রিয়ায়, চুলে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড বা অন্যান্য ক্ষারীয় পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
প্রক্রিয়া: ১. চুলকে ভালোভাবে শ্যাম্পু করে পরিষ্কার করা হয়। ২. চুলে রিল্যাক্সিং ক্রিম লাগানো হয়। ৩. কিছুক্ষণ পর চুল সোজা করার জন্য স্ট্রেইটনার ব্যবহার করা হয়। ৪. সবশেষে, নিউট্রালাইজার ব্যবহার করে চুলের pH মাত্রা স্বাভাবিক করা হয়।
সুবিধা:
- চুল সোজা হয় এবং সহজে ম্যানেজ করা যায়।
অসুবিধা:
- চুলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে ত্বকে জ্বালা হতে পারে।
ব্লিচিং (Bleaching)
ব্লিচিং চুলের রং হালকা করার জন্য করা হয়। এই প্রক্রিয়ায়, চুলে হাইড্রোজেন পারক্সাইড ব্যবহার করা হয়, যা চুলের মেলানিন ভেঙে দেয় এবং চুলকে হালকা করে।
প্রক্রিয়া: ১. চুলে ব্লিচিং পাউডার এবং ডেভেলপার মেশানো হয়। ২. এরপর চুলে লাগিয়ে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়। ৩. সবশেষে, চুল ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া হয়।
সুবিধা:
- চুলের রং হালকা করা যায়।
- নতুন রং করার জন্য চুল প্রস্তুত করা যায়।
অসুবিধা:
- চুল শুষ্ক ও ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে।
- চুলের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা কমে যায়।
রাসায়নিক চিকিৎসার পরে চুলের যত্ন
রাসায়নিক চিকিৎসার পরে চুলের বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত। নিচে কিছু টিপস দেওয়া হলো:
- সালফেট-মুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
- কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
- সপ্তাহে একবার হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করুন।
- অতিরিক্ত তাপ থেকে চুলকে বাঁচান।
- নিয়মিত চুল ছাঁটুন।
- সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে চুলকে রক্ষা করুন।
চুলের রাসায়নিক চিকিৎসা গ্রহণের আগে সতর্কতা
- অভিজ্ঞ হেয়ার স্টাইলিস্টের পরামর্শ নিন।
- অ্যালার্জি পরীক্ষা করুন।
- চুলের বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করুন।
- রাসায়নিক ব্যবহারের ঝুঁকি সম্পর্কে জেনে নিন।
- চিকিৎসার পরে সঠিক যত্ন নিন।
উপসংহার
চুলের রাসায়নিক চিকিৎসা চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সহায়ক হতে পারে। তবে, এই চিকিৎসা গ্রহণের আগে সতর্কতা অবলম্বন করা এবং সঠিক যত্ন নেওয়া জরুরি। অন্যথায়, চুলের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
আরও জানতে:
- চুলের স্বাস্থ্য
- চুলের যত্ন
- হেয়ার স্টাইলিং
- চুলের রং
- চুলের বৃদ্ধি
- চুলের খাদ্য
- স্ক্যাল্পের যত্ন
- চুলের তেল
- প্রাকৃতিক চুলের যত্ন
- চুলের মাস্ক
- ড্যামেজড চুলের যত্ন
- শুষ্ক চুলের যত্ন
- তৈলাক্ত চুলের যত্ন
- কোঁকড়া চুলের যত্ন
- চুলের উকুন
- চুলের পড়া
- চুলের চিকিৎসা
- চুলের সাজসজ্জা
- অ্যামোনিয়া-মুক্ত রং
- কেরাটিন কমপ্লেক্স
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ