কোরাস

কোরাস : সংজ্ঞা, প্রকারভেদ এবং প্রয়োগ

কোরাস কি?

কোরাস (Chorus) হলো সঙ্গীতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি একটি গান বা সঙ্গীতের অংশে একাধিক কণ্ঠের সমন্বয়ে গঠিত হয়, যেখানে বিভিন্ন কণ্ঠ একই সময়ে ভিন্ন ভিন্ন সুর বা কথা উচ্চারণ করে। কোরাস সাধারণত গানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং স্মরণীয় অংশ হয়ে থাকে। এটি গানের মূল বার্তা বহন করে এবং শ্রোতাদের মধ্যে একটি শক্তিশালী আবেগ তৈরি করে। কোরাসের ব্যবহার গানের সুরকে আরও সমৃদ্ধ করে এবং একটি বিশেষ অনুভূতি যোগ করে।

কোরাসের মূল ধারণা হলো একাধিক কণ্ঠের সামঞ্জস্যপূর্ণ মিশ্রণ। এই মিশ্রণটি একটি গানকে আরও শক্তিশালী এবং আকর্ষণীয় করে তোলে। কোরাস বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন হোমফোনি, পলিফোনি এবং এন্টিফোনাল কোরাস। প্রতিটি ধরনের কোরাসের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা গানের ভিন্ন ভিন্ন অংশে ব্যবহৃত হয়।

সুর (সংগীত) এবং তাল (সংগীত)-এর সাথে কোরাসের একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। একটি সুন্দর কোরাস তৈরি করার জন্য সুর এবং তালের সঠিক ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি।

কোরাসের প্রকারভেদ

কোরাস বিভিন্ন প্রকার হতে পারে, যা গানের ধরণ এবং সুরের ওপর নির্ভর করে। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো:

হোমোফোনিক কোরাস:* এই ধরনের কোরাসে, সমস্ত কণ্ঠ একই সময়ে একই সুর অনুসরণ করে। এটি সরল এবং সহজে অনুসরণযোগ্য একটি কোরাস। সাধারণত, জাতীয় সঙ্গীত বা ধর্মীয় সংগীতে এই ধরনের কোরাস বেশি দেখা যায়।

পলিফোনিক কোরাস:* পলিফোনিক কোরাসে, প্রতিটি কণ্ঠ স্বাধীনভাবে ভিন্ন ভিন্ন সুর অনুসরণ করে, কিন্তু তারা একে অপরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে। এই ধরনের কোরাস জটিল এবং উন্নত সঙ্গীতের একটি অংশ। কন্ট্রাপয়েন্ট হলো পলিফোনিক কোরাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

এন্টিফোনাল কোরাস:* এই ধরনের কোরাসে, দুটি ভিন্ন দল পর্যায়ক্রমে গান গেয়ে থাকে। এটি সাধারণত ধর্মীয় সঙ্গীত এবং স্তোত্রগুলিতে দেখা যায়।

ক্যানন:* ক্যানন হলো এক ধরনের পলিফোনিক কোরাস, যেখানে একটি সুর অন্য সুরের অনুকরণ করে। এটি একটি জটিল এবং আকর্ষণীয় সঙ্গীত শৈলী।

রাউন্ড:* রাউন্ড হলো ক্যাননের মতো, তবে এটি একাধিকবার পুনরাবৃত্তি করা যায়।

কোরাসের গঠন

একটি কোরাসের গঠন গানের সুর, তাল এবং কণ্ঠের বিন্যাসের উপর নির্ভর করে। সাধারণভাবে, একটি কোরাসের কিছু মৌলিক উপাদান থাকে:

লিড ভোকাল:* এটি প্রধান কণ্ঠ, যা গানের মূল সুর বহন করে।
ব্যাকগ্রাউন্ড ভোকাল:* এটি লিড ভোকালকে সমর্থন করে এবং সুরের গভীরতা বৃদ্ধি করে।
হারমনি:* এটি বিভিন্ন কণ্ঠের মধ্যে সুরের সমন্বয় তৈরি করে।
রিদম:* এটি গানের তাল এবং লয় নির্ধারণ করে।

একটি ভাল কোরাস গঠনের জন্য এই উপাদানগুলোর সঠিক সমন্বয় প্রয়োজন। সঙ্গীতের ধারা এবং মেলোডি কোরাসের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কোরাসের ব্যবহার

কোরাসের ব্যবহার বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীতে দেখা যায়। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ব্যবহার উল্লেখ করা হলো:

পপ সঙ্গীত:* পপ সঙ্গীতে কোরাস গানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত গানের মূল বার্তা বহন করে এবং শ্রোতাদের মধ্যে সহজে গেয়ে ওঠার মতো একটি অংশ তৈরি করে।

রক সঙ্গীত:* রক সঙ্গীতে কোরাস শক্তিশালী এবং আবেগপূর্ণ সুর তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। এটি গানের গতি এবং উত্তেজনা বৃদ্ধি করে।

জ্যাজ সঙ্গীত:* জ্যাজ সঙ্গীতে কোরাস জটিল এবং উদ্ভাবনী সুর তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। এটি গানের improvisational দিকটিকে আরও উন্নত করে।

শাস্ত্রীয় সঙ্গীত:* শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে কোরাস বিশাল এবং ঐশ্বরিক সুর তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। এটি গানের গভীরতা এবং আবেগ বৃদ্ধি করে।

ধর্মীয় সঙ্গীত:* ধর্মীয় সঙ্গীতে কোরাস ভক্তি এবং আধ্যাত্মিকতা প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয়। এটি গানের পবিত্রতা এবং মহিমা বৃদ্ধি করে।

কোরাসের ব্যবহার গানের ধরণ এবং শৈলীর উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। তবে, এর মূল উদ্দেশ্য হলো গানকে আরও সুন্দর, আকর্ষণীয় এবং স্মরণীয় করে তোলা। অর্কেস্ট্রেশন এবং কম্পোজিশন কোরাসের সঠিক ব্যবহারের জন্য অত্যাবশ্যকীয়।

কোরাসের ইতিহাস

কোরাসের ইতিহাস প্রাচীন গ্রিস থেকে শুরু হয়। প্রাচীন গ্রিক নাটকে কোরাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত, যেখানে তারা গান এবং নৃত্যের মাধ্যমে গল্প বর্ণনা করত। মধ্যযুগে, কোরাস গির্জার সঙ্গীতে ব্যবহৃত হতো, যেখানে এটি ধর্মীয় স্তোত্র এবং ভজনগুলির অংশ ছিল। রেনেসাঁসের সময়, কোরাস আরও জটিল এবং উন্নত সুরের সাথে যুক্ত হয়। বারোক যুগে, কোরাস অপেরা এবং ক্যান্টাটাসগুলিতে ব্যবহৃত হতো। আধুনিক যুগে, কোরাস বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীতে ব্যবহৃত হয়, যেমন পপ, রক, জ্যাজ এবং শাস্ত্রীয় সঙ্গীত।

কোরাসের বিবর্তন সঙ্গীতের ইতিহাসের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে। সঙ্গীতের ইতিহাস এবং পাশ্চাত্য সঙ্গীতের বিবর্তন-এর ধারা অনুযায়ী কোরাসের ব্যবহার পরিবর্তিত হয়েছে।

কোরাস এবং প্রযুক্তি

আধুনিক প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে কোরাসের ব্যবহার এবং উৎপাদনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখন, ডিজিটাল অডিও ওয়ার্কস্টেশন (DAW) এবং অন্যান্য সঙ্গীত সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে কোরাস তৈরি করা অনেক সহজ হয়েছে। এই প্রযুক্তিগুলি ব্যবহার করে, সঙ্গীত প্রযোজকরা বিভিন্ন কণ্ঠের সুর এবং হারমনি তৈরি করতে পারেন এবং সেগুলোকে নিখুঁতভাবে মিশ্রিত করতে পারেন।

অটো-টিউন এবং ভোকাল ইফেক্টস-এর মতো প্রযুক্তিগুলি কোরাসের মান উন্নত করতে সাহায্য করে। এই প্রযুক্তিগুলি কণ্ঠের ত্রুটিগুলি সংশোধন করতে এবং সুরের স্পষ্টতা বাড়াতে সহায়ক। ডিজিটাল অডিও ওয়ার্কস্টেশন এবং মিউজিক প্রোডাকশন বর্তমানে কোরাস তৈরির গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

প্রকারভেদ	বৈশিষ্ট্য	ব্যবহার	একই সুর, সরল গঠন \| জাতীয় সঙ্গীত, ধর্মীয় সঙ্গীত	ভিন্ন সুর, জটিল গঠন \| উন্নত সঙ্গীত, ক্লাসিক্যাল সঙ্গীত	পর্যায়ক্রমিক গান \| ধর্মীয় সঙ্গীত, স্তোত্র	সুরের অনুকরণ \| পলিফোনিক সঙ্গীত	পুনরাবৃত্তিমূলক সুর \| লোকসংগীত, শিশুতোষ সঙ্গীত

কোরাস প্রশিক্ষণের টিপস

একটি সুন্দর কোরাস তৈরি করার জন্য সঠিক প্রশিক্ষণ এবং অনুশীলন প্রয়োজন। নিচে কিছু টিপস দেওয়া হলো:

ভোকাল ওয়ার্ম-আপ:* গান গাওয়ার আগে ভোকাল ওয়ার্ম-আপ করা জরুরি। এটি কণ্ঠের পেশীগুলিকে প্রস্তুত করে এবং সুরের স্পষ্টতা বাড়ায়।

শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ:* সঠিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ কোরাসের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কণ্ঠের স্থিতিশীলতা এবং সুরের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

হারমনি অনুশীলন:* বিভিন্ন কণ্ঠের মধ্যে হারমনি তৈরি করার জন্য নিয়মিত অনুশীলন করা উচিত। এটি সুরের সমন্বয় এবং ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক।

শোনা এবং অনুকরণ:* অন্যান্য কোরাসের গান শোনা এবং তাদের কৌশলগুলি অনুকরণ করা একটি ভাল উপায়। এটি নতুন ধারণা এবং শৈলী শিখতে সাহায্য করে।

নিয়মিত অনুশীলন:* কোরাসের সদস্যদের নিয়মিত অনুশীলন করা উচিত, যাতে তারা একে অপরের সাথে ভালোভাবে সমন্বয় করতে পারে।

কণ্ঠ প্রশিক্ষণ এবং সঙ্গীতের শিক্ষা কোরাস প্রশিক্ষণের জন্য অপরিহার্য।

বিখ্যাত কোরাস উদাহরণ

বোহেমিয়ান র‍্যাপসোডি (Bohemian Rhapsody) - কুইন:* এই গানের কোরাস অংশটি অত্যন্ত বিখ্যাত এবং শ্রোতাদের মধ্যে আজও জনপ্রিয়।
হ্যালেলুইয়া (Hallelujah) - লিওনার্ড কোহেন:* এই গানের কোরাস অংশটি আবেগপূর্ণ এবং আধ্যাত্মিক।
উই আর দ্য চ্যাম্পিয়নস (We Are the Champions) - কুইন:* এই গানের কোরাস অংশটি বিজয় এবং সাফল্যের প্রতীক।
বিটলসের "লেট ইট বি" (Let It Be) :* এই গানের কোরাস শান্তি ও সান্ত্বনার বার্তা দেয়।

এই গানগুলো কোরাসের শক্তিশালী ব্যবহার এবং জনপ্রিয়তার উদাহরণ। পপ গানের ইতিহাস এবং রক গানের ইতিহাস-এ এই গানগুলোর অবদান অনস্বীকার্য।

উপসংহার

কোরাস সঙ্গীতের একটি অপরিহার্য অংশ, যা গানের সুরকে সমৃদ্ধ করে এবং শ্রোতাদের মধ্যে আবেগ তৈরি করে। বিভিন্ন প্রকার কোরাস বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীতে ব্যবহৃত হয় এবং প্রতিটি ধরনের কোরাসের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে কোরাসের ব্যবহার এবং উৎপাদনে অনেক পরিবর্তন এসেছে, যা সঙ্গীতকে আরও উন্নত এবং আকর্ষণীয় করে তুলেছে। কোরাস প্রশিক্ষণ এবং সঠিক অনুশীলনের মাধ্যমে একটি সুন্দর এবং শক্তিশালী কোরাস তৈরি করা সম্ভব।

সঙ্গীতের তত্ত্ব এবং সুর সৃষ্টি সম্পর্কে আরও জ্ঞান অর্জন করে কোরাসের ব্যবহার আরও উন্নত করা যেতে পারে।

আরও দেখুন

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ