ইয়ুলে-ওয়াকার পদ্ধতি

ইয়ুলে-ওয়াকার পদ্ধতি (Yule-Walker equations) একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় সিরিজ বিশ্লেষণ কৌশল। এটি মূলত অটো correlation ফাংশন ব্যবহার করে একটি স্টেশনারি সময় সিরিজ-এর অটো রিগ্রেসিভ মডেল (AR মডেল) নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতিটি পরিসংখ্যান এবং অর্থনীতি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে, এই পদ্ধতি বাজারের গতিবিধি পূর্বাভাস দিতে সহায়ক হতে পারে, যদিও সরাসরি প্রয়োগের পূর্বে এর সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি।

ইয়ুলে-ওয়াকার পদ্ধতির মূল ধারণা

ইয়ুলে-ওয়াকার পদ্ধতি মূলত দুটি ধারণার উপর ভিত্তি করে গঠিত:

অটো correlation ফাংশন: একটি সময় সিরিজের বর্তমান মানের সাথে তার পূর্ববর্তী মানগুলোর মধ্যেকার সম্পর্ককে অটো correlation ফাংশন দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এটি বিভিন্ন ল্যাগের জন্য correlation coefficient পরিমাপ করে। অটো correlation ফাংশন সময় সিরিজের বৈশিষ্ট্য বুঝতে এবং মডেল নির্বাচন করতে সহায়ক।

অটো রিগ্রেসিভ মডেল (AR মডেল): AR মডেল একটি সময় সিরিজের ভবিষ্যৎ মানকে তার পূর্ববর্তী মানগুলোর একটি রৈখিক সংমিশ্রণ হিসাবে প্রকাশ করে। ইয়ুলে-ওয়াকার পদ্ধতি এই AR মডেলের প্যারামিটারগুলো নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়। রিগ্রেশন বিশ্লেষণ এর একটি বিশেষ রূপ হলো অটো রিগ্রেসিভ মডেল।

ইয়ুলে-ওয়াকার সমীকরণ

ইয়ুলে-ওয়াকার পদ্ধতি অটো correlation ফাংশন এবং AR মডেলের মধ্যে একটি সম্পর্ক স্থাপন করে। এই সম্পর্কটি ইয়ুলে-ওয়াকার সমীকরণ নামে পরিচিত। একটি AR(p) মডেলের জন্য, যেখানে p হলো ল্যাগের সংখ্যা, ইয়ুলে-ওয়াকার সমীকরণগুলো নিম্নরূপ:

ইয়ুলে-ওয়াকার সমীকরণ
ল্যাগ (k)	সমীকরণ
k = 0	γ₀ = φ₁²γ₁ + φ₂²γ₂ + ... + φₚ²γₚ
k = 1	γ₁ = φ₂γ₁ + φ₃γ₂ + ... + φₚγₚ₋₁
k = 2	γ₂ = φ₃γ₁ + φ₄γ₂ + ... + φₚγₚ₋₂
...	...
k = p	γₚ = φₚγ₁ + φₚγ₂ + ... + φₚγₚ₋₁

এখানে,

γₖ হলো ল্যাগ k-এর জন্য অটো covariance ফাংশন।
φ₁, φ₂, ..., φₚ হলো AR মডেলের প্যারামিটার।

এই সমীকরণগুলি সমাধান করে AR মডেলের প্যারামিটারগুলো (φ₁, φ₂, ..., φₚ) নির্ণয় করা যায়।

ইয়ুলে-ওয়াকার পদ্ধতির প্রয়োগ

ইয়ুলে-ওয়াকার পদ্ধতির প্রয়োগের ধাপগুলো নিম্নরূপ:

১. সময় সিরিজ সংগ্রহ: প্রথমে, যে সময় সিরিজের মডেল তৈরি করতে হবে, সেই ডেটা সংগ্রহ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো স্টকের দৈনিক মূল্য অথবা কোনো অর্থনৈতিক সূচকের মাসিক ডেটা। ডেটা সংগ্রহ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া।

২. স্টেশনারিটি পরীক্ষা: ইয়ুলে-ওয়াকার পদ্ধতি প্রয়োগ করার আগে নিশ্চিত করতে হবে যে সময় সিরিজটি স্টেশনারি। যদি সময় সিরিজটি স্টেশনারি না হয়, তবে এটিকে স্টেশনারি করার জন্য ডিফারেন্সিং (differencing) বা অন্যান্য রূপান্তর (transformation) করা প্রয়োজন। ইউনিট রুট পরীক্ষা এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।

৩. অটো correlation ফাংশন (ACF) গণনা: সময় সিরিজের জন্য অটো correlation ফাংশন (ACF) গণনা করতে হবে। ACF প্লট করে ল্যাগের সংখ্যা (p) নির্ধারণ করা যায়। সাধারণত, ACF প্লটে উল্লেখযোগ্য correlation cutoff হওয়ার পরে ল্যাগের সংখ্যা নির্বাচন করা হয়। ACF প্লট বিশ্লেষণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

৪. ইয়ুলে-ওয়াকার সমীকরণ গঠন: ACF থেকে প্রাপ্ত মানগুলো ব্যবহার করে ইয়ুলে-ওয়াকার সমীকরণ গঠন করতে হবে।

৫. সমীকরণ সমাধান: গঠিত সমীকরণগুলো সমাধান করে AR মডেলের প্যারামিটারগুলো (φ₁, φ₂, ..., φₚ) নির্ণয় করতে হবে। এই কাজটি সাধারণত ম্যাট্রিক্স বীজগণিত এবং কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে করা হয়।

৬. মডেল যাচাইকরণ: প্রাপ্ত AR মডেলটি ডেটার সাথে সঠিকভাবে ফিট হচ্ছে কিনা, তা যাচাই করতে হবে। এর জন্য রেসিডুয়াল বিশ্লেষণ (residual analysis) এবং অন্যান্য ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা করা যেতে পারে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে ইয়ুলে-ওয়াকার পদ্ধতির ব্যবহার

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে ইয়ুলে-ওয়াকার পদ্ধতি সরাসরি ব্যবহার করা কঠিন, তবে এর ধারণাগুলো বাজারের গতিবিধি পূর্বাভাস দিতে সহায়ক হতে পারে।

মূল্য পূর্বাভাস: ইয়ুলে-ওয়াকার পদ্ধতি ব্যবহার করে কোনো সম্পদের ভবিষ্যৎ মূল্য পূর্বাভাস দেওয়া যেতে পারে। এই পূর্বাভাস বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হতে পারে। মূল্য পূর্বাভাস কৌশলগুলি এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: AR মডেল ব্যবহার করে বাজারের অস্থিরতা (volatility) পরিমাপ করা যেতে পারে, যা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে। ঝুঁকি মূল্যায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
ট্রেডিং সংকেত তৈরি: AR মডেল থেকে প্রাপ্ত পূর্বাভাস এবং বাজারের বর্তমান অবস্থার উপর ভিত্তি করে ট্রেডিং সংকেত তৈরি করা যেতে পারে। ট্রেডিং কৌশল নির্ধারণে এটি সহায়ক।

তবে, মনে রাখতে হবে যে কোনো পূর্বাভাসই সম্পূর্ণ নির্ভুল নয়। তাই, ইয়ুলে-ওয়াকার পদ্ধতির পূর্বাভাসকে অন্যান্য টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ পদ্ধতির সাথে সমন্বিত করে ব্যবহার করা উচিত।

ইয়ুলে-ওয়াকার পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা

ইয়ুলে-ওয়াকার পদ্ধতির কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে:

স্টেশনারিটি: এই পদ্ধতি শুধুমাত্র স্টেশনারি সময় সিরিজের জন্য প্রযোজ্য।
লিনিয়ার সম্পর্ক: AR মডেল শুধুমাত্র ডেটার মধ্যে রৈখিক সম্পর্কগুলি বিবেচনা করে।
ল্যাগের সংখ্যা: সঠিক ল্যাগের সংখ্যা (p) নির্বাচন করা কঠিন হতে পারে। ভুল ল্যাগ নির্বাচন করলে মডেলের নির্ভুলতা কমে যেতে পারে।
বহির্মুখী প্রভাব: এই পদ্ধতি বহির্মুখী প্রভাবগুলো (exogenous variables) বিবেচনা করে না।

বিকল্প পদ্ধতি

ইয়ুলে-ওয়াকার পদ্ধতির বিকল্প হিসেবে আরও কিছু সময় সিরিজ বিশ্লেষণ পদ্ধতি রয়েছে:

বক্স-জেনকিন্স পদ্ধতি (Box-Jenkins method): এটি ARIMA মডেল (Autoregressive Integrated Moving Average) তৈরির জন্য একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। ARIMA মডেল আরও নমনীয় এবং জটিল সময় সিরিজ মডেলিংয়ের জন্য উপযুক্ত।
কালমান ফিল্টার (Kalman filter): এটি একটি শক্তিশালী ফিল্টারিং অ্যালগরিদম, যা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনশীল সিস্টেমের অবস্থা অনুমান করতে ব্যবহৃত হয়। কালমান ফিল্টারিং জটিল সিস্টেমের মডেলিংয়ের জন্য উপযোগী।
GARCH মডেল: এটি সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল অস্থিরতা (volatility) মডেলিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। GARCH মডেল আর্থিক বাজারের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
স্পেকট্রাল বিশ্লেষণ (Spectral analysis): এই পদ্ধতিটি সময় সিরিজের ফ্রিকোয়েন্সি ডোমেইন বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে। ফুরিয়ার ট্রান্সফর্ম এর উপর ভিত্তি করে এই বিশ্লেষণ করা হয়।

উপসংহার

ইয়ুলে-ওয়াকার পদ্ধতি সময় সিরিজ বিশ্লেষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। এটি AR মডেলের প্যারামিটার নির্ধারণ করতে এবং বাজারের গতিবিধি পূর্বাভাস দিতে সহায়ক। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে, এই পদ্ধতি অন্যান্য বিশ্লেষণের সাথে সমন্বিত করে ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে। তবে, এর সীমাবদ্ধতাগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং বিকল্প পদ্ধতিগুলো বিবেচনা করা উচিত। সময় সিরিজ পূর্বাভাস এর জন্য এটি একটি মৌলিক এবং প্রয়োজনীয় ধারণা।

টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন মুভিং এভারেজ আরএসআই (RSI) MACD বোলিঙ্গার ব্যান্ড ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স ট্রেণ্ড লাইন ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP) অন-ব্যালেন্স ভলিউম (OBV) এলিট ওয়েভ থিওরি ডাউন জোনস ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল এভারেজ এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ন্যাসডাক ফরেক্স ট্রেডিং ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন অর্থনৈতিক সূচক

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ