এলাইট ওয়েভ থিওরি

এলাইট ওয়েভ থিওরি একটি টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ পদ্ধতি যা আর্থিক বাজারের গতিবিধি বোঝার জন্য ব্যবহৃত হয়। এই থিওরি অনুযায়ী, বাজারের দাম একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্নে ওঠানামা করে, যা ‘ওয়েভ’ বা তরঙ্গের মতো। এই তরঙ্গগুলি মূলত বিনিয়োগকারীদের সম্মিলিত মনোস্তত্ত্বের প্রতিফলন ঘটায়। এই নিবন্ধে, আমরা এলাইট ওয়েভ থিওরির মূল ধারণা, নীতি এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ এর প্রয়োগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

এলাইট ওয়েভ থিওরির মূল ধারণা

এলাইট ওয়েভ থিওরি ১৯৩০-এর দশকে র্যালফ নেলসন এলিয়ট আবিষ্কার করেন। তিনি বাজারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে দেখেন যে দামগুলি এলোমেলোভাবে ওঠানামা করে না, বরং একটি নির্দিষ্ট কাঠামো অনুসরণ করে। এলিয়ট মনে করতেন, বিনিয়োগকারীদের সম্মিলিত আবেগ এবং মনোস্তত্ত্বের কারণে এই প্যাটার্নগুলি তৈরি হয়।

এই থিওরির মূল ভিত্তি হলো ‘ফ্র্যাক্টাল’। ফ্র্যাক্টাল হলো এমন একটি জ্যামিতিক আকার যা বিভিন্ন স্কেলে পুনরাবৃত্তি হয়। অর্থাৎ, একটি ছোট আকারের প্যাটার্ন একটি বড় আকারের প্যাটার্নের মধ্যে দেখা যায়। এলিয়ট ওয়েভ থিওরিতে, এই ফ্র্যাক্টাল ধারণাটি বাজারের গতিবিধিতে প্রয়োগ করা হয়েছে।

ওয়েভ প্যাটার্ন

এলিয়ট ওয়েভ থিওরি অনুযায়ী, বাজারের দাম পাঁচটি ওয়েভের একটি ক্রম অনুসরণ করে, যা ‘ইম্পালসিভ ওয়েভ’ নামে পরিচিত। এই পাঁচটি ওয়েভের মধ্যে প্রথম তিনটি ওয়েভ হলো আপট্রেন্ড (Uptrend) এবং শেষ দুটি হলো ডাউনট্রেন্ড (Downtrend)। এরপর, একটি ‘করেক্টিভ ওয়েভ’ আসে, যা তিনটি ওয়েভের সমন্বয়ে গঠিত এবং পূর্বের ইম্পালসিভ ওয়েভের বিপরীত দিকে চলে।

ইম্পালসিভ ওয়েভ (Impulsive Wave): এই ওয়েভগুলি সাধারণত শক্তিশালী ট্রেন্ড নির্দেশ করে।
করেক্টিভ ওয়েভ (Corrective Wave): এই ওয়েভগুলি সাধারণত দুর্বল ট্রেন্ড নির্দেশ করে এবং পূর্বের ট্রেন্ডের বিপরীত দিকে চলে।

এলিয়ট ওয়েভ প্যাটার্ন
ওয়েভ নম্বর	দিক	বর্ণনা
১	আপট্রেন্ড	প্রাথমিক মুভমেন্ট
২	আপট্রেন্ড	রিট্রেসমেন্ট
৩	আপট্রেন্ড	শক্তিশালী মুভমেন্ট
৪	ডাউনট্রেন্ড	রিট্রেসমেন্ট
৫	ডাউনট্রেন্ড	সমাপ্তি
এ	ডাউনট্রেন্ড	প্রথম করেকশন
বি	আপট্রেন্ড	রিট্রেসমেন্ট
সি	ডাউনট্রেন্ড	দ্বিতীয় করেকশন

ওয়েভের নিয়মাবলী

এলিয়ট ওয়েভ থিওরির কিছু নির্দিষ্ট নিয়মাবলী রয়েছে, যা ওয়েভ প্যাটার্ন সনাক্ত করতে সাহায্য করে:

ওয়েভ ২ কখনো ওয়েভ ১-এর উপরে যেতে পারবে না।
ওয়েভ ৩ কখনো ওয়েভ ১ এবং ওয়েভ ৫-এর মধ্যে সবচেয়ে ছোট ওয়েভ হতে পারবে না।
ওয়েভ ৪ কখনো ওয়েভ ১-এর প্রাইস এরিয়াতে প্রবেশ করতে পারবে না।

এই নিয়মগুলি ওয়েভ প্যাটার্নকে আরও নির্ভুলভাবে চিহ্নিত করতে সহায়ক।

ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট

ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ টুল, যা এলিয়ট ওয়েভ থিওরির সাথে ব্যবহার করা হয়। ফিবোনাচ্চি সংখ্যাগুলি হলো ০, ১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১, ৩৪, ৫৫, ৮৯, ১৪৪ ইত্যাদি। এই সংখ্যাগুলি বাজারের সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়।

ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলি হলো:

২৩.৬%
38.2%
50%
61.8%
78.6%

এই লেভেলগুলি ওয়েভগুলির সম্ভাব্য রিট্রেসমেন্ট পয়েন্ট হিসাবে কাজ করে। ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট সম্পর্কে আরও জানতে এই লিঙ্কটি অনুসরণ করুন।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ এলাইট ওয়েভ থিওরির প্রয়োগ

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ এলাইট ওয়েভ থিওরি একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে। এই থিওরি ব্যবহার করে, ট্রেডাররা বাজারের সম্ভাব্য গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে এবং সেই অনুযায়ী ট্রেড করতে পারে।

কল অপশন (Call Option): যখন একটি আপট্রেন্ডের ওয়েভ শুরু হয়, তখন কল অপশন কেনা যেতে পারে।
পুট অপশন (Put Option): যখন একটি ডাউনট্রেন্ডের ওয়েভ শুরু হয়, তখন পুট অপশন কেনা যেতে পারে।

তবে, এলাইট ওয়েভ থিওরি ব্যবহার করার সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:

এই থিওরি জটিল এবং সময়সাপেক্ষ।
ওয়েভগুলি সঠিকভাবে সনাক্ত করা কঠিন হতে পারে।
বাজারের অপ্রত্যাশিত মুভমেন্টের কারণে ট্রেড ভুল হতে পারে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর ঝুঁকি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে ট্রেড করা উচিত।

অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর এর সাথে ব্যবহার

এলাইট ওয়েভ থিওরিকে আরও নির্ভুল করার জন্য অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর যেমন মুভিং এভারেজ (Moving Average), আরএসআই (RSI), এমএসিডি (MACD) ইত্যাদির সাথে ব্যবহার করা যেতে পারে।

মুভিং এভারেজ: এটি বাজারের ট্রেন্ড নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
আরএসআই: এটি বাজারের ওভারবট (Overbought) এবং ওভারসোল্ড (Oversold) অবস্থা নির্দেশ করে।
এমএসিডি: এটি বাজারের মোমেন্টাম (Momentum) নির্দেশ করে।

এই ইন্ডিকেটরগুলি ব্যবহার করে, ট্রেডাররা আরও নিশ্চিত হতে পারে যে তারা সঠিক দিকে ট্রেড করছে।

ভলিউম বিশ্লেষণ

ভলিউম বিশ্লেষণ এলাইট ওয়েভ থিওরির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভলিউম হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে কেনা এবং বেচার পরিমাণ। ভলিউম বিশ্লেষণের মাধ্যমে, ট্রেডাররা বাজারের গতিবিধির শক্তি সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে।

আপট্রেন্ডের সময় ভলিউম বৃদ্ধি পেলে, এটি একটি শক্তিশালী আপট্রেন্ডের ইঙ্গিত দেয়।
ডাউনট্রেন্ডের সময় ভলিউম বৃদ্ধি পেলে, এটি একটি শক্তিশালী ডাউনট্রেন্ডের ইঙ্গিত দেয়।

ভলিউম বিশ্লেষণের মাধ্যমে, ট্রেডাররা আরও নিশ্চিত হতে পারে যে তারা সঠিক দিকে ট্রেড করছে।

এলাইট ওয়েভ থিওরির সীমাবদ্ধতা

এলাইট ওয়েভ থিওরি একটি শক্তিশালী পদ্ধতি হলেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে:

বিষয়ভিত্তিকতা: ওয়েভগুলি সনাক্ত করা বিষয়ভিত্তিক হতে পারে, কারণ বিভিন্ন ট্রেডার বিভিন্নভাবে ওয়েভগুলি ব্যাখ্যা করতে পারে।
সময়সাপেক্ষ: ওয়েভ প্যাটার্ন সনাক্ত করতে এবং বিশ্লেষণ করতে সময় লাগতে পারে।
ভুল সংকেত: বাজার সর্বদা এলিয়ট ওয়েভ থিওরি অনুযায়ী চলে না এবং ভুল সংকেত দিতে পারে।

এই সীমাবদ্ধতাগুলি বিবেচনায় রেখে, ট্রেডারদের উচিত অন্যান্য বিশ্লেষণাত্মক সরঞ্জামগুলির সাথে এলাইট ওয়েভ থিওরি ব্যবহার করা।

উন্নত কৌশল

কম্বিনেশনাল ওয়েভ (Combinational Wave): একাধিক ওয়েভ প্যাটার্নের সমন্বয় করে ট্রেডিংয়ের সুযোগ তৈরি করা।
হারমোনিক প্যাটার্ন (Harmonic Pattern): ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট এবং অন্যান্য হারমোনিক অনুপাত ব্যবহার করে সম্ভাব্য রিভার্সাল পয়েন্ট চিহ্নিত করা।
এলিট ওয়েভ এবং প্রাইস অ্যাকশন (Elliot Wave and Price Action): প্রাইস অ্যাকশন নিশ্চিতকরণের জন্য ওয়েভ থিওরির সাথে ব্যবহার করা।

উপসংহার

এলাইট ওয়েভ থিওরি একটি জটিল কিন্তু শক্তিশালী টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ পদ্ধতি। এই থিওরি ব্যবহার করে, ট্রেডাররা বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে এবং সেই অনুযায়ী ট্রেড করতে পারে। তবে, এই থিওরি ব্যবহারের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং অন্যান্য বিশ্লেষণাত্মক সরঞ্জামগুলির সাথে এটি ব্যবহার করা উচিত। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ সফল হওয়ার জন্য, ট্রেডারদের উচিত এই থিওরিটি ভালোভাবে বোঝা এবং অনুশীলন করা।

আরও জানতে:

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ