গল্প বলার ধরণ
গল্প বলার ধরণ
গল্প বলা মানব সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেই প্রাচীন গুহাচিত্র থেকে শুরু করে আধুনিক উপন্যাস এবং চলচ্চিত্র পর্যন্ত, মানুষ সবসময়ই গল্প শুনে এবং বলেছে। একটি ভালো গল্প কেবল বিনোদন দেয় না, এটি আমাদের শেখায়, অনুপ্রাণিত করে এবং আমাদের চারপাশের বিশ্বকে বুঝতে সাহায্য করে। গল্প বলার ধরণ বা ন্যারেটিভ টেকনিক (Narrative technique) হলো সেই পদ্ধতি যা একজন গল্পকার তার গল্প বলার জন্য ব্যবহার করেন। এই নিবন্ধে, আমরা গল্প বলার বিভিন্ন ধরণ, তাদের বৈশিষ্ট্য এবং কিভাবে তারা গল্পের উপর প্রভাব ফেলে তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
গল্প বলার মৌলিক উপাদান
গল্পের মূল উপাদানগুলো হলো:
- চরিত্র (Character): গল্পের চালিকাশক্তি।
- পটভূমি (Setting): যেখানে গল্পটি ঘটে।
- কাহিনী (Plot): ঘটনার ধারাবাহিকতা।
- দ্বন্দ্ব (Conflict): গল্পের মূল সমস্যা।
- থিম (Theme): গল্পের মূল বার্তা।
এই উপাদানগুলোকে কিভাবে উপস্থাপন করা হয়, তার ওপর নির্ভর করে গল্পের ধরণ।
গল্প বলার বিভিন্ন ধরণ
বিভিন্ন ধরনের গল্প বলার ধরণ রয়েছে। নিচে কয়েকটি প্রধান ধরণ আলোচনা করা হলো:
১. প্রথম পুরুষ বর্ণন (First-person narration):
এই ধরনে, গল্পকথক গল্পের একজন চরিত্র হন এবং "আমি" ব্যবহার করে গল্পটি বর্ণনা করেন। এই ধরনের বর্ণনার সুবিধা হলো, এটি পাঠকের সাথে গল্পকথকের একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করে। পাঠকের মনে হতে পারে যেন সে সরাসরি চরিত্রটির অভিজ্ঞতা লাভ করছে। তবে, এর সীমাবদ্ধতা হলো, পাঠক শুধুমাত্র গল্পকথকের দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটনা জানতে পারে।
উদাহরণ: "আমি সেদিন বাজারে গিয়েছিলাম। আকাশটা মেঘলা ছিল, আর ঠান্ডা বাতাস বইছিল।"
প্রথম পুরুষ বর্ণন একটি শক্তিশালী কৌশল, তবে এটি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
২. দ্বিতীয় পুরুষ বর্ণন (Second-person narration):
এই ধরনে, গল্পকথক "তুমি" ব্যবহার করে পাঠককে সরাসরি গল্পের অংশ করে তোলেন। এটি সাধারণত ভিডিও গেম এবং কিছু সাহিত্যিক কাজে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের বর্ণন পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং তাকে গল্পের জগতে নিমজ্জিত করে।
উদাহরণ: "তুমি একটি অন্ধকার ঘরে প্রবেশ করো। তোমার হাতে একটি টর্চলাইট আছে।"
দ্বিতীয় পুরুষ বর্ণন তুলনামূলকভাবে কম ব্যবহৃত হয়, কারণ এটি পাঠকের স্বাধীনতা কমিয়ে দেয়।
৩. তৃতীয় পুরুষ বর্ণন (Third-person narration):
এই ধরনে, গল্পকথক গল্পের বাইরের একজন ব্যক্তি হন এবং "সে", "তিনি", "তারা" ইত্যাদি সর্বনাম ব্যবহার করে গল্পটি বর্ণনা করেন। তৃতীয় পুরুষ বর্ণনকে আবার কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়:
- সর্বজ্ঞানী বর্ণন (Omniscient narration): গল্পকথক সব কিছু জানেন এবং চরিত্রদের চিন্তা ও অনুভূতি সম্পর্কেও অবগত থাকেন।
- সীমাবদ্ধ বর্ণন (Limited narration): গল্পকথক শুধুমাত্র একজন নির্দিষ্ট চরিত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটনা জানেন এবং বর্ণনা করেন।
- নিরপেক্ষ বর্ণন (Objective narration): গল্পকথক শুধুমাত্র ঘটনাগুলো বর্ণনা করেন, চরিত্রদের চিন্তা ও অনুভূতি সম্পর্কে কোনো ধারণা দেন না।
তৃতীয় পুরুষ বর্ণন সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়, কারণ এটি গল্পকারকে বৃহত্তর পরিসর দেয়। সর্বজ্ঞানী বর্ণন গল্পের প্লটকে জটিল করতে সাহায্য করে, যেখানে সীমাবদ্ধ বর্ণন সাসপেন্স তৈরি করে।
৪. প্রবাহমান চেতনা (Stream of consciousness):
এই ধরনে, চরিত্রদের চিন্তা ও অনুভূতির অবিচ্ছিন্ন প্রবাহকে তুলে ধরা হয়, যেখানে ব্যাকরণগত নিয়ম বা যুক্তির চেয়ে আবেগের প্রাধান্য বেশি। এটি সাধারণত আধুনিকতাবাদী সাহিত্যে ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ: "বৃষ্টি পড়ছে... মনে হচ্ছে যেন কেউ ফিসফিস করে কথা বলছে... অতীতের স্মৃতিগুলো ভিড় করে আসছে..."
প্রবাহমান চেতনা একটি জটিল কৌশল, যা পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখতে চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
৫. এপিস্টোলারি (Epistolary):
এই ধরনে, গল্পটি চিঠি, ডায়েরি বা অন্য কোনো ব্যক্তিগত লেখার মাধ্যমে বর্ণিত হয়। এটি পাঠকের কাছে একটি অন্তরঙ্গ এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে।
উদাহরণ: "প্রিয় ডায়েরি, আজ আমি একটি অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছি..."
এপিস্টোলারি কৌশলটি গল্পের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে সাহায্য করে।
৬. ফ্রেম ন্যারেটিভ (Frame narrative):
এই ধরনে, একটি মূল গল্পের মধ্যে অন্য গল্প বা একাধিক গল্প বলা হয়। এটি গল্পের কাঠামোকে জটিল করে তোলে এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটনা দেখার সুযোগ তৈরি করে।
উদাহরণ: "এক বৃদ্ধ নাবিক তার জীবনের গল্প বলতে শুরু করলেন..."
ফ্রেম ন্যারেটিভ গল্পের গভীরতা বৃদ্ধি করে এবং একাধিক থিম অন্বেষণ করার সুযোগ দেয়।
গল্প বলার কৌশল
গল্প বলার ধরণ ছাড়াও, গল্পকাররা বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে তাদের গল্পকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলেন। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কৌশল আলোচনা করা হলো:
- ফ্ল্যাশব্যাক (Flashback): অতীতের ঘটনা বর্ণনা করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
- ফোরশ্যাডোইং (Foreshadowing): ভবিষ্যতের ঘটনা সম্পর্কে ইঙ্গিত দেওয়া।
- সাসপেন্স (Suspense): পাঠকের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করা।
- আয়রনি (Irony): কথার মাধ্যমে ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করা।
- রূপক (Metaphor): একটি বস্তুকে অন্য বস্তুর সাথে তুলনা করা।
- উপমা (Simile): দুটি বস্তুর মধ্যে সাদৃশ্য দেখানো।
- ব্যঙ্গ (Satire): সমাজের ত্রুটিগুলো তুলে ধরার জন্য হাস্যরস ব্যবহার করা।
এই কৌশলগুলো গল্পকে আরও জীবন্ত এবং স্মরণীয় করে তোলে।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে গল্পের সাদৃশ্য
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে গল্প বলার একটি আকর্ষণীয় সাদৃশ্য রয়েছে। একজন সফল ট্রেডারকে একটি গল্প তৈরি করতে হয় – বাজারের একটি সম্ভাব্য গতিবিধি সম্পর্কে একটি ধারণা। এই গল্পটি টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ, ভলিউম বিশ্লেষণ এবং ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ এর উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়।
- বাজারের গতিবিধি (Plot): বাজারের দাম বাড়বে নাকি কমবে, তা হলো গল্পের মূল কাহিনী।
- চার্ট প্যাটার্ন (Characters): ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন, সাপোর্ট এবং রেসিস্টেন্স লেভেলগুলি হলো গল্পের চরিত্র।
- indicators (Setting): মুভিং এভারেজ, আরএসআই, এমএসিডি ইত্যাদি নির্দেশকগুলি বাজারের প্রেক্ষাপট তৈরি করে।
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Conflict): স্টপ-লস এবং টেক-প্রফিট অর্ডারগুলি গল্পের দ্বন্দ্ব তৈরি করে, যা ট্রেডারকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়।
- লাভের সম্ভাবনা (Theme): ট্রেডিংয়ের মূল উদ্দেশ্য হলো লাভ করা, যা গল্পের মূল বার্তা।
একজন ট্রেডারকে অবশ্যই এই উপাদানগুলো বিশ্লেষণ করে একটি বিশ্বাসযোগ্য গল্প তৈরি করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী ট্রেড করতে হবে। ভুল গল্প বা দুর্বল বিশ্লেষণের কারণে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের গুরুত্ব
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ হলো চার্ট এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম ব্যবহার করে বাজারের ভবিষ্যৎ গতিবিধি predicting করার একটি পদ্ধতি। এটি গল্পের প্লট তৈরি করার জন্য অপরিহার্য। বিভিন্ন চার্ট প্যাটার্ন, যেমন হেড অ্যান্ড শোল্ডারস, ডাবল টপ, ডাবল বটম, ইত্যাদি বাজারের সম্ভাব্য পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা দেয়।
ভলিউম বিশ্লেষণের ভূমিকা
ভলিউম বিশ্লেষণ হলো ট্রেডিং ভলিউমের মাধ্যমে বাজারের শক্তি এবং দুর্বলতা পরিমাপ করা। এটি গল্পের চরিত্রগুলির মধ্যেকার সম্পর্ক বুঝতে সাহায্য করে। যদি ভলিউম বৃদ্ধি পায়, তবে এটি একটি শক্তিশালী প্রবণতা নির্দেশ করে, এবং যদি ভলিউম হ্রাস পায়, তবে এটি দুর্বল প্রবণতা নির্দেশ করে।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার তাৎপর্য
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা হলো ট্রেডিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করে ট্রেডাররা তাদের সম্ভাব্য ক্ষতি সীমিত করতে পারে। এটি গল্পের দ্বন্দ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং ট্রেডারকে আর্থিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে।
উপসংহার
গল্প বলার ধরণ এবং কৌশলগুলি একটি গল্পের সাফল্য নির্ধারণ করে। একজন দক্ষ গল্পকার তার শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে এবং তাদের মনে একটি lasting impression তৈরি করতে সক্ষম হন। একইভাবে, একজন সফল বাইনারি অপশন ট্রেডারকে বাজারের গল্প বুঝতে এবং সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে জানতে হয়। গল্প বলার বিভিন্ন উপাদান এবং কৌশল সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে, যে কেউ একটি আকর্ষণীয় এবং প্রভাবশালী গল্প তৈরি করতে পারে – তা সাহিত্যিক রচনা হোক বা আর্থিক বাজারের ট্রেডিং।
আরও জানতে:
- প্লট নির্মাণ
- চরিত্রায়ণ
- সংলাপ
- বর্ণন শৈলী
- দৃষ্টিভঙ্গি
- গল্পের কাঠামো
- উপন্যাস
- ছোট গল্প
- নাটক
- চলচ্চিত্র
- কাব্য
- সাংবাদিকতা
- যোগাযোগ
- ভাষাতত্ত্ব
- সাহিত্য তত্ত্ব
- টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর
- ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট
- Elliott Wave Theory
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
- জাপানি ক্যান্ডেলস্টিক
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
