অ্যামাজন সাসটেইনেবিলিটি
অ্যামাজন সাসটেইনেবিলিটি
ভূমিকা অ্যামাজন বিশ্বের বৃহত্তম অনলাইন রিটেইলার এবং ক্লাউড কম্পিউটিং পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। ব্যবসায়িক সাফল্যের পাশাপাশি অ্যামাজন বর্তমানে সাসটেইনেবিলিটি বা পরিবেশ সুরক্ষার ওপর বিশেষভাবে জোর দিচ্ছে। এই নিবন্ধে অ্যামাজনের পরিবেশগত প্রভাব, তাদের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ, এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
অ্যামাজনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও পরিবেশগত প্রভাব অ্যামাজনের ব্যবসায়িক মডেল মূলত ই-কমার্স, ক্লাউড কম্পিউটিং, ডিজিটাল বিজ্ঞাপন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর নির্ভরশীল। এই কার্যক্রমগুলো পরিবেশের উপর বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রভাব উল্লেখ করা হলো:
- কার্বন নিঃসরণ: অ্যামাজনের পরিবহন ব্যবস্থা, ডেটা সেন্টার এবং প্যাকেজিংয়ের কারণে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়, যা জলবায়ু পরিবর্তন-এর অন্যতম কারণ।
- বর্জ্য উৎপাদন: ই-কমার্স ব্যবসার কারণে প্রচুর পরিমাণে প্যাকেজিং বর্জ্য তৈরি হয়, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
- প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার: ডেটা সেন্টার পরিচালনা এবং পণ্য উৎপাদনের জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি ও বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়।
- বনভূমি ধ্বংস: অ্যামাজনের পণ্য সরবরাহ এবং ওয়্যারহাউস নির্মাণের জন্য অনেক সময় বনভূমি ধ্বংস করা হয়।
অ্যামাজনের সাসটেইনেবিলিটি উদ্যোগ অ্যামাজন তাদের পরিবেশগত প্রভাব কমাতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
১. ক্লাইমেট pledge (The Climate Pledge) অ্যামাজন ২০১৯ সালে ‘দ্য ক্লাইমেট pledge’ নামে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর লক্ষ্য হলো ২০৪০ সালের মধ্যে নেট-জিরো কার্বন নিঃসরণ অর্জন করা। এই pledges-এ যোগ দেওয়া অন্যান্য কোম্পানিগুলোর সাথে অ্যামাজন পরিবেশ সুরক্ষার জন্য কাজ করছে।
২. নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার অ্যামাজন তাদের ডেটা সেন্টার এবং ওয়্যারহাউসগুলোতে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দিচ্ছে। বর্তমানে, অ্যামাজনের ৪০% বিদ্যুৎ আসে সৌর ও বায়ু শক্তি থেকে। ২০২৫ সালের মধ্যে এই হার ১০০%-এ উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে। সৌর শক্তি এবং বায়ু শক্তি এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করছে।
৩. প্যাকেজিংয়ের উন্নতি অ্যামাজন প্যাকেজিংয়ের পরিমাণ কমাতে এবং পরিবেশ-বান্ধব উপকরণ ব্যবহারের চেষ্টা করছে। এর জন্য তারা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে:
- প্যাকেজিংয়ের আকার কমানো।
- পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ ব্যবহার করা।
- গ্রাহকদের জন্য সহজলভ্য রিটার্ন এবং রিসাইক্লিং প্রোগ্রাম চালু করা।
- প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো এবং কাগজের বিকল্প ব্যবহার করা।
৪. পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ অ্যামাজন তাদের পরিবহন ব্যবস্থাকে আরও পরিবেশ-বান্ধব করার জন্য কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- বৈদ্যুতিক ডেলিভারি ভ্যান ব্যবহার করা। ২০৩০ সালের মধ্যে অ্যামাজন ১,০০,০০০ বৈদ্যুতিক ডেলিভারি ভ্যান রাস্তায় নামানোর পরিকল্পনা করছে।
- ডেলিভারি রুটের অপটিমাইজেশন (optimization) করে কার্বন নিঃসরণ কমানো।
- সাইকেল এবং পায়ে হেঁটে ডেলিভারির ব্যবহার বৃদ্ধি করা।
৫. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অ্যামাজন তাদের ওয়্যারহাউস এবং ডেটা সেন্টার থেকে উৎপন্ন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- রিসাইক্লিং এবং কম্পোস্টিংয়ের মাধ্যমে বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করা।
- বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা।
- ল্যান্ডফিলে বর্জ্য পাঠানো কমানো।
৬. জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো অ্যামাজন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি মোকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস এবং প্রস্তুতি।
- সাপ্লাই চেইনের দুর্বলতা চিহ্নিত করে তা সমাধান করা।
- স্থানীয় সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করা।
অ্যামাজনের সাপ্লাই চেইন এবং সাসটেইনেবিলিটি অ্যামাজনের সাপ্লাই চেইন অত্যন্ত জটিল এবং বিস্তৃত। এই সাপ্লাই চেইনে পরিবেশগত ও সামাজিক ঝুঁকিগুলো মোকাবিলা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অ্যামাজন সাপ্লাই চেইনে সাসটেইনেবিলিটি আনার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নিয়েছে:
- সরবরাহকারীদের জন্য পরিবেশগত মান নির্ধারণ করা।
- সরবরাহকারীদের কার্বন নিঃসরণ এবং বর্জ্য উৎপাদন নিরীক্ষণ করা।
- পরিবেশ-বান্ধব পণ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করা।
- শ্রমিক অধিকার এবং ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা।
- স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করা।
অ্যামাজনের ডেটা সেন্টার এবং শক্তি দক্ষতা অ্যামাজনের ডেটা সেন্টারগুলো প্রচুর পরিমাণে শক্তি ব্যবহার করে। এই ডেটা সেন্টারগুলোর শক্তি দক্ষতা বৃদ্ধি করা অ্যামাজনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অ্যামাজন ডেটা সেন্টারের শক্তি দক্ষতা বাড়ানোর জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নিয়েছে:
- উন্নত কুলিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা।
- ডেটা সেন্টারগুলোর ডিজাইন অপটিমাইজ করা।
- নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করা।
- সার্ভারগুলোর ব্যবহার অপটিমাইজ করা।
- আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এবং মেশিন লার্নিং (ML) ব্যবহার করে শক্তি ব্যবস্থাপনার উন্নতি করা।
অ্যামাজনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অ্যামাজন ভবিষ্যতে তাদের সাসটেইনেবিলিটি কার্যক্রম আরও জোরদার করার পরিকল্পনা করছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- ২০৪০ সালের মধ্যে নেট-জিরো কার্বন নিঃসরণ অর্জন করা।
- ১০০% নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করা।
- প্যাকেজিংয়ে আরও বেশি পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ ব্যবহার করা।
- বৈদ্যুতিক ডেলিভারি ভ্যানের সংখ্যা বৃদ্ধি করা।
- সাপ্লাই চেইনে আরও বেশি স্বচ্ছতা আনা।
- নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষার উন্নতি করা।
- স্থানীয় সম্প্রদায়ের সাথে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্টিং এবং স্বচ্ছতা অ্যামাজন নিয়মিতভাবে তাদের সাসটেইনেবিলিটি কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে রিপোর্ট প্রকাশ করে। এই রিপোর্টগুলোতে তাদের কার্বন নিঃসরণ, বর্জ্য উৎপাদন, শক্তি ব্যবহার এবং অন্যান্য পরিবেশগত প্রভাবের তথ্য উল্লেখ করা হয়। অ্যামাজন তাদের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে।
অ্যামাজনের চ্যালেঞ্জ এবং সমালোচনা অ্যামাজন তাদের সাসটেইনেবিলিটি উদ্যোগের জন্য প্রশংসিত হলেও, কিছু ক্ষেত্রে সমালোচিত হয়েছে। সমালোচনার মধ্যে রয়েছে:
- কার্বন নিঃসরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হতে পারে।
- সাপ্লাই চেইনে পরিবেশগত ও সামাজিক ঝুঁকিগুলো সম্পূর্ণরূপে সমাধান করা যায়নি।
- প্যাকেজিংয়ের বর্জ্য উৎপাদন এখনও অনেক বেশি।
- গ্রিনওয়াশিং-এর অভিযোগ (পরিবেশ-বান্ধব হিসেবে নিজেদের জাহির করা)।
উপসংহার অ্যামাজন বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী কোম্পানি এবং তাদের সাসটেইনেবিলিটি উদ্যোগগুলো পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যদিও অ্যামাজনকে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, তবে তারা পরিবেশ সুরক্ষার প্রতি তাদের অঙ্গীকার পূরণে কাজ করে যাচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন এবং পরিবেশগত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে অ্যামাজনের এই প্রচেষ্টাগুলো গুরুত্বপূর্ণ।
আরও জানতে:
- অ্যামাজন (কোম্পানি)
- জলবায়ু পরিবর্তন
- নবায়নযোগ্য শক্তি
- সৌর শক্তি
- বায়ু শক্তি
- টেকসই উন্নয়ন
- পরিবেশগত ন্যায়বিচার
- কার্বন নিঃসরণ
- বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
- সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট
- গ্রিনওয়াশিং
- বৈদ্যুতিক যানবাহন
- আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স
- মেশিন লার্নিং
- ডেটা সেন্টার
- প্যাকেজিং
- রিসাইক্লিং
- কম্পোস্টিং
- ক্লাইমেট pledge
- পরিবেশ সুরক্ষার আইন
কৌশল, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণের জন্য লিঙ্ক:
- টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
- ভলিউম বিশ্লেষণ
- মুভিং এভারেজ
- আরএসআই (Relative Strength Index)
- এমএসিডি (MACD)
- ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
- সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স
- ট্রেডিং ভলিউম
- মার্কেট সেন্টিমেন্ট
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন
- অ্যালগরিদমিক ট্রেডিং
- হাই-ফ্রিকোয়েন্সি ট্রেডিং
- ডার্ক পুল
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
