আইস্যাক নিউটন

পরিচিতি

স্যার আইস্যাক নিউটন (ডিসেম্বর ২৫, ১৬৪২ – মার্চ ২০, ১৭২৭) ছিলেন একজন ইংরেজ পদার্থবিদ, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ, দার্শনিক এবং রসায়নবিদ। তাঁকে সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানী ও গণিতবিদদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নিউটনের কাজের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী হলো মহাকর্ষের সূত্র এবং গতির সূত্র। এই সূত্রগুলো আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেছে। তিনি ক্যালকুলাস নামক গণিতের একটি নতুন শাখা উদ্ভাবন করেন, যা প্রকৌশল, বিজ্ঞান এবং অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

প্রারম্ভিক জীবন এবং শিক্ষা

আইস্যাক নিউটন ১৬৪২ সালের ২৫শে ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের উলস্টর্প-বাই-কলস্টারওয়ার্থ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ড্যার্ক নিউটন ছিলেন একজন কৃষক এবং মা হান্না এস্কফ ছিলেন স্থানীয় প্রভাবশালী পরিবারের কন্যা। নিউটনের বাবা তাঁর জন্মের কয়েক মাস আগে মারা যান। শৈশবে নিউটন দুর্বল ও অসুস্থ ছিলেন।

নিউটন তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন স্থানীয় বিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে, ১৬৬১ সালে তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়-এর ট্রিনিটি কলেজ-এ ভর্তি হন। সেখানে তিনি গণিত, জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি এবং জ্যোতির্বিদ্যা অধ্যয়ন করেন। ১৬৬৪ সালে তিনি স্নাতক এবং ১৬৬৬ সালে তিনি মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

বৈজ্ঞানিক অবদান

আইস্যাক নিউটনের বৈজ্ঞানিক অবদানগুলি বহু বিস্তৃত। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অবদান আলোচনা করা হলো:

মহাকর্ষের সূত্র: নিউটনের সবচেয়ে বিখ্যাত আবিষ্কার হলো মহাকর্ষের সূত্র। তিনি প্রমাণ করেন যে, পৃথিবীর দিকে আপেল পড়ার কারণ একই শক্তি যা চাঁদকে পৃথিবীর চারপাশে ধরে রাখে। এই সূত্র অনুসারে, দুটি বস্তুর মধ্যে আকর্ষণ বল তাদের ভরের গুণফলের সমানুপাতিক এবং তাদের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক। এই সূত্র মহাবিশ্বের বস্তুসমূহের গতিবিধি ব্যাখ্যা করতে সহায়ক।

গতির সূত্র: নিউটন গতির তিনটি সূত্র প্রণয়ন করেন, যা শাস্ত্রীয় বলবিদ্যা-র ভিত্তি স্থাপন করে। প্রথম সূত্রটি হলো জড়তার সূত্র, যা বলে যে কোনো বস্তু স্থির থাকলে স্থির থাকতে চায় এবং গতিশীল থাকলে একই বেগে সরলরেখায় চলতে থাকে যতক্ষণ না কোনো বাহ্যিক বল তার উপর প্রযুক্ত হয়। দ্বিতীয় সূত্রটি হলো ত্বরণের সূত্র, যা বলে যে কোনো বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল তার ভর এবং ত্বরণের গুণফলের সমান। তৃতীয় সূত্রটি হলো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সূত্র, যা বলে যে প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।

আলোর তত্ত্ব: নিউটন আলোর প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা করেন এবং প্রমাণ করেন যে সাদা আলো সাতটি রঙের মিশ্রণ - বেগুনী, নীল, আকাশি, সবুজ, হলুদ, কমলা এবং লাল। তিনি আলোর প্রতিসরণ এবং বিচ্ছুরণ নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন।

ক্যালকুলাস: নিউটন স্বাধীনভাবে গটফ্রিড লাইবনিজ-এর সাথে ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেন। ক্যালকুলাস হলো গণিতের একটি শাখা যা পরিবর্তনশীল রাশিগুলির অধ্যয়ন করে। এটি প্রকৌশল, বিজ্ঞান এবং অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

দ্বিপদী উপপাদ্য: নিউটন দ্বিপদী উপপাদ্য (Binomial Theorem) সাধারণীকরণ করেন, যা বীজগণিতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা।

অপটিক্স: তিনি "অপটিক্স" (Opticks) নামক একটি বই লেখেন, যেখানে তিনি আলো এবং রঙের উপর তাঁর তত্ত্বগুলি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেন।

দার্শনিক অবদান

আইস্যাক নিউটন শুধুমাত্র একজন বিজ্ঞানী ছিলেন না, তিনি একজন দার্শনিকও ছিলেন। তিনি ধর্ম, অধিবিদ্যা, এবং বিজ্ঞানের দর্শন নিয়েও চিন্তা করেন। নিউটনের দার্শনিক ধারণাগুলি তাঁর বৈজ্ঞানিক কাজের সাথে গভীরভাবে জড়িত ছিল। তিনি মনে করতেন যে মহাবিশ্বের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম আছে এবং এই নিয়মগুলি ঈশ্বরের দ্বারা নির্ধারিত।

আলকেমি এবং ধর্মীয় বিশ্বাস

নিউটন গোপনে আলকেমি নিয়েও গবেষণা করতেন। তিনি অমরত্বের সন্ধান এবং মৌলিক পদার্থ তৈরি করার চেষ্টা করতেন। তাঁর আলকেমিক লেখাগুলি তাঁর বৈজ্ঞানিক কাজের চেয়ে কম পরিচিত, তবে এগুলি তাঁর চিন্তাধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক প্রকাশ করে।

নিউটন ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান। তিনি বাইবেল এবং ধর্মীয় গ্রন্থগুলির অধ্যয়ন করতেন এবং ধর্মীয় বিষয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করতেন।

কর্মজীবন

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা: ১৬৬৯ সালে নিউটন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়-এর গণিতের অধ্যাপক (লুসিয়ান অধ্যাপক) হিসেবে নিযুক্ত হন। সেখানে তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে শিক্ষকতা করেন।

রয়্যাল সোসাইটির সদস্য: ১৬৭১ সালে নিউটন রয়্যাল সোসাইটি-র সদস্য নির্বাচিত হন।

মিন্টের তত্ত্বাবধায়ক: ১৬৯৬ সালে নিউটন মিন্ট-এর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিযুক্ত হন। এই পদে তিনি মুদ্রা সংস্কার এবং জালিয়াতি রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

রয়্যাল সোসাইটির সভাপতি: ১৭০৩ সালে নিউটন রয়্যাল সোসাইটি-র সভাপতি নির্বাচিত হন এবং তিনি তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই পদে ছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবন

আইস্যাক নিউটন কখনও বিয়ে করেননি। তিনি তাঁর জীবন বিজ্ঞান ও গবেষণার প্রতি উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি খুবই অন্তর্মুখী এবং একাকী স্বভাবের ছিলেন।

মৃত্যু

আইস্যাক নিউটন ১৭২৭ সালের ২০শে মার্চ লন্ডনে মারা যান। তাঁকে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে-তে সমাধিস্থ করা হয়।

নিউটনের কাজের প্রভাব

আইস্যাক নিউটনের কাজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। তাঁর সূত্রগুলি আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং প্রকৌশল, মহাকাশ বিজ্ঞান, এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। নিউটনের ক্যালকুলাস গণিতের একটি অপরিহার্য শাখা হিসেবে আজও ব্যবহৃত হচ্ছে।

ক্ষেত্র	অবদান	পদার্থবিদ্যা	গতির সূত্র, মহাকর্ষের সূত্র, আলোর তত্ত্ব	গণিত	ক্যালকুলাস, দ্বিপদী উপপাদ্য	জ্যোতির্বিদ্যা	গ্রহের গতিবিধি, দূরবীক্ষণ যন্ত্রের উন্নতি	দর্শন	বিজ্ঞানের দর্শন, অধিবিদ্যা	আলকেমি	গোপন গবেষণা

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে সম্পর্ক (রূপক)

যদিও আইস্যাক নিউটন সরাসরি বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে জড়িত ছিলেন না, তবে তাঁর উদ্ভাবিত ক্যালকুলাস এবং সম্ভাব্যতা তত্ত্ব আধুনিক টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ভিত্তি স্থাপন করেছে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ, একজন ট্রেডারকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি সম্পদের মূল্য বৃদ্ধি পাবে নাকি হ্রাস পাবে তা অনুমান করতে হয়। এই ক্ষেত্রে, নিউটনের ক্যালকুলাস ব্যবহার করে সময়ের সাথে সাথে দামের পরিবর্তন বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।

সম্ভাব্যতা তত্ত্ব: নিউটনের কাজ সম্ভাব্যতা তত্ত্বের বিকাশে সহায়ক হয়েছে, যা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ঝুঁকির মূল্যায়ন এবং সম্ভাব্য লাভের হিসাব করতে ব্যবহৃত হয়।
ডেটা বিশ্লেষণ: নিউটনের পদ্ধতিগুলি ডেটা বিশ্লেষণের জন্য একটি কাঠামো প্রদান করে, যা ট্রেডারদের বাজারের প্রবণতা সনাক্ত করতে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
ভলিউম বিশ্লেষণ: যদিও সরাসরি নয়, নিউটনের গাণিতিক মডেলগুলি ভলিউম এবং মূল্যের মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে সহায়ক হতে পারে, যা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ সাফল্যের জন্য যেমন নির্ভুল বিশ্লেষণ এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রয়োজন, তেমনি নিউটনের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিও ছিল নির্ভুল পর্যবেক্ষণ এবং যুক্তিবোধের উপর নির্ভরশীল।

আরও দেখুন

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ