অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্ট
অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্ট
ভূমিকা
অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্ট (Ascent Management) একটি ব্যবসায়িক কৌশল যা ক্রমাগত উন্নতি এবং সাফল্যের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। এই পদ্ধতিতে, একটি সংস্থা তার বর্তমান অবস্থা থেকে উন্নত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হওয়ার জন্য পরিকল্পনা তৈরি করে এবং তা বাস্তবায়ন করে। এটি কেবল একটি লক্ষ্য অর্জন করার বিষয় নয়, বরং একটি সংস্কৃতি তৈরি করা যেখানে শেখা, অভিযোজন এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা হয়। ব্যবসা কৌশল এবং সাংগঠনিক উন্নয়ন এর প্রেক্ষাপটে অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা।
অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্টের মূল উপাদান
অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্টের কয়েকটি মূল উপাদান রয়েছে যা এটিকে কার্যকর করে তোলে:
১. সুস্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ: অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্টের প্রথম ধাপ হল সুনির্দিষ্ট, পরিমাপযোগ্য, অর্জনযোগ্য, প্রাসঙ্গিক এবং সময়-সীমাবদ্ধ (SMART) লক্ষ্য নির্ধারণ করা। এই লক্ষ্যগুলি সংস্থার সামগ্রিক ভিশন এবং মিশন এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে।
২. বর্তমান অবস্থার মূল্যায়ন: লক্ষ্য নির্ধারণের পরে, সংস্থার বর্তমান অবস্থা মূল্যায়ন করা জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে SWOT বিশ্লেষণ (Strengths, Weaknesses, Opportunities, Threats) এবং PESTLE বিশ্লেষণ (Political, Economic, Social, Technological, Legal, and Environmental)। এই বিশ্লেষণগুলি সংস্থার অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা দেয়।
৩. কর্মপরিকল্পনা তৈরি: বর্তমান অবস্থার মূল্যায়ন থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। এই পরিকল্পনায় প্রতিটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ, সময়সীমা এবং দায়িত্ব অর্পণ করা উচিত। প্রকল্প ব্যবস্থাপনা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪. সম্পদ বরাদ্দ: কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় মানব সম্পদ, আর্থিক সম্পদ এবং প্রযুক্তিগত সম্পদ সঠিকভাবে বরাদ্দ করতে হবে। সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
৫. পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়ন: নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়নের মাধ্যমে কর্মপরিকল্পনার অগ্রগতি ট্র্যাক করতে হবে। কোনো বিচ্যুতি ঘটলে, দ্রুত সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। KPI (Key Performance Indicators) নির্ধারণ করে কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন করা যেতে পারে।
৬. ক্রমাগত শিক্ষা এবং উন্নতি: অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্ট একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংস্থাটিকে ক্রমাগত শিখতে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং উন্নয়নের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করা এই প্রক্রিয়ার অংশ।
অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্টের প্রকারভেদ
অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্ট বিভিন্ন প্রকার হতে পারে, যা সংস্থার প্রয়োজন এবং পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে:
১. শীর্ষ-নির্ধারিত অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্ট: এই পদ্ধতিতে, শীর্ষ নেতৃত্ব লক্ষ্য নির্ধারণ করে এবং কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে। তারপর সেই পরিকল্পনা কর্মীদের উপর বাস্তবায়নের জন্য চাপানো হয়।
২. অংশগ্রহণমূলক অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্ট: এই পদ্ধতিতে, সকল স্তরের কর্মীর মতামত নেওয়া হয় এবং সম্মিলিতভাবে লক্ষ্য নির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়। এটি কর্মীদের মধ্যে মালিকানা এবং দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি করে।
৩. স্ব-পরিচালিত অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্ট: এই পদ্ধতিতে, কর্মীদের নিজস্ব লক্ষ্য নির্ধারণ এবং তা অর্জনের জন্য স্বাধীনতা দেওয়া হয়। এটি উদ্ভাবন এবং সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করে।
৪. লিন অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্ট: এই পদ্ধতিতে, অপচয় হ্রাস এবং দক্ষতা বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হয়। লিন ম্যানুফ্যাকচারিং এবং সিক্স সিগমা এর মতো কৌশলগুলি এখানে ব্যবহৃত হয়।
অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্টের সুবিধা
অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্টের অসংখ্য সুবিধা রয়েছে:
- উন্নত কর্মক্ষমতা: সুস্পষ্ট লক্ষ্য এবং পরিকল্পনা কর্মীর কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- বৃদ্ধিপ্রাপ্ত উদ্ভাবন: কর্মীদের উৎসাহিত করা হলে তারা নতুন ধারণা এবং সমাধান নিয়ে আসে।
- উন্নত গ্রাহক সন্তুষ্টি: উন্নত পণ্য এবং পরিষেবা গ্রাহক সন্তুষ্টি বৃদ্ধি করে।
- শক্তিশালী সাংগঠনিক সংস্কৃতি: ক্রমাগত শিক্ষা এবং উন্নতির সংস্কৃতি একটি শক্তিশালী এবং ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরি করে।
- প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা: অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থাটিকে বাজারে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকতে সাহায্য করে।
- ঝুঁকি হ্রাস: নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়নের মাধ্যমে ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো হ্রাস করা যায়।
অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্টের অসুবিধা
কিছু অসুবিধা রয়েছে যা অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্ট বাস্তবায়নের সময় দেখা যেতে পারে:
- প্রতিরোধের পরিবর্তন: কর্মীরা নতুন পরিবর্তন গ্রহণ করতে দ্বিধা বোধ করতে পারে।
- উচ্চ প্রাথমিক বিনিয়োগ: প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি এবং পরামর্শকের জন্য প্রাথমিক বিনিয়োগের প্রয়োজন হতে পারে।
- সময়সাপেক্ষ: অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্ট একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া এবং এর ফলাফল পেতে সময় লাগতে পারে।
- জটিলতা: বড় সংস্থাগুলিতে অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্ট বাস্তবায়ন করা জটিল হতে পারে।
- নেতৃত্বের অভাব: শক্তিশালী নেতৃত্ব এবং commitment ছাড়া অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্ট সফল নাও হতে পারে।
অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্ট বাস্তবায়নের পদক্ষেপ
অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্ট সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে:
১. প্রস্তুতি: অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে নেতৃত্বকে রাজি করা, একটি কমিটি গঠন করা এবং প্রয়োজনীয় সম্পদ সংগ্রহ করা।
২. মূল্যায়ন: সংস্থার বর্তমান অবস্থা মূল্যায়ন করার জন্য SWOT এবং PESTLE বিশ্লেষণের মতো সরঞ্জাম ব্যবহার করুন।
৩. পরিকল্পনা: একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করুন যেখানে প্রতিটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ উল্লেখ থাকবে।
৪. বাস্তবায়ন: কর্মপরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করুন এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিন।
৫. পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন: নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়নের মাধ্যমে অগ্রগতি ট্র্যাক করুন এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিন।
৬. উদযাপন ও স্বীকৃতি: সাফল্যের উদযাপন করুন এবং কর্মীদের অবদানকে স্বীকৃতি দিন।
অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্ট এবং অন্যান্য সম্পর্কিত ধারণা
অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্ট অন্যান্য অনেক ব্যবসায়িক ধারণার সাথে সম্পর্কিত। নিচে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:
- মোট কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট (TQM): TQM একটি সামগ্রিক পদ্ধতি যা গ্রাহক সন্তুষ্টি এবং ক্রমাগত উন্নতির উপর জোর দেয়।
- কাizen: কাইজেন হল জাপানি একটি ধারণা, যার অর্থ "পরিবর্তনের জন্য ক্রমাগত চেষ্টা"। এটি ছোট ছোট উন্নতির মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
- বিজনেস প্রসেস রিইঞ্জিনিয়ারিং (BPR): BPR হল ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াগুলির মৌলিক পুনর্বিবেচনা এবং redesigning।
- স্ট্র্যাটেজিক ম্যানেজমেন্ট: স্ট্র্যাটেজিক ম্যানেজমেন্ট হল সংস্থার দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারণ এবং তা অর্জনের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করা।
- চেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট: পরিবর্তন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সংস্থার মধ্যে পরিবর্তনগুলি কার্যকরভাবে পরিচালনা করা যায়।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ
অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্টের সাথে টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ কিভাবে সম্পর্কিত তা আলোচনা করা হলো:
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ:
- চার্ট প্যাটার্ন: বিভিন্ন চার্ট প্যাটার্ন (যেমন হেড অ্যান্ড শোল্ডারস, ডাবল টপ, ডাবল বটম) ব্যবহার করে বাজারের প্রবণতা বোঝা যায়।
- মুভিং এভারেজ: মুভিং এভারেজ ব্যবহার করে ডেটার গড় প্রবণতা নির্ণয় করা হয়, যা ভবিষ্যতের পূর্বাভাস দিতে সাহায্য করে।
- আরএসআই (Relative Strength Index): RSI ব্যবহার করে শেয়ারের অতিরিক্ত ক্রয় বা বিক্রয় পরিস্থিতি বোঝা যায়।
- MACD (Moving Average Convergence Divergence): MACD দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করে বাজারের গতিবিধি বুঝতে সাহায্য করে।
- ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট: ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলি সম্ভাব্য সমর্থন এবং প্রতিরোধের ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করে।
ভলিউম বিশ্লেষণ:
- অন ব্যালেন্স ভলিউম (OBV): OBV প্রাইস মুভমেন্টের সাথে ভলিউমের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে।
- ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP): VWAP একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ট্রেড করা শেয়ারের গড় মূল্য নির্ণয় করে।
- মানি ফ্লো ইন্ডেক্স (MFI): MFI ভলিউম এবং প্রাইসের ডেটা ব্যবহার করে অতিরিক্ত ক্রয় বা বিক্রয় পরিস্থিতি সনাক্ত করে।
- অ্যাকুমুলেশন/ডিস্ট্রিবিউশন লাইন: এই লাইনটি দেখায় যে কোনো শেয়ারে ক্রয় বেশি হচ্ছে নাকি বিক্রয়।
- ভলিউম স্পাইক: ভলিউম স্পাইকগুলি উল্লেখযোগ্য মূল্য পরিবর্তনের পূর্বাভাস দিতে পারে।
উপসংহার
অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্ট একটি শক্তিশালী ব্যবসায়িক কৌশল যা সংস্থাগুলিকে ক্রমাগত উন্নতি এবং সাফল্যের দিকে পরিচালিত করতে পারে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া, যার জন্য শক্তিশালী নেতৃত্ব, কর্মীদের commitment এবং সঠিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। প্রযুক্তি এবং ডেটা বিশ্লেষণের সঠিক ব্যবহার অ্যাসেন্ট ম্যানেজমেন্টকে আরও কার্যকর করতে পারে। কার্যকরী নেতৃত্ব এবং টিম বিল্ডিং এই প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
