কৃষি ভর্তুকি

From binaryoption
Jump to navigation Jump to search
Баннер1

কৃষি ভর্তুকি

ভূমিকা: কৃষি ভর্তুকি হলো সরকার কর্তৃক কৃষকদের প্রদত্ত আর্থিক সহায়তা। এই সহায়তা বিভিন্ন রূপে হতে পারে, যেমন - নগদ প্রদান, ঋণ মওকুফ, কম সুদে ঋণ, উৎপাদন উপকরণে ছাড়, অথবা কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কৃষি ভর্তুকি একটি বহুল প্রচলিত ব্যবস্থা। এর মূল উদ্দেশ্য হলো কৃষকদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কৃষকদের আয় স্থিতিশীল রাখা এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখা। তবে, কৃষি ভর্তুকির কার্যকারিতা এবং প্রভাব নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক রয়েছে।

কৃষি ভর্তুকির প্রকারভেদ: কৃষি ভর্তুকি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যা দেশের অর্থনৈতিক ও কৃষি পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রকার আলোচনা করা হলো:

১. প্রত্যক্ষ ভর্তুকি: এই ধরনের ভর্তুকিতে সরকার সরাসরি কৃষকদের নগদ অর্থ প্রদান করে। এটি সাধারণত ফসল উৎপাদন, বীজ ক্রয়, সার ব্যবহার, অথবা কীটনাশক কেনার জন্য দেওয়া হয়। সরাসরি আয় সহায়তা এর একটি উদাহরণ হলো প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি যোজনা।

২. পরোক্ষ ভর্তুকি: এই ক্ষেত্রে সরকার কৃষকদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে, যা তাদের উৎপাদন খরচ কমাতে সাহায্য করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো -

   *   ঋণ ভর্তুকি: কৃষকদের কম সুদে ঋণ প্রদান করা হয়। কৃষি ঋণ সাধারণত বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রদান করা হয়, যেখানে সরকার সুদের হার ভর্তুকি দেয়।
   *   সার ভর্তুকি: সার এবং অন্যান্য কৃষি উপকরণ যেমন বীজ, কীটনাশক ইত্যাদির দাম কমিয়ে দেওয়া হয়।
   *   বিদ্যুৎ ভর্তুকি: সেচ পাম্পের জন্য বিদ্যুৎ বিলের উপর ভর্তুকি প্রদান করা হয়।
   *   সেচ ভর্তুকি: সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার সহায়তা প্রদান করে।

৩. মূল্য সমর্থন (Price Support): সরকার কোনো নির্দিষ্ট ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) নির্ধারণ করে এবং সেই দামে ফসল ক্রয় করে। এর ফলে কৃষকরা তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায়। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য কৃষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা ব্যবস্থা।

৪. উৎপাদন ভিত্তিক ভর্তুকি: এই ধরনের ভর্তুকি কৃষকদের উৎপাদনের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, যে কৃষক বেশি উৎপাদন করতে পারবে, সে বেশি ভর্তুকি পাবে।

৫. আয় ভিত্তিক ভর্তুকি: এখানে কৃষকের মোট আয়ের উপর ভিত্তি করে ভর্তুকির পরিমাণ নির্ধারিত হয়।

৬. পরিবেশ-বান্ধব কৃষি ভর্তুকি: পরিবেশের সুরক্ষার জন্য জৈব চাষ, শস্য পর্যায়, এবং জল ব্যবস্থাপনার মতো পরিবেশ-বান্ধব কৃষি পদ্ধতির প্রচারে সরকার ভর্তুকি প্রদান করে। জৈব কৃষি বর্তমানে একটি জনপ্রিয় ধারণা।

কৃষি ভর্তুকির অর্থনৈতিক প্রভাব: কৃষি ভর্তুকির অর্থনৈতিক প্রভাব ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিকেই হতে পারে।

ইতিবাচক প্রভাব:

  • উৎপাদন বৃদ্ধি: ভর্তুকির কারণে কৃষকরা উন্নতমানের বীজ, সার, এবং অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করতে উৎসাহিত হয়, যা ফসলের উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক।
  • খাদ্য নিরাপত্তা: উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় এবং খাদ্য আমদানি হ্রাস পায়। খাদ্য নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বিষয়।
  • কৃষকের আয় বৃদ্ধি: ন্যায্য মূল্য এবং উৎপাদন খরচের হ্রাস কৃষকের আয় বাড়াতে সাহায্য করে।
  • গ্রামীণ অর্থনীতিতে উন্নতি: কৃষকদের আয় বাড়লে গ্রামীণ অর্থনীতি সচল থাকে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।
  • দারিদ্র্য হ্রাস: কৃষি ভর্তুকি দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হতে পারে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য।

নেতিবাচক প্রভাব:

  • বাজার বিকৃতি: ভর্তুকির কারণে বাজারের স্বাভাবিক চাহিদা ও যোগান ব্যবস্থা ব্যাহত হতে পারে।
  • সম্পদের অপচয়: অতিরিক্ত ভর্তুকি কৃষকদের মধ্যে অপচয় প্রবণতা তৈরি করতে পারে।
  • বৈষম্য সৃষ্টি: ভর্তুকি বণ্টনে বৈষম্য দেখা গেলে কিছু কৃষক বেশি সুবিধা পেতে পারে, আবার কেউ বঞ্চিত হতে পারে।
  • সরকারি বাজেট বৃদ্ধি: কৃষি ভর্তুকির জন্য প্রচুর সরকারি অর্থের প্রয়োজন হয়, যা অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
  • আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাধা: ভর্তুকির কারণে উৎপাদিত পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক হতে পারে না, যা রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত করে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এর ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

কৃষি ভর্তুকির সামাজিক প্রভাব: কৃষি ভর্তুকির সামাজিক প্রভাবগুলিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

  • কর্মসংস্থান সৃষ্টি: কৃষি খাতে বিনিয়োগ বাড়লে গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।
  • জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন: কৃষকদের আয় বাড়লে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
  • শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি: কৃষকদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হলে তাদের সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ বাড়ে।
  • স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ বৃদ্ধি: উন্নত আর্থিক অবস্থার কারণে কৃষকরা স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়।
  • সামাজিক স্থিতিশীলতা: কৃষি ভর্তুকি গ্রামীণ সমাজে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক।

বিভিন্ন দেশে কৃষি ভর্তুকির উদাহরণ: বিভিন্ন দেশে কৃষি ভর্তুকির নীতি ভিন্ন। নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো:

  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম কৃষি ভর্তুকি প্রদানকারী দেশ। এখানে ভুট্টা, সয়াবিন, গম এবং চালের মতো ফসলের উপর বেশি ভর্তুকি দেওয়া হয়।
  • ইউরোপীয় ইউনিয়ন: ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে কৃষকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভর্তুকি রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সরাসরি আয় সহায়তা, পরিবেশ-বান্ধব কৃষি ভর্তুকি এবং গ্রামীণ উন্নয়ন সহায়তা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৃষি নীতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
  • চীন: চীন সরকার কৃষকদের জন্য বীজ, সার এবং অন্যান্য কৃষি উপকরণের উপর ভর্তুকি প্রদান করে। এছাড়াও, তারা কৃষিপণ্য ক্রয় করে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করে।
  • ভারত: ভারতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার উভয়ই কৃষকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভর্তুকি প্রদান করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো - প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি যোজনা, প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিঞ্চাই যোজনা, এবং রাসায়নিক সার ভর্তুকি। ভারতের কৃষি নীতি সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে।

কৃষি ভর্তুকি এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO): বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) কৃষি ভর্তুকি নিয়ে বিভিন্ন নিয়মকানুন তৈরি করেছে। WTO-এর মতে, কৃষি ভর্তুকি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তাই, সদস্য দেশগুলোকে ভর্তুকি প্রদানের ক্ষেত্রে কিছু বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হয়। WTO ভর্তুকিগুলোকে তিনটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করেছে:

১. রেড বক্স (Red Box): এই শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত ভর্তুকিগুলো নিষিদ্ধ, কারণ এগুলো সরাসরি উৎপাদনকে প্রভাবিত করে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করে। ২. অ্যাম্বার বক্স (Amber Box): এই শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত ভর্তুকিগুলো উৎপাদন এবং বাণিজ্যের উপর কিছুটা প্রভাব ফেলে, তবে এগুলো WTO-এর নিয়ম অনুযায়ী সীমিত পরিমাণে প্রদান করা যেতে পারে। ৩. গ্রিন বক্স (Green Box): এই শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত ভর্তুকিগুলো পরিবেশ সুরক্ষার মতো বিষয়ে প্রদান করা হয় এবং এগুলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে তেমন কোনো বাধা সৃষ্টি করে না। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা কৃষি ভর্তুকি নিয়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতায় আসার চেষ্টা করে।

ভর্তুকি প্রদানের কৌশল: কৃষি ভর্তুকি প্রদানের ক্ষেত্রে কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে, যা এর কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়ক হবে:

  • সঠিক কৃষক নির্বাচন: ভর্তুকি প্রদানের ক্ষেত্রে প্রকৃত কৃষকদের চিহ্নিত করা এবং তাদের কাছে সহায়তা পৌঁছানো নিশ্চিত করা উচিত।
  • ভর্তুকির পরিমাণ নির্ধারণ: ফসলের ধরণ, উৎপাদন খরচ এবং বাজারের দাম বিবেচনা করে ভর্তুকির পরিমাণ নির্ধারণ করা উচিত।
  • সময়োপযোগী বিতরণ: কৃষকদের সময়মতো ভর্তুকি প্রদান করা উচিত, যাতে তারা সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় উপকরণ ক্রয় করতে পারে।
  • পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন: ভর্তুকি প্রদানের পর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করা উচিত, যাতে এর প্রভাব সম্পর্কে জানা যায় এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন করা যায়।
  • প্রযুক্তি ব্যবহার: ভর্তুকি বিতরণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত, যেমন - সরাসরি ব্যাংক ট্রান্সফার (DBT)। সরাসরি ব্যাংক ট্রান্সফার একটি স্বচ্ছ এবং কার্যকর পদ্ধতি।

ভবিষ্যৎ প্রবণতা: কৃষি ভর্তুকির ভবিষ্যৎ বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন কৃষি ভর্তুকির নীতিকে প্রভাবিত করবে। ভবিষ্যতে, পরিবেশ-বান্ধব কৃষি এবং টেকসই কৃষি পদ্ধতির উপর বেশি জোর দেওয়া হতে পারে। এছাড়াও, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম এমন ফসলের উৎপাদনে ভর্তুকি বাড়ানো হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন কৃষি খাতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

উপসংহার: কৃষি ভর্তুকি একটি জটিল বিষয়। এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিকই রয়েছে। ভর্তুকির সঠিক ব্যবহার কৃষকদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখতে সহায়ক হতে পারে। তবে, ভর্তুকি প্রদানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করা জরুরি। অন্যথায়, এটি সম্পদের অপচয় এবং বাজার বিকৃতির কারণ হতে পারে।

আরও জানতে:

এই নিবন্ধটি কৃষি ভর্তুকি সম্পর্কে একটি বিস্তারিত ধারণা প্রদান করে। আশা করি, এটি পাঠক এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক হবে।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ

Баннер