আইএসআইএস
আইএসআইএস (ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া)
আইএসআইএস-এর পরিচিতি
আইএসআইএস (Islamic State of Iraq and Syria), যা ইসলামিক স্টেট (IS) বা দায়েশ (DAESH) নামেও পরিচিত, একটি সুন্নি জঙ্গি সংগঠন। এই সংগঠনটি ইরাক ও সিরিয়ার বেশ কিছু অঞ্চল দখল করে নিজেদের একটি খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিল। আইএসআইএস-এর উদ্ভব আল-কায়েদার একটি শাখা হিসেবে, কিন্তু পরবর্তীতে তারা নিজেদের স্বতন্ত্র ঘোষণা করে এবং আল-কায়েদার কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
আইএসআইএস-এর ইতিহাস
আইএসআইএস-এর যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৯ সালে, আবু মুসাব আল-জারকাউই-এর নেতৃত্বে ‘তাহরিখ আল-জিহাদ আল-ইসলামি’ নামে। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে এটি ‘আল-কায়েদা ইন ইরাক’ নামে পরিচিত হয়। জারকাউই-এর মৃত্যুর পর আবু আয়ুব আল-মাসরি নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এরপর ২০১০ সালে আবু বকর আল-বাগদাদি সংগঠনের আমির হন এবং সংগঠনটির নাম পরিবর্তন করে ‘ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া’ রাখা হয়।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সুযোগ নিয়ে আইএসআইএস সিরিয়ায় প্রবেশ করে এবং দ্রুত নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। ২০১৩ সালে তারা ইরাকের মসুল শহর দখল করে নেয় এবং সেখানে নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করে। এরপর তারা রাক্কাকে তাদের তথাকথিত খেলাফতের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে।
আইএসআইএস-এর মতাদর্শ
আইএসআইএস একটি চরমপন্থী সুন্নি ইসলামি মতাদর্শ অনুসরণ করে। তারা সালাফিজম নামক ইসলামের একটি কঠোর ব্যাখ্যায় বিশ্বাসী। আইএসআইএস মনে করে যে, তাদের লক্ষ্য হলো বিশ্বজুড়ে একটি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে শaria আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে। তারা অন্যান্য ধর্ম এবং ইসলামের অন্যান্য শাখা, বিশেষ করে শিয়াদেরকে কাফের (অবিশ্বাসী) মনে করে এবং তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালায়।
আইএসআইএস-এর কার্যক্রম
আইএসআইএস বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে জড়িত। এর মধ্যে রয়েছে:
- আত্মঘাতী বোমা হামলা
- গণহত্যা
- অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়
- ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংস
- যুদ্ধাপরাধ
আইএসআইএস তাদের কার্যক্রমের ভিডিও এবং ছবি অনলাইনে প্রচার করে, যা নতুন সদস্য সংগ্রহে সাহায্য করে।
আইএসআইএস-এর বিস্তার
সিরিয়া ও ইরাকের বাইরে আইএসআইএস বিভিন্ন দেশে তাদের শাখা বিস্তার করেছে। তারা মিশর, লিবিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে হামলা চালায়। আইএসআইএস-এর আন্তর্জাতিক বিস্তার সন্ত্রাসবাদের একটি বড় হুমকি।
আইএসআইএস-এর দুর্বলতা
২০১৭ সাল থেকে আইএসআইএস ধারাবাহিক সামরিক অভিযানের কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে। ইরাক ও সিরিয়ায় তাদের দখল করা প্রায় সকল অঞ্চল পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। তবে, আইএসআইএস এখনও গোপনে কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সুযোগ পেলে হামলা চালানোর চেষ্টা করছে।
আইএসআইএস-এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ
আইএসআইএস-এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে একটি জোট গঠিত হয়েছে, যা ‘গ্লোবাল কোয়ালিশন টু ডিফিট আইএসআইএস’ নামে পরিচিত। এই জোটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া এবং অন্যান্য দেশ অংশগ্রহণ করছে। জোটটি আইএসআইএস-এর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে এবং তাদের অর্থায়ন বন্ধ করার চেষ্টা করছে।
| বছর | ঘটনা |
| ১৯৯৯ | আবু মুসাব আল-জারকাউই কর্তৃক ‘তাহরিখ আল-জিহাদ আল-ইসলামি’ প্রতিষ্ঠা। |
| ২০০৪ | ‘আল-কায়েদা ইন ইরাক’ নামে পরিচিতি লাভ। |
| ২০১০ | আবু বকর আল-বাগদাদি আমির হন, নাম পরিবর্তন করে ‘ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া’ রাখা হয়। |
| ২০১৩ | ইরাকের মসুল শহর দখল। |
| ২০১৪ | রাক্কাকে খেলাফতের রাজধানী ঘোষণা। |
| ২০১৭ | ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসআইএস-এর দখল করা অঞ্চলের পুনরুদ্ধার শুরু। |
আইএসআইএস-এর অর্থনৈতিক উৎস
আইএসআইএস-এর প্রধান অর্থনৈতিক উৎসগুলো হলো:
- তেল বিক্রি: আইএসআইএস সিরিয়া ও ইরাকের তেলক্ষেত্র দখল করে সেখান থেকে তেল বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করত।
- অপহরণ ও মুক্তিপণ: তারা বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করত।
- চুরি ও লুটপাট: আইএসআইএস ব্যাংক, জাদুঘর এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ ও মূল্যবান জিনিস চুরি করত।
- অনুদান: তারা বিভিন্ন ধনী ব্যক্তি ও সংস্থার কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহ করত।
- কর: আইএসআইএস তাদের দখল করা অঞ্চলে বসবাস করা মানুষের কাছ থেকে কর আদায় করত।
আইএসআইএস-এর সামাজিক প্রভাব
আইএসআইএস-এর কারণে সিরিয়া ও ইরাকের সমাজে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং বহু মানুষ নিহত হয়েছে। আইএসআইএস-এর শাসনের অধীনে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। তারা নারীদের উপর বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন চালাত এবং শিশুদেরকে যোদ্ধা হিসেবে তৈরি করত।
আইএসআইএস এবং প্রযুক্তি
আইএসআইএস তাদের কার্যক্রম পরিচালনা এবং সদস্য সংগ্রহের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে। তারা সামাজিক মাধ্যম, মেসেজিং অ্যাপ এবং অনলাইন ফোরাম ব্যবহার করে নিজেদের বার্তা ছড়িয়ে দেয় এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করে। আইএসআইএস-এর অনলাইন প্রচারণার মোকাবিলা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
আইএসআইএস-এর ভবিষ্যৎ
যদিও আইএসআইএস দুর্বল হয়ে পড়েছে, তবে তাদের হুমকি এখনও বিদ্যমান। তারা বিভিন্ন দেশে গোপন হামলা চালানোর চেষ্টা করছে। আইএসআইএস-এর মতাদর্শ এখনও অনেক মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে আছে, যা ভবিষ্যতে নতুন জঙ্গি গোষ্ঠী তৈরি করতে পারে। আইএসআইএস-এর বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী কৌশল গ্রহণ করা জরুরি।
কৌশলগত বিশ্লেষণ
আইএসআইএস-এর উত্থান এবং বিস্তার কৌশলগত ভুলত্রুটি, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আঞ্চলিক ক্ষমতার দ্বন্দ্বের ফল। রাজনৈতিক বিশ্লেষণ এবং ভূ-রাজনৈতিক কৌশল উভয়ই এই গোষ্ঠীর সাফল্যের কারণ ব্যাখ্যা করতে সহায়ক। আইএসআইএস স্থানীয় জনগণের মধ্যে অসন্তোষ এবং দুর্বল রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করেছে।
প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ
আইএসআইএস অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে এবং প্রচার চালায়। সাইবার নিরাপত্তা এবং ডিজিটাল ফরেনসিক-এর মাধ্যমে তাদের অনলাইন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা এবং মোকাবিলা করা যায়।
ভলিউম বিশ্লেষণ
আইএসআইএস-এর কার্যকলাপের ভলিউম বিশ্লেষণ করে তাদের কৌশল এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ডেটা বিশ্লেষণ এবং ঝুঁকি মূল্যায়ন-এর মাধ্যমে তাদের সম্ভাব্য হুমকি চিহ্নিত করা সম্ভব।
আইএসআইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চ্যালেঞ্জ
আইএসআইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো:
- সীমান্ত নিরাপত্তা: আইএসআইএস যোদ্ধারা সহজেই সীমান্ত অতিক্রম করে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
- অর্থায়ন বন্ধ করা: আইএসআইএস-এর অর্থায়ন বন্ধ করা কঠিন, কারণ তারা বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করে।
- মতাদর্শের মোকাবিলা: আইএসআইএস-এর চরমপন্থী মতাদর্শের মোকাবিলা করা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া।
- মানবাধিকার: আইএসআইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা জরুরি।
আইএসআইএস-এর প্রভাবাধীন অঞ্চলের পুনর্গঠন
আইএসআইএস-এর হাত থেকে মুক্ত হওয়া অঞ্চলগুলোর পুনর্গঠন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই অঞ্চলগুলোতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং অবকাঠামোর উন্নয়ন প্রয়োজন। স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে সফল করা যেতে পারে।
আইএসআইএস সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক
- সন্ত্রাসবাদ: আইএসআইএস কিভাবে সন্ত্রাসবাদের একটি রূপ?
- আল-কায়েদা: আইএসআইএস-এর সাথে আল-কায়েদার সম্পর্ক।
- সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ: আইএসআইএস কিভাবে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সুযোগ নিয়েছে?
- ইরাকের যুদ্ধ: আইএসআইএস ইরাকে কিভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে?
- খেলাফত: আইএসআইএস-এর খেলাফত প্রতিষ্ঠার ধারণা।
- শaria আইন: আইএসআইএস-এর শaria আইনের প্রয়োগ।
- রাজনৈতিক বিশ্লেষণ: আইএসআইএস-এর উত্থানের রাজনৈতিক কারণ।
- ভূ-রাজনৈতিক কৌশল: আইএসআইএস-এর ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব।
- সাইবার নিরাপত্তা: আইএসআইএস-এর অনলাইন কার্যক্রম এবং সাইবার হুমকি।
- ডিজিটাল ফরেনসিক: আইএসআইএস-এর ডিজিটাল প্রমাণ বিশ্লেষণ।
- ডেটা বিশ্লেষণ: আইএসআইএস-এর কার্যকলাপের ডেটা বিশ্লেষণ।
- ঝুঁকি মূল্যায়ন: আইএসআইএস-এর সম্ভাব্য ঝুঁকি মূল্যায়ন।
- সন্ত্রাসবাদের অর্থনীতি: আইএসআইএস-এর অর্থনৈতিক উৎস এবং কার্যকলাপ।
- মানবাধিকার: আইএসআইএস-এর মানবাধিকার লঙ্ঘন।
- আন্তর্জাতিক আইন: আইএসআইএস-এর কার্যকলাপ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
- জাতিসংঘ: আইএসআইএস-এর বিরুদ্ধে জাতিসংঘের পদক্ষেপ।
- মধ্যপ্রাচ্য: আইএসআইএস-এর মধ্যপ্রাচ্যের উপর প্রভাব।
- সুন্নি ইসলাম: আইএসআইএস-এর সুন্নি ইসলামি মতাদর্শ।
- সালাফিজম: আইএসআইএস-এর সালাফি মতাদর্শ।
- রাজনৈতিক অস্থিরতা: আইএসআইএস-এর বিস্তারের কারণ হিসেবে রাজনৈতিক অস্থিরতা।
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
