ইসলামিক ধর্ম

ভূমিকা

ইসলাম একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম যা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ-এর নিকট আত্মসমর্পণ এবং তাঁর নির্দেশিত পথে জীবন যাপনের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। 'ইসলাম' শব্দের অর্থই হলো আত্মসমর্পণ করা, আনুগত্য করা। ইসলাম শান্তির ধর্ম এবং এটি মানব জীবনের সকল দিক নিয়ে আলোচনা করে। এই ধর্মাবলম্বীদেরকে মুসলিম বলা হয়। ইসলাম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম এবং এর অনুসারীর সংখ্যা ২ বিলিয়নেরও বেশি।

উৎপত্তি ও ইতিহাস

ইসলামের উৎপত্তি আরব উপদ্বীপে সপ্তম শতাব্দীতে। ইসলামের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হলেন মুহাম্মদ (সাঃ), যাঁকে মুসলিমরা আল্লাহর শেষ নবী ও রাসূল মনে করেন। মুহাম্মদের (সাঃ) পূর্বেও অনেক নবী-রাসূল এসেছেন, যেমন ইব্রাহিম, মুসা, ঈসা (আঃ), কিন্তু তাঁদের প্রচারিত বার্তা সময়ের সাথে সাথে বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মাধ্যমে আল্লাহ্‌ তাআলা চূড়ান্ত ও সম্পূর্ণ ধর্ম ইসলাম প্রেরণ করেন।

ইসলামের প্রাথমিক ইতিহাস মক্কা ও মদিনা শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। ৬১০ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ওপর প্রথম ওয়াহী (ঐশ্বরিক বার্তা) নাজিল হয় এবং ৬১৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রকাশ্যে দাওয়াত শুরু করেন। মক্কার কুরাইশদের বিরোধিতার কারণে মুহাম্মদ (সাঃ) এবং তাঁর অনুসারীরা ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় হিজরত করেন। এই ঘটনাকে হিজরত বা ইসলামী বর্ষপঞ্জির সূচনা হিসেবে ধরা হয়। মদিনায় মুহাম্মদ (সাঃ) একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং ধীরে ধীরে আরব উপদ্বীপের অধিকাংশ অঞ্চল তাঁর নিয়ন্ত্রণে আসে।

ইসলামের মূল ভিত্তি

ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত, যা পঞ্চস্তম্ভ নামে পরিচিত। এগুলো হলো:

ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ
স্তম্ভের নাম		বিবরণ		শাহাদা	বিশ্বাসের ঘোষণা	"আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল" - এই সাক্ষ্য দেওয়া।	সালাত	নামাজ	প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা।	যাকাত	দান	সম্পদশালীদের জন্য যাকাত প্রদান করা, যা দরিদ্র ও অভাবীদের সাহায্যার্থে ব্যবহৃত হয়।	সাওম	রোজা	রমজান মাসে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও অন্যান্য জাগতিক চাহিদা থেকে বিরত থাকা।	হজ	তীর্থযাত্রা	সামর্থ্যবান মুসলিমদের জন্য জীবনে একবার মক্কায় গিয়ে হজ পালন করা।

এছাড়াও, ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসগুলো হলো:

আল্লাহ-এর একত্ববাদ: আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোনো শরীক নেই।
ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস: আল্লাহ্‌র দূত হিসেবে ফেরেশতাগণ বিদ্যমান।
আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস: আল্লাহ্‌ বিভিন্ন নবী-রাসূলের মাধ্যমে যে কিতাবগুলো প্রেরণ করেছেন, যেমন কুরআন, তাওরাত, ইনজিল এবং যাবুর।
নবী ও রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস: আল্লাহ্‌ যুগে যুগে মানবজাতির পথ প্রদর্শনের জন্য অসংখ্য নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন।
আখেরাত বা পরকালের প্রতি বিশ্বাস: মৃত্যুর পরবর্তী জীবন, কিয়ামত, হাশর, জান্নাত ও জাহান্নাম-এর উপর বিশ্বাস।
তাকদির এর উপর বিশ্বাস: ভাল ও মন্দ সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছায় হয়।

কুরআন ও সুন্নাহ

কুরআন হলো ইসলামের প্রধান ধর্মগ্রন্থ, যা আল্লাহ্‌ তাআলা মুহাম্মদের (সাঃ) উপর নাজিল করেছেন। এটি আল্লাহর বাণী এবং মুসলিমদের জন্য জীবনGuidance-এর উৎস। কুরআনের পাশাপাশি সুন্নাহও গুরুত্বপূর্ণ, যা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জীবনযাপন, কথা ও কর্মের সমষ্টি। সুন্নাহকে কুরআনের ব্যাখ্যা হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এটি ইসলামী শরিয়াহ-এর দ্বিতীয় উৎস।

ইসলামী আইন ও শরিয়াহ

শরিয়াহ হলো ইসলামী আইন, যা কুরআন ও সুন্নাহর উপর ভিত্তি করে তৈরি। শরিয়াহ জীবনের সকল দিক নিয়ন্ত্রণ করে, যেমন: উপাসনা, ব্যক্তিগত আচরণ, পারিবারিক আইন, বাণিজ্যিক আইন, এবং ফৌজদারি আইন। শরিয়াহর মূল উদ্দেশ্য হলো ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা এবং মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা।

ইসলামের বিভিন্ন শাখা

ইসলামের প্রধান দুটি শাখা হলো:

সুন্নি : এটি ইসলামের বৃহত্তম শাখা, যা মুহাম্মদের (সাঃ) সাহাবীদের প্রথা ও শিক্ষার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত।
শিয়া : এই শাখাটি মুহাম্মদের (সাঃ) বংশধরদের (আহলে বাইত) প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করে এবং তাদের নেতৃত্বকে স্বীকৃতি দেয়।

এছাড়াও, ইসলামের আরও কিছু ছোট শাখা রয়েছে, যেমন: খারিজী, মুতাযিলা, ইত্যাদি।

ইসলামী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য

ইসলাম একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বহন করে। ইসলামী শিল্পকলা, সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, এবং স্থাপত্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। ইসলামী শিল্পকলাতে জ্যামিতিক নকশা, ক্যালিগ্রাফি, এবং অ্যারাবেস্কের ব্যবহার দেখা যায়। ইসলামী সাহিত্যে কবিতা, গল্প, এবং ঐতিহাসিক রচনা উল্লেখযোগ্য। ইসলামী দর্শন গ্রিক ও অন্যান্য প্রাচীন দর্শনের দ্বারা প্রভাবিত, তবে এর মৌলিক ভিত্তি হলো তাওহিদ (এক আল্লাহর ধারণা)।

ইসলাম ও বিজ্ঞান

ইসলাম বিজ্ঞানচর্চাকে উৎসাহিত করে। মধ্যযুগে মুসলিম বিজ্ঞানীরা গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসা, রসায়ন, এবং ভূগোল-এর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। আল-খাওয়ারিজমি বীজগণিতের জনক হিসেবে পরিচিত এবং ইবনে সিনা (Avicenna) তাঁর চিকিৎসা গ্রন্থের জন্য বিখ্যাত।

ইসলামে নারী অধিকার

ইসলামে নারীদের অধিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের শিক্ষা, সম্পত্তি, এবং বিবাহ-বিচ্ছেদের অধিকার রয়েছে। তবে, পশ্চিমা বিশ্বের নারীবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু বিষয়ে ভিন্নতা দেখা যায়। ইসলামী আইন অনুযায়ী, নারীরা পুরুষদের সমান সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকারী, তবে তাদের কিছু বিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে।

ইসলাম ও আধুনিকতা

আধুনিক যুগে ইসলাম বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। পশ্চিমা সংস্কৃতি ও জীবনধারার প্রভাব, ধর্মীয় গোঁড়ামি, এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা ইসলামের অনুসারীদের জন্য নতুন সমস্যা তৈরি করেছে। তবে, মুসলিম বিশ্বের বুদ্ধিজীবী ও সংস্কারবাদীরা ইসলামের আধুনিক ব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার চেষ্টা করছেন।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং ইসলাম

বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ পদ্ধতি। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে এর বৈধতা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। কিছু ইসলামিক স্কলার মনে করেন যে, বাইনারি অপশন ট্রেডিং জুয়ার (gambling) পর্যায়ে পড়ে, যা ইসলামে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এর কারণ হলো:

অনিশ্চয়তা (Gharar): বাইনারি অপশনের ফলাফল সম্পূর্ণরূপে অনিশ্চিত।
সুদ (Riba): কিছু ক্ষেত্রে, বাইনারি অপশনে সুদের উপাদান থাকতে পারে।
জুয়া (Maisir): এটি সম্পূর্ণরূপে সুযোগের উপর নির্ভরশীল এবং এখানে ঝুঁকি অনেক বেশি।

তবে, কিছু স্কলারের মতে, যদি বাইনারি অপশন ট্রেডিং শরিয়াহ-সম্মত পদ্ধতিতে করা হয়, তবে এটি বৈধ হতে পারে। এক্ষেত্রে, নিম্নলিখিত শর্তগুলো পূরণ করতে হবে:

লেনদেনটি অবশ্যই বৈধ পণ্য বা সম্পদের উপর ভিত্তি করে হতে হবে।
ফলাফল সম্পর্কে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা থাকতে হবে।
কোনো ধরনের সুদ বা জুয়ার উপাদান থাকা চলবে না।
ঝুঁকি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত থাকতে হবে।

এসব শর্ত পূরণ করা কঠিন হওয়ায়, অধিকাংশ ইসলামিক স্কলার বাইনারি অপশন ট্রেডিং থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।

আরও জানতে

তথ্যসূত্র

কুরআন মাজিদ
সহীহ বুখারী ও মুসলিম
বিভিন্ন ইসলামিক ওয়েবসাইট ও বই

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ