আয়কর আইনের ধারা এবং নিয়মাবলী
আয়কর আইনের ধারা এবং নিয়মাবলী
ভূমিকা
আয়কর একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। এটি সরকারের রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস, যা জনগণের কল্যাণমূলক কাজে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে, আয়কর ব্যবস্থা মূলত আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এবং এর অধীনে জারিকৃত বিধি ও প্রজ্ঞাপন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই নিবন্ধে, আয়কর আইনের গুরুত্বপূর্ণ ধারা এবং নিয়মাবলী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। এখানে বিনিয়োগ এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর মাধ্যমে অর্জিত আয়ের উপর কর কিভাবে প্রযোজ্য হয়, সে বিষয়েও আলোকপাত করা হবে।
আয়করের ভিত্তি
আয়কর হলো কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আয়ের উপর ধার্য করা কর। এই আয়ের মধ্যে বেতন, ব্যবসা, পেশা, সম্পত্তি এবং অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত আয় অন্তর্ভুক্ত। আয়কর সাধারণত বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, যেমন - ব্যক্তিগত আয়কর, কর্পোরেট আয়কর, এবং অন্যান্য বিশেষ কর।
আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর গুরুত্বপূর্ণ ধারা
আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- ধারা ২: সংজ্ঞা - এই ধারায় আয়কর সম্পর্কিত বিভিন্ন শব্দ ও তাদের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। যেমন - আয়, মূল্যায়ন বছর, করবর্ষ, ইত্যাদি।
- ধারা ৩: করের উপর চার্জ - এই ধারায় কর আরোপের বিষয়ে বলা হয়েছে।
- ধারা ৪: আয়ের উৎস - এখানে আয়ের উৎসগুলো উল্লেখ করা হয়েছে, যা করের আওতায় আসবে।
- ধারা ৫: অব্যাহতি - এই ধারায় কিছু নির্দিষ্ট আয়কে কর থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
- ধারা ৬: মূল্যায়ন পদ্ধতি - কিভাবে আয় মূল্যায়ন করা হবে, তার নিয়মাবলী এখানে বর্ণিত আছে।
- ধারা ১৭: কর গণনা - এই ধারায় কর কিভাবে গণনা করা হয়, তার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
- ধারা ১৯: অগ্রিম কর - এই ধারায় অগ্রিম কর প্রদানের নিয়মাবলী আলোচনা করা হয়েছে।
- ধারা ২৩: রিটার্ন দাখিল - এই ধারায় আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম ও সময়সীমা উল্লেখ করা হয়েছে।
আয়কর নিয়মাবলী
আয়কর নিয়মাবলী প্রতি বছর পরিবর্তিত হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) সময়ে সময়ে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই পরিবর্তনগুলো কার্যকর করে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়মাবলী নিচে উল্লেখ করা হলো:
- আয়কর হার: বাংলাদেশে বিভিন্ন স্তরের আয়ের জন্য বিভিন্ন হারে আয়কর প্রযোজ্য। সাধারণত, কর হারprogressive বা ক্রমবর্ধনশীল হয়ে থাকে।
- করমুক্ত সীমা: সরকার প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়কে করমুক্ত ঘোষণা করে। এই সীমার নিচে আয় হলে কোনো কর দিতে হয় না।
- বিভিন্ন প্রকার ছাড়: আয়কর আইন অনুসারে, কিছু নির্দিষ্ট বিনিয়োগ এবং ব্যয়ের উপর কর ছাড় পাওয়া যায়। যেমন - জীবন বীমা প্রিমিয়াম, সঞ্চয়পত্র, বাড়ি নির্মাণ ঋণ ইত্যাদি।
- অগ্রিম কর (Advance Tax): নির্দিষ্ট আয়ের উৎস থেকে আয় হলে, করদাতাকে প্রতি মাসে বা ত্রৈমাসিকে অগ্রিম কর পরিশোধ করতে হয়।
- আয়কর রিটার্ন দাখিল: প্রত্যেক করদাতাকে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। রিটার্ন দাখিল করার নিয়মাবলী এবং সময়সীমা NBR কর্তৃক নির্ধারিত হয়।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং আয়কর
বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি জটিল আর্থিক বিনিয়োগ। এই ট্রেডিং থেকে অর্জিত আয় বাংলাদেশে করযোগ্য আয় হিসেবে বিবেচিত হয়। যেহেতু বাইনারি অপশন ট্রেডিং থেকে প্রাপ্ত আয় বিনিয়োগের মুনাফা, তাই এটি মূলধন লাভ (Capital Gain) হিসেবে গণ্য হবে। এই আয়ের উপর প্রযোজ্য করহার অন্যান্য আয়ের থেকে ভিন্ন হতে পারে।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং থেকে আয়ের উপর করের নিয়মাবলী:
- আয়ের উৎস: বাইনারি অপশন ট্রেডিং থেকে প্রাপ্ত যেকোনো মুনাফা করযোগ্য আয় হিসেবে বিবেচিত হবে।
- করহার: এই আয়ের উপর দীর্ঘমেয়াদী মূলধন লাভ কর প্রযোজ্য হতে পারে, যা সাধারণত ১০% থেকে ১৫% এর মধ্যে থাকে। তবে, করহার সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে।
- নথিভুক্তকরণ: বাইনারি অপশন ট্রেডিং থেকে অর্জিত আয়ের সঠিক হিসাব রাখা এবং আয়কর রিটার্নের সাথে যুক্ত করা আবশ্যক।
- টিডিএস (TDS): কিছু ক্ষেত্রে, ব্রোকার বা প্ল্যাটফর্ম থেকে টিডিএস কাটা হতে পারে, যা পরবর্তীতে আয়কর রিটার্নে সমন্বয় করা যায়।
বিভিন্ন প্রকার আয় এবং তাদের করহার
বিভিন্ন প্রকার আয়ের উপর বিভিন্ন হারে কর প্রযোজ্য হয়। নিচে একটি সাধারণ চিত্র দেওয়া হলো:
| বেতন | progressive rate (সর্বোচ্চ ৩০%) | ব্যবসা আয় | progressive rate (সর্বোচ্চ ৩০%) | বাড়ি ভাড়া থেকে আয় | progressive rate (সর্বোচ্চ ৩০%) | সুদ থেকে আয় | ১০% | কৃষি আয় | করমুক্ত (কিছু শর্ত প্রযোজ্য) | মূলধন লাভ (দীর্ঘমেয়াদী) | ১০% - ১৫% | মূলধন লাভ (স্বল্পমেয়াদী) | progressive rate (মোট আয়ের সাথে যুক্ত হয়ে) |
কর ছাড়ের সুযোগ
আয়কর আইন অনুসারে, করদাতারা কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কর ছাড়ের সুযোগ পান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো:
- জীবন বীমা: জীবন বীমা প্রিমিয়ামের উপর কর ছাড় পাওয়া যায় (সর্বোচ্চ ৬০,০০০ টাকা পর্যন্ত)।
- সঞ্চয়পত্র: বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের উপর কর ছাড় পাওয়া যায়।
- বাড়ি নির্মাণ ঋণ: বাড়ি নির্মাণের জন্য গৃহীত ঋণের উপর সুদ পরিশোধের ক্ষেত্রে কর ছাড় পাওয়া যায়।
- শিক্ষাব্যয়: সন্তানের শিক্ষাব্যয়ের জন্য প্রদত্ত অর্থের উপর কর ছাড় পাওয়া যায়।
- স্বাস্থ্য বীমা: স্বাস্থ্য বীমার প্রিমিয়ামের উপর কর ছাড় পাওয়া যায়।
- পেনশন স্কিম: অনুমোদিত পেনশন স্কিমে বিনিয়োগের উপর কর ছাড় পাওয়া যায়।
আয়কর রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়া
আয়কর রিটার্ন দাখিল করা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এটি সাধারণত অনলাইনে এবং অফলাইনে দুইভাবে করা যায়।
- অনলাইন রিটার্ন দাখিল: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (NBR) ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা যায়। এর জন্য করদাতার একটি ই-টিআইএন (e-TIN) থাকতে হবে।
- অফলাইন রিটার্ন দাখিল: সরাসরি আয়কর অফিসে গিয়ে অথবা অনুমোদিত ব্যাংক শাখা থেকে রিটার্ন ফর্ম সংগ্রহ করে পূরণ করে জমা দেওয়া যায়।
রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা সাধারণত প্রতি বছর ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত থাকে। তবে, সরকার প্রয়োজনে এই সময়সীমা বাড়াতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ টিপস
- ই-টিআইএন (e-TIN) গ্রহণ করুন: আয়কর প্রদানের জন্য একটি ই-টিআইএন থাকা আবশ্যক।
- সঠিক হিসাব রাখুন: আপনার সমস্ত আয় এবং ব্যয়ের সঠিক হিসাব রাখুন।
- সময়মতো রিটার্ন দাখিল করুন: নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করুন।
- বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন: জটিল কর সংক্রান্ত বিষয়ে অভিজ্ঞ আইনজীবীর বা কর উপদেষ্টার পরামর্শ নিন।
- NBR-এর ওয়েবসাইট দেখুন: আয়কর সম্পর্কিত সর্বশেষ তথ্য এবং নিয়মাবলীর জন্য NBR-এর ওয়েবসাইট নিয়মিত দেখুন।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ঝুঁকি এবং কর পরিকল্পনা
বাইনারি অপশন ট্রেডিং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এই ট্রেডিংয়ে বিনিয়োগ করার আগে ঝুঁকির মাত্রা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। একই সাথে, এই ট্রেডিং থেকে অর্জিত আয়ের উপর করের প্রভাব সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে এবং সেই অনুযায়ী কর পরিকল্পনা করতে হবে।
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে বিনিয়োগের পরিমাণ সীমিত রাখুন এবং স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করুন।
- আয়ের হিসাব রাখা: প্রতিটি ট্রেডের ফলাফল সঠিকভাবে নথিভুক্ত করুন।
- কর পরামর্শ: একজন কর বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে আপনার কর পরিকল্পনা তৈরি করুন।
- নিয়মিত পর্যালোচনা: আপনার বিনিয়োগ এবং কর পরিকল্পনা নিয়মিত পর্যালোচনা করুন।
উপসংহার
আয়কর আইন একটি জটিল বিষয়। এই আইনের ধারা ও নিয়মাবলী সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা প্রত্যেক করদাতার জন্য জরুরি। বিশেষ করে, বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর মতো নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে করের নিয়মাবলী সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। সময়মতো আয়কর রিটার্ন দাখিল করে এবং সঠিক কর পরিকল্পনা করে আপনি আইনি জটিলতা এড়াতে পারবেন।
আরও জানতে
- জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR)
- আয়কর আইন, ১৯৮৪
- বাজেট
- অর্থনীতি
- বিনিয়োগ
- মূলধন লাভ
- অগ্রিম কর
- আয়কর রিটার্ন
- ই-টিআইএন
- কর ছাড়
কৌশল, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
- মুভিং এভারেজ
- আরএসআই (RSI)
- এমএসিডি (MACD)
- ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট
- ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP)
- অন-ব্যালেন্স ভলিউম (OBV)
- ডাবল টপ এবং ডাবল বটম
- হেড অ্যান্ড শোল্ডারস প্যাটার্ন
- ট্রায়াঙ্গেল প্যাটার্ন
- ফ্ল্যাগ এবং পেন্যান্ট
- গ্যাপ বিশ্লেষণ
- চার্ট প্যাটার্ন
- টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
