এডাম স্মিথ

এডাম স্মিথ ছিলেন একজন স্কটিশ অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক এবং লেখক। তিনি ১৭২৩ সালের ৫ জুন স্কটল্যান্ডের Kirkcaldy তে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৭৯0 সালের ১৭ জুলাই এডিনবরায় মারা যান। স্মিথকে অর্থনীতির জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ হলো ‘ঐশ্বর্যের জাতি’ (An Inquiry into the Nature and Causes of the Wealth of Nations), যা ১৭৭৬ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। এই গ্রন্থে তিনি মুক্ত বাজার অর্থনীতির মূল ধারণাগুলো তুলে ধরেন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে শ্রম বিভাজন ও বিশেষীকরণ-এর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

জীবনী

এডাম স্মিথের জন্ম একটি ছোট শহরে। তার বাবা ছিলেন একজন শুল্ক কর্মকর্তা। তিনি গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন ও নৈতিক বিজ্ঞান অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আরও পড়াশোনা করেন। শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করার পর, তিনি গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈতিক দর্শনের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি লেখালেখি ও গবেষণার কাজে মনোনিবেশ করেন।

স্মিথের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য জানা যায় না। তিনি কখনোই বিয়ে করেননি এবং তার মায়ের সাথে সারাজীবন বসবাস করেছেন। মনে করা হয়, তিনি নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করতেন এবং তার সমস্ত মনোযোগ ছিল জ্ঞানার্জনের দিকে।

ঐশ্বর্যের জাতি

এডাম স্মিথের magnum opus হলো ‘ঐশ্বর্যের জাতি’। এই বইটি অর্থনীতি শাস্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করে দিয়েছে। বইটিতে তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে একটি দেশের সম্পদ বৃদ্ধি করা যায়। তার মতে, সম্পদ হলো শ্রমের ফল এবং এই শ্রমকে সঠিকভাবে ব্যবহার করাই হলো অর্থনীতির মূল লক্ষ্য।

শ্রম বিভাজন:* স্মিথ শ্রম বিভাজনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে একটি জটিল কাজকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে বিভিন্ন মানুষের মধ্যে বণ্টন করে দিলে উৎপাদনশীলতা অনেকগুণ বেড়ে যায়। এর ফলে সময় বাঁচে এবং দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। একটি পিন তৈরির উদাহরণ দিয়ে তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন।

স্বতন্ত্র স্বার্থ:* স্মিথ মনে করতেন, মানুষ সাধারণত নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করে কাজ করে। কিন্তু এই স্বতন্ত্র স্বার্থের তাড়নাই সমাজকে উপকৃত করে। যখন প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের লাভের জন্য কাজ করে, তখন সামগ্রিকভাবে সমাজের উৎপাদন বাড়ে এবং সম্পদ সৃষ্টি হয়।

অদৃশ্য হাত:* এই ধারণাটি স্মিথের সবচেয়ে বিখ্যাত অবদানগুলোর মধ্যে অন্যতম। অদৃশ্য হাত হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যক্তি নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা করলে অজান্তেই সমাজের কল্যাণে অবদান রাখে। বাজারের শক্তি এক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে এবং সম্পদ বিতরণে সহায়তা করে।

মুক্ত বাণিজ্য:* স্মিথ মুক্ত বাণিজ্যের একজন শক্তিশালী সমর্থক ছিলেন। তিনি মনে করতেন, বাণিজ্য বাধা নিষেধ দূর করে অবাধ বাণিজ্য চালু করলে দেশগুলো একে অপরের থেকে উপকৃত হতে পারবে। এতে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং পণ্যের দাম কমে আসবে।

নৈতিক Sentiments এর তত্ত্ব

এডাম স্মিথ ১৭৫৯ সালে ‘The Theory of Moral Sentiments’ নামে একটি বই লেখেন। এই বইটিতে তিনি মানুষের নৈতিক অনুভূতি এবং সামাজিক আচরণের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, মানুষ কেবল স্বার্থপর নয়, তাদের মধ্যে সহানুভূতি, ন্যায়বিচার এবং নৈতিকতাবোধও রয়েছে। স্মিথ মনে করতেন, এই নৈতিক অনুভূতিগুলো সমাজকে একত্রে ধরে রাখতে সাহায্য করে।

অর্থনৈতিক দর্শন

স্মিথের অর্থনৈতিক দর্শন মূলত ক্লাসিক্যাল অর্থনীতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। তিনি বিশ্বাস করতেন, সরকারের উচিত অর্থনীতির ওপর কম হস্তক্ষেপ করা এবং বাজারকে তার নিজের গতিতে চলতে দেওয়া। তার মতে, বাজারের নিয়ম-কানুন অনুসরণ করলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব।

সরকারের ভূমিকা:* স্মিথ সরকারের তিনটি প্রধান কাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন:

১. শত্রুদের হাত থেকে দেশের সুরক্ষা করা। ২. আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। ৩. জনকল্যাণমূলক কিছু কাজ করা, যেমন - শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি।

অর্থের ভূমিকা:* স্মিথ মনে করতেন, অর্থ হলো বিনিময়ের মাধ্যম। এটি শ্রম ও পণ্যের মূল্যের পরিমাপক হিসেবে কাজ করে।

স্মিথের চিন্তাধারার প্রভাব

এডাম স্মিথের চিন্তাধারা অর্থনীতি এবং সমাজবিজ্ঞানে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তার কাজ ডেভিড রিকার্ডো, জন স্টুয়ার্ট মিল এবং কার্ল মার্ক্স-এর মতো পরবর্তী অর্থনীতিবিদদের প্রভাবিত করেছে।

মুক্ত বাজার অর্থনীতি:* স্মিথের মুক্ত বাজার অর্থনীতির ধারণা আজও বিশ্বের অনেক দেশে অনুসৃত হচ্ছে।

বিশ্বায়ন:* তার মুক্ত বাণিজ্যের ধারণা বিশ্বায়নের পথ খুলে দিয়েছে।

উন্নয়ন অর্থনীতি:* উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য তার তত্ত্বগুলো আজও প্রাসঙ্গিক।

সমালোচনা

এডাম স্মিথের তত্ত্বের কিছু সমালোচনাও রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, তিনি মানুষের স্বার্থপরতার দিকটিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন এবং নৈতিকতাবোধের ওপর যথেষ্ট জোর দেননি। আবার অনেকে মনে করেন, তার তত্ত্বগুলো কেবল উন্নত দেশগুলোর জন্য প্রযোজ্য, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য নয়।

এডাম স্মিথের প্রধান কাজসমূহ
বছর	কাজের নাম	বিষয়বস্তু
১৭৫৯	The Theory of Moral Sentiments	নৈতিক অনুভূতি ও সামাজিক আচরণ
১৭৭৬	An Inquiry into the Nature and Causes of the Wealth of Nations	জাতীয় সম্পদ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
১৭৯০	Essays on Philosophical Subjects	দার্শনিক প্রবন্ধ

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে সম্পর্ক

এডাম স্মিথের অর্থনৈতিক ধারণাগুলো সরাসরি বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে সম্পর্কিত না হলেও, বাজারের গতিবিধি এবং বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার কিছু মৌলিক ধারণা সহায়ক হতে পারে।

বাজারের বিশ্লেষণ: স্মিথের 'অদৃশ্য হাত' এর ধারণা বাজারের স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ, এই ধারণাটি বাজারের প্রবণতা (trend) বুঝতে সাহায্য করে। টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি বোঝা যায়।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: স্মিথ স্বতন্ত্র স্বার্থের কথা বলেছেন, তাই বিনিয়োগকারীরা তাদের নিজস্ব ঝুঁকি সহনশীলতা অনুযায়ী বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কৌশল অবলম্বন করে সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায়।

শ্রম বিভাজন ও বিশেষীকরণ: বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ বিভিন্ন ধরনের অ্যাসেট (asset) থাকে। একজন ট্রেডার নির্দিষ্ট কিছু অ্যাসেটে বিশেষীকরণ অর্জন করে ভালো ফলাফল পেতে পারেন।

সরবরাহ ও চাহিদা: স্মিথের মতে, সরবরাহ ও চাহিদার ওপর ভিত্তি করে পণ্যের দাম নির্ধারিত হয়। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এও এই ধারণাটি প্রযোজ্য। কোন অ্যাসেটের চাহিদা বাড়লে তার দাম বাড়তে পারে, এবং এর বিপরীতেও ঘটতে পারে। ভলিউম বিশ্লেষণ করে চাহিদা ও সরবরাহ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ। এখানে সাফল্যের জন্য বাজারের সঠিক বিশ্লেষণ, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং ট্রেডিং কৌশল সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা জরুরি।

আরও দেখুন

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ