করদাতাকে

করদাতা

করদাতা হলেন সেই ব্যক্তি বা সত্তা, যিনি আইন অনুযায়ী সরকারের কাছে কর পরিশোধ করতে বাধ্য। এই কর বিভিন্ন প্রকার হতে পারে, যেমন – আয়কর, সম্পদ কর, ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর), উৎপাদন শুল্ক ইত্যাদি। করদাতাদের অধিকার ও বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন।

করদাতার প্রকারভেদ

বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে করদাতাদের বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়:

ব্যক্তিগত করদাতা: এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিরা তাদের ব্যক্তিগত আয়ের উপর কর প্রদান করেন। যেমন - বেতনভোগী কর্মচারী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ইত্যাদি। আয়করReturn দাখিল করা তাদের প্রধান বাধ্যবাধকতা।
কর্পোরেট করদাতা: এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত কোম্পানি, সংস্থা বা অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের লাভের উপর কর প্রদান করে। এদের জন্য কর্পোরেট কর প্রযোজ্য।
অব্যক্তিগত করদাতা: এই শ্রেণিতে হিন্দু অবিভাজিত পরিবার (HUF), ফার্ম, সোসাইটি, ট্রাস্ট ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। এদের কর দেওয়ার নিয়মাবলী ভিন্ন হতে পারে।
বৈদেশিক করদাতা: কোনো বিদেশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি বাংলাদেশে আয় করে, তবে তারা বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে করের আওতায় আসেন।

করদাতার অধিকার

একজন করদাতা হিসেবে কিছু মৌলিক অধিকার রয়েছে, যা তাদের জান থাকা উচিত:

সঠিক তথ্য জানার অধিকার: করদাতারা কর সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নির্দেশিকা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানার অধিকারী। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) এই তথ্য সরবরাহ করে থাকে।
সময়োপযোগী পরিষেবা পাওয়ার অধিকার: করদাতারা কর পরিশোধ, রিফান্ড এবং অন্যান্য পরিষেবা সময় মতো পাওয়ার অধিকারী।
আপিলের অধিকার: যদি কোনো করদাতা কর নির্ধারণ বা অন্য কোনো বিষয়ে সন্তুষ্ট না হন, তবে তিনি আপিল করার অধিকার রাখেন। কর আপিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই অধিকার প্রয়োগ করা যায়।
গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার: করদাতাদের ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখার অধিকার রয়েছে।
ন্যায়সঙ্গত আচরণের অধিকার: করদাতাদের সাথে ন্যায্য ও নিরপেক্ষ আচরণ করার অধিকার রয়েছে।

করদাতার বাধ্যবাধকতা

করদাতাদের কিছু সুনির্দিষ্ট বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যা পালন করা আইনত আবশ্যিক:

সময়মতো কর পরিশোধ: প্রত্যেক করদাতাকে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে তাদের কর পরিশোধ করতে হবে।
সঠিক রিটার্ন দাখিল: আয়কর আইন অনুযায়ী, করদাতাদের প্রতি বছর তাদের আয়ের হিসাব বিবরণী (রিটার্ন) দাখিল করতে হয়। ই-ফাইলিং এর মাধ্যমে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়া যায়।
হিসাবরক্ষণ: করদাতাদের তাদের আয় ও ব্যয়ের সঠিক হিসাব রাখতে হয়, যা কর নির্ধারণের সময় প্রয়োজন হতে পারে।
নথি সংরক্ষণ: কর পরিশোধের সমর্থনে প্রয়োজনীয় নথি (যেমন - বিনিয়োগের প্রমাণপত্র, খরচের বিল) সংরক্ষণ করা বাধ্যতামূলক।
পরিবর্তন সম্পর্কে অবহিত করা: ঠিকানা, পেশা বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্যে পরিবর্তন হলে তা কর কর্তৃপক্ষকে জানাতে হয়।
অডিট সহযোগিতা: কর কর্তৃপক্ষ যদি কোনো বিষয়ে অডিট করে, তবে করদাতাকে তাদের সাথে সহযোগিতা করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করতে হবে।

কর পরিশোধের পদ্ধতি

বাংলাদেশে কর পরিশোধের বিভিন্ন পদ্ধতি প্রচলিত আছে:

ব্যাংকের মাধ্যমে: করদাতারা সাধারণত ব্যাংকের মাধ্যমে কর চালান ব্যবহার করে কর পরিশোধ করেন।
অনলাইনে: সুরক্ষা (SAMAHARA) প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনলাইনে কর পরিশোধ করা যায়।
মোবাইল ব্যাংকিং: কিছু ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও কর পরিশোধের সুযোগ রয়েছে।
ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড: ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে অনলাইনে কর পরিশোধ করা যায়।

কর পরিকল্পনা (Tax Planning)

কর পরিকল্পনা হল এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে করদাতারা বৈধ উপায়ে তাদের করের বোঝা কমাতে পারেন। এর জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে:

বিনিয়োগ: বিভিন্ন করবান্ধব বিনিয়োগ যেমন - জীবন বীমা, অবসর ভাতা (Provident Fund), শেয়ার বাজার ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করে কর সাশ্রয় করা যায়।
খরচ: কিছু নির্দিষ্ট খরচ, যেমন - শিক্ষা ঋণ, চিকিৎসা খরচ, ইত্যাদি কর থেকে বাদ দেওয়া যায়।
ছাড়: আয়কর আইনে বিভিন্ন ধরনের কর ছাড়ের সুযোগ রয়েছে, যা করদাতারা কাজে লাগাতে পারেন।
করের কাঠামো বোঝা: বিভিন্ন আয় স্তরের জন্য করের হার ভিন্ন হয়। এই কাঠামো সম্পর্কে ধারণা থাকলে কর পরিকল্পনা করা সহজ হয়।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: জটিল কর সংক্রান্ত বিষয়ে অভিজ্ঞ কর পরামর্শক-এর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

কর ফাঁকি ও এর পরিণতি

কর ফাঁকি একটি গুরুতর অপরাধ। এটি একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব হ্রাস করে, অন্যদিকে অন্যদিকে অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি করে। কর ফাঁকির পরিণতি হতে পারে:

জরিমানা: কর ফাঁকি করলে জরিমানা হতে পারে, যা করের পরিমাণের কয়েকগুণ বেশি হতে পারে।
মামলা: গুরুতর ক্ষেত্রে কর ফাঁকির জন্য আদালতে মামলা করা হতে পারে।
কারাদণ্ড: কিছু ক্ষেত্রে কর ফাঁকির জন্য কারাদণ্ডও হতে পারে।
সামাজিক অপবাদ: কর ফাঁকি করলে সমাজে একজন ব্যক্তির সুনাম নষ্ট হতে পারে।

বাংলাদেশে কর ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) বাংলাদেশে কর ব্যবস্থাকে আধুনিক করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

ই-ফাইলিং: অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সুরক্ষা (SAMAHARA): একটি সমন্বিত কর ব্যবস্থাপনা প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়েছে, যা কর পরিশোধ এবং হিসাব ব্যবস্থাপনাকে সহজ করে।
ভ্যাট অনলাইন: ভ্যাট পরিশোধের জন্য অনলাইন সিস্টেম চালু করা হয়েছে।
অটোমেটেড কর ব্যবস্থাপনা: কর ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
করদাতাদের জন্য হেল্পডেস্ক: করদাতাদের সহায়তা করার জন্য হেল্পডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক

এই নিবন্ধটি করদাতাদের অধিকার, বাধ্যবাধকতা এবং কর ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা দিতে সহায়ক হবে। কর সংক্রান্ত যেকোনো জটিল বিষয়ে অভিজ্ঞ পেশাদারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ