একচেটিয়া ব্যবসা

From binaryoption
Jump to navigation Jump to search
Баннер1

একচেটিয়া ব্যবসা

একচেটিয়া ব্যবসা (Monopoly) এমন একটি বাজার কাঠামো যেখানে কোনো একটি নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবার উৎপাদক বা সরবরাহকারীর কোনো প্রতিযোগী থাকে না। অর্থাৎ, বাজারে সেই পণ্য বা সেবার অন্য কোনো বিকল্প সরবরাহকারী নেই। এর ফলে বিক্রেতা বাজারের দাম এবং সরবরাহের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে। একচেটিয়া ব্যবসার ধারণাটি অর্থনীতি এবং বাজার কাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

একচেটিয়া ব্যবসার বৈশিষ্ট্য

একচেটিয়া ব্যবসার কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা একে অন্যান্য বাজার কাঠামো থেকে আলাদা করে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

  • একক বিক্রেতা: বাজারে কেবল একজন বিক্রেতা থাকে এবং সে-ই পণ্য বা সেবার সরবরাহকারী।
  • প্রতিযোগীর অনুপস্থিতি: বাজারে কোনো প্রতিযোগী না থাকায় বিক্রেতার উপর প্রতিযোগিতার চাপ থাকে না।
  • প্রবেশের বাধা: নতুনFirm-এর জন্য বাজারে প্রবেশ করা কঠিন বা অসম্ভব হয়ে পড়ে। বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক বাধা, উচ্চ মূলধন অথবা প্রযুক্তিগত জটিলতা এর কারণে এটি হতে পারে।
  • অদ্বিতীয় পণ্য: একচেটিয়া ব্যবসার পণ্য বা সেবার কোনো বিকল্প থাকে না। এটি সাধারণত বিশেষ বৈশিষ্ট্যযুক্ত বা স্বতন্ত্র হয়।
  • দাম নিয়ন্ত্রণ: বিক্রেতা বাজারের দাম নির্ধারণ করতে পারে, কারণ তার কোনো প্রতিযোগী নেই।
  • অসীম ক্ষমতা: বিক্রেতা উৎপাদন পরিমাণ এবং দাম উভয়ই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

একচেটিয়া ব্যবসার প্রকারভেদ

বিভিন্ন ধরনের একচেটিয়া ব্যবসা দেখা যায়। এদের মধ্যে কিছু প্রধান প্রকারভেদ নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • প্রাকৃতিক একচেটিয়া ব্যবসা: যখন কোনো শিল্পের উৎপাদন খরচ বাজারের আকারের সাথে সাথে কমতে থাকে, তখন প্রাকৃতিক একচেটিয়া ব্যবসা গঠিত হয়। এক্ষেত্রে একটিমাত্র Firm পুরো বাজার সরবরাহ করতে পারে সবচেয়ে কম খরচে। উদাহরণস্বরূপ, বিদ্যুৎ সরবরাহ বা পানি সরবরাহ
  • আইনগত একচেটিয়া ব্যবসা: সরকার যখন কোনো Firm-কে কোনো নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবা উৎপাদনের একচেটিয়া অধিকার দেয়, তখন তা আইনগত একচেটিয়া ব্যবসা হিসেবে পরিচিত। পেটেন্ট, কপিরাইট এবং লাইসেন্স এর মাধ্যমে এটি তৈরি হতে পারে।
  • অর্থনৈতিক একচেটিয়া ব্যবসা: যখন কোনো Firm বাজারের বেশিরভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে এবং নতুন Firm-এর প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে, তখন অর্থনৈতিক একচেটিয়া ব্যবসা গঠিত হয়। এটি সাধারণত ব্র্যান্ড পরিচিতি, বিপণন কৌশল এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্জিত হয়।
  • সীমাবদ্ধ একচেটিয়া ব্যবসা: এই ক্ষেত্রে, অল্প সংখ্যক Firm বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, কিন্তু তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিযোগিতা থাকে না। একে অলিগোপলিও বলা হয়।

একচেটিয়া ব্যবসার কারণ

বিভিন্ন কারণে একচেটিয়া ব্যবসা সৃষ্টি হতে পারে। এদের মধ্যে কিছু প্রধান কারণ হলো:

  • নিয়ন্ত্রণমূলক বাধা: সরকার কর্তৃক আরোপিত বিভিন্ন বিধি-নিষেধ এবং লাইসেন্সিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাজারে প্রবেশ সীমিত হতে পারে।
  • উচ্চ মূলধন প্রয়োজন: কিছু শিল্পে ব্যবসা শুরু করতে প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয়, যা নতুন Firm-এর জন্য একটি বড় বাধা।
  • প্রযুক্তিগত দক্ষতা: বিশেষ প্রযুক্তি বা জ্ঞানের অধিকারী Firm-গুলো বাজারে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে পারে।
  • ব্র্যান্ডের প্রতি আনুগত্য: গ্রাহকদের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের প্রতি আনুগত্য তৈরি হলে, নতুন Firm-এর জন্য বাজার দখল করা কঠিন হয়ে পড়ে।
  • অধিগ্রহণ ও মার্জার: বড় Firm-গুলো ছোট Firm-গুলোকে কিনে নিয়ে বা তাদের সাথে মার্জার করে বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে।
  • অবকাঠামোগত সুবিধা: উন্নত অবকাঠামো এবং বিতরণ নেটওয়ার্ক থাকা Firm-গুলো অন্যদের তুলনায় সুবিধা পায়।

একচেটিয়া ব্যবসার সুবিধা ও অসুবিধা

একচেটিয়া ব্যবসার কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো:

সুবিধা

  • উৎপাদন দক্ষতা: একচেটিয়া Firm বৃহৎ পরিসরে উৎপাদন করার সুযোগ পাওয়ায় উৎপাদন খরচ কমাতে পারে।
  • গবেষণা ও উন্নয়ন: বেশি মুনাফা অর্জনের কারণে একচেটিয়া Firm গবেষণা ও উন্নয়ন-এ বিনিয়োগ করতে পারে, যা নতুন প্রযুক্তি এবং পণ্যের উদ্ভাবনে সহায়ক।
  • অর্থনীতি: কিছু ক্ষেত্রে, একচেটিয়া ব্যবসা অর্থনীতি আনতে পারে, বিশেষ করে প্রাকৃতিক একচেটিয়া ব্যবসার ক্ষেত্রে।
  • গুণগত মান: বাজারের নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে, একচেটিয়া Firm পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখতে আগ্রহী হতে পারে।

অসুবিধা

  • উচ্চ মূল্য: প্রতিযোগীর অভাবে একচেটিয়া Firm ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করতে পারে, যা গ্রাহকদের জন্য ক্ষতিকর।
  • কম উৎপাদন: চাহিদা থাকা সত্ত্বেও, একচেটিয়া Firm দাম বেশি রাখার জন্য উৎপাদন সীমিত করতে পারে।
  • উদ্ভাবনের অভাব: প্রতিযোগিতার অভাবে একচেটিয়া Firm নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে উৎসাহিত নাও হতে পারে।
  • গ্রাহক শোষণ: একচেটিয়া Firm গ্রাহকদের শোষণ করতে পারে, কারণ তাদের কাছে অন্য কোনো বিকল্প থাকে না।
  • সম্পদের অপচয়: অদক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে একচেটিয়া Firm-এর মধ্যে সম্পদের অপচয় হতে পারে।

একচেটিয়া ব্যবসার উদাহরণ

  • ডি-বির্স (De Beers): হীরা শিল্পের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণকারী কোম্পানি।
  • মাইক্রোসফট (Microsoft): কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেমের বাজারে দীর্ঘকাল ধরে প্রভাবশালী।
  • গুগল (Google): ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিনের বাজারে প্রধান অবস্থানে রয়েছে।
  • অ্যাপল (Apple): স্মার্টফোন এবং কম্পিউটার হার্ডওয়্যার বাজারে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।
  • বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (BPC): বাংলাদেশে পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে একচেটিয়া অধিকার রয়েছে।

একচেটিয়া ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ

একচেটিয়া ব্যবসার নেতিবাচক প্রভাবগুলো কমাতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। এর মধ্যে কিছু প্রধান পদক্ষেপ হলো:

  • অ্যান্টিট্রাস্ট আইন: এই আইন একচেটিয়া ব্যবসা গঠন এবং বজায় রাখার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা আইন, ২০০৩ এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ।
  • নিয়ন্ত্রণমূলক সংস্থা: সরকার বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক সংস্থা তৈরি করে, যা বাজারের প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করে এবং একচেটিয়া ব্যবসার অপব্যবহার রোধ করে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (BTRC) এর একটি উদাহরণ।
  • জাতীয়করণ: সরকার কোনো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকে জাতীয়করণ করে একচেটিয়া ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে।
  • আমদানি উদারীকরণ: বিদেশি পণ্য আমদানির অনুমতি দিয়ে বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ানো যেতে পারে।
  • উৎসাহ প্রদান: নতুন Firm-গুলোকে উৎসাহিত করার জন্য সরকার বিভিন্ন প্রণোদনা দিতে পারে।
  • ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ: ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর মাধ্যমে গ্রাহকদের অধিকার রক্ষা করা যায়।

একচেটিয়া ব্যবসার প্রভাব

একচেটিয়া ব্যবসার অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এটি বৈষম্য বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক স্থবিরতা এবং রাজনৈতিক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, একচেটিয়া ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারের প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উপসংহার

একচেটিয়া ব্যবসা একটি জটিল অর্থনৈতিক ধারণা। এর সুবিধা এবং অসুবিধা উভয়ই রয়েছে। তবে, সাধারণত একচেটিয়া ব্যবসার নেতিবাচক প্রভাবগুলো বেশি ক্ষতিকর। তাই, সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর উচিত বাজারের প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা এবং একচেটিয়া ব্যবসার অপব্যবহার রোধ করা।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বাজার অর্থনীতি, সরবরাহ চাহিদা, দাম স্থিতিস্থাপকতা, উদ্যোক্তা

একচেটিয়া ব্যবসার সুবিধা ও অসুবিধা
সুবিধা অসুবিধা
উচ্চ মূল্য নির্ধারণ
উৎপাদন সীমিতকরণ
উদ্ভাবনের অভাব
গ্রাহক শোষণ
সম্পদের অপচয়

আরও জানতে:


এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ

Баннер