কর্সেরা

কর্সেরা: অনলাইন শিক্ষার একটি বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্ম

ভূমিকা

কর্সেরা (Coursera) একটি বিশ্বখ্যাত অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম। এটি বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কোর্স সরবরাহ করে থাকে। গণিত, বিজ্ঞান, কম্পিউটার বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা, মানবিক এবং আরও অনেক বিষয়ে এখানে বিভিন্ন কোর্স उपलब्ध। এই প্ল্যাটফর্মটি বিশেষভাবে তাদের জন্য উপযোগী, যারা নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে চান অথবা নতুন কিছু শিখতে আগ্রহী। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের মতো জটিল বিষয়গুলো বুঝতে এবং দক্ষতা অর্জনের জন্য উপযুক্ত শিক্ষার বিকল্প হিসেবে কোর্সেরা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হতে পারে। এই নিবন্ধে, কোর্সেরার বিভিন্ন দিক, এর কোর্সসমূহ, সুবিধা, অসুবিধা এবং কিভাবে এটি ব্যবহার করতে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

কর্সেরার ইতিহাস

কর্সেরা ২০১২ সালে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অ্যান্ড্রু এনজি এবং ড্যানিয়েল ইয়ি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল, বিশ্বের যেকোনো স্থানে বসে যাতে শিক্ষার্থীরা উন্নত মানের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। প্রথম দিকে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির কিছু কোর্স নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও, খুব দ্রুতই এটি অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়। বর্তমানে, কোর্সেরা ১৫০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ৪০০০-এর বেশি কোর্স সরবরাহ করছে।

কর্সেরার কোর্সসমূহ

কর্সেরা বিভিন্ন ধরনের কোর্স প্রদান করে, যা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করে। কোর্সগুলোকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়:

১. কোর্স (Courses): এগুলি সাধারণত একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় এবং কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত চলতে পারে। প্রতিটি কোর্সে ভিডিও লেকচার, পঠন সামগ্রী, কুইজ এবং অ্যাসাইনমেন্ট থাকে।

২. স্পেশালাইজেশন (Specializations): এটি একাধিক কোর্সের একটি সিরিজ, যা একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করে। স্পেশালাইজেশনগুলো সাধারণত কয়েক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় নেয়।

৩. ডিগ্রি (Degrees): কোর্সেরা কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথভাবে অনলাইন ডিগ্রি প্রোগ্রাম সরবরাহ করে। এই প্রোগ্রামগুলো ব্যাচেলর এবং মাস্টার্স উভয় স্তরের হয়ে থাকে।

৪. মাস্টারট্র্যাক (MasterTrack): এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রেডিট অর্জনের সুযোগ দেয়। মাস্টারট্র্যাক প্রোগ্রামগুলো সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ডিগ্রির প্রথম অংশ হিসেবে কাজ করে এবং পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা প্রদান করে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে প্রাসঙ্গিক কোর্স

যদিও কোর্সেরাতে সরাসরি বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের উপর কোনো কোর্স নেই, তবে এখানে এমন কিছু কোর্স রয়েছে যা এই ট্রেডিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করতে পারে। নিচে কয়েকটি কোর্সের উদাহরণ দেওয়া হলো:

• ফিনান্সিয়াল মার্কেটস (Financial Markets): এই কোর্সটি ফিনান্সিয়াল মার্কেট সম্পর্কে একটি মৌলিক ধারণা দেয়, যা বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফিনান্সিয়াল মার্কেট
• ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট (Investment Management): বিনিয়োগের বিভিন্ন কৌশল এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ধারণা এই কোর্সে শেখানো হয়। বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা
• মেশিন লার্নিং (Machine Learning): বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে অ্যালগরিদমিক ট্রেডিংয়ের জন্য মেশিন লার্নিংয়ের জ্ঞান কাজে লাগে। মেশিন লার্নিং
• ডেটা সায়েন্স (Data Science): মার্কেট ডেটা বিশ্লেষণ করে ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ডেটা সায়েন্সের দক্ষতা প্রয়োজন। ডেটা বিজ্ঞান
• প্রোগ্রামিং ফর এভরিওয়ান (Programming for Everybody): ট্রেডিং অ্যালগরিদম তৈরি এবং ব্যাকটেস্টিংয়ের জন্য প্রোগ্রামিংয়ের জ্ঞান অপরিহার্য। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং

কর্সেরার সুবিধা

• নমনীয়তা (Flexibility): কোর্সেরা শিক্ষার্থীদের নিজেদের সময় অনুযায়ী শিখতে সুযোগ দেয়। যেকোনো সময়, যেকোনো স্থান থেকে কোর্সে অংশগ্রহণ করা যায়।
• বিশ্বমানের শিক্ষা (World-Class Education): কোর্সেরার কোর্সগুলো বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্বারা তৈরি করা হয়।
• কম খরচ (Low Cost): ঐতিহ্যবাহী শিক্ষার তুলনায় কোর্সেরার কোর্সগুলোর খরচ অনেক কম। অনেক কোর্স বিনামূল্যেও করা যায়।
• দক্ষতা বৃদ্ধি (Skill Development): কোর্সেরা নতুন দক্ষতা অর্জন এবং কর্মজীবনের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে সাহায্য করে।
• সার্টিফিকেট (Certificates): কোর্স সম্পন্ন করার পর কোর্সেরা থেকে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়, যা কর্মজীবনে সহায়ক হতে পারে।
• আর্থিক সহায়তা (Financial Aid): যাদের কোর্স ফি দেওয়ার সামর্থ্য নেই, তাদের জন্য কোর্সেরা আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা রেখেছে।

কর্সেরার অসুবিধা

• সীমিত মিথস্ক্রিয়া (Limited Interaction): অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হওয়ায় শিক্ষক এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে সরাসরি মিথস্ক্রিয়া কম হতে পারে।
• আত্ম-শৃঙ্খলা (Self-Discipline): কোর্সেরা কোর্সে অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট আত্ম-শৃঙ্খলা এবং অধ্যবসায় থাকতে হয়।
• প্রযুক্তিগত সমস্যা (Technical Issues): দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগ বা অন্যান্য প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে কোর্সে অংশগ্রহণে অসুবিধা হতে পারে।
• সার্টিফিকেটের স্বীকৃতি (Certificate Recognition): কিছু ক্ষেত্রে, কোর্সেরা থেকে প্রাপ্ত সার্টিফিকেটের স্বীকৃতি কম হতে পারে।

কর্সেরা ব্যবহারের নিয়মাবলী

কর্সেরাতে কোর্স শুরু করার জন্য প্রথমে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। এরপর, পছন্দের কোর্সটি নির্বাচন করে তাতে নথিভুক্ত হতে হবে। কোর্সের সময়সীমা এবং নিয়মাবলী ভালোভাবে দেখে নিতে হবে। ভিডিও লেকচার দেখা, পঠন সামগ্রী পড়া, কুইজ এবং অ্যাসাইনমেন্টগুলো সময়মতো জমা দিতে হবে। ফোরাম এবং আলোচনা গ্রুপে অংশগ্রহণ করে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে।

কোর্স নির্বাচন করার টিপস

• নিজের আগ্রহ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কোর্স নির্বাচন করুন।
• কোর্সের সিলেবাস এবং শিক্ষকের প্রোফাইল ভালোভাবে দেখে নিন।
• অন্যান্য শিক্ষার্থীদের রিভিউ এবং রেটিংগুলো বিবেচনা করুন।
• কোর্সের সময়সীমা এবং ফীস সম্পর্কে জেনে নিন।
• আর্থিক সহায়তার জন্য আবেদন করতে পারেন।

টেবিল: কোর্সেরার কিছু জনপ্রিয় কোর্স

কোর্সেরার জনপ্রিয় কোর্সসমূহ

কোর্স শিরোনাম	প্রতিষ্ঠান	সময়কাল	মূল্য
মেশিন লার্নিং	স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি	প্রায় ১১ সপ্তাহ	বিনামূল্যে (অডিট), সার্টিফিকেট এর জন্য খরচ প্রযোজ্য
ফিনান্সিয়াল মার্কেটস	ইয়েল ইউনিভার্সিটি	প্রায় ৬ সপ্তাহ	বিনামূল্যে (অডিট), সার্টিফিকেট এর জন্য খরচ প্রযোজ্য
ডেটা সায়েন্স স্পেশালাইজেশন	জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি	প্রায় ১০ মাস	প্রতি মাসে খরচ প্রযোজ্য
প্রোগ্রামিং ফর এভরিওয়ান (পাইথন)	মিশিগান ইউনিভার্সিটি	প্রায় ৭ সপ্তাহ	বিনামূল্যে (অডিট), সার্টিফিকেট এর জন্য খরচ প্রযোজ্য
সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট	রুজ ইউনিভার্সিটি	প্রায় ৫ মাস	প্রতি মাসে খরচ প্রযোজ্য

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য দক্ষতা

কর্সেরার কোর্সগুলো ছাড়াও, বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য আরও কিছু দক্ষতা অর্জন করা জরুরি। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতার উল্লেখ করা হলো:

• টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ (Technical Analysis): টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ চার্ট এবং অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে মার্কেট ট্রেন্ড বিশ্লেষণ করার পদ্ধতি।
• ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ (Fundamental Analysis): ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ অর্থনৈতিক ডেটা এবং অন্যান্য মৌলিক বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে মার্কেটের ভবিষ্যৎ গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা।
• ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management): ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ট্রেডিংয়ে সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো কমানোর কৌশল অবলম্বন করা।
• সাইকোলজিক্যাল ট্রেডিং (Psychological Trading): সাইকোলজিক্যাল ট্রেডিং আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে যুক্তিযুক্ত ট্রেডিং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
• ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis): ভলিউম বিশ্লেষণ ট্রেডিং ভলিউম বিশ্লেষণ করে মার্কেটের গতিবিধি বোঝা।
• ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন (Candlestick Patterns): ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট দেখে মার্কেটের সম্ভাব্য মুভমেন্ট সম্পর্কে ধারণা নেওয়া।
• মুভিং এভারেজ (Moving Averages): মুভিং এভারেজ মার্কেটের ট্রেন্ড নির্ধারণ করার জন্য মুভিং এভারেজ ব্যবহার করা।
• ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল খুঁজে বের করার জন্য ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট ব্যবহার করা।
• বলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands): বোলিঙ্গার ব্যান্ড মার্কেটের ভোলাটিলিটি পরিমাপ করার জন্য বলিঙ্গার ব্যান্ড ব্যবহার করা।
• আরএসআই (RSI): আরএসআই মার্কেটের ওভারবট এবং ওভারসোল্ড কন্ডিশন সনাক্ত করার জন্য আরএসআই ব্যবহার করা।
• ম্যাকডি (MACD): ম্যাকডি মার্কেটের ট্রেন্ড এবং মোমেন্টাম বিশ্লেষণ করার জন্য ম্যাকডি ব্যবহার করা।
• স্টোকাস্টিক অসিলেটর (Stochastic Oscillator): স্টোকাস্টিক অসিলেটর মার্কেটের ভবিষ্যৎ গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য স্টোকাস্টিক অসিলেটর ব্যবহার করা।
• Elliott Wave Theory: এলিয়ট ওয়েভ থিওরি মার্কেটের দীর্ঘমেয়াদী ট্রেন্ড বিশ্লেষণ করার জন্য এলিয়ট ওয়েভ থিওরি ব্যবহার করা।
• Dow Theory: ডাউ থিওরি মার্কেটের প্রাইমারি ট্রেন্ড সনাক্ত করার জন্য ডাউ থিওরি ব্যবহার করা।
• Gann Analysis: গ্যান বিশ্লেষণ মার্কেটের সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল খুঁজে বের করার জন্য গ্যান বিশ্লেষণ ব্যবহার করা।

উপসংহার

কর্সেরা অনলাইন শিক্ষার একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্ম, যা বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করে। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য সরাসরি কোনো কোর্স না থাকলেও, এখানে ফিনান্স, ডেটা সায়েন্স এবং প্রোগ্রামিংয়ের উপর অনেক কোর্স রয়েছে যা এই ট্রেডিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান সরবরাহ করতে পারে। এছাড়াও, অন্যান্য দক্ষতা যেমন টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং সাইকোলজিক্যাল ট্রেডিংয়ের জ্ঞান অর্জন করে বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে সফল হওয়া সম্ভব।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ