অ্যাসারশন

অ্যাসারশন: বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর একটি অত্যাবশ্যকীয় কৌশল

ভূমিকা

বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি জটিল আর্থিক প্রক্রিয়া, যেখানে বিনিয়োগকারীরা কোনো সম্পদের দাম একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাড়বে নাকি কমবে তা অনুমান করে থাকেন। এই ট্রেডিং-এ সাফল্যের জন্য কেবল মার্কেট সম্পর্কে জ্ঞান থাকলেই যথেষ্ট নয়, সেই সাথে বিভিন্ন ট্রেডিং কৌশল এবং অ্যাসারশন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকাটাও জরুরি। অ্যাসারশন হলো ট্রেডিংয়ের সময় নিজের বিশ্বাস এবং সিদ্ধান্তের প্রতি দৃঢ় থাকা। এই নিবন্ধে, অ্যাসারশন কী, বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ এর গুরুত্ব, অ্যাসারশন তৈরির উপায় এবং সফল ট্রেডার হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

অ্যাসারশন কী?

অ্যাসারশন (Assertion) শব্দের অর্থ হলো দৃঢ়ভাবে কিছু বিশ্বাস করা এবং সেই অনুযায়ী কাজ করা। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে, অ্যাসারশন মানে হলো আপনার টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ-এর ওপর ভিত্তি করে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটির প্রতি আত্মবিশ্বাসী থাকা। এর মানে এই নয় যে আপনি সবসময় সঠিক হবেন, বরং এর অর্থ হলো আপনি আপনার ট্রেডিং প্ল্যান অনুসরণ করছেন এবং আবেগের বশে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ অ্যাসারশনের গুরুত্ব

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ অ্যাসারশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এর কয়েকটি কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:

• আবেগকে নিয়ন্ত্রণ: অ্যাসারশন আপনাকে ভয় এবং লোভের মতো আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যখন আপনি আপনার ট্রেডিং প্ল্যানের ওপর আস্থা রাখেন, তখন ক্ষতির ভয় বা অতিরিক্ত লাভের আশায় তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
• ধারাবাহিকতা বজায় রাখা: একটি সফল ট্রেডিং স্ট্র্যাটেজি তৈরি করার পর, সেটিকে ধারাবাহিকভাবে অনুসরণ করা প্রয়োজন। অ্যাসারশন আপনাকে সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
• ভুল থেকে শিক্ষা: ট্রেডিংয়ে ভুল হওয়া স্বাভাবিক। অ্যাসারশন থাকলে আপনি আপনার ভুলগুলো স্বীকার করতে পারবেন এবং সেগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে আরও ভালো করতে পারবেন।
• সুযোগের সঠিক ব্যবহার: মার্কেটে সুযোগ সবসময় আসে না। যখন সুযোগ আসে, তখন অ্যাসারশন আপনাকে দ্রুত এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
• ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: অ্যাসারশন আপনাকে আপনার ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা মেনে চলতে সাহায্য করে। আপনি আপনার ঝুঁকির মাত্রা সম্পর্কে সচেতন থাকবেন এবং সেই অনুযায়ী ট্রেড করবেন।

অ্যাসারশন তৈরির উপায়

অ্যাসারশন তৈরি করা একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। এখানে কিছু উপায় আলোচনা করা হলো, যা আপনাকে অ্যাসারশন তৈরি করতে সাহায্য করবে:

১. ট্রেডিং প্ল্যান তৈরি করা:

একটি সুস্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট ট্রেডিং প্ল্যান তৈরি করা অ্যাসারশনের প্রথম ধাপ। এই প্ল্যানে আপনার ট্রেডিংয়ের উদ্দেশ্য, কৌশল, ঝুঁকি সহনশীলতা, এবং পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ থাকতে হবে।

২. ব্যাকটেস্টিং:

ব্যাকটেস্টিং হলো ঐতিহাসিক ডেটা ব্যবহার করে আপনার ট্রেডিং কৌশল পরীক্ষা করা। এর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন আপনার কৌশলটি অতীতে কেমন পারফর্ম করেছে। ব্যাকটেস্টিংয়ের ফলাফল ইতিবাচক হলে, আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

৩. ডেমো অ্যাকাউন্ট ব্যবহার:

আসল টাকা বিনিয়োগ করার আগে ডেমো অ্যাকাউন্টে ট্রেডিং অনুশীলন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডেমো অ্যাকাউন্টে আপনি কোনো ঝুঁকি ছাড়াই বিভিন্ন কৌশল পরীক্ষা করতে পারবেন এবং আপনার অ্যাসারশন বাড়াতে পারবেন।

৪. ছোট করে শুরু করা:

প্রথমদিকে ছোট পরিমাণে বিনিয়োগ করুন। যখন আপনি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন, তখন ধীরে ধীরে আপনার বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়াতে পারেন।

৫. নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া:

ট্রেডিংয়ের সময় ভুল হওয়া স্বাভাবিক। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আপনার ট্রেডিং প্ল্যান এবং কৌশল সংশোধন করুন।

৬. টেকনিক্যাল এবং ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ:

মার্কেটের গতিবিধি বোঝার জন্য টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ ভালোভাবে শিখুন। এই বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নিলে আপনার অ্যাসারশন বাড়বে।

৭. নিয়মিত পর্যালোচনা:

আপনার ট্রেডিং প্ল্যান এবং কৌশল নিয়মিত পর্যালোচনা করুন। মার্কেটের পরিস্থিতির সাথে সঙ্গতি রেখে প্রয়োজনে পরিবর্তন আনুন।

৮. মানসিক প্রস্তুতি:

ট্রেডিংয়ের জন্য মানসিক প্রস্তুতি খুবই জরুরি। ইতিবাচক মনোভাব রাখুন এবং চাপ মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত থাকুন।

৯. সঠিক ব্রোকার নির্বাচন:

একটি নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বস্ত বাইনারি অপশন ব্রোকার নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ব্রোকার আপনাকে সঠিক প্ল্যাটফর্ম এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করবে।

১০. অভিজ্ঞ ট্রেডারদের অনুসরণ:

সফল ট্রেডারদের ট্রেডিং কৌশল অনুসরণ করুন এবং তাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিখুন।

অ্যাসারশন এবং মানসিক প্রস্তুতি

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ অ্যাসারশন শুধু ট্রেডিং প্ল্যানের ওপর নির্ভর করে না, এটি আপনার মানসিক অবস্থার সাথেও জড়িত। একজন সফল ট্রেডার হওয়ার জন্য নিম্নলিখিত মানসিক প্রস্তুতিগুলো নেওয়া জরুরি:

• ভয় এবং লোভ নিয়ন্ত্রণ: ভয় এবং লোভ একজন ট্রেডারের সবচেয়ে বড় শত্রু। এই দুটি আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে, আপনি ভুল সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবেন।
• ধৈর্যশীল হওয়া: ট্রেডিংয়ে সাফল্য পেতে সময় লাগে। দ্রুত লাভের আশায় তাড়াহুড়ো করবেন না। ধৈর্য ধরে আপনার ট্রেডিং প্ল্যান অনুসরণ করুন।
• আত্মনিয়ন্ত্রণ: নিজের আবেগ এবং প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন।
• ইতিবাচক থাকা: সবসময় ইতিবাচক মনোভাব রাখুন। ব্যর্থতাগুলোকে সুযোগ হিসেবে দেখুন এবং এগিয়ে যান।
• চাপ মোকাবেলা: ট্রেডিংয়ের সময় চাপ অনুভব করা স্বাভাবিক। চাপ মোকাবেলা করার জন্য যোগা, মেডিটেশন বা অন্য কোনো কৌশল অবলম্বন করুন।

ট্রেডিং কৌশল এবং অ্যাসারশন

বিভিন্ন ট্রেডিং কৌশল রয়েছে, যা আপনাকে অ্যাসারশন বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। নিচে কয়েকটি জনপ্রিয় কৌশল উল্লেখ করা হলো:

• ট্রেন্ড ফলোইং (Trend Following): এই কৌশলে মার্কেটের প্রধান ট্রেন্ড অনুসরণ করা হয়। যখন মার্কেট আপট্রেন্ডে থাকে, তখন কল অপশন এবং ডাউনট্রেন্ডে থাকলে পুট অপশন কেনা হয়।
• রেঞ্জ ট্রেডিং (Range Trading): এই কৌশলে মার্কেটের একটি নির্দিষ্ট রেঞ্জের মধ্যে ট্রেড করা হয়। যখন দাম সাপোর্ট লেভেলে পৌঁছায়, তখন কল অপশন এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেলে পৌঁছালে পুট অপশন কেনা হয়।
• ব্রেকআউট ট্রেডিং (Breakout Trading): এই কৌশলে মার্কেটের গুরুত্বপূর্ণ সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল ব্রেক করার সময় ট্রেড করা হয়।
• নিউজ ট্রেডিং (News Trading): এই কৌশলে অর্থনৈতিক খবর এবং ঘটনার ওপর ভিত্তি করে ট্রেড করা হয়।
• পিন বার রিভার্সাল (Pin Bar Reversal): এই কৌশলে পিন বার প্যাটার্ন ব্যবহার করে মার্কেটের সম্ভাব্য রিভার্সাল চিহ্নিত করা হয়।
• ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন (Candlestick Pattern): বিভিন্ন ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন যেমন ডজি, বুলিশ এনগালফিং, বিয়ারিশ এনগালফিং ইত্যাদি ব্যবহার করে মার্কেটের গতিবিধি বোঝা যায়।

ভলিউম বিশ্লেষণ এবং অ্যাসারশন

ভলিউম বিশ্লেষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ টুল, যা আপনাকে মার্কেটের গতিবিধি এবং প্রবণতা বুঝতে সাহায্য করে। ভলিউম বিশ্লেষণের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন কোনো নির্দিষ্ট দামে কত সংখ্যক শেয়ার বা কন্ট্রাক্ট কেনাবেচা হয়েছে। এই তথ্য আপনাকে আপনার ট্রেডিং সিদ্ধান্তকে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।

• আপভলিউম (Upvolume): যখন দাম বাড়ে এবং ভলিউমও বাড়ে, তখন এটিকে আপভলিউম বলা হয়। এটি সাধারণত বুলিশ সংকেত দেয়।
• ডাউনভলিউম (Downvolume): যখন দাম কমে এবং ভলিউমও কমে, তখন এটিকে ডাউনভলিউম বলা হয়। এটি সাধারণত বিয়ারিশ সংকেত দেয়।
• ভলিউম স্পাইক (Volume Spike): যখন ভলিউম স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বেড়ে যায়, তখন এটিকে ভলিউম স্পাইক বলা হয়। এটি মার্কেটে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
• অন ব্যালেন্স ভলিউম (On Balance Volume - OBV): OBV একটি টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর, যা ভলিউম এবং দামের মধ্যে সম্পর্ক দেখায়।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং অ্যাসারশন

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। অ্যাসারশন আপনাকে আপনার ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা কঠোরভাবে মেনে চলতে সাহায্য করে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার টিপস নিচে দেওয়া হলো:

• স্টপ-লস অর্ডার (Stop-Loss Order): স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করে আপনি আপনার সম্ভাব্য ক্ষতি সীমিত করতে পারেন।
• টেক প্রফিট অর্ডার (Take-Profit Order): টেক প্রফিট অর্ডার ব্যবহার করে আপনি একটি নির্দিষ্ট লাভে পৌঁছালে আপনার ট্রেড স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ করতে পারেন।
• পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন (Portfolio Diversification): আপনার পোর্টফোলিওকে বিভিন্ন অ্যাসেটের মধ্যে ছড়িয়ে দিন, যাতে কোনো একটি অ্যাসেটের দাম কমলেও আপনার সামগ্রিক বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
• বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ধারণ: আপনার ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ধারণ করুন।
• লিভারেজ (Leverage) সম্পর্কে সচেতন থাকা: লিভারেজ আপনার লাভ এবং ক্ষতি উভয়ই বাড়াতে পারে। তাই লিভারেজ ব্যবহারের আগে ভালোভাবে জেনে নিন।

উপসংহার

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ অ্যাসারশন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি আপনাকে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে, ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এবং সফল ট্রেডার হতে সাহায্য করে। অ্যাসারশন তৈরির জন্য একটি সুস্পষ্ট ট্রেডিং প্ল্যান তৈরি করা, ব্যাকটেস্টিং করা, ডেমো অ্যাকাউন্টে অনুশীলন করা এবং নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি। সেই সাথে, মানসিক প্রস্তুতি এবং সঠিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা আপনাকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। মনে রাখবেন, ট্রেডিং একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া এবং সাফল্যের জন্য ধৈর্য, অধ্যবসায় এবং আত্মবিশ্বাসের প্রয়োজন।

টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ মার্কেট সেন্টিমেন্ট অর্থনৈতিক সূচক ঝুঁকি সহনশীলতা পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা বাইনারি অপশন ব্রোকার ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম স্টপ-লস অর্ডার টেক প্রফিট অর্ডার লিভারেজ ভলিউম বিশ্লেষণ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন পিন বার রিভার্সাল ট্রেন্ড ফলোইং রেঞ্জ ট্রেডিং ব্রেকআউট ট্রেডিং নিউজ ট্রেডিং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা মানসিক প্রস্তুতি

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ