উর্Varroa destructor

ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টর: মৌমাছির জন্য এক মারাত্মক হুমকি

ভূমিকা

ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টর (Varroa destructor) একটি বহিরাগত পরজীবী যা মৌমাছিদের (Apis mellifera) জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এটি মূলত এশিয়া থেকে এসেছে এবং বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে ইউরোপ ও আমেরিকাতে ছড়িয়ে পড়ে। এই পরজীবী মৌমাছির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং বিভিন্ন ভাইরাস এর সংক্রমণ ঘটাতে সাহায্য করে, যার ফলে মৌচাক দুর্বল হয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত মৌমাছির কলোনি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টর বর্তমানে মধু উৎপাদন এবং কৃষি অর্থনীতির জন্য একটি বড় হুমকি।

শারীরিক গঠন ও জীবনচক্র

ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টর মাকড়সার মতো দেখতে, যার দেহ ডিম্বাকৃতির এবং লালচে-বাদামী রঙের। স্ত্রী ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টর প্রায় ১-১.৮ মিমি লম্বা এবং পুরুষ ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টর সামান্য ছোট হয়। এদের আটটি পা রয়েছে।

জীবনচক্র:

১. ডিম: স্ত্রী ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টর মৌমাছির লার্ভার কোষের মধ্যে ডিম পাড়ে। ২. লার্ভা: ডিম থেকে লার্ভা বের হয় এবং এটি মৌমাছির লার্ভার খাদ্য গ্রহণ করে বৃদ্ধি পায়। ৩. পুপা: লার্ভা পুপাতে রূপান্তরিত হয়। এই সময় এটি মৌমাছির পুপার মধ্যে আটকে থাকে। ৪. প্রাপ্তবয়স্ক: পুপা থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টর বের হয় এবং reproduction-এর জন্য প্রস্তুত হয়।

ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টর মূলত মৌমাছির লার্ভা এবং পুপার উপর নির্ভরশীল। এরা মৌমাছির হেমোলিম্ফ (রক্ত) শোষণ করে বেঁচে থাকে, যার ফলে মৌমাছি দুর্বল হয়ে যায়।

ক্ষতিকর প্রভাব

ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টর মৌমাছির কলোনির উপর বিভিন্নভাবে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে:

১. মৌমাছির দুর্বলতা: ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টর মৌমাছির শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান শোষণ করে নেয়, ফলে মৌমাছি দুর্বল হয়ে যায় এবং তাদের কর্মক্ষমতা কমে যায়। ২. রোগ সংক্রমণ: ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টর বিভিন্ন ভাইরাস, যেমন - ডিফরমড উইং ভাইরাস (Deformed Wing Virus - DWV), শার্পস্টোন ভাইরাস (Sacbrood Virus - SBV) এবং ক্যাসিওলা ভাইরাস (Cashmere Virus) ছড়াতে সাহায্য করে। এই ভাইরাসগুলি মৌমাছির অঙ্গহানি এবং মৃত্যুর কারণ হতে পারে। ৩. কলোনির পতন: ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টরের আক্রমণে মৌচাক দুর্বল হয়ে গেলে কলোনি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, যার ফলে মধু উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। ৪. প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস: ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টর মৌমাছির প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, যার ফলে নতুন মৌমাছি জন্মানোর হার কমে যায়।

ক্ষতি নিরূপণ এবং পর্যবেক্ষণ

মৌচাকে ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টরের উপস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে:

১. অ্যালকোহল ওয়াশ: এই পদ্ধতিতে, এক নির্দিষ্ট সংখ্যক মৌমাছিকে অ্যালকোহলে ডুবিয়ে ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টরের সংখ্যা গণনা করা হয়। ২. সুগার রোল: এই পদ্ধতিতে, মৌমাছিদের চিনিতে কোট করে গণনা করা হয়। চিনিতে মোড়ানো মৌমাছিরা নিজেদের পরিষ্কার করার সময় ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টরকে শরীর থেকে ঝেড়ে ফেলে, যা গণনা করা যায়। ৩. স্টিকি বোর্ড: মৌচাকের নিচে একটি স্টিকি বোর্ড স্থাপন করা হয়, যেখানে ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টর পড়ে যায় এবং পরবর্তীতে গণনা করা হয়।

প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ

ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টর নিয়ন্ত্রণ করা একটি জটিল প্রক্রিয়া, তবে সমন্বিত pest management পদ্ধতির মাধ্যমে এর বিস্তার রোধ করা সম্ভব। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কৌশল আলোচনা করা হলো:

১. রাসায়নিক চিকিৎসা: বিভিন্ন অ্যাসিকারাইড (acaricide) ব্যবহার করে ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টর নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে, রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে মৌমাছির মধ্যে resistance তৈরি হতে পারে, তাই এটি সীমিতভাবে ব্যবহার করা উচিত। যেমন - অ্যামিট্রাজ, ফ্লুভালিনেট, কৌমাফস ইত্যাদি। ২. জৈব চিকিৎসা: জৈব পদ্ধতিতে ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টর নিয়ন্ত্রণের জন্য ফর্মিক অ্যাসিড, অক্সালিক অ্যাসিড, থাইমল এবং হাইড্রোজেন পারক্সাইড ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিগুলি পরিবেশ বান্ধব এবং মৌমাছির জন্য কম ক্ষতিকর। ৩. তাপ চিকিৎসা: মৌচাককে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় (প্রায় ৪২° সেলসিয়াস) উত্তপ্ত করে ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টরকে মেরে ফেলা যায়। ৪. রাণী মৌমাছি প্রতিস্থাপন: ভারোয়া প্রতিরোধী রাণী মৌমাছি ব্যবহার করে কলোনির প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়। ৫. ড্রোন ফ্রেম অপসারণ: ড্রোন ফ্রেমগুলিতে ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টর বেশি সংখ্যায় বংশবৃদ্ধি করে, তাই নিয়মিত ড্রোন ফ্রেম অপসারণ করা উচিত। ৬. কলোনি বিভাজন: শক্তিশালী কলোনিগুলি দুর্বল কলোনির তুলনায় ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টরের আক্রমণ মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়। তাই, কলোনি বিভাজন করে শক্তিশালী কলোনি তৈরি করা যেতে পারে। ৭. মিথ প্রতিরোধক মৌমাছি (Varroa Sensitive Hygiene - VSH) এর ব্যবহার: VSH মৌমাছিরা নিজেরাই ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টর সনাক্ত করতে এবং অপসারণ করতে সক্ষম।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে মৌমাছির কলোনির স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করা যায়। কলোনির ওজন হ্রাস, মধু উৎপাদনের পরিমাণ, এবং মৌমাছির আচরণ পরিবর্তন - এই বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে ক্ষতির প্রাথমিক লক্ষণগুলো সনাক্ত করা যেতে পারে।

ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টর বর্তমানে মৌমাছি পালকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ভবিষ্যতে এই সমস্যা আরও বাড়তে পারে, কারণ:

১. কীটনাশকের resistance: ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টর কীটনাশকের প্রতি resistance তৈরি করতে পারে, যার ফলে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। ২. জলবায়ু পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মৌমাছির জীবনচক্রে পরিবর্তন আসতে পারে, যা তাদের ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টরের প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। ৩. নতুন ভাইরাস সংক্রমণ: ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টর নতুন নতুন ভাইরাস ছড়াতে সাহায্য করতে পারে, যা মৌমাছির জন্য আরও ক্ষতিকর হতে পারে।

উপসংহার

ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টর একটি মারাত্মক পরজীবী যা মৌমাছির কলোনির জন্য বড় হুমকি। সময় মতো সনাক্তকরণ এবং সঠিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। মৌমাছি পালনকারীদের উচিত নিয়মিত তাদের মৌচাক পর্যবেক্ষণ করা এবং সমন্বিত pest management পদ্ধতি অনুসরণ করা। এছাড়াও, ভারোয়া ডেস্ট্রাক্টর সম্পর্কে গবেষণা এবং নতুন নিয়ন্ত্রণ কৌশল উদ্ভাবনের জন্য বিজ্ঞানীদের আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত।

আরও জানতে:

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ

উর্Varroa destructor

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

Navigation menu