ইচিং

From binaryoption
Jump to navigation Jump to search
Баннер1

ইচিং : প্রাচীন চীনের ভবিষ্যদ্বাণী শাস্ত্র

ভূমিকা

ইচিং (易經), যার অর্থ ‘পরিবর্তনের গ্রন্থ’, মানবজাতির প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী গ্রন্থগুলির মধ্যে অন্যতম। এটি প্রায় তিন হাজার বছর ধরে চীনা সংস্কৃতি, দর্শন, এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় গভীরভাবে প্রোথিত। মূলত একটি ভবিষ্যদ্বাণী শাস্ত্র হিসেবে পরিচিত হলেও, ইচিং শুধু ভবিষ্যৎ বলার যন্ত্র নয়, বরং এটি একটি জটিল দার্শনিক ব্যবস্থা, যা মহাবিশ্বের নিয়ম, পরিবর্তন এবং মানব জীবনের পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করে। এই নিবন্ধে, ইচিং-এর ইতিহাস, মূল ধারণা, ব্যবহার, এবং আধুনিক প্রেক্ষাপটে এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

ইতিহাস

ইচিং-এর উৎপত্তির ইতিহাস বেশ প্রাচীন এবং কিংবদন্তিতুল্য। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, ইচিং-এর ধারণাটি ফু হsi (伏羲) নামক একজন পৌরাণিক সম্রাট দ্বারা প্রথম উদ্ভাবিত হয়েছিল। ফু হsi আকাশের পর্যবেক্ষণ থেকে আটটি ত্রোগ্রাম (八卦) তৈরি করেন, যা প্রকৃতির মৌলিক শক্তি এবং দিকগুলিকে উপস্থাপন করে। পরবর্তীতে, শauং (邵雍) নামক একজন দার্শনিক এই ত্রোগ্রামগুলির সমন্বয়ে ৬৪টি হেক্সাগ্রাম (六十四卦) তৈরি করেন এবং তাদের দার্শনিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন।

ইচিং-এর প্রাচীনতম লিখিত রূপ পাওয়া যায় হান রাজবংশের (Han Dynasty) সময়কালে (২০৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ - ২২০ খ্রিস্টাব্দ)। সময়ের সাথে সাথে, ইচিং-এর উপর বিভিন্ন দার্শনিক এবং চিন্তাবিদগণ তাদের নিজস্ব ব্যাখ্যা যোগ করেছেন, যার ফলে এটি একটি বহুস্তরীয় এবং জটিল গ্রন্থে পরিণত হয়েছে। কনফুসিয়াস (Confucius) এবং লাও Tzu (Lao Tzu)-এর মতো প্রভাবশালী দার্শনিকরাও ইচিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

মূল ধারণা

ইচিং-এর মূল ভিত্তি হলো ‘ইন’ (陰) এবং ‘ইয়াং’ (陽) এই দুইটি পরস্পর বিপরীত ধারণা। ইন হলো নারীত্ব, অন্ধকার, শীতলতা, এবং স্থিতিশীলতার প্রতীক, অন্যদিকে ইয়াং হলো পৌরুষত্ব, আলো, উষ্ণতা, এবং গতিশীলতার প্রতীক। এই দুইটি শক্তি একে অপরের পরিপূরক এবং মহাবিশ্বের সবকিছুতেই এদের উপস্থিতি বিদ্যমান।

ত্রোগ্রাম (Trigram)

আটটি ত্রোগ্রাম হলো ইচিং-এর মৌলিক উপাদান। প্রতিটি ত্রোগ্রাম তিনটি লাইন দ্বারা গঠিত, যা ইন (ভাঙা লাইন) এবং ইয়াং (সাদা লাইন) দ্বারা গঠিত হতে পারে। এই আটটি ত্রোগ্রাম হলো:

  • Ch'ien (乾): আকাশ, শক্তি, সৃজনশীলতা।
  • K'un (坤): পৃথিবী, গ্রহণशीलता, পুষ্টি।
  • Chen (震): বজ্র, উত্তেজনা, শুরু।
  • Hsün (巽): বায়ু, অনুপ্রবেশ, নম্রতা।
  • K'an (坎): জল, বিপদ, গভীরতা।
  • Li (離): আগুন, উজ্জ্বলতা, নির্ভরতা।
  • Ken (艮): পর্বত, স্থিতিশীলতা, বাধা।
  • Tui (兌): হ্রদ, আনন্দ, সংবেদনশীলতা।

হেক্সাগ্রাম (Hexagram)

দুটি ত্রোগ্রামের সমন্বয়ে একটি হেক্সাগ্রাম গঠিত হয়। ৬৪টি হেক্সাগ্রাম প্রতিটি জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতি এবং পরিবর্তনের পর্যায়গুলিকে উপস্থাপন করে। প্রতিটি হেক্সাগ্রামের একটি নির্দিষ্ট নাম এবং ব্যাখ্যা রয়েছে, যা ভবিষ্যতের সম্ভাবনা এবং কর্মপন্থা সম্পর্কে ধারণা দেয়।

ইচিং-এর ব্যবহার

ইচিং বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • ভবিষ্যদ্বাণী: ইচিং-এর প্রধান ব্যবহার হলো ভবিষ্যতের সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা। এটি কোনো নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দিতে বা কোনো বিশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি পেতে সাহায্য করে।
  • সিদ্ধান্ত গ্রহণ: জটিল পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ইচিং একটি মূল্যবান সহায়ক হতে পারে। এটি বিভিন্ন বিকল্পের ফলাফল সম্পর্কে ধারণা দেয় এবং সেরা পথ বেছে নিতে সাহায্য করে।
  • আত্ম-অনুসন্ধান: ইচিং নিজের সম্পর্কে গভীর ধারণা পেতে এবং ব্যক্তিগত উন্নয়নে সহায়তা করে। এটি নিজের শক্তি এবং দুর্বলতাগুলি বুঝতে এবং জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করে।
  • পরিবর্তন বোঝা: ইচিং মহাবিশ্বের পরিবর্তনশীল প্রকৃতি এবং জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে পরিবর্তনের সাথে কিভাবে খাপ খাইয়ে নিতে হয়, সে সম্পর্কে শিক্ষা দেয়।

ইচিং ব্যবহারের পদ্ধতি

ইচিং ব্যবহারের জন্য সাধারণত তিনটি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়:

১. ইয়ো কিং (Yarrow Stalks): এটি একটি প্রাচীন পদ্ধতি, যেখানে ৫০টি ইয়ো স্টিক ব্যবহার করে দৈবচয়নের মাধ্যমে হেক্সাগ্রাম নির্ধারণ করা হয়।

২. মুদ্রা নিক্ষেপ (Coin Toss): এই পদ্ধতিতে তিনটি মুদ্রা ব্যবহার করে ছয়টি লাইন তৈরি করা হয়, যা হেক্সাগ্রামের রূপ নির্ধারণ করে।

৩. অনলাইন ইচিং: বর্তমানে, অনলাইনে বিভিন্ন ইচিং ক্যালকুলেটর এবং ওয়েবসাইট পাওয়া যায়, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হেক্সাগ্রাম তৈরি করে এবং তার ব্যাখ্যা প্রদান করে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে ইচিং-এর সম্পর্ক

বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ প্রক্রিয়া। এখানে, ইচিং-এর মূল ধারণাগুলো ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হতে পারে। যদিও সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই, তবুও কিছু সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়:

  • ঝুঁকি মূল্যায়ন: ইচিং-এর হেক্সাগ্রামগুলি ভবিষ্যতের সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা দেয়, যা ট্রেডিংয়ে ঝুঁকির পূর্বাভাস দিতে সাহায্য করে।
  • সময়ের সঠিক নির্বাচন: ইচিং পরিবর্তনের উপর জোর দেয়। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে সঠিক সময়ে ট্রেড করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং ইচিং এই বিষয়ে অন্তর্দৃষ্টি দিতে পারে।
  • মানসিক স্থিতিশীলতা: ইচিং মানসিক শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা ট্রেডিংয়ের সময় আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটি কৌশল ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি এবং প্রবণতা বোঝা যায়।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ:

  • চার্ট প্যাটার্ন (Chart Patterns): বিভিন্ন চার্ট প্যাটার্ন যেমন হেড অ্যান্ড শোল্ডারস (Head and Shoulders), ডাবল টপ (Double Top), এবং ডাবল বটম (Double Bottom) ট্রেডিংয়ের সংকেত দিতে পারে।
  • মুভিং এভারেজ (Moving Average): মুভিং এভারেজ ব্যবহার করে বাজারের গড় গতিবিধি বোঝা যায় এবং ভবিষ্যৎ প্রবণতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
  • আরএসআই (RSI): রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইনডেক্স (Relative Strength Index) ব্যবহার করে বাজারের অতিরিক্ত কেনা বা অতিরিক্ত বিক্রির পরিস্থিতি বোঝা যায়।
  • ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলি সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স এরিয়া চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।

ভলিউম বিশ্লেষণ:

  • ভলিউম (Volume): ভলিউম হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে হওয়া ট্রেডের সংখ্যা। উচ্চ ভলিউম সাধারণত একটি শক্তিশালী প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়।
  • অন-ব্যালেন্স ভলিউম (OBV): অন-ব্যালেন্স ভলিউম হলো একটি টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর, যা ভলিউম এবং মূল্যের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করে।
  • ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP): ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস হলো একটি গড় মূল্য, যা ভলিউমের উপর ভিত্তি করে গণনা করা হয়।

অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কৌশল

  • ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ (Fundamental Analysis): অর্থনৈতিক সূচক এবং কোম্পানির আর্থিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া।
  • সংবাদ ভিত্তিক ট্রেডিং (News Based Trading): গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক খবরের উপর ভিত্তি করে ট্রেড করা।
  • ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management): ট্রেডিংয়ের ঝুঁকি কমাতে স্টপ-লস (Stop-Loss) এবং টেক-প্রফিট (Take-Profit) ব্যবহার করা।
  • মানি ম্যানেজমেন্ট (Money Management): আপনার ট্রেডিং ক্যাপিটালের সঠিক ব্যবহার এবং ঝুঁকি বিতরণ করা।

ইচিং এবং আধুনিক বিজ্ঞান

আধুনিক বিজ্ঞান ইচিং-এর কিছু ধারণার সাথে আশ্চর্যজনকভাবে মিলে যায়। উদাহরণস্বরূপ, কোয়ান্টাম ফিজিক্স-এর ধারণা যে সবকিছু পরস্পর সম্পর্কিত এবং পরিবর্তনশীল, তা ইচিং-এর ‘ইন’ এবং ‘ইয়াং’-এর দ্বৈততার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।

ইচিং-এর সীমাবদ্ধতা

ইচিং একটি জটিল এবং প্রতীকী গ্রন্থ, যার ব্যাখ্যা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। এটি ভবিষ্যতের একটি নিশ্চিত পূর্বাভাস নয়, বরং একটি সম্ভাবনা মাত্র। ইচিং-এর উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়, বরং নিজের বিচারবুদ্ধি এবং বাস্তবতার নিরিখে বিবেচনা করা উচিত।

উপসংহার

ইচিং একটি প্রাচীন এবং গভীর দার্শনিক গ্রন্থ, যা মানব জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। এটি শুধু একটি ভবিষ্যদ্বাণী শাস্ত্র নয়, বরং একটি জীবনদর্শন, যা পরিবর্তন, ভারসাম্য, এবং মানব সম্ভাবনার উপর জোর দেয়। আধুনিক যুগেও, ইচিং তার প্রাসঙ্গিকতা বজায় রেখেছে এবং ব্যক্তিজীবনে সঠিক পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করে চলেছে। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের মতো ক্ষেত্রগুলোতেও এর মূল ধারণাগুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হতে পারে, তবে তা অবশ্যই সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে।

আরও জানতে:

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ

Баннер