কোরিলেশন বিশ্লেষণ
কোরিলেশন বিশ্লেষণ
কোরিলেশন বিশ্লেষণ হল পরিসংখ্যান-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি দুটি ভেরিয়েবল বা চলকের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করতে ব্যবহৃত হয়। এই সম্পর্ক ইতিবাচক, নেতিবাচক বা নিরপেক্ষ হতে পারে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে, কোরিলেশন বিশ্লেষণ বিভিন্ন অ্যাসেট-এর দামের মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে এবং সম্ভাব্য ট্রেডিং সুযোগ সনাক্ত করতে সহায়ক হতে পারে।
কোরিলেশন কী?
কোরিলেশন একটি পরিসংখ্যানিক পরিমাপ যা দুটি ভেরিয়েবলের মধ্যে সম্পর্কের শক্তি এবং দিক নির্দেশ করে। কোরিলেশন কোয়েফিসিয়েন্ট (-১ থেকে +১ এর মধ্যে একটি মান) ব্যবহার করে এই সম্পর্ক পরিমাপ করা হয়।
- +১: একটি নিখুঁত ধনাত্মক কোরিলেশন নির্দেশ করে। এর মানে হল যে একটি ভেরিয়েবল বাড়লে অন্যটিও বাড়বে এবং বিপরীতক্রমে।
- -১: একটি নিখুঁত ঋণাত্মক কোরিলেশন নির্দেশ করে। এর মানে হল যে একটি ভেরিয়েবল বাড়লে অন্যটি কমবে এবং বিপরীতক্রমে।
- ০: কোনো কোরিলেশন নেই। এর মানে হল যে দুটি ভেরিয়েবলের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই।
কোরিলেশন বিশ্লেষণের প্রকারভেদ
কোরিলেশন বিশ্লেষণ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যার মধ্যে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. পিয়ারসন কোরিলেশন (Pearson Correlation): এটি দুটি কন্টিনিউয়াস ভেরিয়েবল-এর মধ্যে রৈখিক সম্পর্ক পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়। এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কোরিলেশন পদ্ধতি। পরিসংখ্যানিক তাৎপর্য পরীক্ষার মাধ্যমে এর নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করা যায়।
২. স্পিয়ারম্যান র্যাঙ্ক কোরিলেশন (Spearman Rank Correlation): এটি দুটি ভেরিয়েবলের মধ্যেmonotonic সম্পর্ক পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়। monotonic সম্পর্ক মানে হল যে একটি ভেরিয়েবল বাড়লে অন্যটি হয় বাড়বে অথবা কমবে, তবে রৈখিকভাবে নাও বাড়তে বা কমতে পারে।
৩. কেন্ডলের টাউ কোরিলেশন (Kendall’s Tau Correlation): এটি স্পিয়ারম্যান র্যাঙ্ক কোরিলেশনের মতোই, তবে এটি ছোট ডেটা সেটের জন্য বেশি উপযুক্ত।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ কোরিলেশন বিশ্লেষণের ব্যবহার
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ কোরিলেশন বিশ্লেষণ বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে:
১. অ্যাসেট নির্বাচন: বিভিন্ন অ্যাসেটের মধ্যে কোরিলেশন বিশ্লেষণ করে, ট্রেডাররা তাদের পোর্টফোলিও-কে বৈচিত্র্যময় করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি দুটি অ্যাসেটের মধ্যে একটি শক্তিশালী নেতিবাচক কোরিলেশন থাকে, তবে একটি অ্যাসেটের দাম কমলে অন্যটির দাম বাড়তে পারে।
২. ট্রেডিং সংকেত তৈরি: কোরিলেশন বিশ্লেষণের মাধ্যমে ট্রেডিং সংকেত তৈরি করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি দুটি অ্যাসেটের মধ্যে একটি শক্তিশালী ইতিবাচক কোরিলেশন থাকে, তবে একটি অ্যাসেটের দাম বাড়তে শুরু করলে অন্যটির দামও বাড়তে পারে বলে আশা করা যায়।
৩. ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: কোরিলেশন বিশ্লেষণ ট্রেডারদের তাদের ঝুঁকির মাত্রা মূল্যায়ন করতে সাহায্য করতে পারে। যদি দুটি অ্যাসেটের মধ্যে একটি শক্তিশালী কোরিলেশন থাকে, তবে একটি অ্যাসেটের দামের পরিবর্তন অন্য অ্যাসেটের দামকেও প্রভাবিত করতে পারে।
কোরিলেশন এবং টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ-এর সাথে কোরিলেশন বিশ্লেষণকে একত্রিত করে আরও শক্তিশালী ট্রেডিং কৌশল তৈরি করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো অ্যাসেটের দাম একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্ন অনুসরণ করে এবং অন্য একটি অ্যাসেটের সাথে এর একটি শক্তিশালী কোরিলেশন থাকে, তবে এই দুটি তথ্যকে একত্রিত করে ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। চার্ট প্যাটার্ন এবং indicators এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
কোরিলেশন এবং ভলিউম বিশ্লেষণ
ভলিউম বিশ্লেষণও কোরিলেশন বিশ্লেষণের সাথে সম্পর্কিত। যদি দুটি অ্যাসেটের মধ্যে কোরিলেশন থাকে, তবে একটি অ্যাসেটের ভলিউমে পরিবর্তন অন্য অ্যাসেটের ভলিউমকেও প্রভাবিত করতে পারে। ভলিউম ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে এই সম্পর্ক বোঝা যেতে পারে।
কোরিলেশন বিশ্লেষণের উদাহরণ
ধরা যাক, আপনি দুটি স্টক, যেমন - Apple (AAPL) এবং Microsoft (MSFT)-এর মধ্যে সম্পর্ক জানতে চান। আপনি গত এক বছরের দৈনিক দামের ডেটা সংগ্রহ করলেন এবং কোরিলেশন বিশ্লেষণ চালালেন। যদি কোরিলেশন কোয়েফিসিয়েন্ট ০.৮ হয়, তবে এর মানে হল যে এই দুটি স্টকের দামের মধ্যে একটি শক্তিশালী ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে। এর মানে হল যে Apple-এর দাম বাড়লে Microsoft-এর দামও বাড়ার সম্ভাবনা বেশি।
| সম্পর্কের প্রকৃতি | |||||||||||||||||
| নিখুঁত ধনাত্মক | শক্তিশালী ধনাত্মক | মাঝারি ধনাত্মক | দুর্বল ধনাত্মক | কোনো সম্পর্ক নেই | দুর্বল ঋণাত্মক | মাঝারি ঋণাত্মক | শক্তিশালী ঋণাত্মক | নিখুঁত ঋণাত্মক |
কোরিলেশন বিশ্লেষণের সীমাবদ্ধতা
কোরিলেশন বিশ্লেষণ কিছু সীমাবদ্ধতা সাপেক্ষ।
১. কার্যকারণ সম্পর্ক নয়: কোরিলেশন মানে এই নয় যে একটি ভেরিয়েবল অন্য ভেরিয়েবলের কারণ। দুটি ভেরিয়েবলের মধ্যে কোরিলেশন থাকতে পারে, কিন্তু এর মানে এই নয় যে একটি অন্যটিকে প্রভাবিত করে।
২. ডেটার গুণমান: কোরিলেশন বিশ্লেষণের ফলাফল ডেটার গুণমানের উপর নির্ভরশীল। যদি ডেটা ভুল বা অসম্পূর্ণ হয়, তবে কোরিলেশন বিশ্লেষণের ফলাফল ভুল হতে পারে।
৩. লুকানো ভেরিয়েবল: দুটি ভেরিয়েবলের মধ্যে কোরিলেশন থাকতে পারে, কিন্তু এই কোরিলেশনের কারণ অন্য কোনো লুকানো ভেরিয়েবল হতে পারে।
কোরিলেশন বিশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম
কোরিলেশন বিশ্লেষণের জন্য বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার এবং সরঞ্জাম উপলব্ধ রয়েছে, যেমন:
- Microsoft Excel
- Python (Pandas, NumPy)
- R
- SPSS
- SAS
উন্নত কোরিলেশন কৌশল
১. রোলিং কোরিলেশন (Rolling Correlation): সময়ের সাথে সাথে কোরিলেশনের পরিবর্তন ট্র্যাক করতে এটি ব্যবহার করা হয়।
২. পার্শিয়াল কোরিলেশন (Partial Correlation): দুটি ভেরিয়েবলের মধ্যে সম্পর্ক পরিমাপ করার সময় তৃতীয় ভেরিয়েবলের প্রভাব অপসারণ করতে ব্যবহৃত হয়।
৩. ডাইনামিক টাইম ওয়ারপিং (Dynamic Time Warping): দুটি টাইম সিরিজের মধ্যে মিল খুঁজে বের করতে ব্যবহৃত হয়, এমনকি যদি তারা সময়মতো ভিন্ন গতিতে পরিবর্তিত হয়।
ঝুঁকি সতর্কতা
- কোরিলেশন একটি ঐতিহাসিক পরিমাপ, এবং ভবিষ্যতের সম্পর্ক ভিন্ন হতে পারে।
- উচ্চ কোরিলেশন মানে এই নয় যে ট্রেড লাভজনক হবে।
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করুন।
- কোরিলেশন বিশ্লেষণের উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেবেন না। অন্যান্য বিশ্লেষণ পদ্ধতি-ও ব্যবহার করুন।
উপসংহার
কোরিলেশন বিশ্লেষণ বিনিয়োগ এবং ট্রেডিং সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য একটি মূল্যবান হাতিয়ার। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে, এটি বিভিন্ন অ্যাসেটের মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে, ট্রেডিং সংকেত তৈরি করতে এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য সহায়ক হতে পারে। তবে, কোরিলেশন বিশ্লেষণের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং অন্যান্য বিশ্লেষণ পদ্ধতির সাথে এটি ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ এবং সেন্টিমেন্ট বিশ্লেষণ এর সাথে কোরিলেশন বিশ্লেষণ একটি শক্তিশালী ট্রেডিং কৌশল তৈরি করতে পারে।
আরও জানতে:
- পরিসংখ্যান
- ভেরিয়েবল
- বাইনারি অপশন ট্রেডিং
- পোর্টফোলিও
- টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
- ভলিউম বিশ্লেষণ
- চার্ট প্যাটার্ন
- Indicators
- পরিসংখ্যানিক তাৎপর্য
- কন্টিনিউয়াস ভেরিয়েবল
- সফটওয়্যার
- বিনিয়োগ
- ট্রেডিং
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ
- সেন্টিমেন্ট বিশ্লেষণ
- রোলিং কোরিলেশন
- পার্শিয়াল কোরিলেশন
- ডাইনামিক টাইম ওয়ারপিং
- স্টপ-লস অর্ডার
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
